Home » , , » ঝুঁকিতে মেঘনা সেতু by আনোয়ার হোসেন

ঝুঁকিতে মেঘনা সেতু by আনোয়ার হোসেন

Written By Unknown on Saturday, September 24, 2011 | 1:40 AM

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্মিত মেঘনা সেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর মাঝ বরাবর ছয়টি পিলারের (ভারবাহী স্তম্ভ) আশপাশে ৫২ থেকে ৬৫ ফুট পর্যন্ত জায়গার মাটি সরে গেছে। এ ছাড়া সেতুর অনেকগুলো সম্প্রসারণশীল সংযোগ ও বিয়ারিং অকেজো হয়ে পড়েছে।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নিয়োগ করা বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন জরিপ করে এ তথ্য দিয়েছেন। জরিপ করার জন্য গত বছর সওজ জেপিজেড-মালয়েশিয়া-এইচসিইএল নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পিলারের কাছের মাটি সরে যাওয়ায় এবং বিয়ারিং-সম্প্রসারণশীল সংযোগ (এক্সপানশন জয়েন্ট) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সেতুটির ভারবহন ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে যানবাহন চলাচলের সময় পুরো সেতু কেঁপে ওঠে। এ জন্য যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য এ এম এম সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পিলারের কাছের মাটি সরে গেলে সেতুর শক্তি কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ভূমিকম্প হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করলেও সেতুটির স্থায়িত্ব কমে যাবে। এটা মেরামতযোগ্য সমস্যা এবং দ্রুত মেরামত করাই একমাত্র সমাধান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনা সেতুর সম্প্রসারণশীল সংযোগগুলোর অধিকাংশের ওপরের অংশে নাট-বল্টু খুলে পড়ে গেছে। ওপরে রাবার ও স্টিলের আবরণ উঠে গেছে। ফলে যানবাহন চলাচলের সময় বিকট শব্দ হচ্ছে, সেতু কাঁপছে।
২০০৪ সাল থেকে পিলারের মাটি সরে যাওয়া শুরু হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু শাখা) সাইদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুই-তিন বছর ধরে মাটি সরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা এটি মেরামতের পদ্ধতি জানিয়ে দিয়ে গেছেন। শিগগিরই মেরামত শুরু হবে। এভাবে মাটি সরে যাওয়া সেতুটির জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রসারণশীল সংযোগের নাট-বল্টু খুলে যাওয়ায় স্টিল ও রাবারের পাতগুলো কয়েক ইঞ্চি ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেক স্থানে পাত নেই। যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে কিছু কিছু পাত লাফিয়ে কয়েক ইঞ্চি ওপরে ওঠানামা করছে।
এই সেতু দিয়ে ট্রাক চালান আবুল বাশার। তিনি বলেন, সেতুর ওপরে খুব ধীরে ট্রাক চালাতে হয়। বিকট শব্দ হলে ভয় হয়। কখন না ভেঙে পড়ে। ঢাকা-কুমিল্লা পথে চলাচলকারী তিশা পরিবহনের চালক মহিউদ্দিন বলেন, এই সেতুতে দীর্ঘদিন ধরেই নাট-বল্টু খোলা দেখা গেছে।
মেঘনা সেতুর দুই প্রান্তেই সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কর্তৃপক্ষ লিখে দিয়েছে, ‘মেরামতকাজ চলছে। যানবাহন চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার।’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন কোনো মেরামতকাজ চলছে না। ঝুঁকিপূর্ণ বলেই গতি কমানোর নির্দেশনা টাঙানো হয়েছে।
১৯৯১ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুর আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১০০ বছর। কিন্তু ২০ বছর না যেতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ১২টি পিলার এবং ১৩টি সম্প্রসারণশীল সংযোগ রয়েছে।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটি মেরামতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। অনুমোদনও পাওয়া গেছে। অর্থ পেলেই মেরামত শুরু হবে।
মূল সমস্যা: সেতুর পিলারের পাশে মাটি সরে যাওয়া শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকেই। কিন্তু এ পর্যন্ত তা মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জরিপে বলা হয়েছে, ১২টি পিলারের মধ্যে নদীর মাঝখানের তিনটি পিলারের পাশের মাটি সরে গিয়ে ৬৫ ফুট গভীর গর্ত হয়ে পড়েছে। মাঝামাঝি অন্য আরও তিনটি পিলারের পাশে মাটি সরে ৫২ ফুট গর্ত হয়েছে। মেঘনা সেতুর পিলার ১৩৩ থেকে ১৪৬ ফুট পর্যন্ত গভীর। অন্তত তিনটি পিলার যে গভীরে পাইল করা হয়েছে, তার গোড়ার অর্ধেক মাটি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি সওজের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে প্রধান দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে মেঘনা সেতুর দুরবস্থার কথা জানানো হয়। মাটি সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, সেতুর নিচ দিয়ে গড়ে তিন হাজার টন পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। কিন্তু ৫০০ টন পণ্যবাহী নৌযান চলবে—সে হিসাব করেই নকশা করা হয়েছিল। এ ছাড়া অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে নদীর স্রোত, নৌযানের গতি ও কম্পনের ফলে পিলারের পাশের মাটি সরে যাচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, সেতুর সম্প্রসারণশীল সংযোগ ও কল-কবজাগুলো দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেক কল-কবজা স্থানচ্যুত হয়ে পড়ায় যান চলার সময় সেতুটি অস্বাভাবিকভাবে নড়ে। এখনই মেরামত করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সওজ সূত্র জানায়, গোমতী সেতুর সম্প্রসারণশীল সংযোগগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেঘনা সেতুর তিন বছর পর গোমতী সেতু চালু হয়। এই দুটি সেতু খুব কাছাকাছি। দুটি সেতুর জন্য একসঙ্গেই টোল আদায় করা হয়। ২০০৮ সালে মেঘনা ও গোমতী সেতুর সম্প্রসারণশীল সংযোগ মেরামত করা হয় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু তিন বছরও টেকেনি সেই মেরামত।
সওজ সূত্র জানায়, মেঘনা সেতু এখন মেরামত করতে গেলে ভূমিকম্পের সহনীয় মাত্রাও বাড়াতে হবে। কারণ ১৯৯১ সালে সেতুটি ত ৎকালীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুযায়ী ভূমিকম্পের জন্য মান ধরা ছিল দশমিক শূন্য ৫ জি। বর্তমানে বিএনবিসি কোড অনুযায়ী ভূমিকম্পের মান ধরা হয়েছে দশমিক ১৫ জি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ: সেতুটি মেরামতে ১৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে। এতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি পরিপূর্ণ মেরামত করতে হলে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নতুন করে নকশা প্রণয়ন করতে হবে। এতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। কিন্তু মেঘনা সেতুর বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে দুই বছর অপেক্ষা করা বাস্তবসম্মত হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মেঘনা সেতু কোনো কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে বন্দরনগর চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হুমকির সম্মুখীন হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র অকেজো: বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মেঘনা ও গোমতী সেতুর দুই প্রান্তে দুটি ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও কখনোই তা ব্যবহার করা হয়নি। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহনও সেতুর জন্য ক্ষতিকর।
মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা সূত্রে জানা গেছে, এই সেতু দিয়ে দৈনিক গড়ে ১৬ হাজার যানবাহন চলে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই বাণিজ্যিক অর্থা ৎ মালবাহী যান।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু