Home » , , » কবে হবে চার লেন by হকিকত জাহান হকি ও তৌফিকুল ইসলাম বাবর

কবে হবে চার লেন by হকিকত জাহান হকি ও তৌফিকুল ইসলাম বাবর

Written By Unknown on Saturday, September 24, 2011 | 1:44 AM

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ কবে শেষ হবে? বিদ্যমান দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে ১৯৬৭ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এর মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে ২০১০ সালে। গত ৪৪ বছরেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি 'ইকোনমিক লাইফ লাইন' হিসেবে ব্যবহৃত এ সড়কটি। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সার্বিক অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে এ সড়কটি। সব ধরনের আমদানি-রফতানি পণ্য আনা-নেওয়া হয় এ সড়ক দিয়েই। এ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার পর শুরু হবে 'ঢাকা-চট্টগ্রাম অ্যাক্সেস কন্ট্রোল হাইওয়ে'। এ সড়কটি হবে বিশেষায়িত।

২০১৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু গত দেড় বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। হাতে সময় রয়েছে মাত্র ৯ মাস। এ সময়ে প্রকল্পের বাকি ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করা প্রায় অসম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দেড় বছরে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ হলেই কেবল নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যেত। কিন্তু তা হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে বাকি কাজ শেষ হতে বাড়তি আরও এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুনের আগে চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
বর্ষার কারণে সাড়ে তিন থেকে চার মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ
থাকার পর ক'দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে ঠিকাদারদের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হলেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দেব কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ৭-৮ মাস সময়ক্ষেপণ, নতুন লেন নির্মাণে মাটি সংকট, মন্ত্রণালয় থেকে যথাসময়ে অর্থ ছাড় না করা, সর্বোপরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা না গেলেও যত
দ্রুত সম্ভব শেষ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন, প্রকল্প পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও প্রকল্পের দেশি-বিদেশি তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে চার লেনের সড়ক নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী ও প্রধান বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য চার লেনের সড়কের দাবি আজ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পুরোপুরিভাবে সরকারি অর্থায়নে।
সরকারের এক হিসাব থেকে জানা গেছে, জিডিপিতে এ মহাসড়কের অবদান ৩০ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। এর মধ্যে পণ্যবাহী ৬০ ভাগ যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়েই।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সমকালকে বলেন, নির্মাণ ব্যয় মেটানোর জন্য যথাসময়ে পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ চার লেনের সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সর্বশেষ ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি ও আগামী অর্থবছরের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হলে নির্মাণকাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে। মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ পুরোদমে চলছে বলে মন্ত্রী জানান।
যোগাযোগমন্ত্রী আরও বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আগামী ২ বছরের মধ্যে প্রাক্কলিত ব্যায়ের পুরো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে যথাসময়েই এ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সড়কের বেশিরভাগ ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে বেশি সময় লাগবে না। এরপর পুরোদমে শুরু হবে মাটি ভরাটের কাজ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নির্মাণকাজ অব্যাহত আছে। সামনে কাজের চাপ আরও বাড়বে। সে সময় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অর্থের সরবরাহ থাকলে যথাসময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুরো কাজ সম্পন্ন করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৬-৭ মাস সময় বেশি লাগতে পারে।
অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হলে চার লেনে উন্নীত করার কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১০ মিটার প্রস্তের ১৯২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণে চলতি অর্থবছরে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে দেওয়া হয় ১১৩ কোটি টাকা। মাটি ভরাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণকাজে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে এ টাকা শেষ হয়ে যাবে। এরপর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে ঠিকাদারদের। তখন অর্থ বরাদ্দের জন্য আবারও ছোটাছুটি শুরু করতে হবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে। চার লেনের এ নতুন সড়ক নির্মাণে এ পর্যন্ত গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বিদ্যমান সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ডান পাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ১০ মিটার প্রস্থের নতুন সড়কটি। ১০ মিটার প্রস্থের বিদ্যমান সড়কটি দুই লেনবিশিষ্ট। প্রস্থের দিক থেকে একই মাপের দুই লেনের নতুন সড়কটিসহ প্রায় তিনশ' কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়টি হবে চার লেনের। চার লেনের সড়কের মাঝখানে থাকবে ৬ মিটারের ডিভাইডার। এর মধ্যে ঢাকা থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার সড়ক চার লেন করা হয়েছে বেশ আগে।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি যেভাবে উন্নীত করার কথা ছিল গত ৪০ বছরেও তা হয়নি। এতে রফতানি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পণ্যবাহী একটি গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়লে তা কখন চট্টগ্রামে পেঁৗছবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। চার লেনে উন্নীত হলে এ সংকট থাকবে না। কোনো কারণে নির্মাণকাজ যেন পিছিয়ে না যায় সে জন্য সরকারের সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।
মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন রীতিমতো মহাদুর্ভোগের মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। এমনিতেই সড়কটির নাজুক অবস্থা। তার ওপর ভারী বৃষ্টিতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। সড়কটির স্থানে স্থানে শুধু দেবেই যায়নি অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় খানাখন্দ। সড়কের বিভিন্ন জায়গা উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। গাড়িতে স্বাভাবিক গতি তোলা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রামে চলাচলের কথা থাকলেও এখন সময় লেগে যাচ্ছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। সম্প্রতি সড়কটি যানবাহন চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়লে সরকার চুক্তি অনুযায়ী চার লেন প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কের কিছুটা সংস্কার-মেরামত করলেও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি; কিন্তু দায়সারা গোছের কাজের কারণে তা খুব বেশি টেকসই হয়নি।
মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট এখনও ছোট-বড় খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে সড়কের মিরসরাইয়ের ১০টি, সীতাকুণ্ডের ৫টি, কুমিল্লার ১০টি এবং ফেনীর ৪টি পয়েন্টের অবস্থা খুবই নাজুক। সড়কের মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট, নিজামপুর কলেজ, হাদিফকির হাট, বড়তাকিয়া, মিরসরাই সদর, মিঠাছড়া, জোড়ারগঞ্জ, বারৈয়ারহাট পৌর সদর, ইসমাইল কার্পেট মিল এলাকা, ছোটকমলদহ বাইপাস মোড় ও মিরসরাই সদর, সীতাকুণ্ডের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাইপাস সড়ক, মছইদ্দা স্কুলের সামনের মোড়, ফৌজদারহাট পোর্ট কানেকটিং সড়কের সংযোগস্থল, এসকেএন জুট মিল এলাকা, ফকিরহাট ফায়ার সার্ভিস মোড়ে সড়ক সংস্কার হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। এ ছাড়া কুমিল্লার রায়পুর, চৌদ্দগ্রামের বাতিসাবৈদ্যের বাজার এলাকা, দক্ষিণ উপজেলার ধনাইতরী, দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজা মোড়, হাসনপুর, বিতপুর, ইলিয়টগঞ্জের আমিরাবাদ রাস্তার মাথা, চৌদ্দগ্রামের চিওড়া এলাকা, বুড়িচংয়ের নিমসার এবং ফেনী জেলার মুহুরীগঞ্জ, লেমুয়াব্রিজ, মহীপাল ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় এখনও আছে ছোট-বড় গর্ত। এসব স্থানে গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
ঠিকাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা : চুক্তি অনুযায়ী চার লেন প্রকল্প কাজের পাশাপাশি বিদ্যমান সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তিনটি ঠিকাদার কোম্পানির করার কথা থাকলেও তারা এ কাজ সঠিকভাবে করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানা গেছে। তারা বলেছেন, অনেকটা তাদের অবহেলার কারণেই বিদ্যমান সড়কটির ছোট ছোট গর্ত আজ খানাখন্দে রূপ নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ চলাকালে বিদ্যমান সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয় বিদ্যমান সড়ক দিয়ে। এ ছাড়া জনগণের চলাচল ও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বও ঠিকাদারদের ওপর ন্যস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানি সাইনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড বেশি অবহেলা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড নামমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে বলে জানা গেছে।
ঠিকাদারের বক্তব্য : রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক স ম মমতাজউদ্দিন বলেন, নতুন সড়কের কাজ চলাকালে বিদ্যমান সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের স্বাভাবিক কাজের দায়িত্ব ঠিকাদারদের ওপর ন্যস্ত থাকে। বিশেষ কারণে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করে ঠিকাদাররা পোষাতে পারবেন না। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বেহাল দশা সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার কাজ না হওয়ায় এখন সড়কটির অবস্থা বেশ নাজুক। সড়কটি সংস্কারের জন্য আলাদাভাবে টেন্ডার ডাকা হবে। নতুন সড়ক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদাররাই এ টেন্ডারে অংশ নিয়ে সংস্কারকাজ করবেন।
মহাজোট সরকারের আমলে নির্মাণ কাজ শেষ হবে কি : বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ সরকারের আমলে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে বাস্তবায়ন কাজে তদারক বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে যথাসময়ে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এ বছর বরাদ্দ দেওয়া ১১৩ কোটি টাকার কাজ আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। শিগগির যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া না হলে নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দে গড়িমসি করা হলে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছিল।
জানা গেছে, ক্ষমতায় আসার পর এ সরকার ১৫২টি সড়ক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন এলাকার মন্ত্রী, এমপিদের চাপে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বেশি। এ কারণে দেশের মূল সড়ক নির্মাণকাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো, কার্যক্রম ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ যাচাই করে সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
ব্রিজ, কালভার্ট, ওভার পাস, বাস বে : নতুন ১৯২ কিলোমিটার সড়কে ২৮টি ব্রিজ নির্মিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি বড় ব্রিজ। কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ১৯৫টি। দুর্ঘটনা রোধে তিনটি রেলওয়ে ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, ৩৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সড়কের পাশে ৬১ স্থানে বাস বে নির্মাণ করা হবে।
প্রাক্কলিত ব্যয় ও বরাদ্দ : প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। গত তিন অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১৮ কোটি টাকা। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৭০০ কোটি টাকা চাওয়া হলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১৩ কোটি টাকা।
রোড ফান্ড : সূত্র জানায়, সারাদেশের সড়ক উন্নয়নে সরকারের আলাদা কোনো তহবিল নেই। এ খাতের জন্য আলাদা তহবিলের ব্যবস্থা থাকলে জনগুরুত্বসম্পন্ন সড়ক নির্মাণে অর্থ সংকটের কথা ভাবতে হতো না সরকারকে। সরকারের মধ্যে এ তহবিল গঠনের কোনো উদ্যোগও নেই। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে 'রোড ফান্ড' নামে একটি বিশেষ তহবিল রয়েছে। দেশটির ফুয়েল স্টেশন থেকে প্রতি লিটার তেল বিক্রি করে ক্রেতার কাছ থেকে ২ রুপি করে নেওয়া হয় ওই তহবিলের জন্য। এ ছাড়া সড়কের বিশেষ স্থান থেকে টোল আদায়ের টাকা জমা করা হয় ওই তহবিলে। এ তহবিলের অর্থে ভারত সরকার সর্বশেষ জয়পুর থেকে আজমীর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করছে। এর সঙ্গে রাখা হচ্ছে সার্ভিস লেন। জম্মু থেকে অমৃতসর প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়কও উন্নয়ন করা হচ্ছে একই তহবিলের অর্থ খরচ করে।
ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি : মহাসড়কটি ১০ ভাগ করে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এর মধ্যে চীনা কোম্পানি সাইনোহাইড্রো করপোরেশন ৭টি প্যাকেজ, রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড দুটি প্যাকেজ এবং তাহের ব্রাদার্স ও আল আমীন কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে একটি প্যাকেজে কাজ পেয়েছে।
রেজা কনস্ট্রাকশন : এ কোম্পানি দুটি প্যাকেজে ৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ১নং প্যাকেজে দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে কুটুম্বপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার ও ৭নং প্যাকেজে ধুমঘাট ব্রিজ থেকে মিরসরাই বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। দুটি প্যাকেজে ৩৩৪ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্ষার কারণে মাটি ভরাটের কাজ তেমন এগোচ্ছে না। আগামী নভেম্বর থেকে শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হবে।
১নং প্যাকেজ : এ প্যাকেজে ২২ কিলোমিটারে ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ মাটি ভরাট হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এতটুকু সড়কে একটি ছোট আকারের ব্রিজ ও সাতটি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে তিনটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তির বাইরে আরও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে বলে জানিয়েছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে।
৭নং প্যাকেজ : এ প্যাকেজে ১৫ কিলোমিটারে মাটি ভরাট হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। আগামী মার্চের মধ্যে মাটি ভরাটের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। ৩০টি কালভার্টের মধ্যে সাতটি নির্মিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ ১৫ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার।
ঠিকাদারের বক্তব্য : রেজা কনস্ট্রাকশনের পরিচালক স ম মমতাজউদ্দিন সমকালকে বলেন, এ সড়কটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। যথাসময়ে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে টাকার সরবরাহ বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, সর্বশেষ বরাদ্দ দেওয়া ১১৩ কোটি টাকার কাজ আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এরপর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। সামনের শীত মৌসুমে কাজের চাপ বেড়ে যাবে। তখন সে অনুপাতে টাকা সরবরাহ করতে হবে। টাকার অভাবে কাজ বন্ধ থাকলে ২০১৩ সালের মধ্যে পুরো সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
তাহের-আল আমীন : কুমিরা বাইপাস থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড ও আল আমীন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ১০নং প্যাকেজের আওতায় এ দুটি কোম্পানি পেয়েছে ১৭২ কোটি টাকার কাজ। তাহের ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার সমকালকে বলেন, তারা এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেছেন। ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় মাঝারি আকারের ছয়টি ব্রিজ ও নয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। এরই মধ্যে সাতটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। তিনি বলেন, কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি না হলে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
সাইনোহাইড্রো করপোরেশন : কুটুম্বপুর থেকে ধুমঘাট ব্রিজ পর্যন্ত পাঁচটি প্যাকেজ ও মিরসরাই বাজার থেকে কুমিরা বাইপাস পর্যন্ত দুটি প্যাকেজসহ মোট সাতটি প্যাকেজে ১৩৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে চীনা কোম্পানি সাইনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। মাটি ভরাট, কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। জানা গেছে, দরকষাকষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সাতটি প্যাকেজের আওতায় কাজ পেয়েছে এ কোম্পানি।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু