Home » , , » যুদ্ধাপরাধ : দালাল আইনে বন্দির তালিকা মন্ত্রণালয়ে

যুদ্ধাপরাধ : দালাল আইনে বন্দির তালিকা মন্ত্রণালয়ে

Written By Unknown on Monday, February 14, 2011 | 1:11 PM

৯৭২ সালে দালাল আইনের আওতায় গ্রেপ্তার হয়ে যারা কারাগারে ছিল, তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ রকম ৭৭৫ জন যুদ্ধাপরাধীর নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েও দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ওই সময় দেশে মোট ২৩টি কারাগার ছিল। এর মধ্যে চারটি ছিল কেন্দ্রীয় কারাগার, বাকি ১৯টি জেলা করাগার। মূলত এই ২৩টি কারাগারেই সে সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে বন্দি করা হয়েছিল। তবে এদের অধিকাংশই ছিল জেলা (বৃহত্তর জেলা) কারাগারগুলোতে। এখন পর্যন্ত আটটি কারাগারে বন্দি করে রাখাদের মধ্য থেকে ওই ৭৭৫ জনের নাম-ঠিকানা জোগাড় করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। যথেষ্ট কাগজপত্রের অভাবে বাকি কারাগারগুলোর তালিকা এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাকি কারাগারগুলোতে থাকা যুদ্ধাপরাধের আসামিদের নামও খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারা সদর দপ্তর থেকে ২০১০ সালের জুন মাসে তাঁরা নির্দেশ পান ১৯৭২ সালে দালাল আইনে আটক বন্দিদের তালিকা খুঁজে বের করার। এ নির্দেশের পর তাঁরা সর্বোচ্চ গুরুত
্ব দিয়ে ওই তালিকা খোঁজা শুরু করেন। কিন্তু এই কারাগারে সে রকম কোনো রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই বিষয়টি তাঁরা সদর দপ্তরে লিখে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, এখনো নানাভাবে খোঁজার চেষ্টা চলছে। পাওয়া গেলে সদর দপ্তরে তালিকা পাঠানো হবে।
কারা সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত বাহাত্তরের দালাল আইনে বন্দি যে ৭৭৫ জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩০৯ জন, নওগাঁ কারাগারের ২৮৬ জন, পাবনা কারাগারের ১০, কুমিল্লা কারাগারের ৮৩, পটুয়াখালী কারাগারের ৮, ময়মনসিংহ কারাগারের ২৪, জামালপুর কারাগারের ৩২ ও মুন্সীগঞ্জ কারাগারের ২৩ জন। এসব নাম পাওয়ার পর গত বছর জুলাই মাসে কারা সদর দপ্তর থেকে ওই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতার দায়ে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৩৭ হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭২ সালে দালাল আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ২৬ হাজার কারাবন্দি মুক্তি পায়। আর হত্যা, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা, অগি্নসংযোগ, নির্যাতনসহ ১৮টি অপরাধের সঙ্গে জড়িত বাকি ১১ হাজার বন্দি ওই সাধারণ ক্ষমার আওতায় না আসায় তারা সে সময় মুক্তি পায়নি। পরে তাদের বিচারের জন্য ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ওইসব ট্রাইব্যুনালে কিছু আসামির বিচার সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ৭৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের বিচার চলছিল। পরে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে দিলে বিচার হওয়া ও বিচারাধীন সব আসামিই মুক্তি পেয়ে যায়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পুস্তিকা 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের ষড়যন্ত্র : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে দালাল আইন বাতিল হলেও ১৯৭৩-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটি বহাল আছে। এই আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া সম্ভব।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে গত বছর ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে দালাল আইনে বন্দিদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কারা অধিদপ্তর থেকে সেই নির্দেশনা পাঠানো হয় দেশের সব কটি কারাগারে। বর্তমানে দেশে ৬৮টি কারাগার থাকলেও ওই সময় বৃহত্তর জেলাগুলোতে একটি করে কারাগার ছিল।
একটি কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ পাওয়ার পরই আমরা কাজ শুরু করে দেই। কিন্তু কাগজপত্র পাওয়া বেশ কষ্টকর। অনেক খুঁজে যাদের নাম পেয়েছি তা পাঠিয়ে দিয়েছি সদর দপ্তরে।'
কারা মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, 'মন্ত্রণালয় দালাল আইনে বন্দিদের নাম-ঠিকানা চাওয়ার পর আমরা যদ্দূর পারি কালেক্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আরো পাওয়া যায় কি না তার চেষ্টা চলছে।'
যাদের তালিকা পাওয়া গেছে তাদের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, 'বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারকে হত্যার অভিযোগে ১৯৭২ সালে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ঢাকা সিটি আমির ও একাত্তরে আলবদর বাহিনীর নেতা খালেক মজুমদারকে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। দালাল আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায়নি। আমি মনে করি, এখন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার হওয়া দরকার।'
একজন সাবেক কারা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর হাজার হাজার রাজাকারকে ফৌজদারি আইনে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছিল। পরে তাদের দালাল আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই আইনে বিচারও হয় অনেকের। অনেকে সাজাও পায়। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে একটি অর্ডার হয়_যেসব রাজাকার সাজার অর্ধেক ভোগ করেছে, তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হোক। এভাবে ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে অনেকে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায়।
কারা সূত্র জানায়, ওই সময় দেশে যে ২৩টি কারাগার ছিল, তার মধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও যশোরে চারটি কেন্দ্রীয় ও বাকি ১৯টি ছিল জেলা কারাগার। মহকুমাগুলোতেও কিছু সাব-জেল ছিল। তবে যুদ্ধাপরাধীদের জেলা কারাগারগুলোতেই বেশি রাখা হয়েছিল।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু