Home » , , » বদলে যেতে পারে আরবের চেহারা

বদলে যেতে পারে আরবের চেহারা

Written By Unknown on Sunday, February 13, 2011 | 1:31 PM

মিসরে যে অভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটল তার একমাত্র তুলনা চলে ১৯৫২ সালে সংঘটিত মিসর বিপ্লব ও রাজতন্ত্রের অবসানের দিনটির সঙ্গে। মিসরের আধুনিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবেই ওই দিনটি বিবেচিত। শুক্রবার আরেকটি যুগান্তকারী ঘটনা দেখল আরব বিশ্ব।

প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতনের মধ্যদিয়ে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসানের সূচনা হয়েছে আরব বিশ্বে। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর মাধ্যমে মিসরের সম্ভাবনার দ্বার যেমন খুলে গেছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে সংকটের আবর্তে পড়ার আশঙ্কা। মুবারক চলে গেছেন, রেখে গেছেন একটা ভাঙা দেশ। আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হয়তো কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। অন্তত বিশ্লেষকদের তাই ধারণা।
মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী কায়রোসহ সারা দেশ উত্তাল ছিল টানা ১৮ দিন। তাদের এ আন্দোলন শুধু মুবারকের পদত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সেটা ভাবা ঠিক হবে না। দীর্ঘ ৩০ বছর যে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে জনতা_তার অবসান, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন, অর্থনৈতিক মুক্তি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, বেকারত্বের অবসান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য দূর_এসবই ছিল জনতার দাবি।
১৯৮১ সালে আততায়ীর হাতে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত খুন হওয়ার পর মুবারক তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন। মিসরীয়রা তাঁকে বিশাল এক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে স্বপ্ন দেখেছিলেন সে সময়। কিন্তু জনগণের সেই আশা ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে তিনি দেশটিকে পরিণত করলেন এক পুলিশি রাষ্ট্রে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ১৫ লাখ সদস্যের ভয়ে জনগণ রীতিমতো আতঙ্কিত থেকেছে দীর্ঘ ৩০ বছর। প্রায় আট কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে মুষ্টিমেয় এই লোকগুলোই এত দিন ক্ষমতা ভোগ করে আসছিল। আজ মুবারক নেই। কী ঘটবে এখন তাদের ভাগ্যে?
বিশ্বের কোনো দেশেই সেনাশাসনের ইতিহাস সুখের নয়। অথচ সেই সেনা পরিষদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে গেছেন মুবারক। মুবারকের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক তো একদিনের নয়, বহু বছরের। তার ওপর তিনি ছিলেন বিমানবাহিনীরও প্রধান। বহু সেনা কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা এখনো মুবারকের শাসনব্যবস্থাই চালু রাখতে চাইবেন। দেশটির মাত্র ১০ ভাগ লোকের প্রতিনিধিত্বকারী সম্ভ্রান্ত শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গেও তাঁদের রয়েছে মিত্রতা। এটাই মিসরের ট্রাজেডি। এমন অবস্থায় সেনাশাসকরা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কতটা দেখাতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ে আছেন বিশ্লেষকরা। সেনা পরিষদ ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা ৩০ বছরের জরুরি অবস্থা তুলে নেবে, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। বর্তমান সরকারের প্রধান মোহাম্মদ হুসেইন তান্তাবি মুবারকের একজন ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বলেই এত সব ঘোষণা সত্ত্বেও তাঁর সদিচ্ছা নিয়ে উৎকণ্ঠিত অনেকেই। বর্তমান আন্দোলনের ফসল হিসেবে হয়তো মিসরীয়রা একটি সংশোধিত সংবিধান পাবে, যে সংবিধান এত দিন মুবারকের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু তান্তাবির ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। তাদের যুক্তি_যে তান্তাবিকে ২০ বছর ধরে সেনা কুজকাওয়াজে মুবারকের ঠিক পাশের আসনে দেখা গেছে, তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি কতটা সন্মান দেখাবেন? জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে কতটা প্রস্তুত তিনি? তবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মিসরবাসীকে আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মিসর এখনো আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু, সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে যাই ঘটুক, তার প্রভাব আরব বিশ্বে পড়বেই। তাই মুবারকের পতন শুধু মিসরের চেহারাই বদলে দেবে না, দেবে আরব বিশ্বের চেহারাও। আরব নেতারা তাই এখন চিন্তায় পড়েছেন, কিভাবে তাঁদের তরীটি ডোবার হাত থেকে রক্ষা করবেন। কী হয় দেখার জন্য অবশ্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। সূত্র : মিরর, রয়টার্স।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু