Home » , , » মানুষের গ্রাস নিয়ে কাউকে চালবাজি করতে দেব না

মানুষের গ্রাস নিয়ে কাউকে চালবাজি করতে দেব না

Written By Unknown on Thursday, February 10, 2011 | 2:31 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যত দিন ক্ষমতায় আছি, মানুষকে খাবারের কষ্ট করতে দেব না। প্রয়োজনে সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করব।' মিল মালিক ও আড়তদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা সাধারণ মানুষের গ্রাস নিয়ে চালবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের সব মিল মালিক ও আড়তদারের তালিকা আমার কাছে রয়েছে।

তাদের কাছে কত মজুদ আছে, এরা কী করে-না করে, কোন পন্থী_সে তথ্যও সংগ্রহ করছি।' এ সময় মজুদদার আইন পুনরুজ্জীবিত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাসদের হাসানুল হক ইনুর প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরো বলেন, খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার পর এত দাম বাড়ার কথা নয়। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আছে, তাদের কারসাজি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে জিনিসপত্রের দাম কমে_এ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ এখন ৩৫-৩৬ টাকায় মোটা চাল খাওয়াতে পারছে। এখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মানুষকে ৮০-৯০ টাকায় চাল খেতে হতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ওরা ১০ টাকার চাল ৪০ টাকা করেছে। বাড়ানোই ওদের অভ্যাস। আর আমরা কমাই।'
পুঁজিবাজার দ্রুত পড়ে যাওয়াটা সত্যিই অস্বাভাবিক পুঁজিবাজারের চলমান অস্থিরতা নিয়ে বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পুঁজিবাজারের ঘটনায় কিছু চক্র খেলা করছে, সন্দেহ নেই। আমরা তদন্ত করছি। পুঁজিবাজার কখনো উঠবে, কখনো পড়বে। এটাই স্বাভাবিক। তবে এত দ্রুত পড়ে যাওয়াটা সত্যিই অস্বাভাবিক।'
শেয়ার ব্যবসায়ীদের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার পড়ে যাবে এটা তারা কিভাবে জানল? বাজার পড়ে যাওয়ার পর ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে যাওয়া, ভাঙচুর চালানো ও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা দেখে সত্যিই সন্দেহ জাগে। কখন ব্যানার হলো? ভেতর থেকে কারা কী খেলছে?'
পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, শেয়ারবাজারে যারা কেনাবেচা করতে যাবে তাদের এই ঝুঁকি নিয়েই যেতে হবে_কখনো কমবে, আবার কখনো বাড়বে। দাম কমলে সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করা ঠিক হবে না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। শেয়ারবাজার নিয়ে নিজের অনভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি শেয়ারবাজার ততটা বুঝি না।'
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে যা যা করার দরকার, সরকার তা করছে। একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সে কারণে অনেক কথা বলার থাকলেও বলা ঠিক হবে না। তাই এখন বললাম না। যা করার আমরা করে যাচ্ছি। কেন এমন হলো তা খতিয়ে দেখছি। কারা ভাঙচুর করল, এগুলোও খুঁজে বের করতে হবে।'
২০০৮ সালে তাঁর নির্বাচনী বক্তব্য নিয়ে বিরোধী দল অপপ্রচার চালাচ্ছে_এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারা প্রচারণা চালাচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচনের আগে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলেছি। ওরা (বিএনপি) যখন চালের দাম ১৮-২০ টাকায় নিয়ে গিয়েছিল, ছিয়ানব্বই সালে সেটাকে ১০ টাকায় নিয়ে আসার কথা বলেছিলাম। ক্ষমতায় এসে আমরা পাঁচটি বছর চালের দাম ১০ টাকায় রেখেছি। পরে তারা ক্ষমতায় এসে সেই চাল ১০ টাকা কেজি ধরে রাখতে পারল না কেন? জনগণের কাছে তার জবাব দিতে হবে। তারা ১০ টাকা কেজি ধরে রাখতে পারলে তো এখন মানুষকে ৩৫-৩৬ টাকায় চাল খেতে হতো না। মানুষকে আজ কষ্ট পেতে হতো না।'
চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খেলা চলছেই_মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় চালের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা কেজি। আমরা তা ১৮-২০ টাকায় নামিয়ে আনি। পরে কৃষকদের ন্যায্যমূল্যের কথা চিন্তা করে ২৫ টাকা করি। আমরা এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। বেশি দামে চাল কিনে মানুষকে কম দামে খাওয়াচ্ছি।'
খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। মজুদ ঠিক রাখার লক্ষ্যে ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ, থাইল্যান্ড থেকে দুই লাখ, ভারত থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করছি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৪ দশমিক ৩৫ টন গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। মিয়ানমার ও রাশিয়া থেকে 'সরকার টু সরকার' চাল ও গম আমদানির আলোচনা চলছে। বর্তমানে আমাদের আট লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। দুই লাখ মেট্রিক টন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে। জাহাজীকরণেও কিছু রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২-১৪ লাখ টন চাল ও গম মজুদ হবে।"
এর আগে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নেতা জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মূল্য পরিস্থিতি এবং অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারক দেশগুলোতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিবেচনায় রেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী খালাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্টকহোল্ডার যথাক্রমে ব্যবসায়ী সংগঠন, এফবিসিসিআই, পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ ও পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। টিসিবির আইনি কাঠামো সংশোধন, জনবল বৃদ্ধি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিও ব্যবস্থার পরিবর্তে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পদ্ধতি প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু