Home » , , , , , » মাদক- তারুণ্য ও মাদকের নেশা by ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল

মাদক- তারুণ্য ও মাদকের নেশা by ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল

Written By Unknown on Wednesday, February 19, 2014 | 8:00 AM

শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের অনেক মানুষের চিন্তার বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে তারুণ্য। যদি তরুণ বয়সে আমরা একটি শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাই, যার ওপর ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের জন্য অনেক সুযোগ আসতে পারে, তাহলে জীবনটা সঠিক পথে চালিত হতে পারে।
তরুণদের কখনো কখনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। একটি উপদেশবার্তা রয়েছে এ রকম: ‘নিজেকে মূল্যায়ন করো, সুন্দর বাছাইগুলো সম্পন্ন করো।’ এসব পছন্দের মধ্যে জীবনের অনেক দিক অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত হবে—জাগতিক, আধ্যাত্মিক, আবেগবিষয়ক, সামাজিক, সততাবিষয়ক ইত্যাদি। জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলোর জন্য অনেক সময় শিশু-কিশোরদের দায়ী করা হয়। কিন্তু কেন তারা এ অবস্থায় পড়েছে, সেটি আমরা চিন্তা করি না।

যারা নিজেদের অবস্থানের অপব্যবহার করে এবং ভুল আচরণ করে, তারা কেবল শিশুদের চেতনাই নষ্ট করে না; বরং শিশু-কিশোর-তরুণদের সামনে মূল্যবোধের নেতিবাচক আদর্শ গঠন করে। এতে তাদের গোটা জীবনই ভুল মূল্যবোধ ও নেতিবাচক পথে চালিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন অনেক ছেলেকে নিয়ে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে, যারা বেঁচে থাকার জন্য এবং জীবিকার জন্য বছরের পর বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও দেশের অন্যান্য স্থানে বাস করছে। যদি তারা ‘বাড়ির কাজ’ না করত, বা বিরক্ত করত, তাহলে তাদের মারধর করা হতো অথবা নানা রকম নির্যাতন করা হতো। আর কখনো কখনো বাড়ি ফিরেও মা-বাবার হাতে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হতো তারা। তারা রাস্তায় গিয়ে ভিডিও গেম খেলার জন্য বরাদ্দ অর্থ দিয়ে নেশাদ্রব্য কিনে মাদক সেবন শুরু করত।

এখানে দৃষ্টান্তটি হলো, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শিশুদের জীবনের মৌলিক ভিত্তি গড়তে সহায়তার নামে কেবল তাদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করে ক্ষান্ত হচ্ছেন, কিন্তু তাদের সঠিক আচার-আচরণ ও অহিংস প্রতিক্রিয়া ও ক্রিয়া শেখাচ্ছেন না। এই শিশু-কিশোরেরা কখনো কখনো প্রান্তিক শিশু হয়ে রাস্তায় বসবাস করে, কখনো বেঁচে থাকে! এখানে শিশু সুরক্ষা আইন রয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।

প্রবাদ আছে: ‘যন্ত্রণা নেই, অর্জনও নেই’। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে মাদক কখনো কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। মাদক সেবন করে সমস্যার সমাধান করতে গেলে সেই সমস্যা কেবল আরও জটিল, কঠিন ও বিধ্বংসী রূপ নেয়। কোনো সমস্যা মোকাবিলার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মা-বাবা, কোনো শিক্ষক বা নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সেটি নিয়ে আলোচনা করা, যাঁর সামর্থ্য রয়েছে সমস্যাটি সমাধানে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার।

সুন্দর জীবনের পথে অত্যন্ত মূল্যবান সোপান হিসেবে আরেকটি স্লোগান রয়েছে: ‘অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করো’। শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার অংশ হিসেবে তাদের সঙ্গে সমবয়সী বন্ধুবান্ধবের যোগাযোগ ঘরে-বাইরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পরিবার যদি সেই শিশু-কিশোরদের সতর্ক হতে সহায়তা না করে, তারা কখনো কখনো এমন কারও দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যাকে ভালো বন্ধু বলে মনে হলেও আসলে সে একটি ‘অসৎ সঙ্গ’। একজন সত্যিকারের বন্ধু অন্যকে সৎ সহায়তা ও ভাবনা বিনিময়ের মাধ্যমে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে নিজেদের আচার-আচরণ, ভাষা, প্রতিক্রিয়া ও বন্ধুদের সম্পর্কে। এ ছাড়া যেসব স্থানে আমরা যাতায়াত করি, তার ব্যাপারে সত্যিকারের ‘উপকারী বন্ধুর’ বক্তব্যও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমার জীবনে মা-বাবা ছাড়া তিন-চারজন সত্যিকারের উপকারী বন্ধু ও শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের কাছ থেকে আমি শিখেছি অনেক মূল্যবোধ ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে। আমি এখনো তাঁদের স্মরণ করি এবং সবচেয়ে মূল্যবান ‘উপকারী বন্ধু’ বলে মনে করি।

তরুণ বয়সে অনেকেই খুব আদর্শবাদী এবং অপরের জন্যও কিছু করতে কঠোর মনোবল নিয়ে কাজ করতে চায়। কখনো কখনো তাদের কেউ বড় হয়। তখন তারা অন্যকে সহায়তার মতো তরুণ বয়সের বিভিন্ন আদর্শ ভুলে যেতে শুরু করে এবং স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে। তারা অভাবগ্রস্ত মানুষের সহায়তার পরিবর্তে খ্যাতি ও নামের মোহে আটকা পড়ে। আমি তরুণদের আদর্শবাদী লক্ষ্যে অবিচল থাকতে উৎসাহ জোগাতে চাই।

তরুণ ও বয়স্ক প্রজন্মের অনেক গুণাবলিই রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যের জন্য সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, মর্যাদা, লিঙ্গ, বয়স প্রভৃতি বিষয়ে অনুভব করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে: উষ্ণতা, গ্রহণযোগ্যতা, সম্মান, আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে সহানুভূতি দেখানো এবং কোনো কিছু আরোপ করা থেকে বিরত থেকে অন্যদের সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান। এ জন্য অবশ্যই ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে হবে, বস্ত্রহীনকে কাপড় দিতে হবে, অসুস্থকে সেবা দিতে হবে, আহতকে বাঁচাতে হবে, গৃহহীনকে আশ্রয় ও উষ্ণতা দিতে হবে, কর্মহীনকে কাজ দিতে হবে। বিদ্যালয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে সেই মানুষদের, যাদের সে রকম প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেবামূলক কাজের এই তালিকা বড় হতেই থাকবে এবং আমাদের সবাইকে অন্যের বিভিন্ন অভাব নিয়ে ‘চিন্তা, চিন্তা আর চিন্তা’ শুরু করতে হবে এবং সেগুলোকে বাস্তব কাজে রূপ দিতে হবে।

যেসব মূল্যবোধ ও নীতি কেউ তরুণ বয়সে গ্রহণ করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা শুরু করে, সেগুলো তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি হয়ে যায় এবং সেই জীবনের সহযোগিতা নিয়ে তাদের পরিবার, সম্প্রদায়, দেশ এবং অন্যরা সমৃদ্ধ হয়। আমি শেষ করছি এ কথা দিয়ে: ‘যদি প্রথমেই সাফল্য না পাও, চেষ্টা করো, চেষ্টা করো এবং চেষ্টা করো বারবার এবং আগে হোক, পরে হোক, সফল তুমি হবেই।’

ইংরেজি থেকে অনূদিত

ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল: সিএসই, নির্বাহী পরিচালক, আপন।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু