Home » , , , , , » হাম-রুবেলার গণতন্ত্র by মাকসুদুল আলম

হাম-রুবেলার গণতন্ত্র by মাকসুদুল আলম

Written By Unknown on Friday, February 7, 2014 | 2:39 AM

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বেঁচে থাকলে হয়তো নতুন করে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা লিখতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রথম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশ সফরে এসে গণতন্ত্রের তালিম নিতেন। তাদের প্রবর্তিত গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বাংলাদেশে অচল।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণাপ্রসূত গণতন্ত্রের চর্চা আমাদের দেশে নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম না। চাইলেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা নেই। পাঠ্যপুস্তকে জেনেছি গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের বা কোন সংগঠনের ধনী-গরিব প্রত্যেক নাগরিকেরই নীতিনির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। গণতন্ত্রে খেলার মাঠ সবার জন্য সমান। পাকা-কাঁচা সবাই সমান খেলোয়াড়। এ শাসনব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। আমাদের নাগরিকদের বেলায় সেই অধিকার বা সুযোগ কোনটাই নেই। আমাদের দেশে যে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তাতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনগণের ভূমিকা নেই। অটো-এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগেই আসন ভাগাভাগি হয়ে যায়। ভোটারদের ভোট দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। ফলাফল থাকে জানা। কে সরকার গঠন করবে তা-ও থাকে আগেভাগেই ঠিকঠাক। জনমতের তোয়াক্কা করার প্রয়োজন পড়ে না। জনপ্রতিনিধি সিলেকশনে এখানে অর্থ-বিত্ত, ক্যাডার-বাহিনীর আধিপত্য ও ক্ষমতার দাপট যোগ্যতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। সাবেক সামরিক শাসক ও জাতীয় পার্টির কোণঠাসা চেয়ারম্যানের মতে সংরক্ষিত আসনে টাকা-পয়সা ছাড়াও প্রয়োজন আবেদনময়ী চেহারা-সুরত, যা কিনা নারীদের প্রতি রীতিমতো বৈষম্যমূলক মন্তব্য। শিক্ষা-দীক্ষা, সততা, ন্যায়নীতি, রুচি, আভিজাত্য, সামাজিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের কদর নেই আমাদের গণতন্ত্রে। কে কত বড় গডফাদার, কে কত ভোট কিনতে পারবে বা অস্ত্রের মুখে কত ভোট সংগ্রহ করতে পারবে তা বিবেচিত হয় দলীয় মনোনয়নের বেলায়। এ ক্ষেত্রে সব দলই প্রায় একই নীতি অনুসরণ করে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল বলে কোন কথা নেই। ফলে আমাদের রাজনীতি এখন বিষবাষ্পে কলুষিত। তা এখন সওদাগরের হাতে। জনসেবার লেবাসে চলছে পেশিশক্তির মহড়া। জাল যার জলা তার। চাপাতি-ককটেল যার তালগাছ তার- চলছে এমন অবস্থা। আব্রাহাম লিঙ্কন তার বিখ্যাত গেটিসবার্গ বক্তৃতায় গণতন্ত্রকে সবার কাছে সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। সবারই জানা। বলেছিলেন এটি ‘জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য জনগণের শাসনব্যবস্থা’। আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে এ সংজ্ঞার রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তাই বিভিন্ন সময় বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ নিয়ে টিটকারিও করা হয়েছে। আমরা যে গণতন্ত্রের চর্চা করি তা হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকেন্দ্রিক। গণতন্ত্র এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মাত্র। একবার গদিতে আসীন হলে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত হালুয়া-রুটি খাওয়া। রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার সবচেয়ে দ্রুততম উপায় এটি। রাতে পুঁটি মাছ চাষ করলে পরদিন সকালেই রুই-কাতলা ফলে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক, বীমা, বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, ইন্টারনেট গেইটওয়ে, রেডিও-টিভি চ্যানেলসহ যাবতীয় লাইসেন্স কুক্ষিগত করার মোক্ষম সময়। শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি, সরকারি বাড়ি দখল, চাকর-বাকরদের জন্যও ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করার সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের গণতন্ত্র মানে সাধারণ নাগরিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা। ভিন্নমতকে বুটের চাপায় পিষ্ট করা। ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে সরাসরি গুলি করা। মানবাধিকারকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া। রাষ্ট্রীয় নির্বাহী পদে থেকে খেয়াল-খুশিমতো আইনি ব্যাখা দেয়া। গণমাধ্যম নিপীড়নে বেপরোয়া হয়ে ওঠা। আমরা যে গণতন্ত্রের চর্চা করি তাতে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের প্রয়োজন পড়ে না। অ্যারিস্টটল বা আব্রাহাম লিঙ্কনের গণতন্ত্রে ভাগবাটোয়ারার ভিত্তিতে সর্বদলীয় সরকার, ঐকমত্যের সরকার শব্দগুলোর প্রচলন ছিল না। তারা বেঁচে থাকলে অনন্ত এ শব্দগুলো তাদের নতুন করে রপ্ত করতে হতো। কাউকে গৃহবন্দি করে, কাউকে জোর করে অসুস্থ বানিয়ে হাসপাতালে বন্দি করে, কাউকে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসিয়ে, ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করেও যে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তা তাদের চাক্ষুষ দেখতে হতো। নিত্যনতুন অভিনব কৌশলে বালুভর্তি ট্রাকে ও জলকামান ব্যবহার করেও যে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তা শিখতে হতো। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের চর্চাকৃত তথাকথিত গণতন্ত্র এখন হাসপাতালের আইসিইউ কক্ষে। এ গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে নিয়ম রক্ষার স্বার্থে ৫ই জানুয়ারি হাম-রুবেলার টিকা সফল হয়েছে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা এখন মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতার ভিত্তিতে সঠিক চিকিৎসা করা না হলে অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে এ শিশু গণতন্ত্র।
বালুভর্তি ট্রাক নয় এবার অস্ত্রভর্তি ট্রাক। গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে ফেলানো দু’টি বা পাঁচটি নয়, বন্দর থেকে খালাস পাওয়া পুরো ১০ ট্রাক। বহুল আলোচিত চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রীদের শাস্তি হওয়ায় মামলার পুনঃতদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আদালতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় সংসদে বলা হয়েছে, ‘এ অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হবে। সব ষড়যন্ত্রের বিচার করা হবে। তদন্ত করে প্রমাণ মিললে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ ভাল কথা। তবে এই হক কথাটি ছাত্রলীগের বেলায় প্রযোজ্য হলে হয়তো দেশবাসীর আস্থা অর্জন করা সম্ভব হতো। ছাত্রলীগের আত্মরক্ষার অধিকারের নমুনা এখন দেশবাসী টিভির খবরে ও পত্রপত্রিকায় দেখতে পাচ্ছে। এ ছাত্র সংগঠনের অস্ত্রধারীরা কিছু দিন পরপর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও রাস্তাঘাটে নামীদামি সব আধুনিক অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকে। অস্ত্রধারীরা থাকে আইনের ঊর্ধ্বে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি বলে মুখে ফেনা তোলা হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের একজন ছাড়া কাউকে ধরা হয়নি। মামলা হলেও আসামি করা হয়নি। একজনকে ধরতেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশের প্রয়োজন পড়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজিপি)-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আটক হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার দায় তৎকালীন সরকারকেই নিতে হলে আওয়ামী-লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ নিহতদের হত্যাকাণ্ডের দায়ভার কে নেবে?’ এটিও হক কথা। সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ নেই হুমকি-ধমকির। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের জরিপকারীদের তদন্তের দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে জরিপকারীদের কোন ধারণাই নেই কিভাবে জরিপ চালাতে হয়। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জরিপের ক্লাসে বহিরাগতদের অংশগ্রহণের কোন সুযোগ থাকলে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের জরিপকারীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ওই মন্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু পশ্চিমা দূতাবাস ও এ দু’টি পত্রিকা ‘মারাত্মক ভুল’ করেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছিল তারা।
৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই নিজ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন সৈয়দ মহসীন আলী। শহরজুড়ে আনন্দ মিছিল করেছেন। মন্ত্রীর চেয়ারে বসেই সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, ‘হু ইজ বিএনপি? দিস ইজ মহসীন আলী। আমরা এদের (বিএনপিকে) ডেমোলিস (বিলুপ্ত) করে দেব।’ কিছুদিন পর নিজেই প্রায় ডেমোলিস হওয়ার মতো অবস্থা। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে নিজের কাণ্ডজ্ঞানের যথোপযুক্ত পরিচয় দেন এ মন্ত্রী। সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসেই ধূমপান করে দেশব্যাপী সমালোচিত হন এ মন্ত্রী। প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সামনে বসেই ধূমপান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। নিজে সংবাদের শিরোনাম হয়ে উঠেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে ধূমপান করার জন্য ক্ষমা চান তিনি। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অসামাজিক কর্মকাণ্ডে হতভম্ব হয়ে সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ফেসবুকে অনেকে মহসীন আলীকে পরিবেশ বা স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন, যা পাঠকের হাসির খোরাক যুগিয়েছে মাত্র।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু