আমরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি গুন্ডেরা নহে by মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

Saturday, March 1, 2014

কলাম লিখতে গিয়ে প্রিয় ও অপ্রিয় অনেক বিষয়ই চলে আসে। এই কলামের বিষয়টা অনেকের কাছে অপ্রিয় কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের হৃদয়ের কাছে একটি প্রিয় বিষয় এবং মনের আকুতি। বিষয়টি হচ্ছে- অতি সমপ্রতি বাজারে আসা একটি হিন্দি সিনেমা।

সামপ্রতিক বলিউডি ছবি ‘গুণ্ডে’তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ছবির শুরুতে নেপথ্য কণ্ঠে বলা হয়েছে- ‘১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, শেষ হলো ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ। প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি ফৌজ আত্মসমর্পণ করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সেদিন। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণ। এই যুদ্ধের ফলে জন্ম নিলো একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, ছবিটি যেহেতু ভারতীয় সেন্সর বোর্ড হয়ে এসেছে, বোর্ড মেম্বাররাই ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র দিয়েছেন এবং তারা যেহেতু সরকারেরই নিযুক্ত, সুতরাং ভারত সরকার সচেতনভাবেই কাজটি করেছে। তবে আমি মনে করি না যে, ভারত সরকার সচেতনভাবে এই কাজটি করেছে। আমি মনে করি ভারতের জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশের মনের অবচেতন অংশে এইরূপ ধারণা বিদ্যমান এবং সেই ধারণাটাই এই সিনেমার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। গুণ্ডে ছবির সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারেরও সমালোচনা হচ্ছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে দেখার পরও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
আমাদের চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার অনেকটা এ রকম বলেছেন, ‘আমরা স্বীকার করি স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদেরকে সহায়তা করেছে। স্বাধীনতা, বাংলাদেশের লাখ লাখ সংগ্রামী মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জন। কারও দয়ায় নয়। ‘গুণ্ডে’ ছবিতে বলা হয়েছে, ভারত, যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। আমি তাদের এই মনোভাবে বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন কলমসৈনিক হিসেবে আমার রক্ত, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আর ৩ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের কি কোন মূল্য নেই?’ আমাদের চলচ্চিত্র জগতের আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব চাষী নজরুল ইসলাম অনেকটা এ রকম বলেছেন, ‘গুণ্ডে ছবির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত।’ বিখ্যাত সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী যা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি বক্তব্য হচ্ছে- ‘এই ছবির প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের চলচ্চিত্রের মতো একটি বড় ক্যানভাস থেকে এমন মেসেজ সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক এবং এলার্মিং।’ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এই কলামে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই এবং গুণ্ডে ছবিতে প্রকাশিত মনোভাবের কারণে এই কথাগুলো অতিরিক্ত তাৎপর্য বহন করে বলে আমি মনে করি। আমার কথাগুলো নতুন নয়।
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বিভিন্ন বয়সী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর নিকট কম-বেশি ভিন্নভাবে প্রতিফলিত বা উদ্ভাসিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র ১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা তথা মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এর সাক্ষী। বয়সের ভারে এবং অন্যান্য সাংসারিক চাপে তারা অনেকেই ক্লান্ত। তাদের কাছে বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং ’৭১ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ওই দিবসটির তাৎপর্য কম-বেশি ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। প্রতি বছর যখন মার্চ বা ডিসেম্বর আসে তখন আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এবং যুদ্ধের মাধ্যমে একটি আক্রমণকারী বা হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন করেছিলাম। আমরা কিছু অনুভূতি ও চেতনাকে অন্য কিছু অনুভূতি ও চেতনার উপর অধিকতর মূল্য দিয়ে স্থাপন করেছিলাম। বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলাম ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সন্ধ্যা থেকে। মরুভূমিতে রাত্রে পথ চলার সময় পথিক যেমন বারবার আকাশের উত্তরাংশে উজ্জ্বলভাবে স্থিত ধ্রুবতারার দিকে তাকায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে, তার গন্তব্যের দিক ঠিক আছে কিনা, অথবা আধুনিক যুগে সৈনিক বা নাবিক কম্পাস এর কাঁটা মিলিয়ে দেখে গন্তব্যের দিক ঠিক আছে কিনা, তেমনই রাজনৈতিকভাবে আমরা প্রতি বছরের ১৬ই ডিসেম্বর এলে অন্তত একবার হিসাব মিলানোর সুযোগ পাই। কিসের উপর বিজয় অর্জন করেছিলাম, অর্জনটুকু ঠিক আছে না ক্ষয়ে গিয়েছে এবং পথভ্রষ্ট বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে থাকলে কি করা যেতে পারে? তবে এই ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে তথা মার্চ এর আগমনের মুহূর্তে এই তাৎপর্য আর কি অতিরিক্ত গুরুত্ব পায় এবং কেনই বা অতিরিক্ত গুরুত্ব পায় সেটা অতি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে চাই।
দর্শনীয়ভাবে (ইংরেজি ভাষায় ভিজিবলি) পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগিতাকারীদের ওপর বিজয় অর্জন করেছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড। দর্শনীয়ভাবে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের উপর বিজয় অর্জন করেছিল ভারত ও বাংলাদেশ নামক দু’টি রাষ্ট্র। দার্শনিক বা তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে: (এক) পাকিস্তানি সামরিক শাসন তথা স্বৈরশাসনের ওপর বিজয় অর্জন করেছিল তৎকালীন পূর্ব- পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের শক্তি ও ইচ্ছা। (দুই) পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ বাধ্য করছিল বাঙালিদেরকে পাকিস্তানে থাকতে। ওই প্রক্রিয়াকে অস্বীকার (ইংরেজি ভাষায় ডিনাই) করত স্বাধীন ও সার্বভৌম হওয়ার অধিকার আদায় হয়েছিল। (তিন) পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক অভ্যাস ও রেওয়াজের বিপরীতে বিজয় অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক অভ্যাস ও চিন্তা-চেতনা। (চার) পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে পূর্বপাকিস্তানি বাঙালি জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিবাদের বিজয় হয়। (পাঁচ) পাকিস্তানি সরকার ও শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক, শান্তি ও সাম্যের মহান ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে জনগণের ওপর বর্বরতা  বাস্তবায়ন ও অসাম্যের ধারা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয় হয় তথা মানবিকতা বা মানবতাবাদের জয় হয়।
তবে, আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো শিরোনাম আলোচকের সামনে উপস্থিত হয়। স্থানাভাবে এই সংক্ষিপ্ত কলামে সবকিছু আলোচনা করা যাবে না এবং সবকিছু আলোচনা করতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বা দু’টি বিষয়ের উপর থেকে ‘ফোকাস’ হারিয়ে যেতে বাধ্য। তাই আমি বিরাজমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য থেকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতিটিকে আলোচনায় সামনে আনছি।
দীর্ঘ প্রায় ২২-২৩ বছরের বিভিন্ন মাত্রার ও আঙ্গিকের সংগ্রামের সর্বশেষ ধাপ হলো ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সূক্ষ্ম হিসাবে ২৬৬ দিন। যাহোক আমরা ১৯৭১-এর আলোচনায় আসি। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ দিবাগত রাত্রে ১২টা বা ১২টার পর তথা ২৬শে মার্চ প্রত্যক্ষ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে ভারতের সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। অক্টোবর মাসে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে একটা গোপন চুক্তি হয়। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পরোক্ষ সহযোগিতার মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ থেকে ভারত ও পাকিস্তান প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর অপরাহ্ন ৪টা পর্যন্ত তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাগণ যথা ‘জেড’ ফোর্স, ‘এস’ ফোর্স, ‘কে’ ফোর্স এবং বিভিন্ন সেক্টর-এর সেক্টর ট্রুপসগণ, যেমন যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন তেমনই চালাতে থাকলেন তবে ৩রা ডিসেম্বর থেকে সেটা চালানো হলো ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধের সাংগঠনিক কাঠামোর (ইংরেজিতে সামরিক পরিভাষায়: অর্ডার অব ব্যাটল (ইংরেজি ভাষায় অরব্যাট) সঙ্গে তাল মিলিয়ে, যৌথ কমান্ডের অধীনে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাগণ যারা সারা বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে ছড়িয়ে থেকে যুদ্ধরত ছিলেন তারা, বিগত মাসগুলোর মতো প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। সার্বিকভাবে ভারতীয় ও মুক্তি বাহিনীর আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের রেকর্ড এবং ছবি অনুযায়ী, পাকিস্তানিদের পক্ষে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড-এর কমান্ডার লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী এবং আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড এর কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। সেই অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি তৎকালীন কর্নেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না (বা তাঁকে উপস্থিত রাখা হয়নি!!)। প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর কোন প্রতিনিধিকেও আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ জিনিসটা এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে, ১৩ দিনের দীর্ঘ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছে এবং ওই যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানিগণ ওই যুদ্ধের বিজয়ী ভারতীয়দের নিকট আত্মসমর্পণ করছে। ইংরেজিতে দু’টি শব্দ আছে যথা মার্জিন বা মার্জিনালাইজড। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে অপরাহ্নে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সফলভাবেই মুক্তিবাহিনীর অবদান ও সাফল্যকে মার্জিনালাইজড করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও বিজয়ের আনন্দ ওই বিকালবেলায় ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। দুই বছর পর সিমলায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেই চুক্তির ফলেও বাংলাদেশের মানুষের এবং মুক্তিযোদ্ধাগণের অবদানকে মার্জিনালাইজড করে ফেলা হয়। এতদ্‌সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সচেতন জনগণ নিজেদের প্রেরণায়, নিজেদের আত্মসম্মানের তাগাদায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে একান্তই নিজেদের বিজয় হিসেবে সমুন্নত রেখেছে সফলভাবে। ওই বিজয়টি বাস্তবে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এবং ওই আমলের বাংলাদেশের জনগণের। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ১৯৭১-এর বিজয়টি প্রেরণার একটি অম্লান চিরন্তন উৎস। এই উৎসকে অক্ষত রাখা অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১-এর রণাঙ্গনে রক্ত বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ নামক দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে এবং দু’টি রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে যেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল সেই সম্পর্কটির উষ্ণতা বিগত ৪২ বছর সময়কালে একই রকম থাকেনি। বিগত ৪২ বছরে উভয় দেশের মধ্যে তিক্ততা যেমন ছিল তেমনই মধুর সম্পর্কের সময়ও ছিল। ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং ভারতীয় স্বার্থের মূল্যায়নে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ছিল ২০০৯ থেকে নিয়ে আজ অবধি। ১৯৭১ সালের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ উপকার প্রদান করতে হবে- এটাই বাস্তব। কিন্তু কৃতজ্ঞতার সীমারেখা কতটুকু, অর্থাৎ কতটুকু পরিমাণ ভাষা প্রয়োগ, কতটুকু পরিমাণ উপকার প্রদান, কতটুকু পরিমাণ স্বার্থ-ত্যাগ করলে বলা হবে যে, বাংলাদেশ যথেষ্ট কৃতজ্ঞ- এই সীমারেখা কোনদিনই চিহ্নিত হয়নি। এই প্রসঙ্গটি আলোচনা করতে গেলেই, আলোচনাকারীকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করে ফেলা হয়। বাংলাদেশ ভারতকে অনেক কিছুই দিলো। আরও অনেক কিছু দেয়ার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকার মনে হয় প্রস্তুত এবং আগ্রহী। কিন্তু সময়ের অভাবে পেরে ওঠেনি। তাই আরও সময় চায়। মনে হচ্ছে যেন, বাংলাদেশ দিতেই থাকবে এবং ভারত নিতেই থাকবে, এ রকম একটি পরিস্থিতি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষাংশে, গুণ্ডে ছবির প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমি একটি শব্দযুগল এখানে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। ওই শব্দযুগল হচ্ছে: ‘ইলাস্টিসিটি অব গ্রাটিচিউড’- তথা কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে যথেষ্ট বলা হবে? ইলাস্টিক বস্তুকে যেমন বেশি টানলে ছিঁড়ে যায়, তেমনই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রক্রিয়াকে যদি টানতেই থাকে কেউ তাহলে সেটা ছিঁড়ে যেতে বাধ্য। আমার প্রশ্ন, আমরা কতটুকু টেনেছি? আমাদের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের নিমিত্তে বা কৃতজ্ঞতার উসিলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র কি চায়? আমার অনুভূতি হচ্ছে যে, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক পরাশক্তি। ভারতের সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক বাস্তবতা ভিত্তিক সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মানদণ্ড স্থির করতেই হবে। এবং এই কাজটি করতে গেলে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় উপাত্ত হিসেবে কাজ করবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

ফিল্মি কায়দায় ৩ জঙ্গি ছিনতাই by মতিউল আলম, খালিদ মাসুদ, ও সাইফুল ইসলাম সানি

Monday, February 24, 2014

ফিল্মি স্টাইলে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে সাজাপ্রাপ্ত ৩ জেএমবি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের সাত ঘণ্টার মাথায় টাঙ্গাইল থেকে জঙ্গি সদস্য রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি দু’জনের খোঁজ মেলেনি।
এদিকে এ ঘটনার পর সীমান্ত ও দেশের সব কারাগারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ ও অন্যজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে রাতে গাজীপুর থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে সহযোগিতার অভিযোগে আটক জাকারিয়ার স্ত্রী স্বপ্নাকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ছিনতাইকৃত আসামিরা হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজান। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমার আঘাতে আতিকুর রহমান (৩২) নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত ও দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিবুর রহমান (৫০) ও সোহেল রানাকে (৩০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  নিহত আতিকের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পণ ঘাগড়া গ্রামে। এ ঘটনার পর পালানোর সময় টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে জাকারিয়া নামের এক জেএমবি’র সদস্যকে অস্ত্র ও ব্যবহৃত গাড়িসহ আটক করে পুলিশ। অপরদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যওয়ার ৭ ঘণ্টা পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফেজ রাকিব হাসানকে টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার তক্তারচালা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আসামিদের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। আসামিদের মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর তিনটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সালাউদ্দিন সালেহীনের  বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ১টিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়ি জামালপুরে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজানের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। এর একটিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়িও জামালপুরের মেলান্দহে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমীরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান জানান, সকাল সোয়া দশটার দিকে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে ত্রিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন তাকিয়ে দেখি একটি পুলিশের গাড়িকে সামনে ও পিছন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে একটি সাদা ও একটি কালো মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাস দু’টি থেকে ১০-১৫জন কালো মুখোশধারী লোক বোমা ফাটিয়ে ও পিস্তল দিয়ে গুলি করে। একপর্যায়ে ৩ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আসামিদের নিয়ে গাড়ি দু’টি দ্রুত উত্তর দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আসামি নিয়ে ময়মনসিংহ কোর্টে যাচ্ছিল। পথে ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দিয়ে প্রিজন ভ্যানকে ব্যারিকেড দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় তিন পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আতিক নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা যায়। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিব ও সোহেল রানাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহত পুলিশ সদস্যরা সবাই কাশিমপুর কারাগারের কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই)।  এদিকে ৩ পুলিশকে গুলি করে ৩ আসামি ছিনতাই হলেও অক্ষত রয়েছেন প্রিজনভ্যান চালক সবুজ মিয়া। সবুজ মিয়া জানান, আমার গাড়িটির সামনে একটি ট্রাক আটকে দেয়। ঠিক সে সময় একটি সাদা মাইক্রোবাস সামনে এসে গুলি শুরু করলে আমি গাড়িতে নুয়ে যাই এবং তারা গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে আসামিদের নিয়ে যায়। চোখের পলকে তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর শহীদ শুকরানা জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় ২০০৬ সালের ২৬শে মার্চ একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। এই মামলায় ময়মনসিংহ বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ভ্যানের ভেতরে পড়ে আছে আহত পুলিশ সদস্যদের ভাঙা রাইফেল। ভ্যানের পিছনের সিঁড়িতে জমাট বাঁধা রক্ত। গাড়ির সামনের কাচে গুলির চিহ্ন।
যেভাবে ছিনতাই: ভ্যানচালক সবুজ জানান, সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে উল্লিখিত আসামিদের  নিয়ে সুবেদার হাবিবুর রহমান ও চালকসহ মোট ৪জন পুলিশ সদস্য ময়মনসিংহ আদালতের উদ্দেশ্যে প্রিজন ভ্যানে (নং-ঢাকা মেট্রো-উ-১১-১৬২৮) রওনা হন। পরে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছালে সামনে ও  পিছন দিক থেকে ২টি মাইক্রোবাসে  করে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত এসে অতর্কিতে গুলি ও বোমা হামলা চালাতে থাকে। তারা প্রথমেই চালক ও তার পাশের সিটে বসা সুবেদারকে গুলি ও বোমা  নিক্ষেপ করে। এতে চালক লুটিয়ে সিটের পাশে পড়ে যান  এবং  সুবেদার গুরুতর আহত হন। একই সময় দুর্বৃত্তরা প্রিজন ভ্যানের পিছনের দরজার তালা ভেঙে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের গুলি ও বোমার আঘাতে কনস্টেবল আতিকুল লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা পুলিশের দু’টি রাইফেল ভেঙে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শী লেগুনা চালক তাইজুল ইসলাম জানান, গুলি ও  বোমার শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে এক পুলিশ  সদস্যের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। ঘটনার পর পরই এলাকার বিপুল  সংখ্যক উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে জড়ো হন।  তাদের অনেকে বলেন, শব্দ শুনে তারা কিছু বোঝার আগেই খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ডিআইজি নুরুজ্জামান, ময়মনসিংহের এসপি মঈনুল হক, ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার সহ পুলিশ,  র‌্যাব,  ডিবি, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে  উপস্থিত হন।
যেভাবে গ্রেপ্তার রাকিব: পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছে জেমএমবির জঙ্গি রাকিব হাসান। দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে সখীপুর থানা পুলিশ। সখীপুরের তক্তারচালা গ্রাম থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময়  গ্রেপ্তার করা হয়  তাকে। সদ্য শেভ করা মুখ ও হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখে তাকে সন্দেহ করে পুলিশ। তক্তারচালা নামে ওই গ্রামটি সখীপুর ও মির্জাপুর থানার মাঝামাঝি জায়গায়। মির্জাপুর থানা পুলিশ জানায়, সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি মামলার তিন আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। সখীপুর ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি হওয়ায় তক্তারচালা গ্রামে পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া সব গাড়িতে তল্লাশি চালাতে থাকে পুলিশ। বেলা ২টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিল রাকিব হাসান। তার সঙ্গে ছিল রাসেল নামে আরও এক যুবক। তল্লাশি চালানোর সময় এসআই শ্যামল দত্তের সন্দেহ হয় রাকিবকে দেখে। কারণ তার মুখ ছিল সদ্য শেভ করা। প্রিজনভ্যান থেকে পালানোর পরই দাড়ি কামিয়েছিল রাকিব। কিন্তু সময় কম থাকায় সম্ভবত দাড়ি কাটতে গিয়ে তার গাল কয়েক জায়গায় কেটে যায়। এ ছাড়া তার থুতনির নিচে অল্প কিছু দাড়ি ছিল। এই দাড়ি দেখে সন্দেহ হওয়ায় রাকিব হাসানকে আরও ভাল করে তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় রাকিব হাসানের হাতে ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। রাকিবের পায়ে নতুন স্যান্ডেলও ছিল। সেখান থেকে আটক করে সখীপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে রাকিব হাসান তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন। জানায়, তার নাম রাসেল। পুলিশকে সে বারবার বলতে থাকে সে রাকিব হাসান নয়। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয় সে-ই রাকিব। এর আগে জেএমবির তিন আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, বোমা মিজান ও রাকিব হাসানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সখীপুর প্রশিকা এলাকা থেকে তাদের সহযোগী জাকারিয়া (২৫)-কে গাড়িসহ আটক করে সখীপুর থানা পুলিশ। জাকারিয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার জিনারপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৬০৪৮) সাগরদীঘি-সখীপুর সড়কে ফিল্মি স্টাইলে ভাঙচুর করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় সখীপুর থানার সামনে পৌঁছলে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির পিছু নেয়। অবস্থার বেগতিক দেখে ঢাকা-সখীপুর সড়কের প্রশিকা এলাকায় গাড়িটি রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা গাড়ির চালক জাকারিয়া (২৫)-কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ এসময় গাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল, ৪টি মোবাইল ফোন সেট ও রড কাটারসহ বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে ডিআইজি হতাহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব-পুলিশসহ কয়েকটি টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠানো হয়েছে কিনা- এ বিষয়টি এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে আগে থেকেই কেন অবহিত করা হয়নি- এ ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কিনা- এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিআইজি আরও জানান, নিহত পুলিশ সদস্যকে আইজিপির পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হবে। সে সঙ্গে পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সারা দেশে সতর্কতা: ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সারা দেশের কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত শতাধিক জঙ্গি সদস্য থাকায় ওই কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে জেএমবির সাজাপ্রাপ্ত শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে  কারা অভ্যন্তরে ও আশপাশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সদস্যরা রয়েছে। ত্রিশালের এ ঘটনার পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের সেলে অতিরিক্ত রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ৩ জেএমবি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় গাজীপুরের জেলা পুলিশ রিজার্ভ ইন্সপেক্টর সাইদুল করিমকে ক্লোজ এবং সুবেদার আবদুুল কাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি: ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রকাশ্যে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জেএমবির ৩ আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক, ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে উপসচিব (জেল-১) সালমা বেগম। এদিকে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন। ধরিয়ে দিতে পারলে মিলবে জনপ্রতি এক লাখ টাকা।
ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা যত মামলার আসামি
ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে জানান, ফিল্মি কায়দায় পুলিশ মেরে ছিনতাই করা জেএমবি’র তিন সদস্যের মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১-এ সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিন সজীব ওরফে তৌহিদ ও কারাগারের পার্ট-২-এ মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন। জেএমবি’র শূরা সদস্য সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে তৌহিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। তার পিতার নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৩টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ৩টিতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে তার নামে থাকা ২৪টি মামলা। সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে তৌহিদকে ২০০৬ সালের ২৫শে এপ্রিল চট্টগ্রামের সিডিএ এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদ হোসেন সুমন ওরফে বোমা মিজান ৫টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। বর্তমানে তার ২১টি মামলা বিচারাধীন। তার বাড়ি জামালপুর সদরের শেখের ভিটা গ্রামে। বোমা মিজানকে ২০০৯ সালের মে মাসে রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র শূরা সদস্য হাফেজ রাকিব হাসান ওরফে মাহমুদ চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড, ১টিতে ১৪ বছর ও ১টিতে ৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। বর্তমানে তার নামে থাকা ২৯টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রফিক হাসানের পিতার নাম আব্দুস সোবাহান। তার বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার বশিংবাড়ি গ্রামে। ২০০৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
বোমা মিজানের স্ত্রীরও ৩৭ বছর জেল
২০১২ সালের ৩রা জুন জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ ও সুইসাইড স্কোয়াডের কমান্ডার জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমের ৩৭ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। একটি অস্ত্র মামলায় ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ওই দিন ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন (৩০ বছর) ও ১৯ (এফ) ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ডের  রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অবৈধভাবে নিজেদের হেফাজতে অস্ত্র রাখার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকের যাবজ্জীবন এবং গুলি রাখার জন্য ৭ বছর করে কারদণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ছিলেন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের  (জেএমবি) সদস্য রাকিব আল হাসান।

চাচার পাঁ চালি- কৌশল by মাহবুব তালুকদার

চাচা বললেন, আমাদের জাতীয় সংসদ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
কি সেই ইতিহাস? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

প্রথমত, এমন একটি সভ্য ভব্য বিনীত বিরোধী দল বিশ্বের আর কোন দেশের সংসদে পাওয়া যাবে না। এখানে বিরোধী দলের কাজ হলো সরকারের পক্ষে গুণকীর্তন করা। দ্বিতীয়ত, সরকার ইশারা দিলে সময়মতো কোনও কোনও বিষয়ে ‘না’ বলা। জাতীয় পার্টি এ দু’টি দায়িত্ব পালনে পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছে।
তবে যে এরশাদ সাহেব বলেছেন, সরকারে জাতীয় পার্টির কোন মন্ত্রী না থাকলেই ভাল হতো।
এ কথা তিনি কখনও সংসদে দাঁড়িয়ে বলবেন না। চাচা মৃদু হেসে বললেন,
মন্ত্রীরা এরশাদের মন্ত্রী নয়, রওশনের মন্ত্রী। এ জন্যই এরশাদের এত দুঃখ। তিনি এক রাশ দুঃখ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন।
কিন্তু আপনি বিরোধী দলকে ‘সভ্য ভব্য বিনীত’ আখ্যা দিলেন কেন?
আসলে তারা জাতীয় সংসদে কখনও অনাকাঙিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না। সৌজন্যে বিনয়ে ভদ্রতায় ও আনুগত্যে তারা সংসদে বিরোধী দলের এক নতুন ধারার উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। এদের কাছ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদীয় রীতিনীতির অনেক কিছু শেখার আছে। চাচা জানালেন।
কি বলছেন আপনি?
ঠিকই বলছি। তুমি নিশ্চয়ই দেখেছো সমপ্রতি ভারতে সংসদ সদস্যরা হাতাহাতি, মারামারি, মরিচের গুঁড়ো প্রতিপক্ষের চোখে ছুড়ে দেয়া ইত্যাদি কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। তুরস্কের সংসদেও হাতাহাতি হয়েছে। এরকম ঘটনা বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পার্লামেন্টেও ঘটেছে। আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের বর্তমান সংসদে এমন কিছু ঘটবে না। বরং সরকারি দল বিরোধী দলকে যেভাবে উঠবস করতে বলবে, তারা সেভাবেই তা করবে। চাচা আরও বললেন, ‘বশংবদ’ বলে বাংলাভাষায় একটি শব্দ আছে। সংসদে বর্তমান বিরোধী দল সম্পর্কে সেটা খুব মানায়।
চাচা! কথাটা আপনি বিরোধী দলের সাংসদদের পক্ষে বললেন, না বিপক্ষে বললেন?
পক্ষেই বললাম। ‘বশংবদ’ হওয়া কি খারাপ? চরিত্রের মধ্যে বিনয়, আনুগত্য, ‘জ্বি হুজুর’ মার্কা স্বভাব, ইত্যাদি মহৎ গুণাবলী না থাকলে কখনও বশংবদ হওয়া যায় না। দল বেঁধে এমন বশংবদ হওয়ার নজির তুমি বিশ্বের আর কোন দেশের সংসদে পাবে না।
চাচার কথায় আমি মাঝে মধ্যেই বিভ্রান্তিতে পড়ি। তার অনেক কথার দ্বৈত অর্থ থাকে। অনেক সময় তিনি যা বলেন, কথাগুলো বিপরীতে দাঁড়িয়ে যায়, আবার অনেক সময় কারও বিরুদ্ধে কিছু বললে মনে হয়, তার প্রশংসা করছেন, যাকে ব্যাজস্তুতি বলা যায়। এটা চাচার এক ধরনের স্বভাব।
আমি প্রসঙ্গান্তরে যেতে চাইলাম। বললাম, চাচা, নির্বাচন সম্পর্কে কিছু বলুন।
কোন নির্বাচন? জাতীয়, নাকি উপজেলা?
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে। সে বিষয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ কি? উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সে সম্পর্কে আপনার মতামত শুনতে চাই।
উপজেলা নির্বাচনে সরকার জিতেছে।
সরকার জিতেছে মানে? ৯৭টি উপজেলার মধ্যে ৫৫টি উপজেলায় বিএনপির জোট এবং ৩৪টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের জোট জয়লাভ করেছে। আর আপনি বলছেন কিনা-
চাচা বাঁধা দিয়ে বললেন, আমি আওয়ামী লীগের কথা বলিনি। সরকারের কথা বলেছি। বিএনপি যে এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলো, এটাই তো সরকারের জয়। এর অর্থ বিএনপির শত অপপ্রচার সত্ত্বেও বোঝা গেল, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে।
আমি জানালাম, উপজেলার প্রথম পর্বের নির্বাচন সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ (মন্ত্রী নয়) বলেছেন, ‘গত সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল দেখলে বোঝা যায়, জনপ্রিয়তার একটা ধারাবাহিকতা আছে। গ্রামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো তারা হোয়াইট ওয়াশ হননি’ (প্রথম আলো, ২১শে ফেব্রুয়ারি সংখ্যা)।
চাচা ব্যাজার মুখে বললেন, হোয়াইট ওয়াশ হবে কি করে?
কোন উপজেলায় নির্বাচনকালে যাতে সাদা রঙ না পাওয়া যায়, প্রশাসনকে গোপনে তেমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া, তোফায়েল সাহেব স্পষ্টতই বলেছেন, গ্রামেগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে।
কিন্তু গ্রামেগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীরও সমর্থন আছে। সেটাই তো এলার্মিং। তারা ১২টি উপজেলায় জয়ী হয়েছে।
চাচার মুখ কালো হলো। বললেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হলে এমন ঘটনা ঘটতো না। সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিশ্চয়ই ওরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করেছে। এব্যাপারে ইলেকশন কমিশন কিছু করতে পারতো।
ইসি এতে কি করবে?
ইসি এদের মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারতো।
এটা কি কোন কথা হলো! ইসি কি কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করবে? কোন ক্ষমতাবলে?
ইসি’র হাতে কি ক্ষমতা কম? ইসি যদি মনোনয়ন প্রত্যাহারকারীদের প্রার্থিতা বাতিল না করে জাতীয় নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে পারে, তাহলে সামান্য উপজেলা নির্বাচনে কারও প্রার্থিতা বাতিল করার কোন কৌশল করতে পারতো না? ইসি না পারে কি?
চাচার কথায় ইসি’র করণীয় বিষয়ে আমি কোন কথা ভাবছি না। ভাবছি একটি সন্ত্রাসী দল হওয়ার পর হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেনে যাওয়ার পর এবং বাকিরা পলাতক থাকার পরও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা উপজেলা নির্বাচনে পার হলেন কিভাবে? যদি ওদের জনসমর্থন না থাকে, তাহলে ওদের ভোট দিলো কারা?
আমাকে চুপ থাকতে দেখে চাচা বললেন, কোন চিন্তা করো না। উপজেলা নির্বাচনের আগামী পর্বে জামায়াতে ইসলামীকে ঠেকাতে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
কি ব্যবস্থা হবে?
এই মুহূর্তে তা বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে আমরা জাতীয় নির্বাচনকে হ্যান্ডেল করতে সেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, উপজেলা নির্বাচনে তেমন সচেতন ছিলাম না। জামায়াতে ইসলামীর যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অভিযোগ আছে কিনা দেখলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।
চাচা, আরেকটা বিষয় ভাববার আছে।
কি সেটা?
উপজেলা নির্বাচনের এই পর্বে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কিন্তু একটা আসনও পায়নি।
তবে যে শুনেছিলাম তারা একটা আসন পেয়েছে।
যে একটি আসন পেয়েছে তা নাকি জাতীয় পার্টির এক বিদ্রোহী প্রার্থীর।
এটা কিন্তু ঠিক হলো না। আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি জাতীয় নির্বাচনের কলাকৌশলগুলো মোটেই কাজে লাগালো না। তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল ও বিরোধী দল কিছু আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে পারতো। তবে এখনও কিছু আশার আলো আছে।
আপনি আশার আলো দেখছেন কিভাবে?
দেখছি এ জন্য যে উপজেলা নির্বাচন তো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। অন্যান্য উপজেলাতে আগামী পর্বে নির্বাচন হবে। তখন যাতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মুখরক্ষা হয়, এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
সেটা কিভাবে সম্ভব?
কিছু পছন্দের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে আনা কি এমন কঠিন?
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সেটা হতে পারতো। আমি বললাম।
চাচা ক্ষুব্ধস্বরে বললেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি খুবই খারাপ কাজ করেছে। এটাকে গর্হিত বলবো না জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলবো, বুঝতে পারছি না।
চাচা, আপনি এমন কথা বলছেন কেন?
বলছি কি সাধে! খালেদা জিয়া জাতীয় নির্বাচনে এলেন না। তার কথা হলো, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। এখন তো নির্দলীয় সরকার নেই। হাসিনার সরকার বহাল আছে। তাহলে খালেদা জিয়া কোন মুখে নির্বাচনে গেলেন? আসলে তার মুখের কথারই কোন ঠিক নেই।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে জিতেছে এবং জিতে যাচ্ছে বলেই কি আপনি গোস্‌সা করে এসব কথা বলছেন?
না, না। তা নয়। তবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় থাকে, যে কোন ভাবেই হোক, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
সেটা কি গায়ের জোরে করা হবে?
গায়ের জোর বলছো কেন? আসল কথা হলো কৌশল। সবাই জানে সরকারি দলের কৌশলের কাছে বিএনপি কেমন ধরাশায়ী হয়ে পড়ছে। একটু থেমে চাচা মৃদু হাস্যে নিচু গলায় বললেন, তবে গায়ের জোরও একটা কৌশল বলা যেতে পারে। দেখলে, তো, সরকার এবার গায়ের জোরেই কেমন টিকে গেল!

তাণ্ডব ও চেতনা by মাকসুদুল আলম

Saturday, February 22, 2014

কারও তাঁবেদারি না করার স্লোগানে অবিচল দৈনিক মানবজমিনের ১৭তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে দেরিতে হলেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
প্রবাসে দীর্ঘদিন পত্রিকাটির একজন নিয়মিত পাঠক। গুণগত মান, সার্বিক পরিবেশন, স্বাস্থ্য বিষয়ক ফিচার ও পত্রিকাটির গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমার খুবই পছন্দের। প্রধান সম্পাদক একজন অভিজ্ঞ পেশাদার সাংবাদিক। টেলিভিশনে চেনামুখ। সাহসী সৎ নীতিবান ও নির্লোভ বলেই অধিক পরিচিত। প্রধান সম্পাদকের সঠিক দিকনির্দেশনায় সব স্টাফের সাধনায় ট্যাবলয়েড দৈনিকটির জনপ্রিয়তা পাঠক মহলে দিন দিন বছর বছর বেড়েই চলেছে বলে আমার বিশ্বাস। দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ খুব কম। হালুয়া রুটির ভাগবাটোয়ারা আর ক্ষমতার সুবিধাভোগের অপরাজনীতির প্রতি আকর্ষণ থাকলে আজ  হয়তো সম্পাদক নিজে সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই করে নিতে পারতেন। সম্পদের পাহাড় গড়তে পারতেন। খুবই স্বাভাবিক। আর  সাংবাদিক না হয়ে প্রবাসী হলে হয়তো বিদেশের মাটিতে স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন। বিলেতেও বাড়ি-গাড়ি ধন-সম্পদ অর্জন করতেন। জানের ভয় নিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফিরতে হতো না। তবে সমাজের অতিসাধারণ মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হতেন কি-না জানা নেই। মধ্যরাত পর্যন্ত টিভির সামনে সচেতন দর্শক তার সংবাদপত্র বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখার জন্য অপেক্ষা করত কিনা বলতে পারছি না। মানুষের ভালবাসা মনের অনেক বড় শান্তি। যে কেউ তা পায় না। ক্ষমতার জোরেও তা অর্জন করা যায় না। ধন-সম্পদ আর বিত্তবৈভবের পাহাড়ের বিনিময়েও এ শান্তির দেখা মেলে না। এ শান্তি উপলব্ধি করতে হয়।
ভাষা ও সংস্কৃতির মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসেই ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বেডরুমে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক সাগর সারওয়ার ও তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি। দু’বছরেও শেষ হয়নি তদন্তের সেই দু’দিন। তদন্তের অগ্রগতি জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছে হাইকোর্ট। ন্যায় বিচার এদেশে সোনার হরিণ। আশায় আশায় দিন যাবে। আশা পূরণ হবে না। শেষ পর্যন্ত গুঁড়েবালি পড়বে তাতে। ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষার কদর বাড়ে। ঢাকায় বসে প্রাণের বইমেলা। প্রদান করা হয় একুশে পদক। আমার এক বন্ধু বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পর এখন নাকি হাইজ্যাক হয়েছে একুশের চেতনাও। দলীয়করণ হয়েছে একুশে পদকও। বন্ধুর মতে, জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে এদেশে পত্রিকার পাতায় বাহারি বিজ্ঞাপন দেখা গেলেও তাতে স্থান পায় না মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর কথা। পাঠ্যপুস্তক থেকে উধাও হওয়ার পর এখন পত্রিকার পাতা থেকেও উধাও এই মহান নেতা। অথচ এ মাসেই ছিল ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকী। নব্য-চেতনার আবেগের পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে তার সব স্মৃতি। ওদিকে এক মাসের মধ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, গাড়ির নম্বরপ্লেট, সাইনবোর্ড ও ব্যক্তিগত নামফলক বাংলায় লেখার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগ হলে খুব ভাল কথা। আপত্তি থাকার কথা নয়। নির্দেশ প্রদানকারী উচ্চ আদালতেও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার প্রচলন হলে আরও ভাল হয়। এটা এখন জনদাবিতে পরিণত হয়েছে।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ টানছি। পরপর বিগত দু’সপ্তাহ জাপানের রাজধানী টোকিও সহ গোটা পূর্ব জাপানে তীব্র তুষারপাত হয়েছে। আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক বেশি বরফ পড়েছে। পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছে অনেককে। দু’দফায় প্রবল তুষার ঝড়ে একেবারেই ভেঙে পড়েছিল টোকিওর যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্যাহত হয়েছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্থানে স্থানে ঘর-বাড়ি রেলস্টেশন ও স্টেডিয়ামের ছাদ ভেঙে পড়ে, রাস্তাঘাটে বড় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে ইত্যাদি নানা কারণে দু’দফায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত  হয়েছে কয়েক হাজার লোকজন। বিগত দেড় যুগেও টোকিওতে এমন তুষারপাত হয়নি। সর্দিজ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। অবস্থার এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া যাক বাংলাদেশের দিকে। শুরু হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রথম পর্বে ১৯শে ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হলো। নির্বাচনকে ঘিরে জেলায় জেলায় ছিল টান টান উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা। ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। এ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে ছিল সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে ছিল র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী। কাগজে কলমে অরাজনৈতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও বাস্তবে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ পরিলক্ষিত হয়েছে। জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। দুধের স্বাদ কিছুটা হলেও ঘোলে মিটিয়েছে। লড়াই হয়েছে তবে হাড্ডাহাড্ডি বলা যায় না। বিস্তারিত ফলাফল পাঠকের জানা। মান-সম্মান রক্ষার ভোটযুদ্ধে আপাতত বিএনপি-জামায়াত জোট বিজয়ী হয়েছে। সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেই ভোটকেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদান, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিএনপির ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নির্বাচন কমিশন আমলে নেয়নি। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন ‘করিম রহিমের অভিযোগ চলবে না। সেলিমের অভিযোগ আমলে নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের এমন দ্বৈত ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য।’ ব্যাপক কারচুপির পরও এই ফলাফল। একেবারে ভরাডুবি। অদ্ভুত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে ৯টি উপজেলায় স্থানীয়ভাবে নিরুত্তাপ হরতাল পালিত হয়েছে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান আরও বাড়তে পারতো। সন্দেহ নেই।
অতীত নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে নেই। বেশি দূর যাচ্ছি না। বিগত দু’বছরে আমাদের দেশে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাবলী মনে করলে স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে নানা ছলচাতুরি ও কলাকৌশল। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার পর থেকে ঘটেছিল নানারকম লোমহর্ষক ঘটনা। গুলশানের কূটনীতিপাড়ায় খুন হয়েছিল সৌদি কূটনীতিক খালাফ আলী। মধ্যরাতে ঘটেছিল সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৭০ লাখ টাকার অর্থ কেলেঙ্কারির চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এরপর ঘটে ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা। আগারগাঁও এলাকায় ঘটে ব্যাপক সাংবাদিক নির্যাতন। দিনদুপুরে সিএমএম কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ক্লাবের ভেতরে ঘটে তরুণীর শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা। এরপর জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলের চিফ হুইপের পা ও মাথা ভেঙে দেয়া পুলিশের পদোন্নতি হয়। মাসখানেক  সভা-সমাবেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে চলে সরকারের মন্ত্রীদের মুখরোচক অশ্লীল কটূক্তি। এরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি বক্তব্যকে বিকৃত করে জাতীয় সংসদে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী তার বিরুদ্ধে চলে বিষোদগার। এরপর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা ফটকাবাজ বলে বেফাঁস মন্তব্য করা হয়েছিল। একের পর এক ঘটেছিল এরকম হাজারও ঘটনা। এবারও অবস্থা অনেকটা অপরিবর্তিত। যথেষ্ট মিল রয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা। হবু বিশেষ দূতকে জোর করে হাসপাতালে বন্দি করে রাখা। সাবেক বিরোধীদলীয় প্রধানকে গৃহবন্দি করে রাখা। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি লণ্ডভণ্ড করে দেয়া। অপহরণ-খুন, ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার, গুম তথা বিচারবহির্ভূত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া। আত্মরক্ষার নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীরা বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। সাবেক বিরোধীদলের নেত্রীকে লেডি লাদেন বলে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা। বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রবাসে অবস্থানরত ছেলেকে আল-কায়েদার বাংলাদেশী এজেন্ট বলে তাচ্ছিল্য করা। হেয় করা। প্রকাশ্য গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘ক্যাশ চাই ক্যাশ’ বলে বেফাঁস মন্তব্য করা। সর্বশেষে আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তাটি ইন্টারনেট ব্লগে ছড়িয়ে দেয়া ও এ সংক্রান্ত ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের কাল্পনিক গাড়িবোমা তত্ত্ব আবিষ্কার করা। সব যেন একই সূত্রে গাঁথা। সুবীর ভৌমিক হয়তো সত্যিসত্যিই দক্ষিণ এশিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে চাইছেন। প্রতিবেদন লেখার নামে দক্ষিণ এশিয়ায় হয়তো রক্তাক্ত সহিংসতার বীজ বপন করতে চাইছেন। তার কল্পিত বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তবতার তফাৎ অনেক। আগামী দিনগুলোতেও এভাবেই হয়তো ঘটতে থাকবে একের পর এক ঘটনা। সময়ের ব্যবধানে একই ছলচাতুরি ও কলাকৌশলের ভিন্ন রূপ দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে জড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ছলচাতুরি বলা যায় ভেস্তে গেছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশন করায় সবাই তা টের পেয়ে গেছে। প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে জঙ্গিবাদ কার্ড। দাম্ভিকতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে জনগণ। না বলেছে ভয়ভীতির অপসংস্কৃতিকে। অপহরণ, খুন, ক্রসফায়ার, গুম তথা বিচারবহির্ভূত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তারা। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যাকারী এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ তাণ্ডবের নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে। ব্যালটের মাধ্যমে তারা চলমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিকে ধিক্কার জানিয়েছে।

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৪, টোকিও

ভিন্নরূপী এক মেয়ে

২৩ বছরের যুবতী হারনাম কাউর। লন্ডনে একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। প্রতিদিন তিনি যখন স্কুলে যান, রাস্তায় বের হন, কোন ফাস্টফুডের দোকানে প্রবেশ করেন তখন সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকে নিয়ে মজা করে।
হাসাহাসি করে। তাতে হারনামের কিছু এসে যায় না। তাকে নিয়ে এই হাসাহাসির কারণ, হারনাম যুবতী হলেও তার মুখভর্তি দাড়ি। কুচকুচে কালো দাড়ি দেখে তিনি যে মেয়ে তা ঠাহর করা কঠিন। হারনাম এসব মেনে নিয়েছেন। বিশ্বাস করেন, বিধাতা ইচ্ছে করে তাকে দান করেছেন দাড়ি। তা তিনি কাটবেন না। কেউ হাসাহাসি করলে তাতে তার কি! হারনাম বলেন, ঈশ্বরই আমাকে এভাবে সৃষ্টি করেছে। এতেই আমি খুশি। এগার বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্বাভাবিক একটি মেয়ে। এরপরই তার মুখে দেখা দিতে থাকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এক সময় বিরক্ত হয়ে যান তিনি। অন্য মেয়েদের মতো কোমল মসৃণ ত্বক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুখ শেভ করেন, ব্লিচিং করেন। সপ্তাহে দু’বার এ ধারা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় না। স্কুলে সবাই তাকে ক্ষেপাতে থাকে। দাড়ির ইংরেজি বিয়ার্ড বলে অনেকে তাকে বিয়ার্ডো নামে ডাকতে থাকে। কেউ বা তাকে নারী-পুরুষ বলে ডাকতে থাকে। এতে এক সময় তিনি বিরক্ত হন। নিজেকে আটকে রাখেন ঘরের মধ্যে। নিজের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। অনেকবার সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। বয়স যখন ১৬ বছর তখন তিনি শিখ হিসেবে দীক্ষা নেন এবং দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। আস্তে আস্তে তার মধ্যে আস্থা ফিরতে থাকে। হারনাম কাউর বলেন, এখন আমার মধ্যে অনেক বেশি নারীত্ব। আমার শরীরে যথেষ্ট আবেদন আছে। আমি এটা পছন্দও করি। তিনি আরও বলেন, দাড়ি নিয়ে একজন নারী হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে আমার কোন কষ্ট হয় না। আমি অবলীলায় নারীদের কেনাকাটার দোকানে চলে যাই। আগে ভয় পেতাম যদি মুখে দাড়ি দেখে আমাকে পুরুষ ভেবে বের করে দেয়! কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই। আমি স্কার্ট পরি। অন্য মেয়েদের মতো পোশাক পরি। গহনা পরি। অন্য মেয়েদের মতো আমার নখ সাজাই। তার সঙ্গে রয়েছে ১৮ বছর বয়সী ভাই। তিনি বলেন, হারনাম সুখে আছে। সে যা চায় তাই করে। করতে পারে। এটা তার জন্য অনেক ভাল বিষয়। হারনাম বলেন, আমার আসল সৌন্দর্য হলো আমার ভেতরের রূপ। আমার মুখে দাড়ি। এটা আমার বাইরের চেহারা। আমার ভিতরটা পরিষ্কার।

ত্রিমুখী প্রেম কাল হলো সূচীর by নুরুজ্জামান লাবু ও উৎপল রায়

অনেক প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিল সুন্দরী বিমানবালা আফরোজা ইসলাম সূচী। কেউ তাকে জোর করে কাছে পেতে চেয়েছিল কেউবা গভীর প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েছিল তার।
অন্যদিকে সূচী নিজেই যার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিল ভালবাসার সেই মানুষটি বিয়ে করে ফেলে অপর এক নারী চিকিৎসককে। এ নিয়ে চলে দীর্ঘ টানাপড়েন। শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথই বেছে নেন তিনি। পরিবার, পুলিশ ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত সূচীর পরিবারের এক সদস্য জানান, নানামুখী প্রেম ও প্রতারণার চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সূচী। আকর্ষণীয় চেহারা হওয়ার কারণে প্রথম দেখাতেই সবাই তার প্রেমে পড়ে যেত। এমনকি বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া স্বামী মোবারকও তাকে পুনরায় ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এসব কারণেই সূচী শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার মতো কঠিন পথটি বেছে নেয়। গত বুধবার দুপুরে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলায় সবার অগোচরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। গতকাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পুলিশ ওই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে সূচীর আত্মহত্যার আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করে। তবে কিছু উদ্ধার করা যায়নি। ঘটনার তদারককারী উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় ইউডি মামলা হয়েছে। পুলিশ সূচীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লন্ডন প্রবাসী মোবারকের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পরও মোবারক তার পিছু ছাড়ছিলেন না। নানা সময়ে সূচীকে ত্যক্ত-বিরক্ত করতেন তিনি। মোবাইলে আবার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য চাপ দিতেন। এমনকি একদিন এয়ারপোর্ট এলাকায় গাড়ি থেকে নামার পর সূচীর ব্যাগ নিয়ে পর্যন্ত টানাটানি করেন মোবারক। বিচ্ছেদের পরও মোবারক সূচীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। এদিকে মোবারকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সে থাকা অবস্থায় মোর্শেদের সঙ্গে পরিচয় হয় সূচীর। একপর্যায়ে দু’জনে গভীর প্রেমে মত্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রতারক প্রেমিক মোর্শেদ সূচীর পাশাপাশি এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গেও প্রেম চালিয়ে যেতে থাকেন। মোর্শেদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে তাদের প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ওই নারী চিকিৎসক। নিজের পেটে মোর্শেদের সন্তান জানিয়ে মোর্শেদকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন তিনি। মোর্শেদও বাধ্য হয়ে ওই নারী চিকিৎসকে বিয়ে করেন। এসব কিছুই জানতেন না বিমানবালা সূচী। মোর্শেদের প্রেমে অন্ধ হয়ে প্রেমিকের সম্মান রক্ষায় বিয়েতে সম্মতি দেন তিনি। কিন্তু মনের ভেতরে প্রতারিত হওয়ার তীব্র যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। মায়ের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করলেও আর কেউ তার এই কষ্ট বুঝতে পারেনি। সূত্র জানায়, মোর্শেদের প্রেমে প্রতারিত হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সূচী।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, গত বছরের জুন মাসে সূচীর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যোগদান করা কেবিন ক্রু মির্জা আদনানও তার সঙ্গে প্রেমে জড়ানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়েও বিরক্ত ছিলেন সূচী। কিন্তু আদনান ছিলেন নাছোড়বান্দা। সূচীর সহকর্মীদের একজন জানান, এক সময় আদনানের প্রতিও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন সূচী। ত্রিমুখী প্রেম আর সাবেক স্বামীর পেছনে লেগে থাকা, সব মিলিয়ে নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যায় সূচীর। চারদিকের মানুষের প্রেম-প্রতারণায় বেঁচে থাকাটা তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে।
এদিকে আদরের সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গেছেন সূচীর মা-বাবা। মা সুলতানা ইসলাম খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটার বুকভরা যন্ত্রণা ছিল। এই যন্ত্রণা সইতে না পেরেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সূচী আমাকে মুঠোফোনে বলে ‘মা তোমাকে খুব মিস করছি’। সেদিনই আমার মনে হয়েছে কিছু একটা হয়েছে। আমি তাকে হাজারবার জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি। অথচ সে সবসময় সব কিছু আমার সঙ্গে শেয়ার করতো। কিন্তু এমন কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মেয়েটা আমার কাউকে কিছু বলে নাই।
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা গেছে, বিমানবালা সূচীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৫। সূচীর মা সুলতানা ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। থানা সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে। এ জন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তদন্তের অংশ হিসেবে সূচীর কথিত প্রেমিক মাহবুব মোর্শেদ, মির্জা আদনান, বান্ধবী লিকমাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে নজরদারির কারণে এক প্রকার ‘গৃহবন্দী’ অবস্থায় দিন কাটছে সূচীর কথিত প্রেমিক মোর্শেদের। স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়া ছাড়া ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না তিনি। গতকাল মোর্শেদের বাসস্থান উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডের ২২ নম্বর ভবনের বাসায় গিয়ে কথা বললে প্রথমে বাসার নিরাপত্তাকর্মী হাবিব জানায়, স্যার (মোর্শেদ) কদিন ধরে অসুস্থ। কারও সঙ্গে যোগাযোগ বা কথা বলছেন না। পরে আসতে হবে। পরে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব মোর্শেদের ছোট ভাই পরিচয় দেয়া সোনাল নামে একজন জানান, বিমানবালা সূচীর সঙ্গে মোর্শেদের কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তিনি বলেন, সূচীর সঙ্গে তার কোন প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক ছিল না। তার ভালবাসার সম্পর্ক ছিল ‘অন্য কারো’ সঙ্গে। এ বিষয়ে পুলিশকে যা বলার, বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না। সূচীর মৃত্যুর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তাকেই (মোর্শেদ) দায়ী করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা (সূচীর পরিবার) কেন এমন বলছে, সেটা তারাই ভাল বলতে পারবে’।
ঘটনার তদারককারী উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, সূচীর মা একটি ইউডি মামলা করেছেন। তদন্ত কাজও চলছে সমানতালে। তদন্তের গতি ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে ভিকটিমের পরিবারের ওপর। তারা যদি অভিযোগ না করে তাহলে আইনানুযায়ী পুলিশ তার ভূমিকা পালন করবে। এদিকে গতকাল দুপুরে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থল সূচীর বাসস্থান উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় সূচীর মা সুলতানা ইসলাম, বোন ও আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়। এসময় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ফ্ল্যাটে থাকা সূচীর ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র তার মাকে বুঝিয়ে দেন।

যৌন জীবনে অতৃপ্ত তাই!

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের চেসনির বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী এক নারীকে তার ৭২ বছর বয়সী স্বামী নিজের বোনদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে বলেছেন।
ওই দম্পতির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। জরুরি নম্বর ৯১১- এ ফোন করে শেষ পর্যন্ত পুলিশি সহায়তা চেয়েছেন ওই নারী। পুলিশের কাছে তিনি বলেছেন, গত ২ বছর তাদের যৌন জীবনে কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তেমন একটা ভালো সময় পার করছিলেন না তারা। ফলে, দাম্পত্য জীবনে সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দম্পতিদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা বা থেরাপি নেয়ার ব্যাপারে ওই নারী তার স্বামীকে প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হয়ে উল্টো তার স্বামী তাকে বলেন তার বোনদের সঙ্গে রাত কাটাতে। এতে তাদের যৌন জীবন আরও উত্তেজনাময় হয়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন স্বামী। স্বামীকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি সে ধরনের মানুষ নন। ক্ষুব্ধ হয়ে ৯১১ নম্বরে ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান তিনি। ওই দম্পতির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। একই সঙ্গে স্বামীর বোনেরা যাতে কখনও তাদের বাড়িতে ঢুকতে না পারেন এবং তাদের পারিবারিক সম্পর্কে নাক না গলান, তা নিশ্চিতেও পুলিশি সহায়তা চান ওই নারী। 

ভোটাররা সিদ্ধান্তে অনড় by সাজেদুল হক

Friday, February 21, 2014

তারা ছিলেন একদিনের বাদশা। পাঁচ বছরে একবার ব্যালটের মাধ্যমে জানান দিতেন নিজেদের ক্ষমতার। ৫ই জানুয়ারি তাদের কাছ থেকে সে ক্ষমতাও কেড়ে নেয়া হয়।
দেশের মালিকরা দেখলেন তাদের কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই সরকার গঠন হয়ে গেছে। তবে আবারও সুযোগ পেয়ে নিজেদের ক্ষমতার জানান দিলেন অসহায় জনগণ। যদিও এক সহযোগী দৈনিকের ভাষায়, এই হলো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। ক্ষমতার কেন্দ্রে এ নির্বাচন কোন পরিবর্তনই আনবে না। তবুও আপাত অসহায়, পর্যুদস্তু ভোটাররা প্রমাণ করলেন, তারা নিজ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের পর যে বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাজনীতি থেকে আউট মনে হচ্ছিল উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বে সে জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় জয়ী হয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে- বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৪২, আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ৩৪, জামায়াত সমর্থকরা ১২, জাতীয় পার্টি সমর্থকরা একটি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন। এতে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত জোট একসঙ্গে ৫৪টি উপজেলায় জয়ী হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন একটি বার্তা পরিষ্কার করেছে, সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকা বিএনপিই এখন তৃণমূলে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। ৫ সিটি করপোরেশনের পর ৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলা নির্বাচনেও এটা প্রমাণ হয়েছে সুযোগ পেলে মানুষ বিএনপিকেই ভোট দেবে। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে কমপক্ষে ১০টি জেলায় আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করেছে। নির্বাচনে সরকারি দলের সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে আবারও। জাল ভোট, অস্ত্রবাজি আর কেন্দ্র দখলের ঘটনাও ঘটে। এ কারণে নয়টি উপজেলায় বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেন। শক্তির প্রদর্শনীর ঘটনা না ঘটলে বিএনপি আরও বেশি উপজেলায় জয়ী হতেন বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও এ বিজয় বিএনপির রাজনীতির জন্য অক্সিজেন নিয়ে আসবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময়ই তৃণমূলে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ। তৃণমূলই ছিল দলটির সবচেয়ে বড় ভরসা। কিন্তু একের পর এক স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয় প্রমাণ করে সে ভরসা নড়বড়ে হয়ে এসেছে অনেকখানি। বৃহস্পতিবারের উপজেলা নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪টিতে জয় পেলেও ২০০৯ সালের এসব উপজেলার নির্বাচনে প্রায় দ্বিগুণ আসনে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবারের উপজেলা নির্বাচন সবচেয়ে বিস্ময় নিয়ে এসেছে জামায়াতের জন্য। এ দলের ১২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন, যা বিস্ময়করই বটে। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচার আর সহিংসতাকে ঘিরে দলটি পুরোমাত্রায় কোণঠাসা। সংসদ নির্বাচনের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ দলটির নেতারা প্রায় সবাই পলাতক। এ অবস্থাতেও তারা জয়ী হয়েছেন, যে জয় রাজনীতির মাঠে তাদের ফেরার উপকরণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। আর তৃণমূলের রাজনীতিতে জামায়াত যে ক্রমেই প্রবেশ করছে এ ফল তারই প্রমাণ। অন্যদিকে, এ নির্বাচন মৃত্যু বার্তা নিয়ে এসেছে জাতীয় পার্টির জন্য। সংসদে কথিত প্রধান বিরোধী দল উপজেলা নির্বাচনে মাত্র একটি উপজেলায় জয়ী হয়েছে। অথচ যেসব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে এসব এলাকায় একসময় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল। সংসদ নির্বাচনে প্রভাবশালী দল হিসেবে আবির্ভূত ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন উপজেলা নির্বাচনে কোথাও জয়ী হয়নি। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তোলে। প্রায় তিন মাস আগে আপলোড করা আল-কায়েদা নেতা আল-জাওয়াহিরির একটি কথিত অডিও বার্তা বাংলাদেশে আলোচনায় আসে উপজেলা নির্বাচনের আগে। ওই বার্তায় বাংলাদেশীদের জিহাদে যোগ দেয়ার ডাক দেন তিনি। এ বার্তা নিয়ে আলোচনার ঝড় তোলেন ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের আগে আবার ফিরে আসে জঙ্গি কার্ড। তবে এ কার্ড কোন সফলতা নিয়ে আসেনি। বরং বুমেরাংই হয়েছে। সরব না থাকলেও হেফাজত সমর্থকরা নীরবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। উপজেলা নির্বাচনের ফল কমপক্ষে দু’টি জরিপকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। যদিও এর ভিন্ন ব্যাখ্যাও দেয়া সম্ভব। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের দু’টি জরিপে পরিষ্কার করে নির্বাচনে বিএনপির বিপুল জয়ের কথা বলা হয়েছিল। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই)-এর এক জরিপে বলা হয়, এখন ভোট হলে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। যদিও এ জরিপে প্রায় ১৪ ভাগ উত্তরদাতা কাকে ভোট দেবেন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তারাই নির্বাচনে তুরুপের তাস হবেন বলে মানবজমিনে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচন তার সত্যতা প্রমাণ করে। দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের জরিপেও এখন নির্বাচন হলে কম ব্যবধানে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখানেও ১৪ দশমিক ৫ ভাগ উত্তরদাতা বলেন, তারা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি কাকে ভোট দেবেন। মূলত এ ভাসমান ভোটাররাই বাংলাদেশের নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে থাকেন। বহু মতের ভীতিহীন চর্চাই গণতন্ত্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস বুকাননের ভাষায়, মুক্ত মানুষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির সবচেয়ে ভাল মাধ্যম ব্যালট। বাংলাদেশে ব্যালটের পরিবর্তে চলছে নির্মূলের রাজনীতি। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন এ বার্তাই দিয়ে গেল আপনি চাইলেও ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের ক্লাব থেকে মাইনাস করতে পারবেন না।

তপ্ত মরুভূমিতে একাকী ৪ বছরের শিশু...

Wednesday, February 19, 2014

সুবিশাল, তপ্ত মরুভূমিতে মাত্র ৪ বছর বয়সী একটি শিশু এদিক-সেদিক ঘুরছে। পিতামাতা, ভাইবোন বা অন্য কোন আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে নেই। মারওয়ান নামে অবুঝ শিশুটির নিঃসঙ্গ মরুভূমি যাত্রার হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন জাতিসংঘের এক কর্মী।
যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সিরিয়া থেকে পালানোর সময় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সে। জর্ডান ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে একা একটি শিশুকে দেখতে পান জাতিসংঘের কর্মীরা। তার হাতে ছিল কাপড়চোপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে ভর্তি একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ। জর্ডানে অবস্থিত জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর রেফ্যিউজিস’র (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র অ্যান্ড্রু হার্পার শিশুটিকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন। এরপর জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা ছোট্ট শিশুটিকে সীমান্ত পার হয়ে জর্ডানে ঢুকতে সাহায্য করেন। এরপরই মারওয়ানের পরিবারকে পাওয়া গেছে জানিয়ে একটি টুইট করেন হার্পার। দ্বিতীয় অপর একটি ছবি টুইটারে আপলোড করেন। তাতে জাতিসংঘের এক ত্রাণকর্মীকে সীমান্ত অতিক্রমে শিশুটিকে সাহায্য করতে দেখা যায়। জর্ডান সীমান্ত অতিক্রম করার অল্প সময় পর মারওয়ান নিরাপদে তার মা ও পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে পুুনর্মিলিত হয়েছে বলে টুইট করেন হার্পার। এ খবর দিয়েছে মেইল অনলাইন। শিশুটি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে এক রিপোর্টার টুইটারে লেখেন পরিবারের সদস্যদের চেয়ে মাত্র ২০ কদম দূরে ছিল মারওয়ান। এক পর্যায়ে তারা তাকে হারিয়ে ফেলেন। মারওয়ানের ছবিটি সিরিয়া যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া বা পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয় ভাগ্য-বঞ্চিত শিশুদের প্রতিচ্ছবি। হার্পার গত কয়েক দিনে সিরিয়া যুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতায় শিশুদের মানবেতর পরিস্থিতি ক্যামেরাবন্দি করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন।

কে এই কাবুল by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

Tuesday, February 18, 2014

লন্ডন থেকে জাহাজে করে মিতসুবিশি শোগান ব্র্যান্ডের রুপালি রঙের দু’টি এবং কালো রঙের একটি পাজেরো এসে নামে ভারতের মুম্বইয়ের জওয়াহরলাল নেহরু সমুদ্র বন্দরে।
এমডি৫১ সিসিএন, এক্স৮৭৫ ওএভি এবং এলভি৫২ জেডআরও নাম্বারের গাড়ি তিনটি সেখান থেকে গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী কাবুল মিয়া। ভারতের মাল্টিপল ভিসাধারী কাবুল মিয়া গাড়ি পৌঁছার আগেই ২৩শে সেপ্টেম্বর পৌঁছে গিয়েছিলেন। দামে দরে বনিবনা হওয়ায় সম্ভবত প্রথম গাড়িটি (রুপালি রঙের) ভারতেই বিক্রি হয়ে যায়। দুই সহযোগী আসকার উদ্দিন এবং আমতর আলীকে সঙ্গে করে বাকি দু’টি গাড়ি নিয়ে কাবুল মিয়া বাংলাদেশের পথে রওনা হন। প্রবেশপথ হিসেবে পছন্দ করেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা (সুতারকান্দি) ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। গাড়ি নিয়ে নির্বিঘ্নে চেকপোস্ট পেরোনোর ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিল। কাবুল মিয়া, আসকার উদ্দিন ও আমতর আলী গাড়ি নিয়ে  ঢোকার আগে তিন দিন ওই সীমান্তে মহড়া দিয়েছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। ৩০শে অক্টোবর বিকালে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রথম প্রচেষ্টা চালান তারা। ভারতীয় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে সব কাজ সম্পন্নের পরও সবুজ সঙ্কেত না পেয়ে ফিরে যান। পরদিন ৩১শে অক্টোবর সকালে ভারতের করিমগঞ্জের নোয়াগাঁয় ইমিগ্রেশন শেষে শেওলা চেকপোস্টের কাছে আসতেই কাবুল মিয়া বুঝতে পারেন এ দিনও ঠিক ছিল না সাজানো ছক। ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই। দায়িত্বরতদের ফাঁকি দিয়ে তল্লাশি চৌকির প্রবেশ ফটকের বাঁশের খুঁটির ডান পাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়েন গাড়ি দু’টি নিয়ে। রওনা হন অজানা গন্তব্যে। তবে সিলেট নগরীতেই যে গন্তব্য ছিল তা জানা যায় রাতে গাড়ি উদ্ধারের পর। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সিলেট নগরীর উপ-শহর ও কুমারপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয় গাড়ি দু’টো। তবে মানবজমিন-এর অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। একটি সূত্র বলছে, গাড়ি দু’টো পুলিশের জিম্মায় এসেছিল দিনেই। সূত্রটি এও নিশ্চিত করে আসকার উদ্দিনের ভাই একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের তত্ত্বাবধানেই গাড়িগুলোর সন্ধান পায় পুলিশ। রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের পর গাড়ি দু’টোর পাশাপাশি এর ভেতরে কি থাকতে পারে এ নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এমনকি গাড়িতে করে ৬৫ লাখ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৮২ কোটি টাকা) মূল্যের সোনা এসেছে এমন খবরও প্রচারিত হয়। পাশাপাশি গাড়িতে জাল পাউন্ড ছিল জানা গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে এমন খবরের সত্যতা তারা খুঁজে পাননি।
চল্লিশ বছর বয়সী কাবুল মিয়ার গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি গাড়ি নিয়ে একাধিকবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে দুই পাজেরা আটকের পর পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তবে আগের দফাগুলোতে ছক ঠিকঠাক থাকায় সফলতারই দেখা পেয়েছিলেন। আগের সফলতায় উজ্জীবিত হয়ে এ দফা সঙ্গী করেন আরও দু’জনকে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মো. কাবুল মিয়া ওরফে মো. কাবুল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নিহালের নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল বারী কলাইয়ের ছেলে। বৃটিশ পাসপোর্টধারী (নং পি ৪৫৪৭৯৩৩৫৬) কাবুল মিয়ার বাসা সিলেট নগরীর উপ-শহরে। এফ-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৭৭ নম্বর বাসাটি তার। একটি সূত্রমতে, কাবুল মিয়ার আরও একটি পাসপোর্ট আছে আবদুর রব ড্যানি নামে। তার সঙ্গী আসকার উদ্দিন বিয়ানীবাজার উপজেলার আঙ্গুরা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। বৃটিশ পাসপোর্টে (নং পি ৫০৮৮৯৮৫৫৮) তার নাম আসকার উদ্দিন হলেও কবির আলী এবং আজগর আলী নামেও তিনি নিকটজনদের কাছে পরিচিত। অপর সঙ্গী বৃটিশ পাসপোর্টধারী (নং ৬৫২৪৯১৪৮৭) আমতর আলী ওরফে আনোয়ার বালাগঞ্জের ওসমানীনগর থানার ঘোষগাঁওয়ের মৃত মজম্মিল আলীর ছেলে। তারও একাধিক নাম রয়েছে তবে বেশি পরিচিতি চান্দু ওরফে বাট্টি চান্দু নামেই।
তারা চোরাকারবারী দলের সদস্য এবং এর আগেও এভাবে বিভিন্ন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে দামি গাড়ি প্রবেশ করিয়েছেন- তদন্তে এর প্রমাণ পেয়েছে বলে রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করে পুলিশ।
বৃটেনের রয়েল অটোমোবাইল ক্লাবের সদস্য হিসেবে কাবুল মিয়া ও তার সঙ্গীরা গাড়িগুলো ‘কারনেট দ্য প্যাসেজের’ আওতায় নিয়ে আসেন। ‘দ্য কাস্টমস কনভেনশন অন দ্য টেম্পোরারি ইমপোর্টেশন অব প্রাইভেট ভেহিক্যালস অ্যান্ড কমার্শিয়াল রোড ভেহিক্যালস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক আইন আছে, যা ‘কারনেট দ্য প্যাসেজ’ নামেই সারা বিশ্বে পরিচিত। এ সুবিধার আওতায় ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন এমন শর্তে কোন পর্যটক ইচ্ছা করলে তার নিজের গাড়িটি নিয়ে বিনা শুল্কে যে কোন দেশে প্রবেশ করার আইনগত অধিকার রাখেন। কারনেটের মাধ্যমে নিয়ে আসার কারণে ভারত থেকে বের করে নিয়ে আসতে কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা কেবল বাংলাদেশে গাড়ি নিয়ে প্রবেশে। কারনেটের গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্ক পরিশোধ করতে না হলেও ফিরিয়ে নেয়ার নিশ্চয়তা হিসেবে প্রযোজ্য শুল্ক (গাড়ির মূল্যের ৪০০ শতাংশ) জামানত দিতে হয়। কারনেটের অপব্যবহারের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ শর্ত আরোপ করেছিল। শুল্ক ফাঁকি দিতেই আগে থেকে ছক তৈরি করে রেখেছিলেন কাবুল মিয়া।

কারনেট সংক্রান্ত জাতিসংঘের কোন সনদে স্বাক্ষর না করলেও বাংলাদেশও এতদিন ধরে এ সুবিধা দিয়ে আসছিল। ২০০৯ সাল থেকে বাড়তে থাকে কারনেট সুবিধার অপব্যবহার। ওই বছর কারনেট সুবিধায় আসা ১৩টি গাড়ির মধ্যে ৫টিই ফেরত যায়নি। পরের বছর এ হার আরও বাড়ে। ৪৯টি গাড়ির মাত্র ৪টি শুধু ফেরত যায়। কারনেটের গাড়ি ফেরত না যাওয়ার প্রথা ভয়াবহ রূপ নেয় ২০১১ সালে। ওই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬৬টি গাড়ি এলেও তার একটি গাড়িও ফেরত যায়নি। কারনেটের অপব্যবহার বেপরোয়া গতিতে বাড়তে থাকায় ২০১১ সালে প্রযোজ্য শুল্ক কর (গাড়ির মূল্যের ৪০০ শতাংশ) গ্যারান্টি হিসেবে রাখার নিয়ম করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবুও লাগাম টানতে না পেরে শেষমেশ ২০১৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ এ সুবিধাটি বাতিল করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৩ সাল পর্যন্ত কারনেট সুবিধায় ৩১৫টি গাড়ি বাংলাদেশে এসেছে যার ১১৮টিই ফেরত যায়নি। আরও ৭০টি গাড়ি খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বন্দরে। মানবজমিন-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফেরত না যাওয়া গাড়ি যাদের নামে এসেছে তাদের বেশির ভাগই সিলেটের বাসিন্দা।

মৃদুল চৌধুরীর জবানিতে- চোখবাঁধা ৬ দিনের রোমহর্ষক বর্ণনা by মহিউদ্দীন জুয়েল

‘ওদের টার্গেট ছিল আমাকে খুন করা। খুন করার পর লাশ লুকাতে চেয়েছিল। অপহরণের পর তাদের কথাবার্তায় তাই শোনা গেছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম আমার অপরাধ কি? তারা শুধু বলেছে, তুই চুপ থাক, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কর।’
কথাগুলো বলছিলেন অপহরণের ৬ দিন পর উদ্ধার হওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে বাসার সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেলেও তার বা পরিবারের কাছে কোন মুক্তিপণ দাবি করেনি। বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ভোর রাতে কুমিল্লায় সড়কের পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। তাকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘোরাঘুরি করলেও তাদের কাউকেই চিনতে পারেননি মৃদুল। কুমিল্লা থেকে উদ্ধারের পর গতকাল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন মৃদুল  চৌধুরী। ঘটনার বর্ণনা দেন নিজের জবানিতে। বলেন, ‘আমার দিন কিভাবে কেটেছে তা বলতে পারবো না। আমি বেঁচে আছি। তারা আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। ছোরা দিয়ে আঘাত করেছে। ওই ঘটনা আর মনে করতে চাই না। দুঃসহ দিন গেছে আমার। যেদিন বাসা থেকে বের হই সেদিন রাস্তার ওপর ওরা ঘাপটি মেরে বসেছিল। ওরা মানে সন্ত্রাসীরা। যাদেরকে কেবল একবার দেখেছি। এরপর আর কিছু মনে নেই। মাইক্রোবাসে মুখোশ পরিয়ে দিলে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায় আমার। যারা আমাকে তুলে নিয়ে গেছে তাদেরকে আমি চিনতে পারিনি। সত্যি চিনি না। কেন অপহরণ করেছে তা-ও জানি না। যে গাড়িতে নিয়ে গেছে তার রঙ ছিলো কালো। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যায় না। ঘটনার দিন ৩-৪ জন লোক আমার গতি রোধ করে। এরপর পিস্তল ঠেকিয়ে জোর করে গাড়িতে ওঠায়। বলে না উঠলে গুলি করবে। আমি ভয়ে উঠে পড়ি। মাইক্রোতে তুলেই ওরা মোটা কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে। বলে, কথা বললেই গুলি করে রাস্তায় ফেলে দেবো। চিৎকার করিস না। যদি তা করিস তাহলে মরণ ডেকে আনবি। আমি শুধু বলেছি, তোমরা কারা? তারা বলেছে, আমরা কারা বুঝতে পারবি পায়ে গুলি করার পর। আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা কোথায় রাখবে তা নিয়ে ঝামেলায় পড়ে যায়। এই সময় তারা কয়েকজন ফোনে কথা বলতে থাকে। মোবাইলের ওপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন তাদেরকে নির্দেশ দেয় দুই দিন চট্টগ্রাম শহরে রাখতে। সেই মোতাবেক ওরা আমাকে বেশ কয়েকটি বাড়িতে নিয়ে যেতে টানাহেঁচড়া করে। প্রথম দিন রাতে দেখলাম আমার হাত-পা বাঁধা। মুখোশ খুলে দিলে দেখি একটি বিশাল বাড়ি। চেয়ারের ওপর বসে আছি। চারপাশে আবছা অন্ধকার। কিছুই দেখছিলাম না। কিছু শুকনো খাবার একটি থালাতে রাখা হয়েছে। আমার পেছন থেকে একজন লোক মাথায় জোরে থাপ্পড় দিয়ে বলে, এগুলো খেয়ে নে। এরপর পিস্তলের বাঁট দিয়ে জোরে আঘাত করা হয় পেছনের দিকে। আমাকে ওরা লোহার রড দিয়ে শুইয়ে খুব পিটিয়েছে। আমি চিৎকার করছিলাম। আকুতি জানাচ্ছিলাম। ওদের একজন আমার হাউমাউ শুনে বললো, মাইরটা ভালই হচ্ছে। আরও পিটা। যেন পঙ্গু হয়ে যায়।’ নির্যাতনের চিত্র দেখাতে গিয়ে এ সময় মৃদুল তার পরনের কাপড়ের খানিক অংশ উপরে উঠিয়ে দুই পা মেলে ধরেন। তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে দেখুন লোহার রডের আঘাত। দুই উরুতে ধারালো ছুরি দিয়ে পোঁচ দিয়েছে। আমি মাইরের সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। একদিন জ্ঞান ফেরার পর দেখি তারা বলছে ওকে মেরে ফেলে দেয়ার নির্দেশ আসছে ওপর থেকে। আমি বললাম, ভাই কি জন্য আমাকে ধরেছেন? বাসায় সবাই টেনশনে আছে। আমাকে ছেড়ে দিন। জবাবে তারা বললো, বাসায় গিয়ে কাজ নেই। সোনা বিক্রি করে অনেক টাকা কামিয়েছিস। এইবার দুনিয়া ছেড়ে চলে যা। বলেই আবার মাইক্রোতে ওঠায়।’ কুমিল্লা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার সময় ওরা আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। আবার মুখোশ পরিয়ে দেয়। শব্দ করতে যাতে না পারি সে জন্য মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। গাড়ি যখন চলছিল তখন আমার শরীরে কোন শক্তি নেই। আওয়াজ বের হচ্ছিল না। একজন ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে বললো গাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম দিয়ে সোজা ঢুকবে।’ রাস্তায় ফেলে দেয়ার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গভীর রাতের দিকে একজন বলে ওঠে টহল পুলিশ রাস্তায় বেরিয়েছে। যদি গাড়ি তল্লাশি করে তাহলে ধরা পড়ে যেতে পারি। এই কথা শুনে ড্রাইভার বললো, ভাই ওকে গুলি করে ফেলে দেন। ঝটপট এই রাস্তা দিয়ে চলে যাই। আরেকজন বললো, গুলি করলে বেশি দূর যেতে পারবো না। তার চেয়ে বিপদ ডেকে লাভ নেই। মুখে ওষুধ লাগিয়ে দে। তারা আমাকে চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। এরপর গামছা দিয়ে বেঁধে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। আমি কিছুই মনে করতে পারি না। ভোররাতের দিকে হুঁশ ফিরে আসে। তখন এক লোক আমাকে বলে, কি হয়েছে? আমি কথা বলতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পরে জানতে পারি ওই ব্যক্তি নৈশপ্রহরী। ’
তিনি বলেন, কেন তারা আমাকে অপহরণ করলো, কি তাদের উদ্দেশ্য ছিল কিছুই বলেনি। কোন ধরনের টাকাও দাবি করেনি। তবে ওদের টার্গেট ছিল আমাকে খুন করা। এই কথা তারা বারবারই বলেছে।’ 
মৃদুল চৌধুরী অপহরণ হওয়ার পর তাকে কুমিল্লা থেকে নিয়ে এসে বিকাল ৫টায় নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েলে ভর্তি করানো হয়। এই সময় তার পরিবারের লোকজনকে বিমর্ষ দেখা যায়। কথা বলতে চাইলে ছোট ভাই শিমুল চৌধুরী বলেন, আমরা আতংকে আছি। সন্ত্রাসীরা মৃদুলের কোন বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেনি। তারা আবার আসবে। এইবার হয়তো বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেবে কে? চট্টগ্রাম নগর পুলিশ জানায়, গত ১১ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাসা থেকে অপহরণ হন মৃদুল চৌধুরী। বাসা থেকে বের হলে র‌্যাব পরিচয়ে একটি দল তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর কোন খোঁজ মেলেনি এই ব্যবসায়ীর। ঘটনার পরপরই অপহৃতের ছোট ভাই অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে  কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, র‌্যাবের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জের ধরেই মৃদুল চৌধুরীকে অপহরণ করা হয়েছে। মৃদুল নগরীর নিউ মার্কেটের দুলহান জুয়েলার্স নামের একটি স্বর্ণের  দোকানের মালিক। গত বছরের অক্টোবরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা করেছিলেন। আর ওই ঘটনার জের ধরেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। অপহৃতের ভাই শিমুল চৌধুরী এই বিষয়ে বলেন, আমাদের বাড়ি হাটহাজারীর মিরেরখিল এলাকায়। কিছুদিন আগে ভাই মৃদুল ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৮০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় র‌্যাব ২-এর মেজর রাকিবুল আমিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন। বাকি দুই অভিযুক্ত হচ্ছেন র‌্যাবের সোর্স ফাহাদ চৌধুরী টিপু ও গাড়িচালক বাবুল পাল। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কথা হয় নগরীর কোতোয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন  সেলিমের সঙ্গে। তিনি মামলা দায়েরের বিষয়টি সত্যি বলে জানান। এই বিষয়ে বলেন, প্রথম দিকে একটি জিডি করা হয়েছিল। পরে তা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অপরাধীদের শনাক্ত করতে।

চাচার পাঁচালি- নব্য গণতন্ত্র by মাহবুব তালুকদার

Saturday, February 15, 2014

চাচা বললেন, ছাত্রলীগের মিডিয়া কানেকশন বিশেষ ভালো নয়। সে কারণে বারবার 
তাদের খেসারত দিতে হচ্ছে।
আমি বললাম, এ কথার অর্থ কী?
অর্থ খুব সোজা। মিডিয়া ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
মিডিয়া তো রিপোর্ট করা ছাড়া আর কিছুই করছে না।
সেটাই বলতে চাচ্ছি। সেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার পিস্তল হাতে ছবি ছাপা হয়েছে। এ রকম একপেশে রিপোর্ট বা ছবি ছাপার নাম কী সাংবাদিকতা?
কিন্তু একপেশে রিপোর্ট হলো কীভাবে?
আরে ভাই! জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডাররা যখন প্লাস্টিক বোমা ছোড়ে, তাদের কী কোনো ছবি আজ পর্যন্ত পত্রিকায় ছাপা হয়েছে? হয়নি। অথচ ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা যখন আত্মরক্ষার্থে পিস্তল হাতে নেয়, ফলাও করে সেটা ছাপা হয়, যা দুরভিসন্ধিমূলক।
চাচা কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে গেলে আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। এটা নতুন কিছু নয়। আমি বললাম, ক’দিন আগে জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিবির রগ কাটে, ছাত্রলীগ কবজি কাটে, মাথা কাটে।’ এ কথার জবাবে ছাত্রলীগ লিখিতভাবে প্রতিবাদলিপিতে জানিয়েছে, হাজী সেলিম একজন ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ লোক। কিন্তু এটা কী হাজি সেলিমের কথার জবাব হলো?
ঠিকই বলেছে ওরা। চাচা জানালেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেহেতু ছাত্র, সেহেতু তাদের চোখে ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ হাজী সেলিমের অপরাধ হচ্ছে ‘শিক্ষিত’ ও ‘বিদ্বান’ ছাত্রদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মুখ খোলা। সংসদ সদস্য হয়েছেন বলে সংসদে দাঁড়িয়ে সমাজের শিক্ষিত অংশের বিরুদ্ধে গায়ে পড়ে মন্তব্য করা হাজী সেলিমের উচিত হয়নি। ছাত্রশিবির আর ছাত্রলীগ কি এক বিষয় হলো যে তাদের তুলনা করা হবে? ‘অশিক্ষিত’ আর ‘মূর্খ’ না হলে হাজী সেলিম এটা করতে পারতেন না।
আমি বললাম, চাচা! ছাত্রলীগ সম্পর্কে আরো অভিযোগ আছে। ক’দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল থেকে ৯৭ জন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতারা বের করে দিয়েছে। ওই ৯৭ ছাত্রের অপরাধ হলো তাদের কাছে স্থানীয় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যয়নপত্র নেই। তাদেরকে জানানো হয়েছে, তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না এবং ছাত্রলীগ করত- এ রকম প্রত্যয়নপত্র যার যার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে আনতে হবে। এটা কেমন কথা?
কী আশ্চর্য! এতে অভিযোগের কী আছে? চাচা ক্ষুব্ধস্বরে বললেন, ছাত্রলীগ স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যাতে আসন পেতে ঘাঁটি বানাতে না পারে, তা দেখা নিশ্চয়ই অন্যায় কিছু নয়। তাতে প্রয়োজনে ৯৭ জন কেন, ৯৭০ জনকে হলে থাকতে না দেয়ার অধিকার ছাত্রলীগের রয়েছে।
কিন্তু ছাত্রলীগ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। হলে স্থান পেতে ছাত্রদের যার যার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার প্রত্যয়নপত্রইবা আনতে হবে কেন?
তুমি ব্যাপারটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছ কেন? ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাহায্য করছে বলেই তাদের এটা করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এককভাবে আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলেই ছাত্রলীগ এ ব্যাপার হ্যান্ডেল করছে। ওরা যদি অন্যায় কিছু করত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই তাতে বাধা দিতো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি কিছু বলেছে?
না। তারা তো ছাত্রলীগের পক্ষে।
তাহলেই বুঝতে পার, ছাত্রলীগ কোনো অন্যায় করছে না। তুমিও দেখছি হাজী সেলিম হয়ে গেলে।
চাচার কথায় আমি রীতিমতো বিচলিতবোধ করলাম। হাজী সেলিম ঢাকার একজন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগের আরেক প্রখ্যাত নেতা ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনকে নির্বাচনে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি মন্ত্রীও হতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে তিনি হবেন ছাত্রলীগের ভাষায় দেশের প্রথম ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ মন্ত্রী। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, আমি তা সমর্থন করিনি। তাহলে আমি তার সঙ্গে তুলনীয় হলাম কী করে?
আমি প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বললাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঘোষণা করেছেন, আগামী ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারির পূর্বে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ শেষে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এটা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার প্রমাণ। চাচা বললেন, বিএনপি যাতে এ সময়ের মধ্যে নিজেদের তৈরি করে নিতে পারে, এজন্যই সৈয়দ আশরাফ সময়টি অগ্রিম জানিয়ে দিয়েছেন।
চাচা! নির্বাচন কী বিগত নির্বাচনের মতোই হবে?
অবশ্যই। চাচা বললেন, দু-একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশ আমাদের নির্বাচন মেনে নিয়েছে। সবাই বর্তমান নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তাছাড়া, বাংলাদেশের বিগত নির্বাচন একটা মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ মডেলটিকে গ্রহণ করবে। সুতরাং, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রক্ষা করে একই পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু এটা তো বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন!
কেন? জাতীয় সংসদে বিরোধী দল তো আছে। বেগম রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা।
উনি কি সত্যি বিরোধীদলীয় নেতা?
তোমার এসব অহেতুক প্রশ্ন আমার ভালো লাগে না। বেগম রওশন এরশাদ একজন অসাধারণ রাজনীতিবিদ। তিনি একদিকে তার স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে দলের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে ভারসাম্য রক্ষা করছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এমন উদাহরণ আর এক পিস পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
আমি চুপ করে চাচার কথা শুনলাম। জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না। গত নির্বাচনে এরশাদের নির্দেশে ১৮৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাকিরা নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করেন। বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সদস্য রয়েছেন। এরশাদ নিজেও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এরপর তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অন্যদিকে তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ দলের যে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে স্বামীকে ক্ষমতাহীন করেছেন, তা ফিরে পেতে এরশাদ সমপ্রতি দলের নেতাকর্মীদের এক সম্মেলনে গান গেয়েছেন? ‘আয় খোকা আয়!’ তবে দলের ৩০ জন সংসদ সদস্য তার ডাকে সাড়া দেননি। আসলে দলের খোকারা বুঝতে পারছেন না কার কাছে যাবেন? ক্ষমতাবান রওশন এরশাদের কাছে, না ক্ষমতাহীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে?
আমি আবার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম, চাচা! উপজেলা নির্বাচনে তো দেখছি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন আছে, অথচ কাগজপত্রে সবই নির্দলীয়। নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হচ্ছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত নয়?
তোমার কাছে তো সবই অদ্ভুত। তবে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বিএনপি তলে তলে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বলে। বর্তমান সরকারকে বিএনপি অবৈধ সরকার বলছে, আবার এ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এটা কেমন নৈতিকতাবিরোধী কথা?
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই বলেই বোধহয়। আমি বললাম।
আওয়ামী লীগের উচিত ছিল এবারও কৌশল করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। চেষ্টাও করা হয়েছিল। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন একটা ভিন্ন কৌশল দেখা যাচ্ছে।
কি কৌশল?
এবার উপজেলা নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ওপর তেমন আস্থা রাখা যায়নি বলেই এ ব্যবস্থা। চাচা বললেন।
এভাবে নির্বাচন করে কি গণতন্ত্র রক্ষিত হতে পারে?
গণতন্ত্রের তুমি বোঝটা কী? চাচা বিরক্তিস্বরে আমাকে বললেন, তুমি কি মনে করো নির্বাচনে কেবল দেশের মানুষেরা ভোট দেয়, বিদেশীরা কিছু করে না?
তা করে। বিগত জাতীয় নির্বাচনে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব সুজাতা সিং সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। জাতীয় পার্টি যাতে নির্বাচনে যায়, তার জন্য এরশাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
কথাটা ফাঁস করা এরশাদের মোটেই উচিত হয়নি। চাচা গলার স্বর স্বাভাবিক করে বললেন, গণতন্ত্রের পুরোনো ধারণা এখন আর নেই। নির্বাচন ছাড়া কিংবা নামকা-ওয়াস্তে নির্বাচন করেও গণতন্ত্র রক্ষিত হতে পারে। এর নাম হচ্ছে নব্য গণতন্ত্র।
নব্য গণতন্ত্র!
আঁতকে উঠলে যে! এটা অবশ্য আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্র নয়। বর্তমান নব্য গণতন্ত্র সময়ের প্রয়োজনে ও সংবিধান রক্ষার্থে গণতন্ত্রের ভিন্নতর রূপ। এটা ওয়েস্ট মিনস্টার গণতন্ত্রের আদল থেকে আলাদা। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ নব্য গণতন্ত্রের বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সেটা কী রকম? আমি প্রশ্ন করলাম।
মিসরের দিকে তাকিয়ে দেখ। মিসরের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। ফিল্ড মার্শাল সিসি বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে শাসনক্ষমতা দখল করেন ও মুরসিকে জেলে দেন। মিসরের এবারের নির্বাচনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফিল্ড মার্শাল সিসিকে প্রকাশ্যে অগ্রিম সমর্থন দিয়েছেন। আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, মিসরের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফিল্ড মার্শাল সিসি জয়যুক্ত হবেন।
কিন্তু এতে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে? আমি প্রশ্ন করলাম।
তুমি গণতন্ত্রের পুরোনো ধ্যানধারণার বিষয়টা ভুলে যাও। চাচা বিগলিত হাসি মুখে বললেন, নব্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে কোনো একটা নির্বাচন হলেই হলো। কিভাবে কী নির্বাচন হলো, তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা হবে না।

‘গণমাধ্যমে অনুরোধ এখন উপদ্রব’ by জাকারিয়া পলাশ

দৈনিক আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় বৈরিতা-হুমকির সঙ্গে ইদানীং নতুন উপদ্রব হচ্ছে ‘অনুরোধ’। এর সঙ্গে রয়েছে ভীতি ও মিত্রতাজনিত সেলফ সেন্সরশিপ।
এ নিয়েই চলছে দেশের গণমাধ্যম। মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার রূপ বদলায়, ক্রমান্বয়ে বিবর্তন হয়। ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়। এটা হলো দার্শনিক সত্য। আমরা ২০ বছর আগে সাংবাদিকতায় যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতাম এখনকার চ্যালেঞ্জ তার চেয়ে ভিন্নতর। অনেক ক্ষেত্রে আরও কঠিন, আরও দুরূহ। একই সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে কিছু কিছু কাজ সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হয়েছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মতো ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে আগে কখনও ঘটেনি। এমন একটা ঘটনার সঙ্গে সাংবাদিকদেরও মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। এর আগেও নতুন অবস্থায় মানিয়ে নিতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখা গেছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা কতটা স্পর্শকাতরতা মাথায় রেখে কাভার করতে হবে তা খাপ খাইয়ে নিতে একটু সময় লেগেছে। সিলেটে মাগুরছড়ায় গ্যাস ফিল্ডে আগুন লাগার পর তা নেভাতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তার নাম লিখতেও আমরা ভুল করেছি। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতাতেও এমনটা হয়ে থাকে। বাবরি মসজিদ যখন ভাঙা হলো তখন পাশ্চাত্যের অনেক নামী পত্রিকাও তার বিবরণ দিতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। একটা মসজিদের কোনটা মিনার কোনটা মিম্বর- এ পার্থক্য তাদের কাছে সহজ ব্যাপার ছিল না। সাংবাদিকতায় নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ, বৈরিতার চ্যালেঞ্জ, হুমকি-ধমকি সব কিছুই নতুন রকম। এ সময়েও আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা। এখন টেলিভিশনের ব্যাপক বিস্তৃতি হয়েছে। নতুন নতুন সংবাদপত্র এসেছে। এগুলোর মালিকানার আবার স্বরূপ আছে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মালিকানায় বড় প্রকাশনার পত্রিকা আসছে। পয়সাওয়ালারা পত্রিকা করবে, টিভি করবে এটা আমি খারাপ অর্থে বলি না। কিন্তু এই যে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ এটা অসুবিধার। আর অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। অনেকেই গণমাধ্যম করছেন যার একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছে বা তারা কোন দলের সদস্য। তার সঙ্গে চিরন্তন হুমকি তো কমবেশি অব্যাহত আছে ঢাকার ভেতরে ও বাইরে। সঙ্গে আবার সাম্প্রতিককালে নতুন শব্দ হলো ‘অনুরোধ’। অনুরোধের ঢেঁকি গেলা এখন নতুন উপদ্রব। অনেক ক্ষেত্রে হুমকি আসে না। অনুরোধ আসে, প্লিজ! এ কথাটা লিখবেন না। এই যে অনুরোধ এটা ব্যক্তির কাছ থেকে আসে। প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। এটাও সাংবাদিকতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের চরিত্র এবং আমাদের রাজনীতির সংঘাতময় পরিবেশের কারণে হুমকি ও অনুরোধের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমরা সেলফ সেন্সরশিপেও যাচ্ছি। এটি আবার দুই প্রকার আছে। একটা হচ্ছে ভীতিজনিত সেলফ সেন্সরশিপ। আরেকটা রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বা মিত্রতার জন্য সেলফ সেন্সরশিপ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা যদি আরেকটু ফেয়ার হয়, ভাল হয়- জাতিসংঘের দূত অসকার ফারনান্দেজ-তারানকোর এ বক্তব্য উল্লেখ করে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, তার মানে তিনি কি উপলব্ধি করেছিলেন, আমরা সম্ভবত সম্পূর্ণ ফ্রি ও ফেয়ার থাকতে পারছি না। এর সব কিছুই আমাদের সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় তিনি নিজের নীতি প্রসঙ্গে বলেন, আমি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত না। আজকে আমি যেটুকু পারলাম না সেটা আগামী দিনের আমার বুদ্ধি-বিবেচনা, সাহস ও কৌশলের সমন্বয়ে আগামীতে করবো। এখন টিকে থেকে অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাই। যদি প্রতিকূলতার জন্য আমি একটা রিপোর্ট না করতে পারি আপাতত সময়-সুযোগের জন্য আমি অপেক্ষা করবো। এতে হতাশাবোধ করলেও আমার মধ্যে কোন আত্মাহুতির প্রবণতা কাজ করে না। আমি শহীদ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বাস করি না। চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গণমাধ্যম কাজ করছে দাবি করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বহুত্ববাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে। নিজের স্বার্থে, মালিকের স্বার্থে, ভয়ে বা চাপে এক পত্রিকা যা করতে পারছে না অন্য পত্রিকা তা করছে। সুতরাং, সামগ্রিক অর্থে কেউ না কেউ দায়িত্ব পালন করছে। সেটা দিয়েই আমি আমাদের অর্জনগুলো হিসাব করি। প্রতিটি পত্রিকা সব বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে- এমনটা বাস্তবসম্মত নয়, সেটা আশা করাও অন্যায় মনে করি। বর্তমান অবস্থা দীর্ঘদিন চললে কি হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার এসেছে তাতে রাজনৈতিকভাবে প্রধান বিরোধী দল সংসদের বাইরে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এ অবস্থা বিরাজ করলে তা আমাদের গণতন্ত্র, অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূল নয়। এর একটা পরিবর্তন হতে হবে। পরিবর্তন কত দ্রুত হবে তার চেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে সব পক্ষ সমাধানের জন্য কতটুকু এগিয়ে আসছে। সব পক্ষ এগিয়ে এলে তাতে একটু বেশিও যদি সময় লাগে সে সময়টা তো কাটবে সমঝোতার প্রয়াসে। সে সময়টুকু তো খারাপ কাটবে না। তাতে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে। সব বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে।

‘বেবি ডল’ নিয়ে আলোচনায় সানি

মার্চের প্রথম দিকেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে বর্তমান সময়ের বলিউডের আলোচিত তারকা সানি লিওন অভিনীত ‘রাগিনি এমএমএস ২’ ছবিটি। হরর-থ্রিলারনির্ভর এ ছবিটি প্রযোজনা করছেন একতা কাপুর।
নির্মাণের ঘাষণা দেয়ার পর থেকেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের কৌতূহলও তৈরি হয়েছে প্রবলভাবে। তবে মুক্তির আগে সম্প্রতি ভালবাসা দিবসে প্রকাশ করা হয়েছে এই ছবিতে সানি লিওনের একটি হট আইটেম গান। ‘বেবি ডল’ শীর্ষক এই আইটেম গানটি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে ইউটিউব ও টিভি চ্যানেলে মুক্তি দেয়া এই আইটেম গানটিতে ব্যাপক খোলামেলারূপে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন সানি। শুধু তাই নয়, এখানে তাকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আবেদময়ীরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। গানে বেশ কিছু অন্তর্বাস ও একেবারেই ছোট ছোট টপস পরে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন তিনি। এখানে তিনি পারফর্মও করেছেন অসাধারণ। এরই মধ্যে অত্যন্ত অল্প সময় ইউটিউবে গানটি উপভোগ করেছেন রেকর্ড সংখ্যক দর্শক। প্রচারের একদিনের মাথায়ই বেশ কয়েকটি বলিউডভিত্তিক গানের চ্যানেলে টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করছে সানি লিওনের ‘বেবি ডল’। ছবির প্রচারণায় গানটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইতিমধ্যে। সব মিলিয়ে বলা যায় অভাবনীয় আলোড়ন তুলেছে সানি লিওনের এই আইটেম গানটি। এদিকে ছবিতে সময়ের আলোচিত সংগীত তারকা হানি সিংয়ের সঙ্গেও একটি গানে পারফর্ম করেছেন সানি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সেটি অনএয়ার হবে। ‘বেবি ডল’ গানটির সাড়া নিয়ে দারুণ খুশি সানি লিওন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লায়লা’র পর এটি আমার দ্বিতীয় আইটেম গান। ভাবতে পারিনি অল্প সময়ের মধ্যে এতোটা রেসপন্স পাবো। আমি কৃতজ্ঞ আমার ভক্ত-দর্শকদের কাছে। ফেসবুক, টুইটার, ই-মেইল, ফোন, এসএমএসে  সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আশা করছি গানটির মতো করে ছবিটিও দর্শক পছন্দ করবেন। কারণ, গতানুগতিক ধারার বাইরের কাহিনীর একটি ছবি এটি। আমি নিজে অনেক আশাবাদী ‘রাগিনি এমএমএস-২’ ছবিটি নিয়ে।

সুস্থ বিবেকের বিদ্রোহ by উইলিয়াম বি মাইলাম

Wednesday, February 12, 2014

মন্দের জয়ের জন্য শুধু যা প্রয়োজন তা হলো ভাল মানুষের নীরব ভূমিকা। কথাটি এডমান্ড বার্কের মুখনিঃসৃত বলে বহুল প্রচলিত হলেও তিনি আদৌ এমন কিছু বলেছেন তেমন সম্ভাবনা কম। তবে চরম সত্য হলো, এ শব্দগুলো গত ৩২৫ বছরের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানকে ঘিরে রেখেছে।
এ সময়ের মধ্যে, কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে উত্থান হয়েছে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থার। মানব ইতিহাসের বেশির ভাগ সময়ই প্রচলিত ছিল কর্তৃত্ববাদী শাসন। ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডের প্রসিদ্ধ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ রাজনৈতিক রূপান্তরের সূত্রপাত হয়েছে বলে ঐতিহাসিকরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাজা ও দেশের কর্তৃত্বের ওপর ওই বছর সংসদীয় সীমারেখা দেয়ার অবধারিত কারণ ছিল ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সমাজের অভিজাতরাই ছিলেন তার রূপকার। কিন্তু বৃহৎ কিছুর সূত্রপাত হয় ক্ষুদ্র। ক্ষমতার ওপর অভিজাতদের শক্ত হাতকে নড়বড়ে করার জন্য আর তাদের ক্ষমতাকে ভাগাভাগি করার জন্য শতকের পর শতক ধরে নানা দেশের ভাল মানুষরা শাসক দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সফলতার সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে সমগ্র সমাজের স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছে। অন্য কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা অভিজাত সমপ্রদায়ের প্রতিনিধিই নয়, অন্তর্ভুক্ত থেকেছেন সমাজের অন্য অংশের প্রতিনিধিরা। যারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তর এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় মতপ্রকাশের দাবি করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। ১৬৮৮ সালের পর রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে যায়। বার্ক ১৭৬৫-১৭৮৩ সালের মার্কিন অভ্যুত্থানকে পছন্দ করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ পরিশেষে অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক এক সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পক্ষান্তরে, তিনি ফরাসি অভ্যুত্থান পছন্দ করেননি। একভাবে বা অন্যভাবে সেখানে কর্তৃত্বমূলক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। এটাই হয়তো তার অপছন্দের কারণ। প্রায় ৮০ বছর শোষণমূলক শাসনব্যবস্থা থাকার পর ফ্রান্সে অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বার্কের লেখায় বুদ্ধিবৃত্তিক নানা বিসদৃশের আধিক্য থাকলেও আমি মোটামুটি নিশ্চিত, তিনি বিংশ শতাব্দীর তথাকথিত অভ্যুত্থানকে তিরষ্কার করতেন। ১৯১৭ সালের রাশিয়ান অভ্যুত্থান এবং ২০ ও ৩০-এর দশকে নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট অভ্যুত্থানগুলো ধীরে ধীরে ঘটেছিল পর্দার অন্তরালে। এসব অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করে সংখ্যালঘুরা। সেটা কখনও নির্বাচনের পর হয়েছে, কখনও বা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাচীন শাসনব্যবস্থার পতনের পর। আর জনপ্রিয় সমর্থনের অভাবে তারা তাদের অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে বক্তৃতাবাজি, দমননীতি, ভাবাদর্শিক অনুশাসন এবং বিকৃত ইতিহাস দিয়ে। প্রায়ই এ প্রক্রিয়ায় বলির পাঁঠা হয়েছে নির্দিষ্ট কোন গ্রুপ। তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তারা প্রায়ই গণহত্যা পরিচালনা করতো। গণতন্ত্র নিয়ে বার্কের দ্ব্যর্থকতা সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক লেখার মধ্যে অন্তর্নিহিত একটি ধারা বিদ্যমান- সব অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে তিনি সর্বাধিক বিপজ্জনক যে দিকটি লক্ষ্য করেছেন, সেটা হলো বেপরোয়া ক্ষমতার অধিকারী কর্তৃত্ববাদী, দমনমূলক কোন সরকার উত্থানের আশঙ্কা। ১৭৭০ সালে বার্কের একটি গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল, ‘আমাদের বর্তমান অসন্তোষের কারণগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা’ (থটস অন দ্য কজেস অব আওয়ার প্রেজেন্ট ডিসকনটেন্ট)। এতে তিনি রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতার বিষয়ে শক্ত সীমারেখা নির্দিষ্ট করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন এবং সরকারের ক্ষমতা অপব্যবহার প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, যখন অসাধু ব্যক্তিরা একত্রিত হয়, তখন সততাপরায়ণ ব্যক্তিদের মধ্যেও ঐক্য গড়ে ওঠা উচিত। তা না হলে তারা সবাই একের পর এক ঝরে পড়বে, যা হবে অবজ্ঞার এক সংগ্রামে করুণার অযোগ্য ত্যাগ। এ শতাব্দীতে বিপ্লব ঘটেছে প্রধানত ইসলামি দুনিয়ায়। এসব বিষয়ে বার্ক-এর অনুভূতি কেমন হতো তা বলা কঠিন। তবে আমাকে এটা আহত করে, নিচু স্তর থেকে উঠে আসা এসব মানুষকে প্রথমেই তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। যখন গণজাগরণ শুরুর বিষয়টিকে দৃশ্যত কিছু সুসংগঠিত, আদর্শপুষ্ট গ্রুপ নিয়ন্ত্রণে নিতে চেষ্টা করে তখন নিশ্চিতভাবে তাকে উদ্বিগ্ন হতে হয়। পাশাপাশি দেখা দেয় অভিজাত শ্রেণীর কিছু থারমিডোরিয়ান প্রতিক্রিয়া। (সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফরাসি বিপ্লবে এ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল)। সুসংগঠিত গ্রুপগুলো প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে রয়েছে।
পর্দার আড়ালে বিপ্লব ঘটানোর বিষয়ে তিনি অধিক উদ্বিগ্ন হতেন- এটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এ ক্যাটিগরিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ে। দৃঢ়ভাবে বলা যায়, এটি একটি নিখুঁত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। একদলীয় একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে একদলীয় রাষ্ট্র। প্রধান বিরোধী দল একই সঙ্গে বিচক্ষণতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিশৃঙ্খল। তাদের বিশৃঙ্খল করতে ভূমিকা রেখেছে বিরোধী দল, ভিন্নমতাবলম্বী ও বলির পাঁঠা হওয়া ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়ন। সুশীল সমাজ বিভক্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত। সংঘাতের মধ্য দিয়ে জন্ম হওয়া এ দেশটির ইতিহাস নতুন করে লিপিবদ্ধ করেছে সরকার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। অবশ্যই এটা একটি বার্কিয়ান পরিস্থিতি। সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি একজনের পর একজন ঝরে পড়তে না চান, তাদের অবশ্যই একত্রিত খারাপ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিদের থামাতে একত্রিত, সংগঠিত হতে হবে। ইসলামিক বিশ্বে একসময় রাজনীতি ও সামাজিকতাকে আধুনিকায়ন করার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু সেই বাংলাদেশ এখন দুর্নীতি, বলপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্রের তালিকায় যোগ হবে। এমন কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্রের তালিকায় স্থান পাওয়া দেশ অনেক। যদি সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ অলস থাকেন তাহলে বাস্তবিকই আধুনিকায়ন হারিয়ে যেতে থাকবে।
উইলিয়াম বি মাইলাম বাংলাদেশ, পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার-এর সিনিয়র পলিসি স্কলার। তিনি ক্যারিয়ারের দিক থেকে একজন কূটনীতিক। ২০০১ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে তিনি অবসরে যান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে। ফের ১১ই সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানে পুনর্গঠনে তার ডাক পড়ে। তিনি লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।

 (নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত উইলিয়াম বি মাইলামের লেখা ‘দ্য গুড ওয়ানস রিভোলটেড’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ। গতকাল এটি প্রকাশিত হয়।)

অজানা গন্তব্যের পথে বাংলাদেশ by কাউসার মুমিন

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশটির গত দু’ দশকের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অর্জনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে এক অজানা গন্তব্যের পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ নিয়ে যথেষ্ট শংকিত হওয়ার কারণ রয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন  ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ, বিতর্কিত।
এখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যতদ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন প্রয়োজন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের ওপর শুনানিতে এসব কথা বলা হয়েছে। পাঁচ ইস্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে শুনানি। এগুলো হলো: একটি নতুন নির্বাচন, জিএসপি প্রসঙ্গ, বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রামীণ ব্যাংক ও ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। পররাষ্ট্র বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় সিনেটর মেনেন্দেজের সভাপতিত্বে। এতে প্যানেল সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। এতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নতুন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতাপূর্ণ সংলাপ আয়োজনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে আরও বেশী চাপ দিতে ওবামা প্রশাসনকে আহ্বান জানায় সিনেট। জিএসপি সুবিধা প্রসঙ্গে বলা হয়, জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে বাংলাদেশকে যেসব শর্ত পূরণ করতে দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে কিছুটা অর্জিত হয়েছে। তবে তাদেরকে এখনও অনেক কিছু করতে হবে। শ্রমিকের অবস্থা উন্নয়নে প্রতিশ্রুতির অনেকটাই এখনও পূরণ হয় নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দেয়ার শামিল। সিনেটর ডারবিন বলেন, আমরা জানি এ সরকার মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীন ব্যাংকের সঙ্গে কি করেছে। এটা যে অন্যায় সেটা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝানোর জন্য আমরা কি করতে পারি? এটা তার দেশের জন্য ভুল, ওই মানুষটির প্রতি অন্যায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার পারস্পরিক সুসম্পর্কের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

শুনানিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। তবে তাদের হারানোরও আছে অনেক। গতকালের শুনানি প্রসঙ্গে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশ একটি সঙ্কটজনক অবস্থানে। তাই এই শুনানি সময়োপযোগী এবং এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হবে যে, বাংলাদেশ যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ১০টায় এ শুনানি হয়। দু’পর্বে শুনানি হয়। প্রথম পর্বে প্যানেল সদস্য ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক এসোসিয়েট ডেপুটি আন্ডারসেক্রেটারি এরিক আর বিয়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক বাণিজ্য সহকারী লুইস কারেশ। এছাড়া শুনানিতে অংশ নেন সিনেটর ডারবিন। নিশা দেশাই তার শুনানিতে বলেন, আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশের রয়েছে একটি সাফল্যের কাহিনী। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে মূল তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন তা হলো বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও ভবিষ্যতের খাদ্য। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, উন্নয়ন করেছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় কাজ করেছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এক কান্তিদায়ক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। ৫ই জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। এতে প্রধান দু’ রাজনৈতিক দলের একটি অংশ নেয় নি। ফলে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাকিরা নামমাত্র বিরোধিতা মোকাবিলা করেছেন। এ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিশ্বাসযোগ্য প্রকাশ ঘটেনি। এতে বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। নিশা দেশাই বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা কড়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারি বিবৃতি দিয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে সরকারি ও বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রথম ওই অঞ্চল সফরে যাই নভেম্বরে। তখন আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের পন্থা বের করার আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ যে ভূমিকা গ্রহণ করে তাতে আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো সে উদ্যোগ সফল হয় নি। নির্বাচনের পর পরই আমরা কড়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিই যে, এ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, এতে জনগণের মতের কোন প্রতিফলন ঘটেনি। একই সঙ্গে নতুন একটি নির্বাচনের জন্য সংলাপের আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে সমপ্রতি বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও গুমের যেসব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এসব নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমরা সহিংসতার নিন্দা জানাই। গণতন্ত্রে এটা কোন কৌশল হতে পারে না। ঢাকায় অবস্থানরত মার্কিন কর্মকর্তা, স্টাফ, নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকার তদারক করছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃবৃন্দ। শুনানিতে সিনেটর ডারবিন বলেন, ২০ বছর আগে আমি প্রথম বাংলাদেশ সফর করি। তারপর অনেকবার গেছি। আমি যা দেখেছি তাতে আমি অভিভুত হয়েছি। আমি এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হই যিনি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে ওঠেন। আমার দেখা মতে তিনি সব থেকে বেশি অনুপ্রেরণা সঞ্চারকারী ব্যক্তিত্ব। আমি বলছি মুহাম্মদ ইউনুসের কথা, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ুদ্র ঋণ তার প্রাথমিক ধারণা ছিল না। কিন্তু তিনি দরিদ্র থেকে হত দরিদ্রদের মাঝে ঋণ পৌঁছে দিয়েছেন। তার এ প্রচেষ্টাকে তিনি যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তা বিশ্বে কোথাও দেখা যায়নি। তিনি তার এ উদ্যোগের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান।  সিনেটের পক্ষ থেকে তাকে কংগ্রেশনাল মেডেল প্রদানের অংশ হতে পেরে আমি খুশি। আমার বিশ্বাস এ পদক পাওয়া তিনি প্রথম মুসলিম। পদক দেয়ার সময় হলভর্তি সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। নানা ধর্ম বর্ণের। গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া এবং গ্রামীণ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আমার কাছে মনে হয়, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে কোন না কোনভাবে শাস্তি দেয়া- দুঃখজনক হলেও যা লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দেয়ার সামিল। যারা জীবনধারনের জন্য এ ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল। আশাহত নারীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক।
এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন নিশা দেশাইয়ের কাছে। জবাবে নিশা দেশাই বলেন, আপনি যেভাবে আপনার স্পষ্ট অনুভূতি উপস্থাপন করেছেন আমি তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। যতবারই আমার তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছে, এটা সত্যিকার অর্থে অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল। মানবতার প্রতি তার নিষ্ঠা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের সক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।  এটা বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ অর্জন। তারপরও বাংলাদেশে এটা এখন হুমকির মুখে। বিশ্বব্যাপী গ্রামীণ ব্যাংকের পরিসর দিনে দিনে বৃদ্ধি এবং আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএআইডি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে। এর আগে ইউএসএআইডিতে কর্মরত থাকাকালীন আমার ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। গ্রামীণ সামাজিক ব্যবসা প্রকল্প আরও শক্তিশালী করে এবং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ নারীদের কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের সেবা পৌছে দেয়ার সক্ষমতা দৃঢ় করে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছিলাম। আমি মনে করি গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং আমরা গ্রামীণ ব্যাংককে সমর্থন এবং তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করা অব্যাহত রেখেছি। যেটা আমার কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হয় সেটা হলো, গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী নারীদের সাহায্য অব্যাহত রাখার সক্ষমতা।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলবিহীন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ল্যে গতকাল মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চক সিনেটের ‘সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস’ আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক এক শুনানিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্যগণ তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সীমাবদ্ধ সুযোগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, শ্রমিক অধিকার ও শ্রমিক নিরাপত্তার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এই সকল ইস্যুতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি কতটা কার্যকর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখার পরও এখনও কেন বাংলাদেশে এই সকল ইস্যুতে গ্রহণযোগ্য উন্নতি হচ্ছে না, এতে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে সিনেট সদস্যগণ শুনানিতে অংশ নেয়া প্রত্যেকের নিকট পৃথক পৃথকভাবে বিস্তারিত জানতে চান। এ ছাড়া শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের পথে বাংলাদেশকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের জিএসপি ইস্যুতে আগামী মে মাসে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে। সিনেটর মেনেন্দেজ বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার ব্যক্তিগত ভূমিকা, বাংলাদেশের উভয় নেত্রীর নিকট সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিঠি, সংলাপ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপর্যুপরি আহ্বান ইত্যাদি উল্লেখ করে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইয়ের কাছে জানতে চান ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের গন্তব্য কোথায়?’ সিনেট শুনানির দ্বিতীয় প্যানেলে আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম মি. স্কট নোভা, বাংলাদেশ শ্রমিক নিরাপত্তা জোট-এর বোর্ড অব ডিরেক্টর্স-এর চেয়ারম্যান এলেন ট্যাশার এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার।

খালেদা, প্রণব এবং ওরা তিন জন by অমিত রহমান

খালেদা জিয়া জানার চেষ্টা করছেন। কেন তার ঘনিষ্ঠ ‘তিনজন’ প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতে বারণ করেছিলেন। কি ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তারা কি দলের স্বার্থে না অন্যদের স্বার্থে খেলছিলেন তা-ও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
সময় যত যাচ্ছে ততই তার মধ্যে সন্দেহ জাগছে, এটা হয়তো কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। দলের লোক, দেশী-বিদেশী শুভার্থীরা বলছেন, এটা ছিল অশোভন, অগ্রহণযোগ্য। শিষ্টাচারবহির্ভূত। তাদের যুক্তি হচ্ছে, খালেদা ভারত সফরে গেলেন। সম্পর্ক উন্নয়নের নয়া দিগন্তের সূচনা হলো। নজিরবিহীন না হলেও অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়া হলো। খালেদা নিজেও বিস্মিত হলেন। ঘনিষ্ঠদের বললেন, তার ধারণার বাইরে সৌজন্য দেখালো ভারত। তিনি নিজেই ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জিকে আমন্ত্রণ জানালেন ঢাকা সফরের জন্য। প্রণব এলেন। কিন্তু খালেদা নেই। অকার্যকর এক হরতালের অজুহাতে নির্ধারিত সৌজন্য বৈঠক বাতিল করলেন এক ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে। কি কারণ ছিল তা নিয়ে অনেকদিন গবেষণা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ঝুঁটি বাঁধেন এমন দু’জন তাত্ত্বিক এবং একজন পেশাজীবী এক সকালে গিয়ে বললেন, ম্যাডাম সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্রণব বাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন না। গেলেই বিপদে পড়বেন। হরতালের মধ্যে অন্য কোন শক্তি হামলা চালিয়ে আপনার যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। তাছাড়া ১৮ দলের শরিক জামায়াতের হরতালের মধ্যে আপনি যদি সোনারগাঁও হোটেলে যান তখন সরকার বলবে হরতাল ভঙ্গ করে আপনি ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের আরও যুক্তি, ভারত আপনাকে চায় না। এর পেছনে যে মানুষটি সক্রিয় ভূমিকায় তিনি হচ্ছেন প্রণব মুখার্জি। বাংলাদেশ বিষয়ে সব নীতি তিনিই গ্রহণ করেন। সুতরাং, তাকে বোঝানো উচিত বাংলাদেশ একচেটিয়া তার বা তাদের পক্ষে নয়। এখানেও ভিন্নমত রয়েছে। খালেদা গিলে ফেললেন প্রস্তাবটি। উল্লিখিত তিনজন এমনভাবে কথা বলেন, মনে হবে তারা ছাড়া বিএনপির পক্ষে আর কেউ নেই। যুক্তিতে তারা পারদর্শী। এর মধ্যে একজন তাত্ত্বিক। হালে চরম দক্ষিণপন্থি। নানা লেনদেনের সঙ্গেও জড়িত। টেলিভিশন টকশোর একটি মন্তব্য নিয়ে মাঝখানে তাকে নিয়ে শোরগোল তুললেন শাসক সমর্থিত নাগরিক সমাজের কেউ কেউ। গ্রেপ্তারের দাবিও তুললেন। কিন্তু এক রহস্যজনক কারণে তা থেমে গেল। হেফাজতের সমাবেশের আগে খালেদা জিয়ার আলটিমেটাম দেয়ার ক্ষেত্রেও এই ভদ্রলোকের অবদান ছিল। ভিন্ন এক বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে খালেদাকে দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। বিএনপি মহলেই এ নিয়ে ভিন্ন মূল্যায়ন চালু আছে মেলাকাল থেকে। আরেক ভদ্রলোক অপেক্ষাকৃত তরুণ। বামপন্থি ছিলেন শুরুতে। এখন জাতীয়তাবাদী ভূমিকায়। চাঞ্চল্যকর সব খবর দেন ঘনিষ্ঠ মহলে। বলেন, তার সঙ্গে নাকি ‘উত্তরে’র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কাল হবে, পরশু হবে, দিন-তারিখও বলেন এমনভাবে শুনে যে কেউ চমকে উঠতে পারেন। খালেদা জিয়ার কাছেও মাঝেমধ্যে পৌঁছে যান। অথবা দূত মারফত এমন খবর দেন, দরকার নেই আন্দোলন বেগবান করার। এমনিতেই আন্দোলন গতি পেয়ে যাবে। শাসকেরা হাওয়ায় মিইয়ে যাবে। আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন দু’দিন কর্মীদের সহায়তা বন্ধ করেছিলেন খালেদা জিয়া। তাকে বলা হয়েছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। এখন খালেদা নিজেই ঘনিষ্ঠদের বলছেন, ওরা আসলে অনুপ্রবেশকারী। হেফাজতের সঙ্গেও ওরা যোগাযোগ স্থাপন করে ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। যে কারণে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার আর মাদরাসার আর্থিক সহায়তার টোপ দিয়ে সরকার মাঝপথে থামিয়ে দেয় হেফাজতের কাফেলা। হেফাজত প্রধানের ছেলের ভূমিকাও বেশ রহস্যজনক। খালেদার তৃতীয় ব্যক্তি বেশ শক্তিশালী। চার দেয়ালে বন্দি থাকার পরও প্রভাব অনেক বেশি। তিনি কিছু বললে বারণ করতে পারেন না খালেদা। এমনকি নিজের স্বার্থও না। উল্লিখিত তিনজন কাদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে সোনারগাঁও হোটেলে না যেতে বলেছিলেন তা নিয়ে দলের মধ্যে নানারকম মুখরোচক খবর চালু আছে। পাঠকদের মনে রাখার কথা, যে সময়টায় প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদার সাক্ষাৎ করতে আসার কথা ছিল, প্রায় একই সময় হোটেলের উত্তর পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছিল। যে খবর ভারতীয় মিডিয়া দ্রুত প্রচার করেছিল। এটা যে পূর্ব পরিকল্পিত ছিল এখন বিএনপি নেতারা বুঝলেও তখন আমলেই নেননি। এমন কি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শমসের মবিন চৌধুরীও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রশ্ন না তুলে ই-মেইল বার্তা টাইপ করেছিলেন। সম্পর্ক মেরামতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লি গিয়েছিল প্রণবকে বোঝাতে। দুঃখ প্রকাশও করা হয় তাদের পক্ষ থেকে। তখন পানি অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। প্রণব বাবু সহজে নিলেও ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা এটাকে অপমান বলেই দেখেছেন। ভারতীয় প্রেসিডেন্ট যখন দিল্লিগামী প্লেনে ওঠেন তখন সফরসঙ্গী ভারতীয় সাংবাদিকরা তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন। বলেন, প্রণব বাবুকে নয়- গোটা ভারতবাসীকে অপমান করলেন বিরোধী নেত্রী। ধীরস্থির প্রণব বাবু কূটনৈতিক জবাব দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি নিজেও উপলব্ধি করেন এটা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ভারতের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ বরাবরই বিএনপির ঘোর বিরোধী। তারা সুযোগ খুঁজছিলেন। তাদের হাতে অস্ত্রটা তুলে দেন খালেদা নিজেই। জামায়াতের সঙ্গে প্রেম দেখাতে গিয়ে নিজেকে অসহায় করে তোলেন। তার ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপরও সুযোগ এসেছিল। সময়মতো পদক্ষেপ নেননি। যে কারণে ভারত একতরফাভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে চলে যায়। অনেকে অবশ্য বলেন, খালেদা সাক্ষাৎ করলেও ক্ষমতা পেতেন না। নানা কারণে ভারত খালেদাকে আস্থায় নিতে পারে না। তারপরও সাধারণ ভদ্রতা বলে কথা। খালেদা সব সময় সিদ্ধান্ত নেন বিলম্বে। পেট্রল বোমা আর গানপাউডার দিয়ে মানুষ কতল করা হচ্ছে অথচ খালেদা নীরব। একবারও নিন্দা জানালেন না। পাগলও জানে কারা এগুলো করেছে। যখন বিএনপি মহাসচিব কথা বললেন, এটা তাদের কাজ নয়, তখন দুনিয়াব্যাপী চাউর হয়ে গেছে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। মনে রাখতে হবে এটা হাসিনার শাসন। তিনি ফুলটাইম রাজনীতি করেন। আর খালেদা করেন মাত্র চার ঘণ্টা। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে সকাল আটটা থেকে বেলা ২টার মধ্যে। এই সময়টা ঘুমিয়ে কাটালে ফল যা পাওয়ার তা-ই পাওয়া যাবে। বাড়তি যা পাওয়ার তা বোনাস। মানুষ সরকারের ওপর বিরক্ত। শত ভুলের মধ্যেও মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে এখনও আকুতি করছে। তাছাড়া সবাইকে অবিশ্বাসের পাল্লায় তুলে বিচার করলে কোনকালেই ভাল কিছু পাওয়া যায় না। শেখ হাসিনা একদিন যাদের অবিশ্বাস করতেন, দল ও মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি, তারা এখন মূল শক্তি। মতিয়া চৌধুরীরা দূরে বসে ভাবছেন এ কি হলো। এটাই তো রাজনীতির খেলা। ভারতও এক সময় সংস্কারপন্থিদের সমর্থন দিয়েছিল জরুরি জমানায়। পরিণতিতে শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে সংস্কারপন্থিদের ক্ষমতার বাইরে রেখেছিলেন। প্রণব বাবু নিজে অন্তত তিনবার অনুরোধ করে হাসিনার মন গলাতে পারেননি। বিরোধীদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সাজানো সংসার যখন ভেঙে পড়ছিল তখন প্রণব বাবুর পরামর্শে চিহ্নিত সংস্কারপন্থি আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, মোহাম্মদ নাসিম, আসাদুজ্জামান নূরকে দলে ফিরিয়ে নেন। এরাই এখন হাসিনার প্রথম সারির সৈনিক। আর খালেদা এখনও সন্দেহ আর অবিশ্বাস থেকে বের হতে পারেননি। রাজনীতি কি এতটাই সহজ!
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু