Home » , , , , » যেন ভুলে না যাই by সাযযাদ কাদির

যেন ভুলে না যাই by সাযযাদ কাদির

Written By Unknown on Friday, January 3, 2014 | 3:30 PM

পুরনো বছরকে বিদায়, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এই সময়টায় এক-দু’বার তাকাই পিছন ফিরে। দেখি, কি ফেলে এলাম, আর যাচ্ছি কোন দিকে।
তবে বেশি করে মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজন-প্রিয়জনের মুখ। ২০১৩ সালে হারিয়েছি তাঁদের অনেককে। বছরের প্রথম দিকে, ১৫ই জানুয়ারি, চলে গেছেন প্রিয় কথাশিল্পী আবদুশ শাকুর। ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। সংগীত থেকে গোলাপ, আরও অনেক বিষয়ে ছিলেন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব। ১৯৬১ সালে মুগ্ধ হয়েছিলাম তাঁর যতিচিহ্নহীন গল্পগ্রন্থ ‘ক্ষীয়মাণ’ পড়ে। পরিচয় ১৯৭৬ সালে ‘বিচিত্রা’য়। সেই থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদনা-সূত্রে তাঁকে পেয়েছি ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কলামনিস্ট হিসেবে। তাঁর কারণেই একবার ‘ঈদ-উত্তর বিশেষ সংখ্যা’ ছাপতে হয়েছিল ‘বিচিত্রা’র। পরে তা একটি ধারাই সৃষ্টি করে প্রকাশনায়। রংপুরে বিভিন্ন সাহিত্য-উৎসবে গিয়ে পরিচিত হয়েছিলাম শতবর্ষী কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ-এর সঙ্গে। পরিচিত ছিলেন স্বভাবকবি হিসেবে। জন্ম রংপুর শহরের অদূরে বাবুখাঁ গ্রামে। ২০শে জানুয়ারি চলে গেছেন তিনি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্ব আকন্দ সানোয়ার মুর্শেদ-কে হারিয়েছি ১৯শে ফেব্রুয়ারি। ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য থাকাকালে ওঁর ছবি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বিনা কর্তনে মুক্তির ব্যাপারে যথাযথ যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনে বিশেষ ভূমিকা ছিল আমার। এর দু’দিন আগে, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, আমাদের ছেড়ে যান আরও একজন চলচ্চিত্রকার ইকরাম বিজু। পরিচয় হয়েছিল অভিনেত্রী নাসিমা খানের ভাই হিসেবে, পরে বন্ধু হয়ে যান কৃতী নির্মাতা হিসেবে। মনে পড়ছে হিন্দি ‘ঘর’ (রেখা-বিনোদ মেহরা) অবলম্বনে নির্মিত তাঁর ছবি নিয়ে ঝামেলায় পড়ার ঘটনাটি। অনুজপ্রতিম রাজনীতিক শামীম আল মামুনকে হারিয়েছি ২৫শে ফেব্রুয়ারি। স্বাধীনতার পর টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী হিসেবে তলোয়ার মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিল চেয়ারম্যান পদে। তরুণ বয়সে ওর ওই সাফল্য ছিল চমক-লাগানো। বড় ভাই কবি আল মুজাহিদী’র ফেলে আসা রাজনৈতিক জীবনকে ও গড়ে নিয়েছিল নিজের মতো করে। আমার প্রিয় অঙ্কনশিল্পী ‘কাব্যিক পরাবাস্তববাদী’ গণেশ পাইন চলে গেছেন ১২ই মার্চ। বাংলার লোকরচনা ভিত্তিক তাঁর জাদুশিল্প নিশ্চয়ই অমর করে রাখবে তাঁকে। লোকশিল্পী আরও একজনকে হারিয়েছি ৩১শে মার্চ। তিনি গায়ক সনৎ সিংহ। তাঁর ছড়া ও রঙ্গকৌতুক গান কি ভোলা যাবে কখনও? সেই ‘বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস্‌ বাপু রে’, ‘এক এক্কে এক’ কিংবা ‘ঠিক দুক্কুর বেলা ভূতে মারে ঢিল’ এ সবের জবাব মিলবে না কোনও দিন। আমাদের লোকশিল্পী আবদুর রহমান বয়াতীকে হারিয়েছি ১৯শে আগস্ট। ‘মানুষ বানাইয়া খেলছো তারে লইয়া’, ‘দেহঘড়ি’, ‘পাগল মন’ আরও কত অবিস্মরণীয় গান এই শিল্পীর। এ সৃষ্টি হারাবে না কোনও দিনই। হিন্দি ফিল্মি গানের নন্দিত শিল্পী শামশাদ বেগম বিদায় জানিয়েছেন ২৩শে এপ্রিল। এস ডি বর্মণের সুরে ‘বাহার’ (১৯৫১) ছবির গানগুলো দিয়েই তিনি হৃদয়মন কেড়ে নিয়েছিলেন আমার, ফেরত দেন নি আর। ‘দুনিয়া কি মজা লে লো’, ‘সাইয়াঁ দিল মেঁ আনা রে’ ও আরও অনেক গান এখনও মুখর করে তোলে স্মৃতিকে। ওই ‘বাহার’ ছবির ভিলেন প্রাণ-ও বিদায় নিয়েছেন ১২ই জুলাই। নিন্দিত চরিত্রে অভিনয় করেও যে নন্দিত হওয়া যায় তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি। চলচ্চিত্র-জগতের আরেক প্রিয় স্রষ্টা ঋতুপর্ণ ঘোষকে হারিয়েছি ৩০শে মে। বলতে গেলে কলকাতা’র বাংলা ছবিকে মুক্তি দিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর ‘তিতলী’কে ভাল লাগার কথা মনে থাকে সব সময়। কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন চলে গেছেন ১৬ই জুন। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে পরিচিত, জুনিয়র ছিলেন, সে হিসেবে সম্মান সম্ভ্রম প্রকাশ করেছেন সব সময়েই। অ্যালেন গিনসবার্গ-এর কবিতা অনুবাদের জন্য আমাকেই বেছে নেয়াতে প্রমাণ মেলে তাঁর সেই সশ্রদ্ধ মনোভাবের। দুঃখ, সেই অনুবাদ আর করা হলো না আমার। অভিনেতা আনোয়ার হোসেন শেষ অভিবাদন জানিয়েছেন ১৩ই সেপ্টেম্বর। নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, পালঙ্ক- কত প্রিয় ছবিতে তাঁকে পেয়েছি প্রিয়তর রূপে। মানুষ হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন। ‘বিচিত্রা’য় তাঁকে নিয়ে আমার প্রচ্ছদ-রচনার শিরোনাম ছিল ‘মুকুটহীন নবাব’। তা-ই ছিলেন তিনি, তখন এক বাক্যে বলেছেন সবাই। তাঁর বিদায়ে মনে-মনে লিখেছি এক প্রচ্ছদ-রচনা। তার শিরোনাম ‘শেষ নবাব’।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু