Home » , » কমরেড আবদুল হক by শাহিদুল হাসান খোকন

কমরেড আবদুল হক by শাহিদুল হাসান খোকন

Written By Unknown on Thursday, February 17, 2011 | 3:56 AM

ত শতাব্দীর চলি্লশের দশক। সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থা দেশজুড়ে। সামন্তবাদী এই সমাজব্যবস্থা ভাঙার দৃঢ় সংকল্পে যে কয়েকজন মানুষ যুদ্ধে নেমেছিলেন, তাঁদের তালিকায় অন্যতম ও উজ্জ্বল বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কমরেড আবদুল হক।

সামন্তবাদী পীর পরিবার থেকে আগত এই সাহসী কমরেড কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং শ্রমিক শ্রেণীর মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই আদর্শ ধারণ করেই মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন আবদুল হক। প্রয়াত এই বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতার পঞ্চদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২২ ডিসেম্বর ১৯৯৫ শুক্রবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে কমরেড আবদুল হক শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ১৯২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর কমরেড আবদুল হক যশোর জেলার সদর থানার খড়কিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শাহ মুহম্মদ আবুল খায়ের ও মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সেই সামন্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স পড়ার সময় তিনি ১৯৪১ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীসভ্য পদ লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি পার্টির রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্রসংগঠন অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশনের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ সময়কালে তিনি অনেক আন্দোলন প্রত্যক্ষভাবে গড়ে তোলেন ও অংশ নেন; যেমন_১৯৩৯ সালের হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙার আন্দোলন, ১৯৪২ সালের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ আন্দোলন, হাট তোলা আদায় বন্ধ আন্দোলন, ১৯৫০ সালের রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ড আন্দোলন, বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনসহ ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলন ইত্যাদি। মতিন-আলাউদ্দিন উপস্থাপিত 'কৃষিতে ধনতন্ত্র' বক্তব্য খণ্ডন করে তিনি ১৯৬৯ সালে রচনা করেন 'পূর্ব বাংলা আধা ঔপনিবেশিক আধা সামন্তবাদী' পুস্তক। পরবর্তী সময়ে জাসদের আখলাকুর রহমানের জবাবে লেখেন, 'কৃষিব্যবস্থা আধা সামন্ততান্ত্রিক' পুস্তক। ১৯৭২ থেকে ১৯৯১ সালের অষ্টম কংগ্রেস পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অসুস্থ অবস্থার একটি পর্যায়ে তিনি এই পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সভ্য ছিলেন। এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর বলশেভিক ধরনের পার্টি গড়ে তোলার সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দীর্ঘ ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে তিনি আজ শুধু একজন ব্যক্তি নন, এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারায় সংশোধনবাদবিরোধী এক মহান প্রতীক হিসেবে এবং এ দেশের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ধারার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে এসেছেন। আবদুল হক একজন সুবক্তা ছিলেন। তাঁর উদ্দীপক বক্তৃতা প্রতিটি জনসভা উদ্দীপ্ত করত। ১৯৭০ সালের ২০ জানুয়ারি আসাদ দিবসে ভাসানী ন্যাপের আয়োজনে ঢাকার পল্টন ময়দানে লক্ষাধিক লোকের জনসভায় তাঁর বক্তৃতা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। সম্ভবত এটাই ছিল তাঁর জীবনে প্রকাশ্য শেষ জনসভা। লেখক হিসেবে কমরেড আবদুল হক ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু