Home » , , » আবুল হুসেন 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের পথিকৃৎ

আবুল হুসেন 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের পথিকৃৎ

Written By Unknown on Saturday, January 22, 2011 | 1:49 PM

'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব'_এই আপ্তবাক্য সামনে রেখে বিংশ শতাব্দীর প্রথিতযশা দার্শনিক আবুল হুসেন তাঁর 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের সূচনা করেন। বাঙালি মুসলমান সমাজের যুগ যুগান্তরের আড়ষ্ট বুদ্ধিকে মুক্ত করে জ্ঞান-পিপাসা জাগিয়ে তোলাই ছিল, তাঁর 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের লক্ষ্য।

তাঁর দর্শনের মূল নির্যাস ছিল মুক্তচিন্তার অনুশীলন। স্বাধীন মতপ্রকাশকে তিনি স্বজাতির আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির পূর্বশর্ত বলে মনে করতেন। বাঙালি মুসলমানদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অনীহার সমালোচনা করে আবুল হুসেন বলেন, 'আমাদের শিক্ষাঙ্গনেই আমরা জ্ঞানের সঙ্গে বিরোধ করে আসছি। দর্শন, বিজ্ঞান ও আর্টকে আমাদের শিক্ষা কেন্দ্র হতে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি, এই ভয়ে_পাছে আমাদের ধর্ম নষ্ট হয়। ধর্ম আমাদের এতই নাজুক!'

জন্ম পরিচিতি, শিক্ষা ও রচনাবলি

অবিভক্ত বাংলার প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক, সমাজ সংস্কারক, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক আবুল হুসেন ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি যশোর জেলার পানিসারা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস যশোরের কাউরিয়া গ্রামে। পিতা হাজী মোহাম্মদ মুসা ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম।

শিক্ষা জীবনে ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে আবুল হুসেন যশোর জেলা স্কুল হতে মেট্রিকুলেশন, কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ হতে আইএ ও বিএ এবং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯২০ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২২ সালে বিএল এবং ১৯৩১ সালে এমএল ডিগ্রি লাভ করেন।

পেশাগত জীবনে কোলকাতার হেয়ার স্কুলের শিক্ষকতা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করেন। বছর খানেক পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের লেকচারের পদসহ মুসলিম হলের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন ১৯২১ সালে। ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ছেড়ে কোলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। অবিভক্ত বাংলার বিধান সভায় পাশকৃত ওয়াক্ফ আইনের খসড়া আবুল হুসেনই প্রস্তুত করেন।

মানবদরদী আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী কালীন সময় হতেই 'শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো' বিতরনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা আনায়নে কাজ শুরু করেন। কৃষি নির্ভর দেশ মাতৃকার কৃষক সমাজের দুঃখ দুর্দশার মুক্তির পথ নির্দেশনায় তিনি কৃষকের আর্তনাদ, কৃষকের দুর্দশা, কৃষি বিপস্নবের সূচনা নামক প্রবন্ধ রচনা করেন। ঢাকায় যে 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, যার মূলমন্ত্র ছিল- "জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব' তার নেতৃত্ব দেন অগ্রভাগে থেকেই। তিনি ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ গঠনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং এর মুখপত্র 'শিখা' সম্পাদনা ও প্রকাশ করে এর আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ্ ও আবুল ফজল তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।

অন্ধভাবে ধর্ম ও সমাজবিধি পালন নয়; মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তি দ্বারা ধর্ম ও প্রথাকে যাচাই করার পক্ষে তিনি জোড়ালো মতামত উপস্থাপন করেন। এতে ঢাকার রক্ষনশীল মুসলিম সমাজ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুিরতে ইস্তফা দিয়ে কোলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানে তিনি আইন ব্যবসা শুরু করেন।

মাত্র ৪৩ বছর বেঁছে ছিলেন এই বাঙালি মনীষা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর কোলকাতায় মৃতু্যবরণ করেন। এই ছোট্ট জীবনকালে তিনি 'মুসলমানদের শিক্ষা সমস্যা, মুসলিম কালচার, বাঙলার নদী সমস্যা, শতকরা পঁয়তালিস্নশের জের, সুদ রিবা ও রেওয়াজ, নিষেধের বিড়ম্বনা, ঐবষড়ঃ্থং ড়ভ ইবহমধষ, জবষরমরড়হ ড়ভ ঐবষড়ঃং ড়ভ ইবহমধষ, উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ গঁংষরস ষধ িরহ ইৎরঃরংয ওহফরধ নামক গ্রন্থসমূহ রচনা করেন। তাঁর রচনায় মুক্তবুদ্ধি, উদার চিন্তা ও অসামপ্রদায়িক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রতিফলন ঘটেছিল।

আবুল হুসেনের দর্শন, বুদ্ধির মুক্তি

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে ঢাকায় ড. মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ্র নেতৃত্বে 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' গঠিত হয়। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিল সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের সমাজ সচেতন করে তোলা। নানারূপ অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার হতে মুক্ত করা। এই সংগঠনটির নাম মুসলিম সাহিত্য সমাজ হলেও এর কর্মকান্ড আবর্তিত হত হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল বাঙালির জন্য। এই সংগঠনের মুখপত্র ছিল 'শিখা' সে সূত্রে এর সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁরা 'শিখা গোষ্ঠীর' লেখকরূপে পরিচিত হন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মূলমন্ত্র ছিল বুদ্ধির মুক্তি। আর এই শিখার সম্পাদক-প্রকাশক হিসাবে আবুল হুসেন ছিলেন 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিদের অন্যতম। শিখা গোষ্ঠীর অন্যান্য লেখকদের মধ্যে কাজী আবদুল অদুদ, (১৮৮৭-১৯৪৮) কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১), কাজী আনোয়ারুল কাদির (১৮৮৭-১৯৪৮) মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-৫৬) আবুল ফজল এবং আবদুল কাদির (১৮৮৭-১৯৪৮) এর নাম উলেস্নখযোগ্য। মুসলিম সাহিত্য সমাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আবুল হুসেন বলেন, 'বাঙালি মুসলমান সমাজের যুগ-যুগান্তরের আড়ষ্ট বুদ্ধিকে মুক্ত করে জ্ঞানের অদম্য পিপাসা জাগিয়ে তোলা।'

আবুল হুসেনের দর্শনের মূল নির্যাস ছিল মুক্তচিন্তার অনুশীলন। স্বাধীন মত প্রকাশকে তিনি স্বদেশের স্বজাতির আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির পূর্বশর্ত বলে মনে করতেন। বাঙালি মুসলমানদের আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার অনীহার সমালোচনা করে আবুল হুসেন বলেন- আমাদের শিক্ষাঙ্গনেই আমরা জ্ঞানের সঙ্গে বহুদিন হতে বিরোধ করে আসছি। দর্শন, বিজ্ঞান ও আর্টকে আমাদের শিক্ষা কেন্দ্র হতে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি, এই ভয়ে- পাছে আমাদের ধর্ম নষ্ট হয়। ধর্ম আমাদের এতই নাজুক।

"ব্রিটিশের সঙ্গে ইউরোপের জ্ঞানদীপ্ত মন যখন এ দেশে আসলো এবং আমাদের আড়ষ্ট মনকে আঘাত করল, তখন হিন্দু সমাজ সে আঘাতে জেগে উঠলো এবং জ্ঞানদীপ্ত মনকে বরণ করে নিল। আর আমরা মুসলমানরা সে আঘাতে জাগতে তো চাই-ই নি বরং চোখ রাঙিয়ে সে মনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। ইয়োরোপের জ্ঞানকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত আমরা আমাদের সে নিদারুণ ভুলের সংশোধনের চেষ্টা করি নাই। বরং সে ভুলকে বর্তমানে আরো জোর করে আঁকড়ে ধরেছি।"

জ্ঞান সাধনাই ছিল জ্ঞান তাপস আবুল হুসেনের জীবন দর্শন। তাই তো তিনি তাঁর প্রথম পেশা হিসাবে শিক্ষাকতাকেই বেছে নিয়েছিলেন। থাকতে চেয়েছেন শিক্ষকতায় মনে প্রাণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেবার পাশাপাশি নিজের সাহিত্য সাধনা ও সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এদেশের সাধারণ মানুষকে জ্ঞানের পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। বাঙালির মধ্যে জ্ঞানস্পৃহা জাগরণে আবুল হুসেনের বাংলার বলশী (১৩৩২ বঙ্গাব্দ) এবং বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা (১৩৩৫) অসমান্য অবদান রেখেছে। আবুল হুসেনের দর্শনের মূল কথা ছিল 'জ্ঞানেই মুক্তি' আর বুদ্ধির মুক্ত চর্চা ছাড়া জ্ঞানের ফল সার্বিকতা পায় না। তাই তিনি মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র 'শিখা' সম্পাদনার মধ্য দিয়ে "জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব"। এই শেস্নাগানের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বুদ্ধির মুক্তির জন্য কাজ করেন।

আবুল হুসেন এর দর্শনে মানবতাবাদ ও অসামপ্রদায়িকতা

বাঙালি মানবতাবাদী দার্শনিক হিসাবে আবুল হুসেন মানসে লালন করতেন অসামপ্রদায়িক মানবতাবাদের আদর্শ। যার প্রমাণ আবুল হুসেন এর নিজের লেখনিতেই পাওয়া যায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রসঙ্গে লিখিত নিবন্ধে তিনি লিখেন, 'কেহ হয়ত মনে করবেন এ সমাজের নাম 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' হওয়ায় হিন্দু সাহিত্যিকগণের কোন সম্পর্ক এতে নেই। কিন্তু এই বার্ষিক রিপোর্ট হতে আপনারা বুঝবেন যে এ সমাজ কোন একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয় কিংবা এ কোন এক বিশেষ সামপ্রদায়িক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য গঠিত হয়নি। সাহিত্য সৃষ্টি এর উদ্দেশ্য, আর সেই সাহিত্যে মুসলমানের প্রাণ ও জীবন ফুটিয়ে তোলাই ইহার অন্যতম উদ্দেশ্য।'

সত্যই তাই আবুল হুসেনের সম্পাদনায় 'শিখা' বাংলার তরুণদের মনে উদার মনোভাব সৃষ্টির জন্য নিরলস ভাবে কার্যকর ছিল। মুসলিম সাহিত্য সমাজের ব্যানারে শিখা গোষ্ঠীর কার্যক্রম উভয় বাংলার জ্ঞানী গুণীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। যার প্রমান মিলে- ১৯২৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, মোহিত লাল মজুমদার, ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ হিন্দু মনীষার অংশ গ্রহণ। যা আবুল হুসেনসহ সমগ্র শিখা গোষ্ঠীর অসামপ্রদায়িক উদারমনা মানবতাবাদেরই পরিচয় বহন করে।

জ্ঞানের অনুরাগী আবুল হুসেন এদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও আইনকে যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে আজীবন কাজ করেছেন। মানব কল্যাণে আবুল হুসেনের ভাবনা ছিল উপযোগবাদী। আবুল হুসেন নিজে একজন কমিউনিষ্ট না হলেও তৎকালীন রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপস্নব দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হন। ঔপনিবেশিক ও সামন্তবাদী সমাজের নিপীড়িত কৃষকের অবস্থা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে তাঁর 'বাংলার বলশী' পুস্তকে।

আবুল হুসেনের দর্শন ও কর্মের মূল্যায়ন

চিন্তাবিদ হিসাবে আবুল হুসেন ছিলেন মানবতাবাদী, সংস্কারপন্থী ও মুক্তচিন্তার পৃষ্ঠপোষক। জ্ঞান চর্চায় তিনি যুক্তি বুদ্ধিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বাধিক। আর এই যুক্তি বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা প্রীতির কারণেই তৎকালে তিনি লিখতে পেরেছিলেন, "অন্যান্য ধর্মের ন্যায় ইসলামও কতগুলি আদেশ ও নিষেধের সমষ্টি মাত্র। ইসলাম মানুষের জন্য, মানুষ ইসলামের জন্য নয়। কালের পরিবর্তনে ধর্মশাস্ত্রের কথা মানুষ পুরোপুরি পালন করতে পারে না। যেহেতু, সংসারের উন্নতির জন্যই মূলত ধর্ম বিধানের সৃষ্টি, সেহেতু, যুগের সাথে সংসারের উন্নতির জন্য ধর্ম বিধানও পরিবর্তনীয়। নবীজীর অমোঘ বাণী-যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে চীন দেশে যাও, আমরা ভুলতে বসেছি।

ইসলামের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং স্বদেশ স্বজাতির উদ্দেশ্যে ইসলামের যুক্তিনিষ্ঠ স্বরূপ উপস্থাপন করে, 'আদেশের নিগ্রহ' নামের যে প্রবন্ধ আবুল হুসেন লিখেছেন; তৎকালীন রক্ষনশীল মুসলিম সমাজে তার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা আবুল হুসেনকে ইসলামের শত্রুরূপে আখ্যায়িত করে। আহসান মঞ্জিলের এক সালিসিতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। ইসলাম সবযুগের সব স্থানের সব মানুষের সব প্রয়োজন মিটাতে ও সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না বলে তিনি মনে করেন এবং বলেন, 'সে প্রয়োজন মিটাতে হবে আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি খাটিয়ে'। তাঁর প্রবন্ধের এটাই ছিল সারমর্ম। আবুল হুসেন পরের দিন সাহিত্য সমাজের সম্পাদকের পদ এমনকি সদস্য পদও ত্যাগ করেন এবং পরিশেষে ঢাকা ত্যাগ করে কলিকাতায় গমন করেন।

আবুল হুসেন ছিলেন সাহসী মানুষ। স্বাধীন যুক্তিবাদী ও মুক্তচিন্তা চর্চা তখনো এদেশে সহজ ছিল না, এখনো নেই। এজন্য আহমদ শরীফ আবুল হুসেন সম্পর্কে বলেন, 'শিখা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন আবুল হুসেন। তিনি সংস্কারক বিবেকবান পুরুষ তাই তাঁর স্বল্পকালীন জীবন নিবেদিত ছিল স্বদেশের, স্বসমাজের ও স্বজাতির কল্যাণ চিন্তায় ও হিত সাধনে। দেশ, মানুষ, ধর্ম, ন্যায় ও কল্যাণ সম্বন্ধে তার চিন্তা চেতনায় কিছু কিছু অনন্যতা ছিল।'

পরিশেষে আহমদ শরীফের মূল্যায়ন দিয়েই শেষ করছি, 'আবুল হুসেন চিন্তা চেতনায় ছিলেন মানবতাবাদী। তাই তিনি অসামপ্রদায়িক, উদার, শ্রেয়োবাদী ও হিতবাদী এবং দৈশিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম মিলনকামী ও গনহিতে মিলিত প্রয়াসকামী। নিরঙ্কশ প্রীতিই এ বন্ধনসূত্র ও মিলন সেতু।'

আর আমাদের লজ্জা হলো এমন তরো দর্শন অনুরাগী বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিকে কিনা শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকুরী ছেড়ে কোলিকাতায় যেতে বাধ্য করেছে। এটি অবশ্যই বাঙালির দর্শনের অপরিমেয় ক্ষতি।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু