তিন মাসের কর্মসূচি দেবে চার দল by মোশাররফ বাবলু

Saturday, September 24, 2011

গামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে রোডমার্চ, বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার ১৯টি জেলা সফর। কর্মসূচির মধ্যে এক দিনের একটি হরতাল রাখা যায় কি না সে নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সঙ্গে সমমনা ছোট দলগুলোর নেতারা একমঞ্চে উঠবেন আগামী মঙ্গলবার। জোটনেত্রী খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কর্মসূচি নিয়ে জোটের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এবং চারদলীয় জোটের নেতারা আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। তবে বিএনপির ওপর শরিক কোনো কোনো দলের চাপ রয়েছে কর্মসূচিতে হরতাল রাখার জন্য।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে কিংবা পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও অভিমুখে রোডমার্চ, বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং ১৯ জেলা সফর কর্মসূচি রয়েছে। খালেদা জিয়া নিজে এই জেলাগুলো সফর করবেন। তবে সরকার বৈরী আচরণ করলে তাৎক্ষণিক হরতাল ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, বিএনপি ও জোটের শরিক জামায়াত এই মহাসমাবেশে লোক সমাগম বেশি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তারা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে বৈঠক করা হয়েছে জেলা নেতাদের সঙ্গে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠক করেন। গতকাল শনিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলীয় নেতাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং সমমনা আট দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে মহাসমাবেশ সফল এবং পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দুর্গা পূজা এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় দুটি উৎসবের ওপর বিএনপির কর্মসূচির কারণে যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সে বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।
জানা গেছে, চারদলীয় জোটের ব্যানারে আগামী মঙ্গলবার মহাসমাবেশ করা হবে। জোট নেতা খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতসহ শরিক দলের নেতারা থাকবেন বিশেষ অতিথি। তবে মহাসমাবেশে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে শরিকদের মধ্যে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মহাসমাবেশে জামায়াত নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক তাঁদের পাঁচ শীর্ষ নেতার মুক্তি দাবি করতে পারেন। আর সেটি বিএনপিসহ কারো কারো জন্য বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে মিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সচেষ্ট। আবার বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, তারা সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।
বিএনপির একাধিক নেতা বিষয়টি স্বীকার করলেও এ ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা জানান। কারণ গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ডা. মো. তাহের মুক্তি পেলে তাঁকে নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ওই সময় আজহার ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে তাঁদের দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মুক্তির দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন। ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চারদলীয় জোটের বৈঠকেও বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরে আনেন জামায়াত নেতারা। এ নিয়ে বিএনপির নেতারা আলোচনাও করেন। কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে না হলেও জোটের স্বার্থে এই ইস্যুতে কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেন। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, তাঁরা তাঁদের নেতাদের মুক্তি চেয়ে বক্তব্য দেবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা সব সময়ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে আসছি। তবে সেই বিচার করতে গিয়ে যেন রাজনৈতিকভাবে কেউ হয়রানির শিকার না হন। স্বচ্ছভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার হতে হবে।' মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়ে বক্তব্য দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাবেশে জামায়াত কী বক্তব্য দেবে তা তাঁর জানার কথা নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সিএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তাই আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। সবাই চায় আন্দোলন। ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ থেকে তাঁদের নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'আমরা সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এটা নিয়ে যেন রাজনীতি না করা হয়।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জামায়াতের জন্য আমরা হরতাল ডাকব কেন? জামায়াত তো বিএনপির কোনো নেতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেনি।'
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে জামায়াত নেতারা কী বক্তব্য দেবেন তা তাঁদের জানার কথা নয়। এটা সম্পূর্ণ জামায়াতের ব্যাপার। এ নিয়ে বিএনপির কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ সমাবেশ তো বিএনপি একা করবে না, এটা চারদলীয় জোটের। শরিক দলের নেতা ও সমমনা দলগুলোর নেতারা একমঞ্চে বক্তব্য দেবেন। তিনি বলেন, যেভাবেই যে বক্তব্য দিন না কেন, বিএনপি সব সময় সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে এই বিচারের নামে যেন রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেটাই তাদের দাবি।
জামায়াতের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর চারদলীয় জোটের সমাবেশ। জাতীয় ইস্যু হচ্ছে সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি নিজস্ব ইস্যু ও দাবি সামনে রেখে নেতারা বক্তব্য দেবেন। বিএনপির নেতারা তারেক রহমান ও কোকোর ব্যাপারে বক্তব্য দিতে পারেন। আমিনী তাঁর দলের সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মুক্তি দাবিতে তাঁদের নেতারা বক্তব্য দিতেই পারেন। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিব্রত কিংবা মতবিরোধ থাকা কাম্য হতে পারে না।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে সমাবেশ করার জন্য ক্রীড়া পরিষদের কাছে আবেদন করেছিল তারা। কিন্তু তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়নি। এ জন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
সমমনাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক : ২৭ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে গতকাল রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলীয় নেতাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং সমমনা আট দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে মহাসমাবেশ সফল করা এবং পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা নেতাদের বৈঠক হয়। এরপর সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সমমনা আট দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রধান শফিউল আলম প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু ও মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামারুজ্জামান খান ও মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও সাধারণ সম্পাদক হামদুল্লাহ আল মেহেদী, ইসলামিক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন ও সাধারণ সম্পাদক এম এ রশীদ প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সভাপতি খন্দকার গোলাম মুর্তজা ও মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও মহাসচিব হাসরত খান। সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে ঢাকা জেলা ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

ভারত দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেঃ হাজারে

Friday, August 19, 2011

য়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে বানানো মঞ্চের পেছনে টাঙানো ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের নায়ক মহাত্মা গান্ধীর বিশাল এক ছবি। মঞ্চে এসে বসলেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে। সমবেত জনতা স্লোগান তুলল, ‘ভারত মাতা কী জয়’, ‘ভারত মাতা কী জয়’। আন্না হাজারে ঘোষণা দিলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হলো।’ এর পরই নামে প্রবল বৃষ্টি।
দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী লোকপালের দাবিতে রামলীলা ময়দানে গতকাল শুক্রবার এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সমাজকর্মী আন্না হাজারের ১৫ দিনের অনশন।

এবারের অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে তিনি আখ্যায়িত করছেন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম’ বলে। আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন গত মঙ্গলবার থেকেই। সেদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনশনের সময়সীমা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দর-কষাকষির পর সমঝোতা হলে মুক্তি দেওয়া হয় আন্নাকে।
রামলীলা ময়দানে কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ৭৪ বছর বয়সী আন্না বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমার ওজন তিন কেজি কমেছে। কিন্তু সেটা কিছু নয়, আপনারাই আমার শক্তি। রাজনৈতিক নেতাদের লুটপাট বন্ধ করতেই হবে।’ একটি শক্তিশালী লোকপাল পদ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত রামলীলা ময়দান থেকে নড়বেন না বলে ঘোষণা দেন আন্না হাজারে। অনশনের চার দিন চললেও গতকাল তাঁকে মোটামুটি সুস্থই দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার থেকে জেপি পার্কে আন্না হাজারের অনশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যার কথা বলে এক দিন আগে অনশনের অনুমতি বাতিল করে পুলিশ। এর পরও মঙ্গলবার অনশন করতে গেলে সহস্রাধিক সমর্থকসহ আন্নাকে আটক করা হয়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তিহার কারাগারে। রাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনি দাবি তোলেন, অনশনের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত কারাগার ছাড়বেন না। গত বৃহস্পতিবার আন্নার সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়। রামলীলা ময়দানে তাঁকে ১৫ দিন অনশনের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকালেই তিহার কারাগার থেকে বের হন আন্না হাজারে। এ সময় দেশের পতাকা আন্দোলিত করে তাঁকে স্বাগত জানান হাজার হাজার সমর্থক। তাঁদের উদ্দেশে আন্না হাজারে বলেন, ‘গত ৬৪ বছরেও আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা পাইনি। ১৬ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হয়েছে। বিপ্লব শুরু হয়েছে। আমি বেঁচে থাকি আর না থাকি, আন্দোলনের এ অগ্নিশিখা নিভতে দেবেন না। ভারত দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ আগুন জ্বলবে।’
এরপর রামলীলা ময়দানের উদ্দেশে একটি খোলা ট্রাকে উঠে পড়েন আন্না। তাঁর সঙ্গ নেন দুই-তিন হাজার সমর্থক। তবে রামলীলা ময়দানে যাওয়ার আগে দুই জায়গায় থামেন তিনি। দুর্নীতি প্রতিরোধে লোকপাল নিয়োগের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন সেনাবাহিনীর সাবেক ড্রাইভার সমাজসেবক আন্না হাজারে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আন্না হাজারের আন্দোলন নিয়ে বিভক্ত ভারতের সুশীল সমাজ

দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী লোকপাল গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন ভারতের প্রখ্যাত সমাজকর্মী আন্না হাজারে। এই আন্দোলনের পেছনে সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও সুশীল সমাজ এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ বলেছেন, আন্না হাজারের আন্দোলনের পেছনে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আছে। আর অন্যদিকে আরেক সমাজকর্মী ও নিবন্ধকার শবনম হাশমি মনে করেন, হাজারে কট্টরপন্থা অবলম্বন করছেন এবং ডানপন্থী গ্রুপগুলো তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে।
গত কয়েক মাসে দেখা গেছে, লেখক, শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এতে করে আন্দোলন জোরদার হয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত জুনে মৃত্যুর এক মাস আগেও শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন কার্টুন এঁকে আন্না হাজারের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। ফিদা হুসেন বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী এই আন্দোলনকারী আরেকটি নতুন বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভারত থেকে দুর্নীতি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। এটা দেখে আমি রোমাঞ্চিত এবং আমি তাদের সাফল্য কামনা করি।’
জনপ্রিয় কল্পকাহিনী লেখক চেতন ভগতও হাজারের আন্দোলনের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিবাদ এড়িয়ে চলা একটি রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। আমি তাঁর (হাজারে) পক্ষে কথা বলে যাব।’
হাজারের বিপক্ষে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন ওডিশা রাজ্যের বিখ্যাত বালু ভাস্কর সুদর্শন পট্টনায়েক। গত সোমবার তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মাকড়সার জালের মতো ঘিরে ফেলেছে এবং আমাদের তা ছিন্ন করতেই হবে।’ পুরিতে ভারতের জাতীয় তিন রঙের জমিনে হাজারের মুখমণ্ডলের একটি বালুর ভাস্কর্য তিনি হাজারেকে উৎসর্গ করেন।
তবে হাজারের বিপক্ষেও কথা বলছেন অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী। প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘দুর্নীতির জন্য যে ব্যবস্থা দায়ী তা পরিবর্তনে হাজারের এই আন্দোলনে কোনো সুনির্দিষ্ট আহ্বান নেই। আমার মতে, দুর্নীতি বন্ধের জন্য প্রথমেই সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ বেসরকারীকরণ বন্ধ করতে হবে। এটা হলে দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। আর তখন লোকপালও কার্যকর হবে।’
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মল্লিকা সারাভাই একসময় আন্না হাজারের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু হাজারে পল্লি উন্নয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় সারাভাই তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
হাজারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে শুধু সারাভাই নন, অন্য বুদ্ধিজীবীদেরও সংশয় রয়েছে। শিল্পী-সমাজকর্মী রাম রহমানের মতে, ‘হাজারের আন্দোলন আসলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্যোগ। দুর্নীতি একটি জটিল বিষয়। কিন্তু বিপ্লব ভিন্ন জিনিস। এসব নিয়ে মানুষের পরিষ্কার ধারণা নেই।’

মতিউর রহমান কি আইনের ঊর্ধ্বে? by কালের কণ্ঠ ওয়েব

Sunday, July 3, 2011

১ আগস্ট। দেশের ইতিহাসের একটি কালো দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
এ ঘটনার বিচার হয়নি এখনো। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ওই দিন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
জোট সরকার আমলে এ ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তদন্ত হয়। সেখানে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। চার্জশিট হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের নেতা মুফতি হান্নান, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তাঁর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, আরো জঙ্গি সদস্যসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিচারও শুরু হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের তদন্তে ঘটনার পেছনের শক্তি কারা, তা উদ্ঘাটিত না হওয়ায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার মামলার অধিকতর তদন্ত দাবি করা হয়। আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত চলছে।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি মামলার উদ্ভব হয়। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা। দুটি মামলারই অধিকতর তদন্ত করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ। তিনি বারবার অধিকতর তদন্তের সময়সীমা বাড়িয়ে নিয়েছেন আদালতের কাছ থেকে। তবে এখন তদন্ত চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বলে তদন্ত কর্মকর্তার সর্বশেষ একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
তদন্ত নিয়ে সংশয়
এ ঘটনাটির তদন্ত নিয়ে বারবার সংশয় থেকে যায়। জোট আমলে জজ মিয়া নামের এক নিরীহ ব্যক্তির স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। ওই স্বীকারোক্তিতে আওয়ামীপন্থী বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে জড়ানো হয়। তদন্তে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়, যাতে মানুষ বুঝতে পারে আওয়ামী লীগই ঘটনাটি ঘটিয়ে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছে। কিন্তু ওই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় মুফতি হান্নান জবানবন্দি দেওয়ার পর। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের তদন্তে ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের নাম উঠে আসে। কিন্তু ঘটনার ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করা হয়নি। ওই সময় অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় সরকারের প্রভাবশালীরা জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আবার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্তও করা হয়।
আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে। কিন্তু এবারের তদন্তেও এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখনো পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।
তিনি কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন?
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ওই বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন ধারাছোঁয়ার বাইরে। এর কারণ কী তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, সিআইডি কয়েকবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তাভাবনা করেও সরকারের সবুজ সংকেত না পেয়ে পিছিয়ে যায়।
গত ১৯ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের চমকে দিয়ে তিনি যে তথ্যটি উপস্থাপন করেন, তা নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর। তিনি সরাসরি বলেন, ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেই নন, ন্যাশনাল কমিটি ফর ইন্টেলিজেন্স কো-অর্ডিনেশনের (এনসিআইসি) সমন্বয়ক হিসেবেও তিনি বক্তব্য পেশ করেন এবং বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার চক্রান্ত চলছে। এ চক্রান্তের সঙ্গে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক জড়িত। ওই পত্রিকায় ৪০ দিনে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ৪৮টি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে অনেকেরই প্রশ্ন্ন, তিনি কি পার্ট অব জঙ্গি? দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে তাঁর কী লাভ? র‌্যাবের সফলতায় তিনি কি মনঃক্ষুণ্ন? আগেরও কিছু ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্রব রয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত এক জঙ্গি তাদের সঙ্গে ওই সম্পাদকের বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছে। সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স তাঁকে চক্রান্তকারী হিসেবেই শনাক্ত করে। এসব কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতি সংবেদনশীলতার কারণে প্রধানমন্ত্রী এখনো তা চান না।'
এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনের জন্য কালের কণ্ঠকে চিহ্নিত করা হয়েছে 'হলুদ সংবাদপত্র' হিসেবে এবং সেটা করেছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। সুদীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে আমাদের যে সম্পাদক সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সঙ্গে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তাঁকে 'হলুদ সম্পাদকের এবং অপসাংবাদিকতার' দায়ে অভিযুক্ত করে সতর্ক করে দেওয়া হলো। আর সেদিন এই প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনেরই যেন প্রতিধ্বনি তোলা হলো।
গত বছরের ১০ মে প্রকাশিত সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, তাঁর ভাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হোতা জঙ্গি নেতা তাজউদ্দিনের সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাঁদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। গোয়েন্দারা যে তাজউদ্দিনকে খুঁজছেন, সেটা মতিউর রহমান তাঁকে আগাম জানিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে এসব তথ্য লেখা হয়েছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টুর একটি জবানবন্দির ভিত্তিতে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কালের কণ্ঠের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে মামলা ঠুকে দেন। সেই মামলা বিচারের পর প্রেস কাউন্সিলের দেওয়া রায়ে বলা হয়, কালের কণ্ঠ হলুদ সাংবাদিকতা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রেস ব্রিফিংয়ে একই অভিযোগের প্রতিধ্বনি ওঠার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এল, তাহলে প্রেস কাউন্সিল কেন কালের কণ্ঠকে হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে অভিযুক্ত করল?
অবশ্য প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনার সময় অভিযুক্ত পত্রিকা ও পত্রিকাটির সম্পাদকের নাম বলেননি। তবে কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদন, প্রথম আলো সম্পাদকের মামলা এবং প্রেস কাউন্সিলের রায়ের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সব সাংবাদিকের কাছেই পরিষ্কার হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা কোন সম্পাদকের কথা বলেছেন। জঙ্গিসংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত এই সম্পাদক যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, তা আর কারো বুঝতে বাকি রইল না।
তারিক আহমেদ সিদ্দিক যেহেতু একাধারে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা এবং এনসিআইসির সমন্বয়ক, কাজেই তাঁর মুখ থেকে যখন এ অভিযোগ আসছে, তাই ধরে নিতে আর কোনো দ্বিধা নেই যে, এ অভিযোগের ভিত্তি অনেক দৃঢ়। তিনি নিশ্চিত হয়েই অভিযোগ তুলেছেন এবং তাঁর বক্তব্য সরকারেরই বক্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা এবং এনসিআইসির সমন্বয়ক মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের এই বক্তব্য দেশের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য অবশ্যই সরকারি বক্তব্য। তিনি তাঁর বাসায় বা অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দেননি। এটাকে ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের এমন স্বীকারোক্তির পরও ওই পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ না করে পুলিশ এমন একটি বর্বর গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিট দিতে যাচ্ছে কেন? তাহলে এই চার্জশিটও কি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যাবে? এ প্রশ্নটি এখন সংশ্লিষ্ট সবার।
সরকারের এমন বক্তব্যের পরও ওই সম্পাদক ধারাছোঁয়ার বাইরে কেন? তাঁর পেছনে কোন শক্তি রয়েছে যে, তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এ প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।
উপদেষ্টার বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করার চক্রান্ত!
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা যে পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সংশ্লিষ্টতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন, দেশের মানুষ মনে করে, যথেষ্ট তথ্য-প্রমানসহ তিনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এমন একটি সংবাদ সম্মেলনের পরও অভিযুক্ত ওই সম্পাদক ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন_এটা মানতে পারছে না দেশের সচেতন মানুষ।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একটি মহল ওই সম্পাদককে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করতেই ওই সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদ না করতে বাধা সৃষ্টি করছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিট দেওয়ার পরে চক্রান্তকারী ওই মহল যাতে বলতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মিথ্যা বলেছেন।
আইনের নিজস্ব গতি নেই!
আইনের মূল বক্তব্য হচ্ছে_আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলবে। বর্তমান সরকার আমলে লিমনের ওপর র‌্যাবের গুলিবর্ষণের ঘটনা একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। র‌্যাবকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার। কিন্তু র‌্যাবের পক্ষে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊধ্বর্তন মহল র‌্যাবকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের বিতর্কিত মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
শুধু লিমনের বিষয়ে নয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
কিন্তু ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ থাকার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা নেই। এক সাবেক উপমন্ত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে এই সম্পাদকের সখ্য সর্বজনবিদিত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাবেক উপমন্ত্রীর এই ভাই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেন। এ ছাড়া হামলার বিষয়ে আগে থেকেই ওই সম্পাদককে অবহিত করেন সাবেক উপমন্ত্রীর ভাই। সাবেক উপমন্ত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেন আলোচিত সম্পাদকের অধীন এক রিপোর্টার। আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে এই রিপোর্টার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে আলোচিত সম্পাদক তাঁকে পুঁজি করে বাণিজ্য করেন। এ রিপোর্টারেরও ২১ আগস্ট গেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনিও হামলার বিষয়টি আগেই জানতেন বলে জানা গেছে। এখন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলোচিত সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রীর ভাই ও সেই রিপোর্টারকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে কি বলা যাবে_আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে?
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা হলো_এক. তাঁর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দুই. তাঁর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিন. তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার চক্রান্তকারী। এসব অভিযোগ অবশ্যই মারাত্মক। ২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন? দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। আর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সোপর্দ করা যায়। তাহলে কেন আইনের হাতে ওই সম্পাদককে সোপর্দ করা হচ্ছে না? প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকার সম্পাদক বলেই কি তিনি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেলেন। তাহলে কি বলতে হয়, আইনের নিজস্ব কোনো গতি নেই!
ওই সম্পাদকের কর্মকাণ্ড
অপসাংবাদিকতার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই দৈনিকটি ও তাঁর সম্পাদকের। কখনো তিনি ক্ষমা চেয়েছেন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে, আবার কখনো দুঃখ প্রকাশ করেছেন অবৈধ অগণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষ নেওয়ার কারণে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বাঁকে ওই সম্পাদক ও তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার অবস্থান ছিল অস্বচ্ছ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনীতি থেকে রাজনীতিকদের উচ্ছেদ করে সুশীল নাগরিকদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়েছেন তিনি। দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ-তত্ত্ব দিয়ে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতারোহণে উৎসাহ জুগিয়েছে তিনি ও তাঁর পত্রিকা।
২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি এটিএন বাংলার 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশে জরুরি অবস্থার পক্ষে তিনি সাফাই গান, সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি ভূমিকা রাখার উসকানি দেন। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্র, বিশেষ করে দাতা দেশগুলোর ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি। এটিএন বাংলার স্টুডিও থেকে সরাসরি সমপ্রচারিত ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পত্রিকাটির ভূমিকা ছিল কোনো এক ষড়যন্ত্রকারী নেপথ্যশক্তির তল্পিবাহক হিসেবে। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই 'সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই'_শিরোনামে তিনি এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, 'দেশের সব পরিবর্তনের পেছনে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাহলো সশস্ত্র বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগই এখন পর্যন্ত প্রধান। এসব পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি বা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বড় নয়।' সব মন্তব্য প্রতিবেদনেরই সারবস্তু ছিল অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক শক্তিকে উসকে দেওয়া।
রাজনীতিকদের হেনস্তা করে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে একের পর এক নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি জরুরি অবস্থার সময় রাজনীতিকদের অপদস্থ করে।
২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর অবস্থানকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় লেখে। এর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সব মহল, বিশেষভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন বলে লেখায় উল্লেখ করা হয়।
২০০৭ সালের ১১ জুন 'দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে' শিরোনামে তাঁর পত্রিকায় এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, 'দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পটভূমিতে দুই নেত্রীর ভবিষ্যৎ কী হবে, কী হওয়া উচিত তা নিয়ে এখন আবার ব্যাপক আলোচনা চলছে। তাঁরা কি রাজনীতিতে থাকবেন, নাকি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন?' বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বলতে পারি, গত ১৬ বছরে আপনাদের দুজনের ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অনেক অত্যাচার দেশবাসী নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। দয়া করে আপনারা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। নতুন নেতৃত্বকে সামনে আসার এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিন। দুর্নীতি আর অপশাসন ছাড়া আপনাদের দেশকে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই!'
বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের তত্ত্ব প্রথম প্রকাশ করেন ওই সম্পাদক। ২০০৮ সালের ১০ মে 'নির্বাচন চাই, ১১ জানুয়ারির আগের অবস্থায় ফিরতে চাই না' শিরোনামে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে বারবার একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস চালান তিনি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই পত্রিকার রম্য ম্যাগাজিনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেন ও মুসলমানদের উসকে দেন। একপর্যায়ে পত্রিকাটি এই কার্টুন প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ও ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়।
ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সভাপতিত্বে দেশের শীর্ষ আলেমরা বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে সালিসি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই সম্পাদক করজোড়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান।
সর্বশেষ ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ভুল স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন ওই সম্পাদক। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতির (নোয়াব) নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ওই সম্পাদক বলেন, 'ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী আমাদের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ জন্য আমরা দুঃখিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা করা ছাড়া তখন আমাদের উপায় ছিল না। তবে ওই ভূমিকা ভুল ছিল।' বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

সহিংস বিক্ষোভ, পুলিশ নিহত

Monday, January 31, 2011

ড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার দিনভর এ বিক্ষোভে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪০ পুলিশ সদস্য, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পাঁচ সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী শতাধিক গ্রামবাসী।

বিক্ষুব্ধ জনতা হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশের তিনটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের চারটি অস্ত্র ও ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান (৪৫)।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় বিস্তৃত আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিল রক্ষা কমিটির ডাকে স্থানীয় জনতা গতকাল ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল থেকে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল পাঁচটার পর যান চলাচল শুরু হয়।
আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ব্যানারে এলাকাবাসী মাস খানেক ধরে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে আসছে। ২৬ জানুয়ারি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে তাদের সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া এবং ওই দিন সংঘর্ষের ঘটনায় দুই হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে গতকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে জানান বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টা থেকে আড়িয়ল বিলের ওপর নির্ভরশীল তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ পৃথক মিছিল নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের হাতে ছিল লাঠি, কুড়াল, রামদা, গুলতি ও ঝাড়ু। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পুলিশ-জনতা দফায় দফায় সংঘর্ষে মহাসড়কের প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল আটটা থেকেই মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের মোড়ে ও ধলেশ্বরী সেতুর কাছেসহ তিনটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ।
সকাল নয়টায় শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়ায় অল্প কিছু মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। অদূরে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডেও তখন খুব বেশি মানুষ দেখা যায়নি। সেখানে পুলিশের উপস্থিতির পাশাপাশি র্যাবের তিনটি গাড়ি টহল দিচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওই সড়ক জনতার দখলে চলে যায়। তখনো আশপাশের গ্রামের সড়ক দিয়ে লাঠি, দা হাতে নারী-পুরুষের খণ্ড খণ্ড মিছিল আসছিল। ১১টার মধ্যে ছনবাড়ী, হাসাড়া, শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের মাথায় সাদা কাপড়ের টুকরা বাঁধা ছিল। মুখে ছিল ‘আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর চাই না’ স্লোগান। গ্রামবাসী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে, করাতকল থেকে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
১১টার দিকে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ছবিসহ ঝোলানো ব্যানার ও গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ এগোতে চাইলে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ও গুলতি দিয়ে মারবেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পেছন ফিরে দৌড় দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ দল ভারী করে এসে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগান থেকে গুলি করতে করতে এগোতে থাকে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
সাড়ে ১১টার দিকে পুুলিশের একটি জলকামান শ্রীনগরের দিক থেকে রঙিন পানি ছিটাতে ছিটাতে হাসাড়ার দিকে এগোতে থাকে। গ্রামবাসীও জলকামানের গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করে। দ্রুত বেগে জলকামানটি ঢাকার দিকে চলে যায়। তখন গ্রামবাসী সামনে পড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রথম আলোর সাংবাদিকের একটিসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় তারা প্রথম আলোর প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা ও আলোকচিত্রী সাজিদ হোসেনের ওপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় এটিএন নিউজের আরাফাত সিদ্দিকী, বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান সোহেল আরমান, দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী শফিউদ্দিনও আহত হন।
কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ গিয়ে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার হাজার গ্রামবাসী একযোগে পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তারা সেখানকার পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ ও আগুন ধরিয়ে দেয়। ভেতরে আটকা পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। তখন পুলিশের ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
কিছুক্ষণ পর আবার গ্রামবাসী এসে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি এবং রায়ট কারও বন্ধ হয়ে যায়। জনতা রায়ট কারের ওপর হামলা চালায়। তখন পুলিশ পিছু হটতে থাকলে জনতা কুপিয়ে ও পিটিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকে আহত করে। এ সময় পুলিশের কাছ থেকে তিনটি শটগান ও একটি গ্যাসগান লুট হয়। এরপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঢাল পেটাতে পেটাতে এগোতে থাকলে জনতা সরে যায়। তারপর আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমানকে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেলা আড়াইটার দিকে জনতা মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যায়। বিকেল পাঁচটার পর সড়ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষ থামার পর পর মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম, পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আহসান, শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল লতিফসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
সংঘর্ষে অন্যান্যের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল ইসলাম, তিন সহকারী পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম, দেওয়ান লালন আহমেদ ও সাহেদ ফেরদৌস আহত হন। মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের অন্তত ৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০ পুলিশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এসআই মোস্তফা কামাল, হাবিলদার আবুল কালাম, নায়েক মফিজুল ইসলাম, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আজানকে। মিটফোর্ডে ভর্তি করা হয় হাবিলদার আবদুল হক, নায়েক গাজীউল ইসলাম, কনস্টেবল আলীমুদ্দিন, নজিউল্লাহ ও শাহাবুদ্দিনকে।
আহত গ্রামবাসীদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
মিটফোর্ডে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্য গাজীউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজারবাগ আর্মড পুলিশ বিভাগ থেকে তিনিসহ ছয়জন শ্রীনগর এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। উত্তেজিত প্রায় তিন-চার হাজার লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে জনতা রাস্তায় মোটা মোটা গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তখন পুলিশ জনতার দিকে এগিয়ে গেলে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
মতিউরের লাশ নওগাঁয়: ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত নয়টার দিকে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মতিউর রহমানের লাশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় পাঠানোর কথা। মতিউর নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চক আতিখা গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও অন্যদের আহত হওয়ার খবরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খন্দকার হাসান মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন অবস্থায় কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার প্রস্তুতি: পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ হত্যা, অস্ত্র লুট, ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মামলায় কতজনকে আসামি করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা বসে ক্ষয়ক্ষতি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
রক্ষা কমিটির অভিযোগ: আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারী জনতা সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা করেনি। আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের লোকজন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত রাতে সংবাদপত্র কার্যালয়ে পাঠানো রক্ষা কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়।
সাংসদের বক্তব্য: সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, এই হামলা ও আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন রয়েছে।

পাহাড় আবার অশান্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৬

Friday, January 21, 2011

রাঙামাটির জুরাছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলায় গতকাল শুক্রবার বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আহত ও একজন অপহূত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ওই দুটি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা জুরাছড়িতে তাঁদের কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁদের নিরস্ত্র সদস্যদের হত্যা করেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। তবে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা সমন্বয়ক মাইকেল চাকমা দাবি করেন, এসব ঘটনা চাঁদাবাজির কারণে জনসংহতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফসল। তাঁদের কোনো সদস্য এ ঘটনায় জড়িত নন।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ-উল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
জুরাছড়িতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের এবং কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের কালাচান চাকমা (৩৬), বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের পদুছড়া গ্রামের রতন চাকমা (৩০) ও মৈদং ইউনিয়নের বস্তিপাড়ার নিরঞ্জয় চাকমা (৪০)। তাঁরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক বলে জানা গেছে। জুরাছড়িতে নিহত অপর দুজন হলেন, জীবন তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) ও লুলংকর চাকমা (৪০)। তাঁদের মধ্যে লুলংকর চাকমা ইউপিডিএফের সমর্থক বলে জানা গেছে। জীবন ও লুলংকরের লাশ উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। একই ঘটনায় জনসংহতি সমিতির সমর্থক জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের সন্তোষ চাকমা (৪০) প্রতিপক্ষের হাতে অপহূত হয়েছেন।
একই দিন ভোর ছয়টায় কাপ্তাইয়ের দুই আদিবাসী দলের বন্দুকযুদ্ধে বিনোদ চাকমা (৩০) নামের জনসংহতি সমিতির এক সদস্য নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মৈদং ইউনিয়নের ফকিরাছড়া বাজারে গতকাল ছিল হাটের দিন। জনসংহতি সমিতির একটি সশস্ত্র দল ওই বাজারের দিকে আসার সময় ভোর রাত চারটার দিকে বস্তিপাড়া এলাকায় ওত পেতে থাকা ইউপিডিএফের একটি দলের সামনে এসে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ৪৫ মিনিটের বেশি বন্দুকযুদ্ধ চলার সময় ওই পাঁচজন মারা যান। এ সময় সন্তোষ চাকমা বিপক্ষ দলের হাতে ধরা পড়েন।
খবর পেয়ে সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ সেখানে গেলে সেনাবাহিনী লাশগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। জুরাছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি ঘটনার জন্য পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটি ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হয়েছে।
তবে জনসংহতি সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, মৈদং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অরুণ চাকমার বাড়ি থেকে তাঁদের সদস্যদের অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধ: সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার রাইখালী ইউনিয়নের গবছড়ি এলাকায় ভোর ছয়টার দিকে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের সমর্থক আদিবাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন ও চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি লাশ ও একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। পরে আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত ব্যক্তি জনসংহতি সমিতির সদস্য বিনোদ চাকমা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতর রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিলোৎপল চাকমার গতকাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে। তিনি খাগড়াছড়ি থেকে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে সমিতি দাবি করে।
চার মাসে নিহত ১৫: এর আগে গত বুধবার রাতে বরকল উপজেলার সদর ইউনিয়নের লতিবাঁশছড়া গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অঙ্গ-সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিক্রম চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত অক্টোবর থেকে চার মাসে রাঙামাটি জেলায় জেএসএসের দুই পক্ষ ও ইউপিডিএফের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
দীঘিনালায় এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ: দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের দাঙ্গাবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহীর গুলিবর্ষণে রোনাল চাকমা (১৮) নামের এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে হেডম্যান পাড়ার দীপন চাকমার ছেলে এবং খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র। ঘটনার পর তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন আদিবাসী অস্ত্রধারী লংগদু উপজেলার দিক থেকে এসে দাঙ্গাবাজারে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। তখন বাজারের দিকে আসার সময় রোনাল চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর অস্ত্রধারীরা আবার লংগদু উপজেলার দিকে চলে যায়।
মেরুং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) সুবেদার সামছুল হক প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দাঙ্গাবাজার এলাকায় জেএসএস (সন্তু লারমা) ও জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে থাকতে পারে। এরা আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দাঙ্গাবাজার এলাকায় দুটি ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) গ্রুপের তিন কর্মী নিহত হয়েছিলেন।

তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন সম্ভাবনা by বকুল আশরাফ

Monday, January 17, 2011

শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলন, ক্ষোভ এবং ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা এবং বছরের শেষে এসে তার বাস্তবায়ন পোশাক তৈরী শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক জিএসপির শর্ত শিথিল করায় এই খাতটি থেকে আরো অধিক রপ্তানি হবার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এতে করে ভবিষ্যতে এই তৈরী পোশাক শিল্পখাতটির স্থিতিশীল অবস্থা যে বিরাজ করবে তার ইঙ্গিত বহন করে । বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাক তৈরী শিল্প থেকে রপ্তানি আয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে বার বিলিয়ন ডলার, যা উত্তর-উত্তর বৃদ্ধি পাবে।

জিএসপি এক ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি । ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সমূহে বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশ (প্রায় ১৭৬টি দেশ) থেকে কোন দ্রব্য প্রবেশের সময় টেরিফের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ বা এক ধরনের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই জিএসপির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, বিশ্বের উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশসমূহের সাথে অনুন্নত দেশসমূহের বাণিজ্যের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধন এবং সুশাসনের লক্ষ্যে অনুন্নত দেশসমূহকে এক ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে একযোগে কাজ করার কৌশল। বা বলা যায় ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক শুল্ক হার এর ফলে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরো বেশি অংশগ্রহণে ও অতিরিক্ত রপ্তানি রাজস্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থাপনের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি দারিদ্য্র হ্রাসে সচেষ্ট করা।

বাংলাদেশ এমন একটি অনুন্নত দেশ হিসেবে রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সে সুবিধা পেয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে গ্যাট চুক্তির আওতায় এই জিএসপি সুবিধা প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশে যখন পোশাক তৈরী শিল্পের বিকাশ এবং রপ্তানি শুরু হয় তখন থেকেই বাংলাদেশও সেই সুবিধা পেয়ে আসছে। তখন জিএসপি সুবিধা পেতে হলে দ্রব্য প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপের উৎস বা অরিজিন বাংলাদেশে হতে হতো। যেমন সূতা তৈরী, সূতা থেকে কাপড় তৈরী এবং কাপড় থেকে পোশাক তৈরী। পরবর্তীতে আরো শিথিল করে দুই ধাপে করা হয়। অর্থাৎ উপরোক্ত তিন ধাপের যে কোন দু'ইটি ধাপ যদি বাংলাদেশ সাধিত হয় তবে তা জিএসপির আওতায় পরবে এবং তার জন্য শুল্কহারের হ্রাসকৃত সুবিধা উপভোগ করবে।

ইউরোপীয় বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উৎপাদিত দ্রব্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশিকাধারের দাবী বহুদিনের। প্রায় ২০০৩ সাল থেকে এই দাবি আলোচিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের নভেম্বরের ২৩ তারিখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন রুলস অফ অরিজিনের ক্ষেত্রে সেই বহু আলোচিত জিএসপি সুবিধা বা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবিটি বিবেচনায় এনে ঘোষণা করে যে, মাত্র একটি ধাপ সম্পন্ন করলেই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে। এবং তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে অর্থাৎ ২০১১ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে যত তৈরী পোশাক রপ্তানি হবে সে সব দ্রব্যই ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এই জিএসপির শর্ত শিথিল করায় তৈরী পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যেহেতু বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরী পোশাক ইউরোপীয় বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে তাই ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশে থেকে পূর্বের চেয়ে আরো বেশী আমদানী করবে, শুধুমাত্র এই শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ বা অনুন্নত দেশ বাংলাদেশকে দেয়া এই সুবিধা উন্নয়নশীল দেশ যেমন চীন, ভারতের জন্য প্রযোজ্য হবে না। সুতরাং বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের চেয়ে জিএসপি সুবিধা নিয়ে এগিয়ে থাকবে।

অনেকেই ধারণা করছে এই সুবিধার কারণে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানি আগামী বছরে বেড়ে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়ে যাবে এবং ২০১৫ সালের মধ্যে তা প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নত করা সম্ভব। বাংলাদেশের মোট তৈরী পোশাক রপ্তানির প্রায় ৬৯ শতাংশ ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করে যা ভবিষ্যতে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সুতরাং এই যে সুবিধা তা অবশ্যই পোশাক তৈরী শিল্পের মালিকদেরকে আরো বেশী সচেতন করে তুলবে।

জিএসপির সুবিধার কারণে সৃষ্ট অন্যান্য দিকগুলোকে ভাবতে হবে। যেমন (এক) বাংলাদেশের টেক্সটাইলস শিল্পে ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে কেননা যে কোন দেশ থেকে আমদানী করা কাপড় বাংলাদেশে এনে তা শুধুমাত্র সেলাই করে রপ্তানি করলেই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সুতরাং বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিলের উৎপাদিত কাপড়ের চাহিদা কমে যেতে পারে। যদি চাহিদা কমে যায় সরকারকে ভাবতে হবে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিভিন্ন সুবিধাদি সম্বলিত নতুন নীতিমালা করতে হবে। আবার টেক্সটাইল মালিকদেরকেও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য আরো বেশী প্রতিযোগিতামূলক কি করে হওয়া যায় তা ভাবতে হবে।

(দুই) বাংলাদেশে যেন আরো পোশাক তৈরী শিল্প গড়ে উঠতে পারে সে জন্য অবকাঠামোগত সুবিধাদি গড়ে তুলতে হবে। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো গ্যাস ও বিদু্যতের জোগান দেয়া। মাল আমদানী ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বন্দরের কাজগুলোকে ত্বরান্বিত করা এবং রাস্তাঘাট বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে শুল্ক ছাড়সহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়বে।

(তিন) পোশাক তৈরী শিল্প যতই বৃদ্ধি পাবে ততোই দক্ষ শ্রমিকদের সংকোট ঘনীভূত হবে। শ্রমিক ধরে রাখা কষ্টকর হবে অনেক ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের শিল্প মালিকদের। এমনকি বড় বড় শিল্প মালিকদের মধ্যে আন্ত: প্রতিযোগিতা শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কে কত বেশী সুবিধা প্রদান করে শ্রমিক ধরে রাখবেন বা নতুন গড়ে উঠা শিল্পে শ্রমিকে জোগান করবেন। এতে শ্রমিক সংকটের তীব্রতার কারণে অনেক শিল্প তার রপ্তানির জন্য প্রদেয় কমিটমেন্ট হারাতে পারেন। তখন সৃষ্ট হবে অন্য সব জটিলতা। সুতরাং বাংলাদেশে পোশাক তৈরী ও রপ্তানি সমিতির এখন থেকেই মনিটর করতে হবে এবং সরকারের যাথে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট তৈরী করে শ্রমিকদের এখন থেকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা। অন্যথায় এই জিএসপির সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব নাও হতে পারে।

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ

শ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি গত শনিবার তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে। বামপন্থীদের সমর্থিত বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তহবিলের উৎস খতিয়ে দেখতে পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নামে।

বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভ সমাবেশকে 'গণতন্ত্র রক্ষার' পক্ষে অবস্থান বলে অভিহিত করে। বিদেশে ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মামলা করার জন্য বামপন্থী কিছু বেসরকারি সংস্থা সাহায্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য সংস্থাগুলোর আর্থিক উৎস খতিয়ে দেখতে গত ৫ জানুয়ারি আইন প্রণেতারা তদন্ত কমিটি গঠনের পক্ষে ভোট দেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েকটি সংস্থা ও বামপন্থী দল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। তাদের মূল বক্তব্য, 'গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন, এখনো তা সম্ভব।'
সমাবেশের আয়োজক ইয়ারিভ ওপেনহেইমার বলেন, 'কয়েক বছরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে এটি একটি। কেননা এর মাধ্যমে আমরা সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেঁৗছে দিতে চাই।' সমাবেশে ১৫ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের অধিকাংশই ইহুদি হলেও আরবরাও এতে অংশ নেয়। শহরের এক জায়গায় মিলিত হয়ে তারা হেঁটে জাদুঘর চত্বরে যায়। পরে সেখানে তারা সমাবেশ করে।
এদিকে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। সূত্র : এএফপি।

বিপ্লবের প্রতীক বোয়াজিজি

Sunday, January 16, 2011

নগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনেই জাইন এল আবিদিন বেন আলীর পতন ঘটেছে। কোনো একক দল বা নেতা এই আন্দোলন গড়ে তোলেননি। ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রনায়কের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন অখ্যাত যুবক মোহাম্মদ বোয়াজিজি।

নিজের জীবন দিয়ে তিনি জাইন এলের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরেছেন দেশবাসীর সামনে। তাই সরকার পতনের পর বোয়াজিজি পাচ্ছেন জাতীয় বীরের মর্যাদা।
তিউনিসিয়ায় গণ-আন্দোলন শুরু হয় বোয়াজিজির প্রতিবাদের মাধ্যমেই। ২৬ বছর বয়সী এ যুবক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েও চাকরি পাচ্ছিলেন না। নিরুপায় হয়ে রাস্তায় ফল বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে দোকানদারির অনুমতি নেননি বলে ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ তাঁর ফলের ঝুড়ি ও টাকাপয়সা কেড়ে নেয় এবং নির্যাতন করে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে বোয়াজিজি প্রতিবাদ জানালেও কেউ তাঁকে সহায়তা করেননি। ক্ষোভ-দুঃখ আর অপমানে ওই দিনই সিদি বোজিদ এলাকায় শত শত মানুষের সামনে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। এ ঘটনার পরই বেকারত্ব দূর করার দাবিতে তিউনিসিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে। গত ৪ জানুয়ারি যখন হাসপাতালে বোয়াজিজির মৃত্যু হয়, তখন প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে তিউনিসিয়ার অলি-গলিতে।
তিন সপ্তাহের আন্দোলনে তিউনিসিয়ায় ৬৬ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এত মৃত্যুর মধ্যেও বোয়াজিজির আত্মাহুতির বিষয়টি বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে। মানুষকে রাস্তায় নামতে অনুপ্রাণিত করার জন্য তাঁর শরীরে আগুন লাগানোর ছবিটিই ব্যবহার করেছে বিক্ষোভকারীরা। বোয়াজিজির নামে ফেইসবুকে একটি পেইজ খোলা হয়েছে, যাতে তাঁর পরিচয় দিয়ে লেখা হয়েছে, 'তিউনিসিয়ার বিপ্লবের প্রতীক'। আর বোয়াজিজির মতো সাহসী ও প্রতিবাদী যুবকের অপেক্ষা করছে অন্যান্য আরব দেশের নিপীড়িত মানুষ। মিসরের মানবাধিকারকর্মী আবদেল হালিম কানদিল যেমন বলেছেন, 'বোয়াজিজির মতো একজন মানুষ দরকার আমাদের।' সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু