পাহাড় আবার অশান্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৬

Written By Unknown on Friday, January 21, 2011 | 2:12 PM

রাঙামাটির জুরাছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলায় গতকাল শুক্রবার বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আহত ও একজন অপহূত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ওই দুটি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা জুরাছড়িতে তাঁদের কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁদের নিরস্ত্র সদস্যদের হত্যা করেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। তবে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা সমন্বয়ক মাইকেল চাকমা দাবি করেন, এসব ঘটনা চাঁদাবাজির কারণে জনসংহতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফসল। তাঁদের কোনো সদস্য এ ঘটনায় জড়িত নন।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ-উল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
জুরাছড়িতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের এবং কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের কালাচান চাকমা (৩৬), বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের পদুছড়া গ্রামের রতন চাকমা (৩০) ও মৈদং ইউনিয়নের বস্তিপাড়ার নিরঞ্জয় চাকমা (৪০)। তাঁরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক বলে জানা গেছে। জুরাছড়িতে নিহত অপর দুজন হলেন, জীবন তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) ও লুলংকর চাকমা (৪০)। তাঁদের মধ্যে লুলংকর চাকমা ইউপিডিএফের সমর্থক বলে জানা গেছে। জীবন ও লুলংকরের লাশ উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। একই ঘটনায় জনসংহতি সমিতির সমর্থক জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের সন্তোষ চাকমা (৪০) প্রতিপক্ষের হাতে অপহূত হয়েছেন।
একই দিন ভোর ছয়টায় কাপ্তাইয়ের দুই আদিবাসী দলের বন্দুকযুদ্ধে বিনোদ চাকমা (৩০) নামের জনসংহতি সমিতির এক সদস্য নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মৈদং ইউনিয়নের ফকিরাছড়া বাজারে গতকাল ছিল হাটের দিন। জনসংহতি সমিতির একটি সশস্ত্র দল ওই বাজারের দিকে আসার সময় ভোর রাত চারটার দিকে বস্তিপাড়া এলাকায় ওত পেতে থাকা ইউপিডিএফের একটি দলের সামনে এসে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ৪৫ মিনিটের বেশি বন্দুকযুদ্ধ চলার সময় ওই পাঁচজন মারা যান। এ সময় সন্তোষ চাকমা বিপক্ষ দলের হাতে ধরা পড়েন।
খবর পেয়ে সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ সেখানে গেলে সেনাবাহিনী লাশগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। জুরাছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি ঘটনার জন্য পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটি ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হয়েছে।
তবে জনসংহতি সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, মৈদং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অরুণ চাকমার বাড়ি থেকে তাঁদের সদস্যদের অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধ: সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার রাইখালী ইউনিয়নের গবছড়ি এলাকায় ভোর ছয়টার দিকে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের সমর্থক আদিবাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন ও চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি লাশ ও একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। পরে আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত ব্যক্তি জনসংহতি সমিতির সদস্য বিনোদ চাকমা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতর রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিলোৎপল চাকমার গতকাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে। তিনি খাগড়াছড়ি থেকে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে সমিতি দাবি করে।
চার মাসে নিহত ১৫: এর আগে গত বুধবার রাতে বরকল উপজেলার সদর ইউনিয়নের লতিবাঁশছড়া গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অঙ্গ-সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিক্রম চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত অক্টোবর থেকে চার মাসে রাঙামাটি জেলায় জেএসএসের দুই পক্ষ ও ইউপিডিএফের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
দীঘিনালায় এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ: দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের দাঙ্গাবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহীর গুলিবর্ষণে রোনাল চাকমা (১৮) নামের এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে হেডম্যান পাড়ার দীপন চাকমার ছেলে এবং খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র। ঘটনার পর তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন আদিবাসী অস্ত্রধারী লংগদু উপজেলার দিক থেকে এসে দাঙ্গাবাজারে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। তখন বাজারের দিকে আসার সময় রোনাল চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর অস্ত্রধারীরা আবার লংগদু উপজেলার দিকে চলে যায়।
মেরুং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) সুবেদার সামছুল হক প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দাঙ্গাবাজার এলাকায় জেএসএস (সন্তু লারমা) ও জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে থাকতে পারে। এরা আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দাঙ্গাবাজার এলাকায় দুটি ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) গ্রুপের তিন কর্মী নিহত হয়েছিলেন।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু