আরেক পৃথিবী!

Tuesday, December 6, 2011

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর মতোই নতুন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহটি। গ্রহটিতে পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই জানিয়েছে নাসা। দি এস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে নতুন এই গ্রহের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হবে।

মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে কেপলার-২২বি। এটি পৃথিবীর চেয়ে ২ দশমিক ৪ গুণ বড়। গ্রহটি সূর্যসদৃশ একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। আমাদের সৌরজগতের বাইরের ৫০০টি গ্রহের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ছোট। গ্রহটিতে পানি থাকার সম্ভাবনা থাকায় কেপলার ২২বি গ্রহটিই এখন পৃথিবীর পর প্রাণের সম্ভাবনাময় গ্রহ—বলা যেতে পারে আরেক পৃথিবী। রয়টার্স।

পাট জিনোমের আঁতুড়ঘর by সমুদ্র সৈকত

Thursday, February 10, 2011

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের মলিকিউলার বায়োলজি ল্যাবের যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালে। পাটের জিনোম আবিষ্কারের জন্য সিকোয়েন্সিং উপযোগী ডিএনএ তৈরি করা হয়েছিল এই গবেষণাগারেই। ৮৮-র বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কৃষকরা। পাটবীজশূন্য হয়ে পড়েছিলেন চাষিরা। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা নিম্নমানের বীজের কারণে পরের বছরও লাভের মুখ দেখেননি তাঁরা।

এ সময় ডিএনএর সাহায্যে পাটবীজ শনাক্ত করার কাজে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। গবেষণা শুরু করেন সোনালী আঁশ নিয়ে। নিজ হাতে গড়ে তোলা মলিকিউলার বায়োলজি ল্যাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চালিয়ে যান নিরলস গবেষণা। তাঁর হাতেই দেশে প্রথম পাটের জিন নিয়ে গবেষণা শুরু। ২০০০ সালে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে পাটের জাত নির্ণয় করাই এ গবেষণাগারে পাওয়া প্রথম সাফল্য। এ ছাড়া 'টিস্যু কালচার অনির্ভর পদ্ধতি' উদ্ভাবন করে জেনেটিক ট্রান্সফরমেশনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনাও সম্ভব হয়েছে এখান থেকে। ল্যাবপ্রধান অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, 'এখন গবেষণা চলছে লবণ সহনশীল পাট উদ্ভাবন নিয়ে। এছাড়া পাটের আঁশের পুরুত্বের জন্য লিগনিন নামের যে উপাদানটি কাজ করে, সেটার পরিমাণ কমানো নিয়েও কাজ চলছে।'
গবেষণার জন্য পাটের নমুনা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য নমুনা টিস্যুকে নির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যসহ বিক্রিয়া ঘটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এতে দ্রবণের ডিএনএর সঙ্গে কিছু অপদ্রব্য থেকে যায়। এ জন্য ফেনল, ক্লোরোফর্ম ও আইসো-অ্যামাইল অ্যালকোহল নামের রাসায়নিক যোগ করা হয়। এরপর তলানি সংগ্রহ করে তাতে ৭০ শতাংশ ইথানল যোগ করে বর্জ্য অপসারণ করা হয়। বিশুদ্ধ ডিএনএকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়।
নমুনাকে প্রাইমার, ডিএনটিপি, ট্যাক পলিমারেজ এবং অন্য উপাদানসহ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) করা হয়। এর মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ ডিএনএ থেকে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে বেশি ডিএনএ পাওয়া যায়। পিসিআর থেকে প্রাপ্ত কাঙ্ক্ষিত ডিএনএ খণ্ডকে পরে জেল ইলেক্ট্রোফোরেসিস নামক একটি পৃথকীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে আলাদা করা হয়।
নির্দিষ্ট আকারের কাঙ্ক্ষিত ডিএনএ ব্যান্ডকে রঞ্জিত করা হয়। এই রঞ্জক ব্যবহারের পর অতিবেগুণী রশ্মির মাধ্যমে ডিএনএ খণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময় গবেষকরা নিরাপদ চশমা ব্যবহার করতে ভুল করেন না। ইদানীং এ কাজে জেলডক সিস্টেম ব্যবহারের ফলে গবেষণার কাজ আরো সহজ হয়েছে। ন্যানো ড্রপ ব্যবহার করে প্রতি মাইক্রোলিটারে কী পরিমাণ ডিএনএ আছে, তাও চট করে জান যাচ্ছে।
গবেষণার কাজে সব সময়ই বিশুদ্ধ পানির দরকার। ল্যাবের উন্নত ডিস্টিলড ওয়াটার প্ল্যান্ট সেই চাহিদা পূরণ করে। শিক্ষার্থীদের জীবাণুমুক্ত পরিবেশে কাজ করার প্রয়োজন হলে ছুটে যান ল্যামিনার এয়ারফ্লো ক্যাবিনেটে। আর নমুনা জীবাণুমুক্ত করতে তাঁরা ব্যবহার করেন অটোক্লেভ মেশিন।
এ ছাড়া পাটের জিনোমে কোনো নির্দিষ্ট ডিএনএ খণ্ড আছে কি না কিংবা থাকলে এই খণ্ডের সংখ্যা কত, তা নির্ণয় করার জন্য সাউদার্ন ব্লট নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কাঙ্ক্ষিত জিনের প্রকাশ ঘটছে কি না, তা সঠিকভাবে নিরূপণ করার জন্য আছে নর্দার্ন ব্লট।
বর্তমানে পাটের জন্য উপকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণের কাজ চলছে এই ল্যাবে। উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবনের জন্য জেনেটিক ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে বিশেষ জিনের প্রকাশ ঘটানোর কাজ এগিয়ে চলেছে।
এখানে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক মানের এই ল্যাবে ছুটে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও।
ল্যাব ম্যানেজার ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট সাজিয়া শারমিন জানান, আরো উন্নত গবেষণার জন্য ল্যাবে খুব শিগগিরই মাইক্রো-অ্যারে স্ক্যানার, রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন এবং টু-ডি জেল ইলেক্ট্রোফোরেসিস মেশিন সংযোজন করা প্রয়োজন।
'মলিকিউলার বায়োলজির গবেষণায় ধৈর্য প্রয়োজন'_জানালেন গবেষক রাজীব আহমেদ। শিক্ষার্থী নূরুন্নাহার ফ্যান্সি তাঁর গবেষণা কাজের ফাঁকে বললেন, 'গবেষণায় কোথাও আটকে গেলে বড় ভাইয়া ও আপুরা আগ্রহ নিয়ে দেখিয়ে দেন। শিক্ষকরা তো আছেনই।'
বাংলাদেশে পাট গবেষণার অন্যতম কর্ণধার ড. হাসিনা খানের নেতৃত্বাধীন এ মলিকিউলার বায়োলজি গবেষণাগারটির সুবাদেই হয়তো দেশের পাট গবেষণা এগিয়ে যাবে অনেক দূর। সেই সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত হবে দেশের লুপ্তপ্রায় পাটশিল্পও।

দূষণ ঠেকাবে তিন অণুযোদ্ধা by তৌহিদ এলাহী

ট্যানারিগুলোতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রচুর ক্রোমিয়াম। প্রক্রিয়া শেষে এর কিছু উচ্ছিষ্ট চলে যাচ্ছে নদীনালায়, আর কিছু হচ্ছে পশুপাখি ও মাছের খাবার। এভাবে মানুষের দেহে ঢুকে যাচ্ছে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম, ঘটাচ্ছে ক্যান্সারসহ অনেক রোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক ও তাঁর গবেষক দল এমন তিনটি অণুজীব শনাক্ত করেছেন যেগুলো ওই বিষাক্ত ক্রোমিয়ামকে বানিয়ে দেবে পুরোপুরি নির্বিষ।

দেশে প্রায় ৩০০ ট্যানারি আছে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর ধারেই শতকরা নব্বই ভাগ চামড়া কারখানা। এগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২২০ মেট্রিক টন চামড়া প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৬০০-১০০০ কেজি উচ্ছিষ্ট পড়ছে নদীতে। কিছু কিছু আবার মুরগি ও মাছের খাদ্য এবং সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় স্বাভাবিকভাবেই বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রচুর ক্রোমিয়াম যৌগ, ক্রোম পাউডার, লিকার ইত্যাদি। এখান থেকে কোনোভাবে এই বিষাক্ত ক্রোমিয়াম মানুষের দেহে ঢুকে গেলে বা সংস্পর্শে এলে তৈরি হয় ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ। শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়ের মাধ্যমে মানুষের সংস্পর্শে এলে ত্বকের প্রদাহ, অ্যালার্জি, ক্ষত, অ্যাজমা ঘটায়। নাকের সেপ্টাম পর্দা ছিদ্র করে ফেলতে পারে এই ক্রোমিয়াম। শ্বাসনালি ও পাকস্থলির বিষক্রিয়াও ঘটায়। পাকস্থলি ও অন্ত্রের প্রদাহ, যকৃৎ এবং মূত্রনালির সমস্যা তৈরি করতেও এর জুড়ি নেই।
গবেষণা দলের সহকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার মো. রফিকুল্লাহ রোমান জানান, ক্রোমিয়াম মানবদেহের ক্রোমোজোমের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি অর্থাৎ ক্যান্সার তৈরি করে। পাশাপাশি ক্রোমিয়ামযুক্ত চামড়া শিল্পের আবর্জনা জলজ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার বাস্তুসংস্থানও নষ্ট করে। এর কারণে স্বাভাবিক অণুজীবের জীবনও বিপন্ন হয়। আর আমাদের চামড়া শিল্পের উচ্ছিষ্ট থেকে খাদ্য ও জৈবসার তৈরির প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থাও অনুসরণ করা হয় না। ক্রোমিয়ামযুক্ত উচ্ছিষ্ট চামড়ার শতকরা ৫৩ ভাগের সঙ্গে কোনো যন্ত্রের সংস্পর্শ ঘটে না। সেগুলো থেকে খালি হাতেই তৈরি হচ্ছে মুরগি-মাছের খাবার। এর ধারাবাহিকতায় ক্রোমিয়াম ঢুকে যাচ্ছে শাকসবজিতে। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানুষের দেহে ঢুকে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
আগের এক গবেষণায় দেশের হাঁস-মুরগির খামার ও মাছের খাবারে ২.৪৯ শতাংশ ক্রোমিয়াম উপাদান পাওয়া গেছে। আর চামড়া শিল্প সংলগ্ন খালে ৪.০৬ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) ঘনমাত্রায় এবং নদীতে ০.৪৪৩ পিপিএম ঘনমাত্রায় ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে।
অধঃক্ষেপণ, আয়ন বিনিময় ছাড়াও ক্রোমিয়াম দূষণ রোধে আরো কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে এগুলো সাশ্রয়ী নয়। প্রয়োজন প্রচুর রাসায়নিক বিক্রিয়ক ও জ্বালানি। এ কারণেই দেশে এগুলোর ব্যবহার চোখে পড়ে না। আবার পদ্ধতিগুলো অন্যভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে। আর এ কাজে ড. মোজাম্মেল হকের গবেষণাপ্রাপ্ত অণুজীব ব্যবহার হবে সাশ্রয়ী ও শতভাগ পরিবেশবান্ধব।
রোমান জানান, চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম সাধারণত দু'ভাবে দ্রবণে মিশে থাকে। এর একটি ক্ষতিকর ও অন্যটি নিরীহ। এটিই গবেষণার মূল ভিত্তি। আবিষ্কৃত তিনটি অণুজীব হলো ইশেরিকিয়া, স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস, পেডিয়োকক্কাস পেন্টোসেসিয়াস। এরা ক্রোমিয়াম রিডাকটেজ নামের এক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক তৈরি করে। এই ক্রোমিয়াম রিডাকটেজ এনজাইম ক্ষতিকর ক্রোমিয়ামকে নিরীহ ক্রোমিয়ামে পরিণত করে।
এ গবেষণায় প্রথমে চামড়া শিল্প এলাকা সংলগ্ন খাল ও নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর উচ্ছিষ্ট চামড়াজাত দ্রব্য থেকে প্রস্তুত খাদ্যের জন্য হাজারীবাগ, নিমতলীর প্রাণী ও মৎস্য খাদ্য তৈরির কারখানাগুলো থেকে নমুনা খাদ্য সংগ্রহ করা হয়। পানির নমুনা থেকে 'লুরিয়া বারটানি আগার' নামের বিশেষ ব্যবস্থায় ইশেরিকিয়া, স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস এবং পেডিওকক্কাস পেন্টোসেসিয়াস ব্যাকটেরিয়া তিনটি শনাক্ত করা হয়। পরে আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে অণুজীবগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। আর বিভিন্ন পর্যায়ে রাসায়নিক ও শারীরিক প্রক্রিয়াজাতকরণের পর খাদ্য উপাদানগুলো থেকে অ্যাটমিক অ্যাবজর্বশন স্পেকট্রোফটোমিটার (এএএস) যন্ত্রের সাহায্যে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি এতে ক্ষতিকর ক্রোমিয়ামের পরিমাণ ও ঘনমাত্রাও বের করা হয়। এরপর শনাক্ত করা ব্যাকটেরিয়াগুলো ক্রোমিয়ামযুক্ত নমুনায় প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলোর কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, অণুজীব নিঃসৃত ক্রোমিয়াম রিডাকটেজ এনজাইমের প্রভাবে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম নিরীহ ক্রোমিয়ামে পরিণত হয়েছে। শনাক্তকারী তিনটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পেডিয়োকক্কাস পেন্টোসেসিয়াস সর্বোচ্চ কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছে।
গবেষণা দলের প্রধান ড. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এটি গবেষণার প্রাথমিক ধাপ। এটি শিল্প পর্যায়ে প্রয়োগের আগে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চামড়া, খাদ্য ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট মহলের ভূমিকা রাখতে হবে।
এই গবেষণাকর্ম নিয়ে ইতিমধ্যে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। 'বাংলাদেশ জার্নাল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ' এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস প্রকাশিত তৃতীয় বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের 'ফুড সেফটি অ্যান্ড হাইজিন' নামের বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে প্রকাশিত প্রবন্ধ দুটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ড. মো. মোজাম্মেল হকের এই গবেষণা দলে আরো ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস, শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ বিন মান্নান, বিজয়চন্দ্র দেবনাথ ও সফিউল ইসলাম।

বলয় রহস্য by জুবায়ের হোসেন

নির নাম শুনলেই মাথায় আসে গ্রহটাকে ঘিরে থাকা বলয়ের ছবি। সৌরজগতের বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনেরও এমন বলয় আছে, তবে এরা শনির বলয়ের কাছে পাত্তা পায় না। কেননা শনির বলয়টা দৃশ্যমান ও দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু এ সৌন্দর্যের পেছনের কাহিনী একেবারে নিষ্পাপ নয়। বলয় সৃষ্টির মূলে রয়েছে এক 'মহাজাগতিক হত্যাকাণ্ড'! মার্কিন গবেষকরা জানালেন, শনির এ বলয় তৈরির জন্য বহুকাল আগে ধ্বংস হয়েছিল অতিকায় এক উপগ্রহ।

এক সময় ভাবা হতো, শনি গ্রহের দুটি উপগ্রহ ধাক্কা লেগে কিংবা ধূমকেতুর আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে যায়। ধীরে ধীরে ওই কণাগুলো গ্রহটির চারদিকে জায়গা মতো জেঁকে বসে। তবে নাসার অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত ভিন্ন ধারণার ইঙ্গিত দেয়। কেননা বলয়টির ৯৫ শতাংশই বরফ। যদি উপগ্রহের খণ্ডে বলয় তৈরি হতো তবে এতে বরফের সঙ্গে অনেক বেশি পাথরকণা থাকার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট গবেষণা সংস্থার তৈরি মডেল জানাল আরো চমকপ্রদ এ তথ্য। বলয় তৈরির সময় শনি সবে জমাট বাঁধতে শুর করেছিল। চারপাশ ঘিরে ছিল হাইড্রোজেন গ্যাসের মেঘ। এখনকার সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানের চেয়েও বড় উপগ্রহ ছিল শনির। ভালোভাবে কক্ষপথে থিতু হওয়ার আগেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খাটিয়ে একটু একটু করে ওই উপগ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে বরফ কেড়ে নেয় শনি। আর ওই বরফেই তৈরি হয়েছে বলয়। শুরুর দিকে বলয়টা ছিল এখনকার চেয়ে ১০-১০০ গুণ বেশি পুরু। পরে ওই বরফের বলয়ে মিশে গেছে যৎসামান্য পাথরখণ্ড ও ধূলিকণা। আর ভর কমে আসায় ওই উপগ্রহ প্রবল বেগে শনির গায়ে আছড়ে পড়ে চূর্ণ হয়ে যায়। গবেষণা বলছে, বলয়ের মধ্যে হারানো বরফ থেকে তৈরি হয়েছে আরো অনেক ক্ষুদে উপগ্রহ।

চীনের কৃষক উদ্ভাবন করলেন বৈদ্যুতিক জুতা

Saturday, January 15, 2011

চীনের এক কৃষক এক জোড়া বৈদ্যুতিক জুতা উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর দাবি, এই জুতা পরে এক দিনে ১০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। হেনান প্রদেশের উগাং এলাকার বাসিন্দা ওই কৃষকের নাম ঝাও জুয়েকিন।
ঝাওয়ের ভাষ্য, এই বৈদ্যুতিক জুতা আসলে ব্যাটারিচালিত রোলার স্কেটবিশেষ। এতে গাড়ির মতো হেডলাইট ও ইন্ডিকেটর রয়েছে। রয়েছে গতিরোধক (ব্রেক) ও ব্রেক লাইট। এই জুতা পায়ে দিয়ে ছুটে চলার সময় ভারসাম্য রক্ষার জন্য দুটি হাতল রয়েছে। জুতার কাজ পরিচালনার বেলায়ও এই হাতল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঝাও বলেন, হাতলে বসানো বোতাম টিপে জুতা চালু করা হয়। এতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ মাইল পর্যন্ত গতি তোলা সম্ভব। চীনের বিভিন্ন গ্রামে স্কুলগামী শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে এই জুতা উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেক শিশুকে বেশ কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।
জুতার উদ্ভাবক বলেন, ‘একটি পাহাড়ি গ্রামে আমার বাড়ি। সবচেয়ে কাছের বিদ্যালয়টি আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। সময়মতো বিদ্যালয়ে হাজির হতে গ্রামের শিশুরা প্রতিদিন শেষরাত তিনটার দিকে রওনা হয়। ওদের এই কষ্ট দেখে ভাবতাম, দ্রুতগামী এক জোড়া জুতা আবিষ্কার করতে পারলে ওরা এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।’
ঝাও বলেন, এই জুতা উদ্ভাবনে তাঁর চার বছরের বেশি সময় লেগেছে। ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। তবে এখন এই জুতা তৈরিতে কম ব্যয় হবে। ১২ ভোল্টের এক জোড়া ব্যাটারিতে চলে জুতা। একটানা তিন ঘণ্টা চলা যায়। এর বেশি সময় চলতে গেলে বাড়তি ব্যাটারি নিতে হবে। আর এই জুতা পরে চলার ক্ষেত্রে খুব বেশি কসরত করারও প্রয়োজন নেই। অরেঞ্জ অনলাইন।

গ্রিনল্যান্ডে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই সূর্যের উঁকি

Friday, January 14, 2011

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সব হিসাবনিকাশ ভুল প্রতিপন্ন করে উত্তর গোলার্ধের এলাকা গ্রিনল্যান্ডে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে সূর্যোদয় হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সেখানে সূর্য ওঠার কথা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুর একটায় সবাইকে অবাক করে আর্কটিক অঞ্চলের সর্ব পশ্চিমের শহর লুলিসাতে সূর্যদেব উঁকি দেন।

গোলার্ধ অঞ্চলে পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার মতো সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত হয় না। দুই মেরু অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দিনের আলো অথবা রাতে অন্ধকার থাকে। এলাকাভেদে সূর্যের আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির মেয়াদ সেখানে টানা ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। ‘পোলার সার্কেল’ বা মেরুচক্রের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় এ মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। মেরুচক্রের সবচেয়ে প্রান্তবর্তী এলাকায় একটানা ছয় মাস দিনের আলো এবং টানা ছয় মাস অন্ধকার থাকে।
বিজ্ঞানীদের গাণিতিক ছক অনুযায়ী এত দিন সূর্য ও পৃথিবীর গতিপ্রকৃতির নির্ভুল হিসাব পাওয়া যাচ্ছিল। সূর্য কখন, কোন অবস্থানে থাকবে, সে হিসাব কখনো ভুল প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু গত মঙ্গলবার লুলিসাত শহরে সূর্যের এই ‘অকালবোধন’ বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আর্কটিক এলাকায় হিমশৈল দ্রুত গলে যাওয়ার কারণে দিগন্তসীমা আগের চেয়ে অনেক বেশি নিচু হয়ে গেছে। সে কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই সূর্য দৃশ্যমান হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, এই তত্ত্ব সঠিক হলে এটাই প্রমাণিত হবে যে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মেরু এলাকায় যে মাত্রায় বরফ গলছে বলে এত কাল ধারণা করে আসছেন, সে ধারণার চেয়ে অনেক গুণ বেশি গতিতে বরফ গলছে। তবে সূর্যের এই ‘আগাম উপস্থিতি’র এটাই যে মূল কারণ, সেটা তাঁরা নিশ্চিত করে বলেননি। এ ঘটনার নিশ্চিত ব্যাখ্যা না পাওয়ার কারণে তাঁরা চিন্তিত রয়েছেন।
ভিয়েনায় অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর মেটেরোলজির ভূ-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক উলফ্যাং লেনহার্থ বলেছেন, নক্ষত্রপুঞ্জে কোনো অবস্থানগত পরিবর্তন আসেনি। তেমনটি হলে সারা পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে যেত। পৃথিবীর কক্ষপথ ও সেখানে তার পরিভ্রমণ-সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত প্রতি মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করছেন, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের খোঁজখবর রাখছেন। সে সব তথ্যে কোনো অনিয়মের আভাস পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় দুই দিন আগে সূর্যের উপস্থিতি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গ্রিনল্যান্ডের থমাস পোচ শহরে অবস্থিত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান-বিষয়ক ইনস্টিটিউট বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বরফের পাহাড়গুলো গলে ক্রমেই উচ্চতা হারাচ্ছে। এতে দিগন্তের উচ্চতাও কমে এসেছে। ফলে সূর্য নির্ধারিত সময়ে উদিত হলেও দিগন্তসীমা নিচু হওয়ার কারণে তাকে আগেভাগে দেখা গেছে। ডেইলি মেইল অনলাইন।

মিয়ানমারের আপত্তিতে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি হয়নি

দেশের সমুদ্রসীমায় অন্তত দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পেট্রোবাংলার যে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) হওয়ার কথা ছিল, মিয়ানমারের আপত্তির কারণে সরকার তা স্থগিত রেখেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি স্বাক্ষরের ব্যাপারে পেট্রোবাংলার আলোচনা যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন মিয়ানমার সরকার তাদের আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠিটি মিয়ানমারের ঢাকার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হলে পিএসসি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ কারণে গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে কনোকোর সঙ্গে পেট্রোবাংলার আলোচনা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার কয়েক দিন আগে উভয় পক্ষ একটি খসড়া চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছিল, যাতে গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের যেটুকু এলাকা মিয়ানমার দাবি করছে, সেটুকু বাদ দিয়েই অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত পোষণ করেছিল।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কয়েক বছর পিছিয়ে গেল। কারণ, যেহেতু মিয়ানমারের আপত্তির কারণে চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত রাখা হয়েছে, সেহেতু যে বিরোধ ওই আপত্তির কারণ, তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম আর শুরু হবে না। ওই বিরোধ নিষ্পত্তিতে সময় লাগবে। অথচ পেট্রোবাংলার সঙ্গে কনোকো ফিলিপসের আলোচনা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল, চলতি শীত মৌসুমেই তাদের ভূকম্পন জরিপ শুরুর প্রস্তুতি ছিল।
সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ প্রথম উদ্যোগ নেয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন মডেল পিএসসি ২০০৮-এর অধীনে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। বিশ্বের খ্যাতনামা আটটি কোম্পানি এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রের আটটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজের প্রস্তাবে কনোকো ফিলিপস এবং অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি টাল্লো যোগ্য বিবেচিত হয়। ওই সময়েই এসব ব্লকে পিএসসি স্বাক্ষর হয়ে যেত। কিন্তু কোনো কোনো মহলের বিরোধিতাকে আমলে নিয়ে ওই সরকার তা না করে নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে (ডিএস-০৮-১০ ও ডিএস-০৮-১১) অনুসন্ধানের ব্যাপারে কনোকো ফিলিপসের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা অন্তত তিন দফা আলোচনা করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পিএসসি স্বাক্ষর হলে কনোকো অনুসন্ধান কাজে দুই বছরে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের আপত্তির বিষয় ফয়সালা করেই সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা হবে। সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। কাজেই এতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।

স্বপ্ন ছিনতাই! রফিক অটোভ্যান থেকে উদ্ভাবক রফিককে বিতাড়নের চেষ্টা গ্রামীণ ফান্ডের

রিদ্র ঘরের, লেখাপড়া না-জানা ছেলে রফিকুল ইসলাম ছোটকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। যন্ত্রপাতি নিয়ে খুটখাট করা ছিল তাঁর শখ। আর পেটের তাগিদে চালাতেন রিকশাভ্যান। এই করতে করতে একদিন কিশোর বয়সেই তিনি শ্যালো পাম্প মেশিন দিয়ে রিকশাভ্যান থেকে বানিয়ে ফেলেন অটোভ্যান, যা দেখে সবাই অবাক।

একসময় রফিক এই অটোভ্যান বাণিজ্যিকভাবে বানিয়ে নিজের দিনবদলের পালা শুরু করেন। বগুড়ার শেরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে ধীরে ধীরে এই অটোভ্যান ভটভটি, নসিমন, করিমন_বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের পথে পথে। পরে রফিক তাঁর উদ্ভাবিত এই অটোভ্যানকে ফোরস্ট্রোক ইঞ্জিন দিয়ে, আরো কিছু কারিগরি করে সরকার থেকে 'পরিবেশবান্ধব' ছাড়পত্র নিয়ে খেজুরতলায় নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি কারখানা_'মেসার্স রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ'।
মেধাবী রফিকের এই সাফল্যগাথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পত্রপত্রিকায় লেখা হয় তাঁকে নিয়ে। স্বপ্নরা ভিড় করে রফিকের মনে। একদিন এই স্বপ্নে রং লাগাতে চলে আসে
গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'গ্রামীণ ফান্ড'। রফিককে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করায় যৌথভাবে এগোনোর। রফিক-গ্রামীণ ফান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় 'রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড'। আর এর পর থেকেই শুরু হয় রফিকের উন্নতির বদলে দুর্গতি। রফিকের সব স্বপ্ন ছিনতাই হয়ে যায় গ্রামীণ ফান্ডের কৌশলী তৎপরতার ফাঁদে। স্বপ্নরঙিন রফিক এখন অসহায়, জর্জরিত, দিশেহারা। ভেবে পান না তিনি, কেমন করে, কোথা থেকে, কী হতে কী হয়ে গেল তাঁর সহজ-সরল জীবনে!
রফিকের সেই দিনগুলি : রফিকের বড় ভাইয়েরা ছিলেন দিনমজুর ও ঠেলাগাড়িচালক। রফিকও কখনো ঠেলাগাড়ি, কখনো রিকশাভ্যান চালাতেন। বড় ভাইয়েরা একসময় পুরনো শ্যালো পাম্প মেশিন কিনে তা আবার বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেন। কিশোর রফিকের ভ্যানেও এসব শ্যালো মেশিন তুলে দেওয়া হতো। রফিক এগুলো দেখতেন আর ভাবতেন, কেমন করে ভ্যান চালানোর পরিশ্রম কমানো যায়।
রফিক সাধনা চালাতে থাকেন। ১৯৮৬ সালের একদিন বানিয়ে ফেলেন সেই যন্ত্রচালিত ভ্যান, ছয় হর্স পাওয়ারের শ্যালো মেশিন যার ইঞ্জিন, একসময় যার নাম হয়ে যায় 'রফিক অটোভ্যান'। একের পর এক অটোভ্যান বিক্রি করে তিনি ২৬ শতাংশ জমি কিনে পাকা বাড়ি তৈরি করেন গ্রামে।
আসে গ্রামীণ ফান্ড : রফিকের সাফল্যের কাহিনী জেনে ঢাকা থেকে যান গ্রামীণ ফান্ড, ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। রফিককে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তারা। রফিক ইতিমধ্যে সেরে ফেলেন গাড়ি তৈরির সব ধরনের আইনি বিষয়। অনেক ভেবেচিন্তে রফিক গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কালের কণ্ঠকে রফিক বলেন, 'ড. ইউনূসকে আমি খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম, তাই তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। তারাও আমাকে নানা স্বপ্ন দেখায়। বিপুল আশায় বুক বেঁধে, চোখ-কান বুজে ঝাঁপিয়ে পড়ি কাজে। আমি লেখাপড়া জানি না, ইংরেজিতে লেখা চুক্তিপত্রের কিছুই আমি বুঝতাম না। তাই সরল বিশ্বাসে, ওরা যে কাগজ দিয়েছে, সই দিয়ে গেছি সবখানে।'
রফিক জানান, তিনি শুধু জানতেন এই কারখানা তাঁর নামে। এখানে তাঁর শেয়ার ৬০ শতাংশ আর গ্রামীণ ফান্ডের ৪০ শতাংশ। পরে তিনি প্রকৌশলী হাসান রেজাকে ২৪ শতাংশ শেয়ার দিয়ে তাঁর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন যে প্রকৌশলী এই অটোভ্যানের নকশার কারিগরি উন্নয়নে কাজ করবেন।
গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির পর রফিক অটোভ্যানকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রথমে ৫০টি, পরে আবার পাঁচ হাজার গাড়ি তৈরির অনুমতি দেয়। তবে এই গাড়ির অনুমোদন নেওয়া হয় 'গ্রামবাংলা অটোভ্যান' নামে। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
চুক্তির পর থেকেই বিপদ : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির পরই রফিকের জীবনের চাকা অচল হতে থাকে। খেজুরতলার কারখানায় একসময় বছরে ৪৪০টি গাড়ি তৈরি হতো। আর চুক্তির এক বছরের মাথায়ই উৎপাদনের হার কমে যায়। এখন রফিকের অভিযোগ, অনেকটা ষড়যন্ত্র করে, তাঁর উদ্ভাবন ছিনতাই করতেই কারখানার কার্যক্রম স্তিমিত করা হয়। একই সঙ্গে তাঁকেও অনেকটা একঘরে করে রাখা হয়। কম্পানির বোর্ড সভায় তাঁকে ডাকা হয় না। তাঁর কোনো প্রস্তাবও মানা হয় না।
চুক্তিপত্রেই খাটো রফিক : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে রফিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন ২০০২ সালের ৬ মার্চ। যৌথভাবে ব্যবসা করার জন্য অংশীদারি চুক্তি হয়। চুক্তিতে গ্রামীণ ফান্ডের পক্ষে কর্মকর্তা এ এ কোরেশী, রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে রফিকুল ইসলাম ও প্রকৌশলী হাসান রেজা স্বাক্ষর করেন। তিন চাকার পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান প্রস্তুত এবং বাজারজাত একসঙ্গে পরিচালনার জন্য এই চুক্তি হয় ইংরেজিতে। অটোভ্যানের উদ্ভাবক রফিক একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে চুক্তিপত্র সম্পাদন করাটাই শুভঙ্করের ফাঁকি। আইনজীবীদের মতে, চুক্তিপত্র যেকোনো ভাষায় হতে পারে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে সহজবোধ্য। দেওয়ানি ও চুক্তি আইনের মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী রাজীব কুমার চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, চুক্তিপত্রের নিচে লেখা থাকে, 'আমরা চুক্তিপত্র পড়িয়া, বুঝিয়া, সজ্ঞানে-সুস্থ মস্তিষ্কে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করিলাম।' কাজেই চুক্তি অবশ্যই সহজবোধ্য হতে হবে।
গ্রামীণ ফান্ড রফিককে তাঁর ব্যবসা, কারখানা আরো বড় করতে সহযোগিতার কথা বলে চুক্তিতে রাজি করায়। কিন্তু ইংরেজিতে লেখা চুক্তিপত্রের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, 'এই মুহূর্তে তিন চাকার অটোভ্যান উৎপাদনের সুবিধা বগুড়ার শেরপুরে রয়েছে বিধায় সেখানেই উৎপাদনকাজ চলবে। তবে ভবিষ্যতে তা যেকোনো সুবিধামতো স্থানে করা যাবে।'
রফিক বলেন, 'চুক্তিতে যে এ রকম শর্ত আছে, আমি বুঝিনি।' পরে রফিককে না জানিয়েই ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠা করা হয় আরেকটি কারখানা, আর খেজুরতলারটি এখন তালাবদ্ধ।
চুক্তিপত্রের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে কম্পানির বোর্ড সদস্যের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। রফিক কারখানার মূল মালিক হলেও বোর্ডে তাঁকে পরিচালক (উৎপাদন) রেখে তাঁর মাত্র দুজন প্রতিনিধি রাখা হয়। প্রকৌশলী হাসানের রাখা হয় একজন। আর গ্রামীণ ফান্ড চারজন পরিচালক রাখতে পারবে। কম্পানির চেয়ারম্যান থাকবেন গ্রামীণ ফান্ডের মনোনীত একজন, আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হবেন বোর্ডের মনোনীত কেউ। পরে গ্রামীণ ফান্ডের ইচ্ছায়ই এমডি করা হয় হাসান রেজাকে। যাঁর মেধা ও শ্রমের কল্যাণে দেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান তৈরি হয়, সেই রফিককে রাখা হয় শুধুই একজন পরিচালক করে।
আবার আগের চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে গ্রামীণ ফান্ড ২০০৪ সালের ৬ এপ্রিল আরেকটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করায় রফিককে। এটিতে বলা হয়, রফিক তাঁর নিজ খরচে অটোভ্যানের বডি তৈরি করবে, তবে তা নিজের কারখানায় নয়, অন্য কোনো জায়গায়। গ্রহণযোগ্য বডির মূল্য রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিশোধ করবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই রফিক আর পরিচালক (উৎপাদন) থাকবেন না।
মূলত এই চুক্তির পরই রফিককে কম্পানি থেকে কাগজে-কলমে বের করে দেওয়া হয়। এমনকি রফিককে গাড়ির বডি তৈরির কোনো কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি।
ঋণের জালে রফিক: রফিকের কারখানার মালামাল নিয়ে কম্পানিতে তাঁর শেয়ার ধরা হয়; কিন্তু তাঁর মেধার কোনো মূল্য ধরা হয়নি। রফিক গ্রামীণ ফান্ড থেকে যে ঋণ নিয়েছিলেন, এরও কোনো সুরাহা না করেই চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির আগে মেসার্স রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের নামে রফিকুল ইসলাম ছয় লাখ টাকা ঋণ নেন। পরে পাঁচ কিস্তিতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধও করেন। গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা শুরু করার পর তিনি ঋণ পরিশোধ করেননি। ভেবেছিলেন, বড় কারখানা হয়েছে, সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরাই ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন; কিন্তু তা হয়নি। ঋণের বিপরীতে সুদ-আসলে সাত লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টাকা দাবি করে গ্রামীণ ফান্ড রফিকের কাছ থেকে একটি ব্যাংক চেক নেয়। ওই চেক ডিসঅনার করিয়ে রফিকের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করে গ্রামীণ ফান্ড। মামলাটি এখন বিচারাধীন ঢাকার ষষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে। কাল রবিবার এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার কথা। রফিকের আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলায় রফিকের সাজাও হতে পারে।
রফিকের আইনজীবী ফয়সাল রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান রফিককে সহযোগিতা করতে তাঁর সঙ্গে অংশীদারি চুক্তিতে ব্যবসা শুরু করে, সেই প্রতিষ্ঠানই তাঁকে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। তাঁকে সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'যাঁকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান, তাঁকে কেন পথে বসতে হচ্ছে?'
চুক্তির কিছুই পাননি রফিক : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে রফিকের চুক্তির পর এ পর্যন্ত তাঁকে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। এমনকি রফিককে মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। রফিককে বাদ দিয়েই গ্রামীণ ফান্ড এ অটোভ্যান তৈরি করে দেশব্যাপী বাজারজাত করছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিষয়গুলো নিয়ে ড. ইউনূসকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানাই। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা না শুনেই বলেন, এসব নিয়ে আমি কিছু করতে পারব না। গ্রামীণ ফান্ডের এমডির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন তিনি। ড. ইউনূসের কাছে অভিযোগ করায় গ্রামীণ ফান্ডের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে একাধিকবার লাঞ্ছিত করেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে কৌশলে আমাকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে বিতাড়িত করেন।'
একটি চিঠি : কম্পানির কর্মকর্তা মামুন আলী খানের (এঙ্িিকউটিভ অ্যাকাউন্টস) একটি চিঠি কালের কণ্ঠের হাতে আছে। ওই চিঠিটি ২০০৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লেখা হয়েছিল। চিঠিতে উল্লেখ আছে, রফিকের গাড়ি মেরামতের ৯০ হাজার ৩৪৭ টাকার ভাউচার নাকচ করে তাঁর ওই টাকা দেওয়া হয়নি। শেরপুরের কারখানা ভাড়া বাবদ ৯৩ হাজার টাকাও কম্পানির কাছে রফিক পাবেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রফিকের বেতনও তাদের কাছে পাওনা রয়েছে। ২০০৩ সালের বেতনও রফিককে দেওয়া হয়নি বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। অবশ্য রফিককে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক দেনাও দেখানো হয়েছে। কারখানা সাভারে স্থানান্তরের পর গ্রামীণ ফান্ড রফিকের কাছে টাকা পাবে বলে দাবি করে আসে।
গোপনে কারখানা সাভারে: গ্রামীণ ফান্ডের একজন কর্মচারীর দেওয়া তথ্য মতে গত ২৮ ডিসেম্বর সরেজমিনে ঢাকার সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের ঋষিপাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব আলাউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গ্রামবাংলা অটোভ্যান নামের গাড়ি ২০০৪ সাল থেকে এ এলাকায় উৎপাদন করা হতো। তবে ২০০৭ সালে কারখানাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।' আরো খোঁজ নিয়ে ওই দিনই দুপুরে সাভারের রাজাসন এলাকার ডেল্টার মোড়ে গিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় যুবক মিজানুর রহমান বলেন, ভেতরেই অটোভ্যান তৈরির কারখানা আছে। মোড় থেকে পশ্চিম দিকে এগোতেই সরু একটি গলির মাথায় দেয়ালঘেরা কারখানা। ভেতরে টুংটাং শব্দ। বাইরে নেই কোনো সাইনবোর্ড কিংবা কম্পানির পরিচিতি। ভেতরে ঢুকতেই কারখানার স্টোর ইনচার্জ আনিসুর রহমান খসরু এগিয়ে এসে বলেন, 'এই জমি ও স্থাপনার মালিক আবু নাসের মো. শাহেদ। তাঁর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা ভাড়া নিয়েছে রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি।' 'যাঁর নামে কারখানা, সেই রফিক কি কখনো এখানে এসেছেন?' জবাবে খসরু বলেন, রফিক ছাড়া আর সবাই এসেছেন।
কারখানার ভেতরে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক-মিস্ত্রি অটোভ্যান তৈরিতে ব্যস্ত। সাতটি অটোভ্যান বানিয়ে পাশে রাখা হয়েছে। কারখানার ফোরম্যান নায়েব আলী বলেন, এখন মন্দা সময়। মাসে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি তৈরি হয়, তবে জানুয়ারির পর থেকে আরো বেশি হবে। তিনি বলেন, এসব অটোভ্যান মাগুরা, পাবনা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা এসে এখান থেকে কিনে নিয়ে যান। তবে টাকা লেনদেন হয় মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের প্রধান কার্যালয়ে।
বক্তব্যের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে : একই দিনই গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের ১৩ তলায় অটোভ্যান কম্পানির কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় এমডি হাসান রেজার সঙ্গে। চুক্তির পর থেকে রফিকের সঙ্গে প্রতারণা এবং তাঁকে কৌশলে কম্পানি থেকে বের করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলা হলে তিনি বলেন, 'রফিক একটা বাজে লোক। সে কম্পানির লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।'
'চুক্তি অনুযায়ী রফিককে বেতন না দেওয়া আর গাড়ির বডি তৈরির দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো অর্ডার দেননি কেন' জানতে চাইলে হাসান রেজা বলেন, 'সে যে গাড়ির বডি তৈরি করে, সেটা কয়েক মাসেই ভেঙে যায়, টেকসই হয় না। কম্পানির বদনাম তো আমরা করতে দিতে পারি না।' 'আগে রফিক অনেক গাড়ি বানিয়ে বিক্রি করেছেন, সেগুলো তো ভালোই চলেছে' বলা হলে হাসান রেজা বলেন, 'এখন যেটা বানাচ্ছি, সেটা ভটভটি, নসিমন নয়_এটা পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান।' 'আপনাদের সঙ্গে চুক্তির আগেই তো রফিক পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বুয়েটসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমোদন এনেছিলেন।' এমডি এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'রফিক একজন ভ্যানচালক, সে-ই সব কিছু করেনি, আমি তাকে ওই সময় সহযোগিতা করেছিলাম। রফিক কম্পানির টাকা মেরে গ্রামের বাড়িতে দোতলা বিল্ডিং দিয়েছে, অনেক জমিজমাও কিনেছে।' 'আপনাদের সঙ্গে চুক্তির আগেই তো রফিক বাড়ি করেছেন।' এমডি বলেন, 'ঋণের টাকায় বাড়ি করেছিল, পরে আমাদের টাকা দিয়ে সেই ঋণ শোধ করেছে।'
ফান্ডের পরিচালক ও উপমহাব্যবস্থাপক কাজী সুলতান আহমেদ বলেন, 'কারখানায় লাভ না হলে তো রফিককে বেতন দিতে পারি না।'
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় না। তবে মহাব্যবস্থাপক (ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ডিপার্টমেন্ট) জান্নাত-ই কাওনাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, '৩০ বছর ধরে ইউনূস স্যারের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি কোনো মানুষের খারাপ চাননি। এখন ওনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'এই রফিক আর করিমরা আগে কোথায় ছিলেন? এখন কেন এসব কথা বলা হচ্ছে?'
রফিকের আকুল আবেদন : কম্পানিতে রফিকের মনোনীত পরিচালক মোশারফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পানির এমডি হাসান রেজা ও গ্রামীণ ফান্ডের লোকজন কৌশলে রফিকের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রফিকের মনোনীত আরেক পরিচালক মুস্তাফিজুল করিম মানিকেরও একই কথা। তিনি বলেন, কম্পানির সব কাগজপত্র রফিকের নামে; কিন্তু একটি মাত্র কালো চুক্তি রফিকের সর্বনাশ করেছে।
রফিক বলেন, 'শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান আমার কারখানায় অংশীদার হয়ে আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। তিনি অনেক ওপরের মানুষ। তাঁর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমাকে মুক্তি দিন। আমার শান্তি ফিরিয়ে দিন।'

দূরতম ছায়াপথরাজি

হাকাশবিজ্ঞানের পরিধি বাড়ছে উল্লেখযোগ্যহারে। আর এতে নবতর সংযোজন হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এবার মহাকাশে সবচেয়ে দূরের ছায়াপথপুঞ্জের সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে কসমস-আজটেক-৩ নামের ওই ছায়াপথপুঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১২.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ! আর এর ভর প্রায় ৪০০ বিলিয়ন, সূর্যের মোট ভরের চেয়েও বেশি!

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আজটেক-৩ এ পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া অন্য পুঞ্জগুলোর তুলনায় বয়সে একেবারেই নবীন। কিছুদিন আগেই আবিষ্কৃত একটি ছায়াপথের বয়স ধরা হয়েছে কয়েক বিলিয়ন বছর। অন্যগুলোর বয়স এর কাছাকাছিই বা এরচেয়ে আরো অনেক বেশি। আর আজটেক-৩-এর
জন্ম খুব বেশি হলে কয়েক শ মিলিয়ন বছর আগে। বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, কয়েক বিলিয়ন বছরে অসংখ্য ছায়াপথের সম্মিলনে একেকটি ছায়াপথপুঞ্জের জন্ম হয়। তুলনামূলকভাবে অনেক আগেভাগেই এর সন্ধান পাওয়ার ফলে এর জন্মরহস্য ও গাঠনিক পরিবর্তনের এমন সব চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মহাকাশবিজ্ঞানী পিটার কাপাক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এটি বিবর্তমান। ক্রমান্বয়ে এটি পরিণত হবে। তবে নবীন এ পুঞ্জটির সন্ধান পেয়ে গবেষকদের পক্ষে গোটা প্রক্রিয়ার একেবারে মূলের কিছু চিত্র সম্পর্কে বাস্তব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। সূত্র : বিবিসিনিউজঅনলাইন।

মঙ্গলে জৈব পদার্থের প্রমাণ মিলেছিল ৩৪ বছর আগেই

Monday, January 10, 2011

ঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সম্প্রতি এ গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের স্বপক্ষে কিছু আলামত মিললেও এ কথা আরো ৩৪ বছর আগেই মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারত। ১৯৭৬ সালের ২০ জুলাই নাসার মঙ্গলযান 'ভাইকিং-১ ল্যান্ডার' প্রথম মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে।

তারপর ভাইকিং-১ মঙ্গলের পশ্চিমাঞ্চলের কিছু মাটির নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর গবেষণায় এতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। মঙ্গলেও জৈব পদার্থ থাকতে পারে_এমন দাবি সে সময় গবেষকরা নস্যাৎ করে দেন। কেননা, তাঁদের মনে হয়েছিল এ লালগ্রহ থেকে নিয়ে আসা মাটির নমুনার সঙ্গে পৃথিবীর পদার্থের হয়তো কোনো ভেজাল ঘটেছে। ফলে গবেষণাগারে পাওয়া জৈব পদার্থ আসলে এ পৃথিবীরই।
এবার নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালের আগস্টে নাসার একটি মঙ্গল অভিযানে 'ফিনিঙ্' নভোযান গ্রহটির আরেকটি স্থানে 'পারক্লোরেটস' নামে লবণ জাতীয় রাসায়নিক আবিষ্কার করে।
এই একই 'পারক্লোরেটস' (যা হাইড্রোজেন, অঙ্েিজন ও ক্লোরিনের সমন্বয়ে তৈরি) লবণ পৃথিবীর চিলির আটাকামা মরুভূমিতেও পাওয়া যায়। এটি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক একটি অঞ্চল_যা পৃথিবীর ভূমিতেই মঙ্গলের কিছু এলাকার সবচেয়ে কাছাকাছি রূপ।
এর পরই সেই একই 'পারক্লোরেটস' রাসায়নিক পদার্থকে শনাক্ত করা হয়, যা ভাইকিংয়ের বিজ্ঞানীরা 'পৃথিবী থেকে ভেজাল ঢুকেছে' বলে মঙ্গলের সেই পদার্থকে বাতিল করে দেন। এ পরীক্ষায় সামান্য পরিমাণ পুষ্টি মেশানো পানি মঙ্গলের মাটির নমুনার ভেতরে ঢেলে দেওয়া হয়। এরপর এর মাটির উপরিস্থিত বায়ুকে নিবিড় পরীক্ষায় দেখা যায় যে, পানির ভেতরে বিদ্যমান পুষ্টি বিপাকীয় ক্রিয়ায় বায়ুতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিপাক একমাত্র জৈব পদার্থের উপস্থিতিতেই সম্ভব। তবে এ গবেষণা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রামাণিক নয়। সূত্র : দ্য মেইল

'অদৃশ্য' ট্যাংক

যুদ্ধে কে চায় পরাজিত হতে?-কেউ না। তাই যুদ্ধ জয়ে মানুষের পরিকল্পনার কোনো শেষ নেই। শত্রুকে নাকাল করতে প্রায় প্রতিদিনই উদ্ভাবিত হচ্ছে নানা ধরনের অস্ত্র, আর প্রতিনিয়তই ঘটছে এসবের আধুনিকায়ন। এবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁরা এক ধরনের 'অদৃশ্য' ট্যাংক প্রস্তুত করবেন।
ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোনো কিছুকে অদৃশ্য করতে প্রথাগত যেসব পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়, এতে তেমন কিছু করা হবে না। ট্যাংক অদৃশ্য করতে তাঁরা একেবারেই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন। 'ই-ক্যামোফ্লাজ' নামের এ প্রযুক্তি এক ধরনের বৈদ্যুতিক কালি (ইলেকট্রনিক ইংক) তৈরি করে ট্যাংকটিকে গায়েব করে দেবে। এ জন্য ট্যাংকের গায়ে উচ্চপ্রযুক্তির বৈদ্যুতিক সেন্সর ব্যবহার করা হবে। এগুলো ট্যাংকের চারপাশের পরিবেশ নিরূপণ করে ওই অনুযায়ী ট্যাংকের বহিরাংশের চেহারা বদলে দেবে। অর্থাৎ পাহাড়ি পথ বা মরুভূমি_যেকোনো ধরনের পরিবেশই হোক না কেন, ওই ট্যাংকের চলার পথে আশপাশের দৃশ্যের অবিকল প্রতিরূপ ট্যাংকটির গায়ের ওপর চিত্রের মতো ছেপে যাবে। এতে ট্যাংকটি এতই নিখুঁতভাবে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে যে, সেটি আর আলাদা করে দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না। অর্থাৎ 'অদৃশ্য' করতে প্রথাগত প্রযুক্তির মতো আলোর প্রতিফলনে বাধা তৈরি করে একে দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখার মতো ব্যাপার হবে না। এতে ট্যাংকটিকে মূলত ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হবে। এ প্রযুক্তি মনুষ্য ও রোবটচালিত_দুই ধরনের ট্যাংকেই ব্যবহার করা হবে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ফিউচার প্রটেক্টেড ভেহিকল প্রজেক্টের প্রধান হিশাম আবাদ জানিয়েছেন, মানুষ যা করতে পারবে না, যন্ত্রগুলোকে দিয়ে মূলত তা-ই করানো হবে। কেননা এসব কাজে যন্ত্রগুলোই সেরা। যেখানে জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেখানে যন্ত্রগুলো অসাধারণ নৈপুণ্য মানুষকে সহায়তা করতে পারবে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু