Home » , , » অর্থনীতি ধ্বংসে পরিকল্পিত চেষ্টা

অর্থনীতি ধ্বংসে পরিকল্পিত চেষ্টা

Written By Unknown on Sunday, January 23, 2011 | 3:59 AM

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, সুস্পষ্ট নীতিমালার অভাব ও শিল্পবিরোধী নানা রকমের নির্দেশনায় প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে দেড় গুণের বেশি অর্থ বিনিয়োগকারী আবাসন, জাহাজ ভাঙা ও স্টিল, রি-রোলিং, অটো রি-রোলিংসহ ২০ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্রমেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে বেকার হয়ে গেছে এসব খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক। কয়েকটি এনজিও পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে সরকারকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্রে নামায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতি পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন বেকারকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টির বদলে বেসরকারি শিল্প খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। শঙ্কিত বিনিয়োগকারী এবং জীবিকা হারানো শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের ওপর।
লাখো কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তাঁদের মতে, বেসরকারি খাতের এই বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগকে গতিশীল করতে না পারলে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে।
আবাসন খাতের বিনিয়োগ ৭০ হাজার কোটি টাকা। জাহাজ ভাঙা, স্টিল, রি-রোলিং, অটো রি-রোলিং খাতের মোট বিনিয়োগ এক লাখ কোটি টাকা। এসব খাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। তাদের সঙ্গে জড়িত একটি করে পরিবার। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের অন্ন-বস্ত্রের জোগান আসে এসব খাত থেকেই। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বর্তমানে। পরিবেশবাদী কয়েকটি এনজিওকে সামনে নিয়ে অদৃশ্য মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগকারী এবং এসব খাতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে খেপিয়ে তোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশীদার হচ্ছে আবাসন খাত। ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে আবাসন খাত অন্যান্য খাতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আবাসন খাতের সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জড়িত। যেমনÑরড, সিমেন্ট, ইট, রং, কাঠ, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান। মূলত আবাসন খাত ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট মূল এবং উপশিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলার চক্রান্ত করছে ওই বিশেষ মহল। আবাসন খাত ধ্বংস হলে বাকিগুলো এমনিতেই বসে যাবে। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত চক্রটি দেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ করে বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানির সুযোগ তৈরির জন্যই এসব করছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। তাঁদের মতে, চক্রটি পরিবেশবাদী কয়েকটি এনজিওকে সামনে রেখে নিজেদের শক্তিশালী করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে বিগত সরকারগুলোর সময় থেকেই। বর্তমানে তারা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে খোদ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিষয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করছে। গণতান্ত্রিক পন্থায় ড্যাপ (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান) বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতেও নাখোশ হয়েছে চক্রটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশবাদী কিছু এনজিও পরিবেশ রক্ষার অজুহাত দেখিয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে, মানুষকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এসব পরিবেশবাদী এনজিও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করে না। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এসব সংগঠন সোচ্চার হলে বছরে বৈধভাবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার হার বর্তমানের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেত। উল্লেখ্য, বর্তমানে বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের অর্থ দেশে আসছে। অর্থপ্রবাহ বাড়লে দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হতো। সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেত। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো সংগঠন কথা বলে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট তীব্র। এর ফলে লাখো কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন মানুষের হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট। এসব সমস্যা নিয়ে কোনো সংগঠনের মাথাব্যথা নেই। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সোচ্চার না হয়ে অর্থ উপার্জনকারী খাতগুলো নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেছে চক্রটি। তারা আইনের মারপ্যাঁচে এসব খাতের উন্নয়ন স্থবির করে দেওয়ার চক্রান্তে নেমেছে। তারা দেশ, জাতি ও সরকারের বিরুদ্ধে কোন মাত্রার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তা এখনই নিরূপণ করা জরুরি বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ প্রণয়ন করে বিগত বিএনপি তথা জোট সরকার। এ বিধিমালায় স্ববিরোধী কিছু বিষয় থাকায় এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বর্তমান সরকার বিপাকে পড়ে। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিধিমালাটি যুগোপযোগী করার। এর অংশ হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একাধিক বৈঠক করে নতুন নতুন প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই প্রস্তাব সংযোজন করে এখন পর্যন্ত বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে না। এর পেছনেও সেই চক্রের অদৃশ্য হাত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাজউকের হিসাব অনুযায়ী আবাসিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রাজউক ২৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। বাকি ১৭৪টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এগুলোর অনুমোদনও দেওয়া হচ্ছে না, আবার স্পষ্ট করে কিছু বলাও হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান শতকরা ২১ ভাগ। এ খাতে বিনিয়োগ করা টাকার ৩০ শতাংশ এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে। তাঁরা ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এসব খাতে সরাসরি প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। এই ৫০ লাখ শ্রমিকের সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এসব মানুষের অন্নসংস্থান হচ্ছে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকেই। আবাসন ও ভূমি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ৩০০টি শিল্প উপখাত। এসব খাতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে দেড় কোটি এবং পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল তিন কোটি মানুষ। তাদের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের পরিবার। আবাসিক এবং ভূমি উন্নয়নকাজ কোনোভাবে ব্যাহত হলে কোটি কোটি লোক বেকার হয়ে যাবে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে এই শ্রমিকদের পরিবার।
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান পর্যালোচনার জন্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৬টি আবাসন প্রকল্প ও স্থাপনা এবং দুই হাজার ৭২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ড্যাপের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ (নন-কনফর্মিং) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কমিটি প্রকল্পগুলোর অনুমোদন না দিতে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ছয়টি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি প্রকল্প রয়েছে। ড্যাপ নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেÑএ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আগামী ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের ২৯টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা ড্যাপ মেনে নিতে পারছেন না। সরকারদলীয় সদস্যরাও ড্যাপের প্রচণ্ড বিরোধিতা করছেন। এই ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে পাঁচ লাখেরও বেশি স্থাপনা ভাঙতে হবে। এতে জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ড্যাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। এই সুযোগে বিরোধী দলও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে সরকারকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে ঢাকার বর্তমান অবকাঠামোগত অবস্থাকে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
চার পৃষ্ঠার ওই গোপন প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘রাজধানী ঢাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নে প্রতিকূলতা প্রসঙ্গে’। সরকার যাতে বিপাকে না পড়ে এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘মন্তব্য ও সুপারিশ’ শীর্ষক উপশিরোনামের ‘ক’ থেকে ‘চ’ পর্যন্ত রয়েছে ছয়টি সুপারিশ। একটিতে বলা হয়েছে, ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আর্মি হাউজিং সোসাইটি প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে, যা বর্তমান সরকারের প্রতি তাঁদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কিছু এনজিও পরিবেশ রক্ষার নামে সরকারকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সফল হলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবেন। এনজিওগুলো মূলত পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে এর প্রমাণ দিয়েছে। কাজেই এসব এনজিও কাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, তারা কাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মাঠে নেমেছে, তা এখনই খুঁজে বের করা প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, যাতে এ ধরনের এনজিওগুলো আর সরকার ও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
নতুন করে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ না দেওয়ায় চরম সংকটে পড়েছে দেশের গৃহায়ণ শিল্প। এ কারণে প্রায় পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে, যার অর্থমূল্য হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা। এসব ফ্ল্যাট কেনার জন্য চার হাজারের বেশি ক্রেতা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ফলে ক্রেতাদের একদিকে বাড়ি ভাড়া, অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি একসঙ্গে পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে তিন শতাধিক নতুন প্রকল্পের অধীন তিন হাজার ৬০০ অ্যাপার্টমেন্টের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। ক্ষতির শিকার হয়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। গৃহায়ণ শিল্প খাতের বর্তমান অবস্থা দেখে নতুন ক্রেতারা এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। কমেছে গৃহায়ণ শিল্পে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ। গৃহায়ণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তাঁরা বিনিয়োগ তুলেও আনতে পারছেন না। অথচ এসব বিষয় নিয়ে কোনো সংগঠন প্রতিবাদ করছে না।
বিএলডিএর মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবেশ রক্ষা যেকোনো সুনাগরিকের দায়িত্ব। সচেতন নাগরিক মাত্রই পরিবেশ রক্ষার বিরোধিতা করতে পারেন না। তবে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত অনেক দেশ পরিবেশবিষয়ক বিশ্ব সনদে স্বাক্ষর করেনি। যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন এবং উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রথম দিকে থাকা ভারতও পরিবেশ রক্ষার নামে উন্নত দেশগুলোর চাপিয়ে দেওয়া শিল্পবিরোধী শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কেননা রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা মনে করেছে, পরিবেশ রক্ষা যেমন জরুরি, এর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেই পরিবেশ রক্ষা করা উচিত। তিনি বলেন, মিল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে, বেকারত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়ে, তাদের বুভুক্ষু রেখে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন মানবতার সঙ্গে পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেই কেবল পরিবেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন করা যৌক্তিক হবে বলে মনে করেন বিএলডিএর মহাসচিব। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এতে শিশুমৃত্যুসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কারো তেমন জোরালো উদ্যোগ নেই। এসব সংগঠন আছে শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার কাজে।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল কালের কণ্ঠকে জানান, স্টিল মিলগুলোর কাঁচামালের বড় অংশই আসে জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে। জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় কাঁচামালের অভাবে প্রায় ২০০ কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। চালু থাকা ২০০ কারখানাও কাঁচামালের সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার নামে হঠাৎ করে জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরাও চাই পরিবেশসম্মতভাবে এ শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে কয়েক বছর ধরে এ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’
বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী হোসাইন কালের কণ্ঠকে জানান, বেলা নামের একটি এনজিও এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় রি-রোলিং মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। কাঁচামালের অভাবে এ খাতের ৩০০ কারখানার মধ্যে ১৮০টিই এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। বছরে মাত্র দু-একটি বর্জ্যবাহী জাহাজ সমুদ্রে বর্জ্য ফেলে। কিন্তু ইয়ার্ডে কখনো ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যবাহী জাহাজ আসে না। উন্নত দেশগুলো এত দিন পরিবেশ দূষণ করে শিল্পোন্নত হয়েছে। এখন তারা পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের মতো একটি দেশ পরিবেশ রক্ষার নামে শিল্প খাত ধ্বংস করছে। তিনি আরো বলেন, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে যে পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক নদীতে পড়ছে, জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে এর চার ভাগের এক ভাগ দূষণ ঘটছে না।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু