রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি আঁখি জানে না মা নেই by সাওরাত হোসেন সোহেল

Monday, May 5, 2014

শিশু আঁখি মণি (৩) হাসছে, কাঁদছে, খেলছে। দাদা-দাদী ও বাবার কাছে বায়নাও ধরছে। মাঝে-মধ্যে মায়ের কথাও বলছে। কিন্তু সে এখনও জানে না তার মা সালমা এক বছর আগে সাভার ট্র্যাজেডির 'রানা প্লাজা'র তলে হারিয়ে গেছে। তার দাদী আমিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কি আর কমু বাবা মাঝে-মধ্যে যখন বায়না ধরে আম্মু যাব তখন বুকের ভিতর স্যাদ করে ওঠে, কোথায় পামু তার আম্মুকে। তাই নানান বুঝ দিয়ে শান্ত করে রাখি। এখনও আঁখি বলছে তার আম্মু ঢাকা গেছে কাজ করে অনেক টাকা-পয়সা আর তার জন্য নতুন জামা, আপেল, বিস্কুট আরও অনেক জিনিস আনবে। কিন্তু অবুঝ শিশুটি জানে না যে, তার মা আর কোন দিন তার জন্য জামা নিয়ে আসবে না। সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় নিখোঁজ সালমার (২২) বাড়ি উপজেলার মাছাবান্দা ন'আড়ীর ভিটা এলাকায়। তার বাবার নাম সোলায়মান। কয়েক বছর আগে একই উপজেলার বড় কুষ্টারী এলাকার আবু তালেব মেকারের ছেলে আতিকুরের বিয়ে হয় বিয়ের কিছু দিন পর তাদের কোল জুড়ে আসে মেয়ে সন্তান সালমা অনেক আগে থেকেই আতিকুর ঢাকায় এক গার্মেন্টে কাজ করতো। সন্তান জন্মের প্রায় দেড় বছর পর দাদীর কাছে মেয়েকে রেখে কাজের সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে চলে যায় ঢাকায়। যোগদান করে রানা প্লাজা'র ৩য় তলায়। ঘটনার দিন বুধবার বেতন নিতে গিয়েছিল সালমা। গার্মেন্টে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ধসে পড়ে 'রানা প্লাজা' আর ফিরে আসেনি বেতন নিয়ে। ওই ভবন ধসের পর থেকে নিখোঁজ হয় সালমা।

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে: মিজানুর রহমান

একটি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সেই রাষ্ট্রের মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড এই অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণ বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। এর আগে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি সুপারিশমূলক প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা একটি আধাসরকারি পত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কিছু সুপারিশ করেছি। যেমন, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে, যিনি গ্রেপ্তার করতে যাবেন তাঁকে অবশ্যই পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কাউকে সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দুজনকে সাক্ষী রেখে গ্রেপ্তার করতে হবে।' তিনি জানান, এসব সুপারিশের মধ্যে দু-একটি কার্যকর হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করেননি তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রয়োজনে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হবে এবং আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশাবলি প্রদান করা হবে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে অপহরণ-খুনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে আজ সোমবার ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটির সদস্য চারজন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাফ আহমেদকে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহূত হন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তাঁর চার সহযোগী। প্রায় একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহূত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিন দিন পর গত ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম গতকাল রোববার র‌্যাবের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নজরুলকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা র‌্যাবের সদস্য? উত্তরে তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সকাল থেকেই সেখানে ছিল। শহীদুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।'
শহীদুলের ব্যবসায়ী ছেলে সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।' অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর সব জানা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীতে ফেরত যাওয়া র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্ন করা হলে গতকাল শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র‌্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তাঁরা ছয়জন আসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।' মামলার এজাহার লেখার কাজটি করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'এসপি ও ডিসি ফতুল্লা থানার ওসিকে মামলা নিতে বলে দেন। আমরা দুপুরে থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা লিখতে লিখতে রাত ১০টা বাজিয়ে দেয়।' শহীদুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল দুজনেই অভিযোগ করেন, মামলা হলেও পুলিশ কোথাও অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে অবশ্যই নজরুলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত।
সাংসদ শামীম ওসমানের সামনেই নজরুলের শ্বশুর র‌্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। পরে একই স্থানে শামীম ওসমান বলেন, 'প্রশাসনের অনেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না।' তিনি বলেন, 'পুলিশের দারোগা যদি অপরাধ করে, আইজির ওপর তা বর্তায় না। সমস্ত বাহিনী সেই দায় বহন করে না। তাই আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' এরপর বিকেলে রাইফেল ক্লাব থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'এই হত্যায় নূর হোসেন জড়িত। এর আগে ইকবাল এক কোটি টাকায় র‌্যাবকে দিয়ে নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। কাজেই এ ঘটনায় ইকবালও জড়িত। মামলার অপর আসামি হাসু হলো বোবা ডাকাত। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা সবাই জড়িত। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।'
নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরাও এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত বলে দাবি করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের সঙ্গে আইনজীবী চন্দনের কোনো দিন দেখাও হয়নি। কিন্তু সেদিন চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন কারা নজরুলকে অপহরণ করেছে। আর এ কারণে তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। র‌্যাবই এ কাজ করেছে। জড়িতদের বদলি করলেই হবে না, খুনের অভিযোগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।'

শাপলা চত্বরে অভিযানের এক বছর- থিতিয়ে পড়েছে হেফাজত by সেলিম জাহিদ

দেশ কাঁপিয়ে উত্থান, ৫ মে ঢাকা অবরোধ, দিনব্যাপী সহিংসতা, শাপলা চত্বরে অবস্থান, গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ছত্রভঙ্গ। এরপর এক বছরের মাথায় থিতিয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। উপরন্তু, শীর্ষ নেতৃত্বের কারও কারও বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এখন হেফাজতের অভ্যন্তরে ক্ষোভ-হতাশা ও সন্দেহ-অবিশ্বাস প্রকট হয়ে উঠেছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগ নেতাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব সরকারের কবজায় চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ, সরকার ও ছাত্রলীগকে হেফাজতের বন্ধু বলে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর বক্তৃতার পর এ বিশ্বাস আরও জোরালো হয়। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে গত বছরের ৫ মে 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচিতে হতাহতদের স্মরণে এ দিনটিতে আজ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি হেফাজত।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির পর কথিত নাস্তিকদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ জেগে ওঠে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এরপর ৫ মের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি তখন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক রাজধানী ঢাকার চারপাশের প্রবেশপথগুলো অবরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন। দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলে সহিংসতা, সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানী। এরপর মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয় হেফাজতকে। নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেনি: সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই রাতের অভিযানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। আর হেফাজতের আমির ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে ৭ মে এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ওই অভিযানের সময় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেন।
পরে হেফাজতের নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা হতাহতদের তালিকা করছেন, সেটা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী গত বছরের ৪ জুন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, প্রশাসনের চাপ ও হয়রানির কারণে তাঁরা ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। তখন পর্যন্ত ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। এগারো মাস পর গত শনিবার রাতে ওই তালিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ও নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুনলে গা শিউরে উঠবে।' তালিকাটি চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রকাশে এখনো হুজুরের (আমির আহমদ শফী) অনুমতি নেই। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা শাপলা চত্বরে শাহাদাতবরণকারী ভাইদের সঠিক তালিকা সংগ্রহের কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন। ইনশাল্লাহ কেন্দ্রীয়ভাবেই তা দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা হবে।'
সরকারি লোকদের যাতায়াত: শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকে সরিয়ে দেওয়ার পর জুন ও জুলাই মাসে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ছিল হেফাজত। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য হেফাজত একটা কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছিল। ফলে হেফাজত আবার সরকারের শীর্ষ মহলের উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে ওঠে। অবশ্য ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আগেই হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় সরকার। সংগঠনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে হেফাজতের আন্দোলনমুখী তৎপরতা থিতিয়ে আসে। একই সঙ্গে হেফাজতের আমিরের কাছে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যাতায়াত বাড়ে। এ সময় সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অন্যদের সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এর আগে ১৭ মার্চ একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুজন পদস্থ কর্মকর্তা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে দেখা করেন। প্রায় সব বৈঠকেই আমিরের ছেলে আনাস মাদানী উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, শুরুর দিকে হেফাজতের আমির সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি কোনো সংস্থার লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতে রাজি হতেন না। একদম এড়াতে না পারলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ডেকে আনতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কেউ দেখা করতে এলে ছেলে আনাস ছাড়া অন্য কাউকে রাখা হয় না। অবশ্য হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী দাবি করেন, 'হেফাজতের ইমানি আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি নিয়ে অনেকে সরকারের সঙ্গে আঁতাত কিংবা অর্থ-সহায়তা গ্রহণের কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে।' বিবৃতিনির্ভর তৎপরতা: সংগঠনের নেতারা জানান, গত ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সারা দেশের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের অন্তত অর্ধশত আলেম উপস্থিত থাকতেন। বর্তমানে কেবল হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকসহ বৈঠকে উপস্থিতির সংখ্যা ৮-১০ জনে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় হেফাজত এখন অনেকটা 'বিবৃতিনির্ভর' সংগঠনে পরিণত হয়েছে। হিসাব কষে দেখা গেছে, গত এক বছরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৭৫টির মতো বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এমনকি বৈঠক না করেও শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অংশগ্রহণে সভা হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল আহমদ শফীর সভাপতিত্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের জরুরি সভা হয়েছে বলে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীর নামে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হেফাজতের আমির ও তাঁর ছেলে আনাসের আর্থিক ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়। 'হেফাজতে ইসলাম সরকারের সাথে আঁতাত বা অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেনি' শিরোনামে ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ জনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ ধরনের কোনো সভার কথা তাঁরা জানেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনাস মাদানী গতকাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ ওই সভায় যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে নাম দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি: কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ৫ মে শাপলা চত্বরে হতাহতদের স্মরণে আজ সোমবার সারা দেশে 'দোয়া' কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এ নিয়ে ২৯ এপ্রিল সকালে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেন মহাসচিব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল। কিন্তু আমির কর্মসূচি দিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় সংগঠনের কিছু নেতা আল-আমানাহ ফাউন্ডেশনের নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে হাটহাজারীর পার্বতী হাইস্কুল মাঠে আজ সোমবার সমাবেশ ডেকেছেন। হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটিতে বারিধারা ও লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দুটি ধারার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রধান নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও জ্যেষ্ঠ নেতা। আর জুনাইদ আল হাবীব হেফাজতের মহানগর কমিটির সদস্যসচিব, তিনি সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট থেকে জমিয়তে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেতাদের বড় অংশ ইসলামী ঐক্যজোটের, তাঁরা লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
উভয় পক্ষ আজ পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। এর মধ্যে বারিধারা মাদ্রাসায় হেফাজতের ব্যানারে আজ '৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে শাহাদাত বরণকারীদের' স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয় একাংশ। আরেক অংশ খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে আজ কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসায় জমায়েত হয়ে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে 'কালেমা ও জাতীয় পতাকা' মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে 'শহীদদের' স্মরণে কাল মঙ্গলবার ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল যৌথভাবে লালবাগ মাদ্রাসায় দোয়া ও আলোচনার আয়োজন করেছে।

পাচারের আসামিই পার্কের পাখি-রক্ষক by কমল জোহা খান @প্রথম আলো

প্রাণী পাচারের মামলার এক আসামিকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পশুপাখি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে বন বিভাগ। বন সংরক্ষক তপন কুমার দের দাবি, ওই ব্যক্তি পশুপাখি পালনে 'নিবেদিতপ্রাণ' ও 'অভিজ্ঞ'। দায়িত্ব পাওয়া ওই ব্যক্তি হলেন নাজমুল হুদা। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ জানয়ারি ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৭০টি বন্যপ্রাণী ও পাখি আটক করেছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ ঘটনায় নাজমুল হুদাকে আসামি করে বিমানবন্দর থানায় বন্যপ্রাণী আইনে একটি মামলা করেন বন পরিদর্শক সোহেল রানা। মামলার তদন্তকারী বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটির চার্জশিট গত ৩১ অক্টোবর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো শুনানি হয়নি। নাজমুল হুদার দাবি, মামলায় মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।
এদিকে ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন নাজমুল হুদা। এর পর দরপত্র ছাড়াই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রাণী দেখভালের দায়িত্ব পায় নাজমুলের মালিকানাধীন রাজু ট্রেডার্স। সাফারি পার্কে ম্যাকাও ল্যান্ড, অ্যাকুরিয়াম, প্যাডেল বোট রাইডিং, ময়ূর শেড, শকুন, ধনেশ ও প্যারট অ্যাভিয়ারি টিকিট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ফেন্সি ডাক গার্ডেনের দেখাশোনা করছে রাজু ট্রেডার্স। সাফারি পার্কের বেশ কিছু বন্যপ্রাণী সরবরাহ করেছে তারা। ময়ূর, ধনেশ ও প্যারট অ্যাভিয়ারি এবং প্যাডেল বোটের দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ৪ নভেম্বর। তবে এর যাচাই-বাছাইপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এসব প্রক্রিয়ার আগেই বন সংরক্ষক তপন কুমার দে রাজু ট্রেডার্সকে সাতটি প্রাণীর শেড তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। বন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, বন সংরক্ষক তপন কুমার দের একক সিদ্ধান্তে ছয়টি শেডের টিকিট বিক্রি করছে রাজু ট্রেডার্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একেকটি শেডের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। তারিখ, ক্রমিক নম্বর ছাড়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বন্যপ্রাণী কেনাবেচার কাজ সাফারি পার্কের ভেতর থেকেই করছে রাজু ট্রেডার্স। তাই পাখির সংখ্যা বাড়ে আর কমে। এ ব্যাপারে বন সংরক্ষক ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পরিচালক তপন কুমার দের দাবি, রাজু ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হয়ে গেছে। মামলার অভিযোগপত্রের প্রসঙ্গ তুলতে তিনি বলেন, 'ব্যবসা করতে গেলে তো মামলা হবেই। প্রাণীদের কত যত্ন করে ওরা (রাজু ট্রেডার্স)'। দরপত্র ছাড়া রাজু ট্রেডার্সকে প্রাণী দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া সম্পর্কে বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বলেন, 'চলার পথে ভুলত্রুটি হতেই পারে।' বন সংরক্ষক তপন কুমার দের সঙ্গে বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এর আগেও উঠেছিল। ২০১২ সালের ১২ জুন র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত শ্যামলীর একটি বাসা তিনটি বাঘের বাচ্চা উদ্ধার করে। এর সঙ্গে জড়িত আসামি জাকির হোসেন আদালতে জানান, তপন কুমার দে (মহাখালী বন অফিসে বসে) তাঁদের কাছে লিখিত দিয়ে বাঘসহ বন্যপ্রাণী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠাতেন। তবে তপন কুমার দে আদালতের কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

৬ কোটি টাকায় অপহরণ ও খুন! by শরিফুল হাসান ও আসিফ হোসেন fromনারায়ণগঞ্জ @প্রথম আলো

Sunday, May 4, 2014

র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন অপহরণের পরে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর সব জানা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ মে দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা র‌্যাবের সদস্য? উত্তরে তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সকাল থেকেই সেখানে ছিল। শহীদুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।'
শহীদুলের ব্যবসায়ী ছেলে সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।' এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীতে ফেরত যাওয়া র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্ন করা হলে শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র‌্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তাঁরা ছয়জন আসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।'
মামলার এজাহার লেখার কাজটি করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'এসপি ও ডিসি ফতুল্লা থানার ওসিকে মামলা নিতে বলে দেন। আমরা দুপুরে থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা লিখতে লিখতে রাত ১০টা বাজিয়ে দেয়।' শহীদুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল দুজনেই অভিযোগ করেন, মামলা হলেও পুলিশ কোথাও অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে অবশ্যই নজরুলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। বাবা ও ভাইয়ের এই অভিযোগের সঙ্গে একমত কি না, জানতে চাইলে নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেন, 'নূর হোসেন আর ইয়াসিনরাই যে আমার স্বামীকে খুন করেছে, সেটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তাদের হাত অনেক লম্বা। তাদের অনেক টাকা। তারা সব করতে পারে।'
সাংসদ শামীম ওসমানের সামনেই নজরুলের শ্বশুর র‌্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। পরে একই স্থানে শামীম ওসমান বলেন, 'প্রশাসনের অনেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না।' তিনি বলেন, 'পুলিশের দারোগা যদি অপরাধ করে, আইজির ওপর তা বর্তায় না। সমস্ত বাহিনী সেই দায় বহন করে না। তাই আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নূর হোসেন দল করলেও তাঁর লোক নয়। কেউ অন্যায় করলে তিনি তাকে অন্যায় কাজে প্রশ্রয় দেন না।
এরপর বিকেলে রাইফেল ক্লাব থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'এই হত্যায় নূর হোসেন জড়িত। এর আগে ইকবাল এক কোটি টাকায় র‌্যাবকে দিয়ে নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। কাজেই এ ঘটনায় ইকবালও জড়িত। মামলার অপর আসামি হাসু হলো বোবা ডাকাত। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা সবাই জড়িত। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।' নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরাও এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত বলে দাবি করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের সঙ্গে আইনজীবী চন্দনের কোনো দিন দেখাও হয়নি। কিন্তু সেদিন চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন কারা নজরুলকে অপহরণ করেছে। আর এ কারণে তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। র‌্যাবই এ কাজ করেছে। জড়িতদের বদলি করলেই হবে না, খুনের অভিযোগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।'

নূর হোসেনদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল দাবি @প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত হত্যা মামলার আসামি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সাতজনের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছে নজরুলের পরিবার। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্র জানায়, এই আটজনকে গত দুই বছরে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি শটগান, দুটি পিস্তল, একটি রাইফেল ও একটি রিভলবার রয়েছে। ২০১২ সালে একটি রাইফেল ও একটি শটগানের লাইসেন্স এবং বাকিগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। নিয়ম অনুযায়ী শটগানের লাইসেন্স দেন জেলা প্রশাসক। পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্স জেলা প্রশাসকের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়। এসব লাইসেন্স দেওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন মনোজ কান্তি বড়াল। কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজন অপহরণ ও হত্যার পর তাঁকে প্রত্যাহার করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সাতজনের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করার বিষয়টি গত শনিবার সাংবাদিকদের জানান নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তাঁর শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তাঁদের দাবি, নূর হোসেন ও তাঁর অনুসারীদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করলেই সাত হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে। শহীদুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে সংগ্রহ করা নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের লাইসেন্স করা অস্ত্রের একটি তালিকা সাংবাদিকদের দেন। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে ওই তালিকার সত্যতা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, নূর হোসেন ২০১২ সালে ২২ বোরের একটি রাইফেলের ও গত বছর একটি পিস্তলের লাইসেন্স পান। পলাতক হওয়ার আগ পর্যন্ত এ দুটি অস্ত্র সব সময় তাঁর গাড়িবহরে থাকত। তাঁর ভাই মো. নূরুদ্দিন মিয়া গত বছরের শুরুতে একটি শটগানের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের ভাতিজা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ২০১২ সালে একটি শটগানের এবং গত বছর একটি পিস্তলের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত মো. শাহজাহান (পিতা-মৃত ইদ্রিস আলী, নয়াআঁটি, সিদ্ধিরগঞ্জ), দেহরক্ষী আলী মোহাম্মদ (পিতা-মৃত আবদুল হক, শিমরাইল, টেকপাড়া), সানাউল্লাহ (পিতা-মৃত জয়নাল আবেদীন, শিমরাইল) ও জামালউদ্দিন (পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, মিজমিজি বাতেনপাড়া) গত বছর একটি করে শটগানের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও সিদ্ধিরগঞ্জ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আরিফুল হক হাসান গত বছর একটি শটগান ও একটি রিভলবারের লাইসেন্স পান। লাইসেন্স বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, 'আমরা অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স বাতিলের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাবে।'

গুরুত্বহীন নিরীক্ষা, আইন ঝুলে আছে দুই বছর by মোর্শেদ নোমান @প্রথম আলো

সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালিত নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে চান না অনেক কর্মকর্তা। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব অডিট আপত্তি ওঠে, মন্ত্রণালয়গুলো তার জবাব এড়িয়ে যায়। মহাহিসাব নিরীক্ষকের (সিএজি) কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান আইন অনুযায়ী অনিয়মের কোনো আপত্তি উঠলে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাব দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে কোনো জবাব আসে না। যে কারণে জবাব ছাড়াই নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। এতে করে প্রতিবেদনগুলো অর্থবহ হয় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, নানা কারণে অডিট আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি হয় না। বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মন্ত্রণালয় ও অডিট বিভাগ দুই পক্ষেরই থাকে। তিনি মনে করেন সমন্বয় সভাগুলো ঠিকমতো হলে অনেক আপত্তিই নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অডিটে অসহযোগিতা এবং আরও বেশ কিছু জটিলতার কথা মাথায় রেখে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১২ সালে অডিট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সিএজি অফিস। প্রস্তাবিত এ আইন দুই বছর ধরে ঝুলে আছে। নবম সংসদেই আইনটি উত্থাপন করার কথা থাকলেও হয়নি। এটি এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আইনটি ঝুলে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত সংসদে আইনটি উত্থাপন করার কথা থাকলেও কেন আইনটি আটকে আছে, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও নিশ্চিত করার জন্য আইনটি খুবই জরুরি।' সংবিধানের ১২৭ থেকে ১৩২ অনুচ্ছেদের আলোকেই সিএজি তথা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'মহা-হিসাব-নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাব এবং সকল আদালত, সরকারী কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারী হিসাব নিরীক্ষা করিবেন ও অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে রিপোর্ট দান করিবেন এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি কিংবা সেই প্রয়োজনে তাঁহার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির দখলভুক্ত সকল নথি, বহি, রসিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন, ভান্ডার বা অন্য প্রকার সরকারী সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হইবেন।' কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন নিরীক্ষকরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পান না বলে জানান তাঁরা।
সিএজি অফিসের প্রস্তুত করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে ওই প্রতিবেদনটি যায় সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে। সংসদীয় কমিটি অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে থাকে। কমিটিতে শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে হয়। প্রস্তাবিত অডিট আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকছে। এ আইনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। যদি জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান অসহযোগিতাকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। না হলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে রিপোর্ট দিতে পারবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে আইনের খসড়ায় কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা আছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই প্রস্তাবিত আইনটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রণজিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে দেরি হয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনটি দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এর অনুমোদন দেওয়া হবে।'

নারায়ণগঞ্জে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভোলাইলের গেদু মিয়ার বাজার এলাকায় গতকাল রোববার দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত দুজন হলেন আমান উল্লা (৬০) ও তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দিবাগত রাতের কোনো একসময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহ ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভোলাইলের গেদু মিয়ার বাজার এলাকায় চারতলার একটি ভবনের মালিক আমান উল্লা। দ্বিতীয় স্ত্রী হোসনে আরাকে নিয়ে নিচতলায় থাকতেন তিনি। গতকাল দিবাগত রাতে কে বা কারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে তাঁদের দুজনকে হত্যা করেছে। আশপাশের লোকজন আজ ভোর ছয়টার দিকে ঘটনা জানতে পারেন। তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

৩০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট: আইভী @মানবজমিন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সেখানকার চলমান পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকে দোষারোপ করেন। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই ঘটনার পরপরই যদি অভিযান চালানো হতো, তাহলে হয়তো মানুষগুলোকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। যেটি ত্বকীর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। আমরা বারবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী 'খুঁজছি', 'দেখছি' ইত্যাদি বলে সময়ক্ষেপণ করল। আমি বলব, এখানে প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। প্রশাসনে যারা আছেন, তারা প্রভাবশালীদের কথায় ওঠাবসা করেন। বিগত ৩০ বছর নারায়ণগঞ্জে এটাই চলে আসছে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রভাবশালী পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছেন।" গতকাল একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আইভী এসব কথা বলেন। প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো।
আইভী বলেন, "নারায়ণগঞ্জকে শান্তির শহর বলা যাবে না। অসম্ভব অশান্ত একটি শহরে পরিণত হয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন, ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়, তার পর থেকে ২০১২ সালটা মোটামুটি ভালো ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১৩ সালের ৮ই মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে। এর পর থেকে জেলায় শিশু হত্যা বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত জেলায় ২০-২২ জন শিশু হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। আমি মনে করি, ত্বকী হত্যার বিচার হলে এতগুলো শিশু হত্যার ঘটনা ঘটত না। নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হওয়ার পেছনে ত্বকী হত্যা একটি বড় কারণ। আরও অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ মাদক। পুরো নারায়ণগঞ্জে মাদকের ছড়াছড়ি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এখানে মাদক ব্যবসা চলছে।"তিনি বলেন, "গত সপ্তাহে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক। কোর্টে হাজিরা দিতে এসে, আইনের আশ্রয় নিতে এসে কেউ যদি অপহৃত হন এবং লাশ হয়ে ফিরে আসেন, এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে।" আইভী অভিযোগ করে বলেন, "একের পর এক হত্যাকা- ঘটছে, মানুষ গুম হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না, আসামিদের ধরতে পারছে না। তাতে কি প্রমাণিত হয় না যে তারা ব্যর্থ? আমি বলব, পুরোপুরি না হলেও প্রশাসন ৮০ শতাংশ ব্যর্থ। আবার অনেক সময় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও প্রভাবশালীদের চাপে কিছু করতে পারে না। এখানে অনেক সৎ কর্মকর্তা এলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। বাধা দেওয়া হয়েছে।" নারায়ণগঞ্জের সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে সিটি মেয়র বলেন, "আমি তাদের একটি কথাই বলতে চাই, ভীত হবেন না। অপরাধীরা যত ক্ষমতাবান হোক না কেন, একসময় তারা শাস্তি পাবেই। আর নারায়ণগঞ্জের মানুষ তো এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছেন, তারা মাঠে নেমে এসেছেন। এটাই আশার কথা। এই অবস্থায় আপনি নিজে কি নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, "আমি আমার জন্য নয়, আমি কর্মীদের ব্যাপারে শঙ্কিত। যারা আমার পক্ষে নির্বাচন করেছেন, তাদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জেলে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার এবং তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে শুনেছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এবং আমার দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান থাকবে, নারায়ণগঞ্জবাসীকে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়া হোক। ব্যক্তিগতভাবে আমি কারও বিরুদ্ধে নই। বৃহস্পতিবার আমাদের দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে কিছু হলেই আমি নাকি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে কথা বলি। আমি তাঁকে অনুরোধ করব, তিনি যেন নারায়ণগঞ্জে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের কথা শোনেন, বুঝতে চেষ্টা করেন এখানে কী হচ্ছে।"তিনি বলেন, "গত এক-দেড় বছরে শামীম ওসমান যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভিডিও ক্লিপগুলো যদি খতিয়ে দেখেন, তাহলেই দেখতে পারবেন, তিনি কী সব ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছেন, মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে কটূক্তি করেছেন, হাসানুল হক ইনু সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, সদ্য¿য়াত বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবিএম মূসা সাহেবকে যে গালাগাল করেছেন, তার তুলনায় আমি তো কিছুই না।" মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আইভীর সঙ্গে আছেন দাবি করে তিনি বলেন, "মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা আমার সঙ্গে না থাকলে আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পারতাম না। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে বলে শামীম ওসমান যে অভিযোগ করেছেন, আমি সে ব্যাপারে তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি একটি প্রমাণও দিতে পারবেন না। আর আমি জামায়াতের কাউকে তো চিনিই না। এখানে জামায়াত প্রতিষ্ঠিতও নয়। বরং তিনিই  জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করছেন।"

সাইফুলের ফেরা নানা প্রশ্ন @মানবজমিন

অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর ফিরে এসেছেন ব্যবসায়ী সাইফুল। তার অপহরণের ঘটনাটিও ছিল সুপরিকল্পিত। নির্জন স্থানে একদিন রাখার পর শুক্রবার রাতে সাভারের নবীনগরে তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। বুধবার রাতে অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। এ বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় ডায়েরি করেছিল অপহৃতের পরিবার। কিন্তু ফিরে এসে সাইফুল জানিয়েছেন, অপহরণের পর থেকে দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা তিনি অপহরণকারীদের কবলে থাকলেও তার কাছে কোন মুক্তিপণ চায়নি অপহরণকারীরা। এ বিষয়ে কোন কথাও বলেনি। এমনকি বন্দি থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে কোন বিষয়েই আলাপ করেনি অপহরণকারীরা। তিনি জানিয়েছেন, মুক্তিপণের জন্য কোন চাপ বা নির্যাতনও করেনি অপহরণকারীরা। ফেলে যাওয়ার সময় কোমরে লাথি দেয়া এবং কোন এক পর্যায়ে পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করেছিল শুধু। এসব কারণে অপহরণকারীদের নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাইফুল জানিয়েছেন কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছিল তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি।
ছাড়া পাওয়ার পর ব্যবসায়ী সাইফুল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মানবজমিন-এর কাছেও তিনি অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, যখন বললো- চল, তখন আঁতকে উঠি। ভেতরে ভয় ঢুকে যায়। এর আগে পায়ের পাতায় ১০-১২টি বাড়ি দেয় আমাকে। সারাক্ষণ পিঠমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। এক পিস পাউরুটি আর একটু পানি ছাড়া ২৬ ঘণ্টায় কিছু খেতে দেয়নি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর ছিলাম। গাড়িতে তুলে চোখ বাঁধা অবস্থায় কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয় আমাকে। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমি সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে। তবে কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছে তা বলতে পারেন নি তিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার এলাকার নুরজাহান নামে এক মহিলা তাকে ফোন করে এক হাজার টাকা ধার চান। ওই মহিলাকে এক হাজার টাকা দিয়ে তিনি সানারপাড় বাসস্ট্যান্ডে আসেন। স্ট্যান্ডে কোন রিকশা না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে মৌচাকের দিকে যেতে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার উত্তর পাশে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস  দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। গাড়িটির কাছাকাছি যেতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে ৩-৪ জন তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এই সাইফুল গাড়িতে উঠ। অন্ধকারে কাউকে চেনা যায়নি। গাড়িতে ওঠার পর পরই আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এবং  নাকের দিকে কিছু একটা লাগিয়ে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর নিজেকে আবিষ্কার করি একটি অন্ধকার রুমের ভেতর দেয়ালের সঙ্গে হেলান দেয়া অবস্থায়। চোখ বাঁধা। দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা। প্রচ- ক্ষুধা অনুভব করলে অপহরণকারীদের একজন আমাকে এক পিস পাউরুটি ও একটু পানি খাইয়ে দেয়। অনেক সময় পর হঠাৎ আমার দুই পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে ১০-১২টি বাড়ি দেয়। আমি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর হয়ে উঠি। কিন্তু কোন খাবার দেয়া হয়নি। পরে ২-৩ জন এসে বলে এই চল। তখন আমি আঁতকে উঠি। না জানি কি হয়। আমাকে কি মেরে ফেলবে? না ছেড়ে দিবে? নানা প্রশ্ন তখন আমার মনে। বার বার মনে পড়ছিল ৭ জনকে অপহরণ করার পর মেরে ফেলার ঘটনাটি। গাড়িতে ওঠানোর পর আমাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারে। ২০-২৫ মিনিট গাড়ি চলার পর হঠাৎ আমার কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। তখনও আমার হাত ও চোখ বাঁধা ছিল। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন একটি হোটেলের সামনে ফেলে যায়। পরে বিসমিল্লাহ নামে ওই হোটেলের এক লোকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করি। আমার স্ত্রী আমার কাছে পৌঁছার আগেই র‌্যাব-সদস্যরা আমার কাছে পৌঁছায়। তারা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আফরিন সুলতানা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর সাইফুল আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। কিন্তু সে কোথায় তা বলতে পারেনি। তখন আমি তাকে বলি তুমি ফোনটা ওখানের একজন লোককে দাও। তখন ওই লোকের কাছ থেকে জানতে পারি সে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন নবীনগর বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে আছে। তখন আমি বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ও র‌্যাব-১১কে জানাই। রাত সোয়া ১টার দিকে আমি নিজে সাভার নবীনগর র‌্যাব ৪-এর ক্যাম্পে গিয়ে উপস্থিত হই। নানা প্রশ্নের জবাবে অপহৃত সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের তৎপরতার কারণেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া,  ১২ বছর ধরে আমি সানারপাড় এলাকায় ব্যবসা করি। এলাকায় আমার বেশ কয়েকটি ব্যবসা রয়েছে। কারও সঙ্গে কোন দিন কোন ঝামেলা হয়নি। ২০০২ সালে পূর্ব সানারপাড়ে বাড়ি করি। ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছি। তিনি বলেন, আমি এক সময় সামান্য বেতনে ১৯৯৯ সালে ঢাকার মালিবাগে সিটি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতাম। পরে সানারপাড়ে ব্যবসা শুরু করি। আজ আমার কয়েকটি ব্যবসা। কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ। কারও সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত ৬ মাস আগে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বিসিকে ব্রাদার্স নিটওয়্যার নামে একটা ব্যবসা শুরু করি। আমি এবং সানারপাড় এলাকার বেলায়েত হোসেন আলম নামে এক ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। ওই প্রতিষ্ঠানে আমার বিনিয়োগ ২৭-২৮ লাখ টাকা। আর আলমের বিনিয়োগ ৬-৭ লাখ টাকা। কিন্তু উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়া ও লোকসানের কারণে আমি ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তখন আলম বলে, বিক্রি করলে তো আমার-আপনার দুইজনেরই লোকসান। এরচেয়ে ভালও ফ্যাক্টরি আমাকে দিয়ে দেন। আমি আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেবো। মাসে ৫০ হাজার টাকা করে কিস্তি আকারে পরিশোধ করবো। এতে আমি রাজি হয়ে যাই। আগামী জুন মাসে প্রথম কিস্তি দেয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া, আমি ব্যবসার কারণে লোকজনের কাছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবো। আর আমি দেনা আছি ২৫-২৬ লাখ টাকা। কিন্তু এ নিয়ে কারও সঙ্গে কোন মনোমালিন্য হয়নি।
অপহরণের ঘটনায় 'জড়িত' ৩ জন গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক দম্পতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো নুরজাহান বেগম (৩৫), তার স্বামী ইউনুস আলী দুলাল (৫০) ও আকাশ (৩২)। গতকাল ভোরে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ইউনুস-নুরজাহান দম্পতি ও বিকালে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবদুল আহাদ জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন জনই সাইফুল ইসলামের অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রুপের অন্য সদস্যদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নুরজাহান ও ইউনুস দম্পতি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। নুরজাহানের কাজ হলো ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া। পরে অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে। এ কাজে তার স্বামী ইউনূস সহায়তা করে। আর আকাশ হলো টাকা ট্রান্সফার কোন মোবাইলে এবং কিভাবে হবে তা ঠিক করে। আকাশ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বিকাশ আউটলেটের মালিক। এই চক্রের সঙ্গে আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন জড়িত।
আদালতে সাইফুলের জবানবন্দি
ওদিকে বিকাল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জবানবন্দি দিয়েছেন। অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই উত্তম কুমার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামকে আদালতে নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায়, সাইফুল ইসলাম আদালতকে বলেছে, শুক্রবার রাতে বাসায় যাওয়ার পথে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি অন্ধকার ঘরে হাত ও চোখ বেঁধে আটকে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার রাতে একটি গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সে কাউকে চিনতে পারেনি। কারা তাকে অপহরণ করেছে তিনি তা জানেন না।

লাগলে রিং দিয়েন by এসএ সোহেল @মানবজমিন

অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের দিয়ে রূপগঞ্জে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ১০-১২ বছরের কিশোররা এখন মাদক বিক্রেতাদের সেলসম্যান। অল্প বয়সী সেলসম্যানরা মাদকসেবীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। ভাই, আমার কাছে আম (ফেন্সিডিল) আর মুরুব্বি (ইয়াবা) আছে। লাগলে রিং (ফোন) দিয়েন'- এক কিশোর তার পরিচিত এক তরুণকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলছিল। তার খোলামেলা এ কথা শুনেই যেন ভয় পেয়ে গেল ওই তরুণ। রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটে। এর একদিন আগে এ এলাকায় এক বাড়িতে আকস্মিক হানা দেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা সেবনরত তরুণরা পালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়া মাত্রই আবারও সেখানে ইয়াবা সেবনের উৎসব শুরু হয়। রূপগঞ্জের মাদকের ভয়াবহতার সামান্য চিত্র এটি। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩ শতাধিক স্পটে মাদকের ব্যবসা চলছে। এসব স্পটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায় আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে শিশু, নারী ও কিশোররা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই মাদক বেচাকেনায় তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এসব শিশু, নারী ও কিশোর মাদক বহন করতে গিয়ে একসময় নিজেরাই হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায় জড়িত চুনোপুঁটিদের অনেক সময় আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে রাঘববোয়ালরা। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ, ভোলাবো ফাঁড়ি পুলিশ, কাঞ্চন ফাঁড়ি পুলিশ, ভূলতা ফাঁড়ি পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কিছু অসাধু সদস্যের বিশেষ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। নোয়াপাড়া, ইছাপুরা, ছনি, বারিয়ারটেক, হারারবাড়ি, বাগবেড়, মঙ্গলখালী, চনপাড়া বস্তি, পূর্বগ্রাম, পিতলগঞ্জ, চনপাড়া গ্রাম, মাছিমপুর, কাঞ্চন, ভূলতা, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, কেন্দুয়া, রূপসী, খাদুন, মৈকুলী, রূপসী কাজীপাড়া, পবনকুল, বরাব, যাত্রামুড়া, দীঘিবরাব, গন্ধর্বপুর, দড়িকান্দি, গঙ্গানগর, বানিয়াদি, হাটাব, কালাদি, আতলাপুর, শিংলাবো, আমলাবো, পাঁচাইখা, মাসুমাবাদ, মর্তুজাবাদ, বিশ্বরোড খালপাড়, বড়ালু, ইছাখালী, নগরপাড়া, নাওড়া, দড়িকান্দি, লাভরাপাড়াসহ ৩ শতাধিক স্পট মাদক কেনাবেচা ও সেবনের চিহ্নিত পয়েন্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন রুটে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান প্রবেশ করছে। আর এসব মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী। কয়েক যুগ ধরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন সাম্রাজ্য। তাদের সাম্রাজ্যে প্রতিদিনই নাম লেখাচ্ছে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী। এসব স্পটে মাদক বেচার জন্য ব্যবসায়ীদের বেতনভুক্ত কর্মীও রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব স্পটে কেনাবেচা চলছে মাদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান, থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব কয়েকটি স্পটে সমপ্রতি অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করলেও বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকারীর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত যুবকরা এসে যোগ দিচ্ছে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায়। প্রতিদিন নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় মাদক ব্যবসায়ীরা এই অবৈধ ব্যবসা জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজা, ফেনসিডিল, হিরোইন, ইয়াবাসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহনে রূপগঞ্জ উপজেলায় চলে আসছে। মাদক বিক্রেতারা তাদের শরীরে মাদক বহন করে বিক্রি করে বেড়ায়। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মীর বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পুলিশ মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবার সহযোগিতায় এলাকা মাদকমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশী ইস্যুতে মোদিকে ঘায়েল করলেন মমতা @মানবজমিন

বাংলাদেশ ইস্যুতে বিজেপি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে কাগুজে বাঘ আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, কাগুজে বাঘকে প্রথমেই মুখোমুখি হতে হবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বলেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশী অভিবাসীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে দেবেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশী অভিবাসীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তিকে স্পর্শ করে দেখুন আমরা দেখতে চাই। গতকাল এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, মমতা বলেছেন, কাগুজে বাঘকে প্রথমেই জানতে হবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার কি। প্রথমে তার মুখোমুখি হন। মমতা এ সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিহাস জানেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার অধীনেই বাংলাদেশীরা ভারতে এসেছেন। তিনি হয়তো জানেন না যে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশী হয় না। ভারতজুড়ে যারা বাংলায় কথা বলে তারা তাকেই বাংলাদেশী হিসেবে দেখে। এটা বৈষম্য। এ অভিযোগ করে মমতা বলেন, নরেন্দ্র মোদি বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এজন্য তিনি বাঙালি ও অবাঙালি ইস্যু সৃষ্টি করেছেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভাল প্যাকেজ সুবিধা দেয়া হবে বলে সম্প্রতি আশ্বাস দিয়েছেন বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং। এর জবাবে মমতা বলেন, এমন সুবিধা আমরা চাই না। বরং বামেদের সময়ে ঋণের বিপরীতে যে অর্থ কেন্দ্র কেটে রাখা হয়েছে তা আমরা ফেরত চাই। তিনি বলেন, ঋণ খাতে এ রাজ্য থেকে এক লাখ কোটি রুপি কেটে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

রাখির নগ্ন ভিডিও নিয়ে তোলপাড় @মানবজমিন

এ পর্যন্ত বলিউডের বিভিন্ন ছবিতে ও গানে ব্যাপক নগ্ন রাখি সাওয়ান্তকে দর্শক দেখেছেন। স্ক্যান্ডালেরও কমতি নেই তার। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দু'দিন হলো ইন্টারনেটে প্রকাশ পেয়েছে রাখি সাওয়ান্তের একটি নগ্ন ভিডিও। আর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বলিউডসহ ভারতীয় মিডিয়ায়। ভিডিওটি এরই মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ডাউনলোড হয়েছে। টুইটার ও ফেসবুকেও ভিডিওটি অনেকে আপলোড করেছেন। তবে নিজের এই নগ্ন ভিডিওর বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাখি। এই ভিডিওটির নারী তিনি নন, অন্য কেউ বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই ভিডিওটিতে দেখা গেছে রাখি নিজের কাপড় একে একে খুলে শেষ পর্যন্ত নগ্ন হয়ে যান। এরপর বেশ কিছু অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে বেশ দ্রুতগতিতে। তবে যারা ভিডিওটি দেখেছেন তারা একেকজন একেক মত প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, ভিডিওটির নগ্ন মডেলটি শতভাগই রাখি। আবার অনেকে বলেছেন, এটা বানোয়াটও হতে পারে। দু-একজন আবার দাবি করেছেন, আলোচনায় আসার জন্য রাখি নিজেই ভিডিওটি ছেড়েছে। তবে এসব কিছুর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে রাখি সাওয়ান্ত বলেছেন, আমি ভিডিওটি সম্পর্কে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছি। পরবর্তীতে সেটি দেখেছি। একটু লক্ষ করে দেখলেই বোঝা যাবে এটি আমি নই। শুধুমাত্র আমার চেহারা ব্যবহার করা হয়েছে। মিডিয়া কোন সত্য না জেনেই শুধু শুধুই রঙ মেখে সংবাদটি প্রকাশ করছে। এটা আসলে ঠিক নয়। এদিকে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইউটিউবসহ এই ভিডিওটি বিভিন্ন সাইট থেকে মুছে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন রাখি।

চোখের জল না ফেলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে- খালেদা জিয়া @মানবজমিন

অব্যাহত গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী জোট নেতা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বলেছেন, সারা দেশে আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। নারাায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, বগুড়াসহ এমন কোন জেলা নেই যেখানে খুনের ঘটনা ঘটেনি। এসব গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের লোকজন জড়িত। তাই তাদের বিচার হচ্ছে না।  আজ বিকালে  জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত  গণঅনশনে  প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্য শেষে বিএনপি নেতাদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান খালেদা জিয়া। বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, চারিদিকে এখন রক্ত আর রক্ত। দেশের মানুষের চোখে শুধু পানি আর পানি। আমরা আর চোখের পানি দেখতে চাই না। চোখের পানি মুছার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। একটি বিশেষ জেলার পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গেছে অভিযোগ করে বিরোধী জোট নেতা বলেন, সরকার র‌্যাব-পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে ইমেজ নষ্ট করে ফেলেছে। আর একটি বিশেষ জেলার পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার চিরদিন ক্ষমতায়  থাকবে না। তখন কোথায় যাবেন। সব কিছুর জবাবদিহি করতে হবে।  এরশাদকে জিয়ার খুনি আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া ও মঞ্জুরের খুনি এরশাদ। তার বিচার হবে। খালেদা জিয়া বলেন, বাইরে থেকে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। সেই বাহিনী এখন দেশব্যাপী গুম-খুন করছে। এই বাহিনী র‌্যাব-পুলিশের চেয়েও শক্তিশালী। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, আমরা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যদি ঘটনাস্থলে আগে যাই তাহলে আমরাও গুম হয়ে যেতে পারি। এই হলো বর্তমান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এসব অন্যায়-অত্যাচার থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে হবে। সরকারকে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। এর আগে সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে অনশন শুরু করেন বিএনপি নেতারা। ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এ গণঅনশনে দিনভর বিভিন্ন সংগঠন ও ১৯ দলের শরিক নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অনশনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন,  সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা প্রমুখ।

আসামে মৃতদের দাফনে পরিবারের অস্বীকৃতি @মানবজমিন

ভারতের আসাম রাজ্যে ৩২ মুসলিম নিহত হওয়ার পর কোকড়াঝাড়, চিড়াং ও বকসা জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে সেনা। এদিকে মৃতদের শোকাহত পরিবার একদিকে যেমন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তেমনি অপরদিকে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। তারা তাদের এলাকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগইয়ের সফর দাবি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সশরীরে এসে তাদেরকে আশ্বস্ত না করা পর্যন্ত তারা নিহতদের দাফন করবে না বলে জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। নানকেখাদ্রাবারি এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা জানিয়েছে, তরুণ গগই ব্যক্তিগতভাবে তাদের জান-মালের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত না করা পর্যন্ত তারা নারী শিশুসহ ১৮ জনের মরদেহ শেষকৃত্য সম্পন্ন করবে না। সংবাদ কর্মীদের তারা বলেন, আমাদের জীবনের কি কোন মূল্য নেই? আমরা শুধু দাবি করছি যে আমাদের নিরাপত্তা দেয়া হোক। আমাদেরকে যেন ভবিষ্যতে হামলা আর হত্যা না করা হয়। তারা অভিযোগ করে, জেলা কর্তৃপক্ষ সহিংসতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে, মৃতদের জানাজা না করলে গ্রেপ্তার করা হবে। শোকাতুর ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মুখ্যমন্ত্রীর সফরের যে দাবি উঠিয়েছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সূত্র থেকে তাৎক্ষণিক কোন জবাব পাওয়া যায়নি। ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এনডিএফবি-এস এর উগ্রপন্থি জঙ্গিরা শুক্রবার রাতে ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে আর শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ১লা মে থেকে তারা বকসা ও কোকরাঝাড় জেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হত্যাজজ্ঞ শুরু করেছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত মোট ৩২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। আর ওই দুটি জেলায় হাজারেরও বেশি এখন ঘরছাড়া।

বড়ভাইয়ের বন্ধুরা ধর্ষণ করলো কিশোরীকে

চট্টগ্রামে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে বড়ভাইয়ের কয়েক বন্ধু তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায়  রোববার ভোরে নগরীর এনায়েত বাজার এলাকা থেকে দুই ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এরা হলেন- মো. বাহার (৪৫) ও মো. রাসেল (২০)। কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার বিকালে এনায়েত বাজারের তুলাতলী বস্তির বাসা থেকে ওই কিশোরীকে তার বড় ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে পূর্ব পরিচিত কয়েকজন যুবক ডেকে এনে তুলে নিয়ে যায়। স্থানীয় একটি পাহাড়ে নিয়ে চার-পাঁচজন যুবক ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে। পরিদর্শক নেজাম জানান, শনিবার বিকালে ওই কিশোরী বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানালে তারা পুলিশকে অবহিত করে।মেয়েটি থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানায় এবং তার দেয়া বক্তব্য মতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুইজন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম।

নিষিদ্ধ হচ্ছে আয়োডিনবিহীন ভোজ্যলবণের উৎপাদন? by আবুল হাসনাত @প্রথম আলো

আয়োডিন নেই—এমন লবণকে ভোজ্যলবণ হিসেবে বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এমনকি এমন লবণ উৎপাদন, মজুত এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ হতে পারে। আয়োডিনবিহীন ভোজ্যলবণ উৎপাদন-বিপণনে জড়িতদের তিন বছরের কারাদণ্ড কিংবা অপরাধভেদে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের শাস্তিও পেতে হতে পারে। এমন বিধান রেখে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন-১৯৮৯-এর সংশোধনীর একটি খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। সংস্থাটি বলছে, ২৪ বছরের পুরনো আইনটিকে সময়োপযোগী এবং কার্যকর করতে একটি সংশোধিত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সব পক্ষের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে। আইনটি হয়ে গেলে লবণমিলমালিকদের কারচুপি অনেক কমবে।
জানতে চাইলে বিসিকের পরিচালক আবু তাহের খান বলেন, 'আমরা আইনে লবণের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে খসড়াটি করেছি। আগের আইনটি শুধু খাবার লবণকেন্দ্রীক ছিল। বেকারি পণ্য ও পোলট্রি খাদ্যে আয়োডিনবিহীন লবণ ব্যবহার হয়। সেসব পণ্য আমরা খাই। এখন ওইসব ক্ষেত্রেও আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পে ব্যবহারের লবণ ভোজ্যলবণ হিসেবে বিক্রি হয়। সে জন্য আমরা দুই লবণের আলাদা আলাদা মোড়কের কথা বলেছি।' আইনের খসড়ায় প্রতি কেজি আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণে ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম আয়োডিন মেশানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়োডিনযুক্ত লবণে ন্যুনতম ৯৬ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইট, অদ্রবণীয় পদার্থ সর্বোচ্চ দশমিক ৩ শতাংশ, সোডিয়াম ক্লোরাইট ছাড়া অন্যান্য দ্রবণীয় পদার্থ সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ থাকতে হবে এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৪ শতাংশের বেশি থাকতে পারবে না।
বিসিক বলছে, দেশে উৎপাদিত লবণের ৫৮ শতাংশে পরিমিত মাত্রায় আয়োডিন মেশানো হচ্ছে। আর ৮১ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণ ব্যবহার করছে। কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিক্রির জন্য পরিশোধিত ভোজ্যলবণ আমাদানি করতে চাইলে তাকে শুধুই আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণ আমদানি করতে হবে। আয়োডিনমুক্ত কোনো ভোজ্যলবণ আমদানি করা যাবে না। এ ব্যাপারে খসড়ায় বলা হয়েছে, আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণ আমদানির ক্ষেত্রে তা বন্দর থেকে খালাসের আগেই পরীক্ষা করে মান যাচাই করতে হবে এবং যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। আইনের খসড়া অনুযায়ী, কোনোভাবেই ভোজ্যলবণের দাম মোড়কে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা যাবে না।
ভোজ্যলবণ উৎপাদন ও বাজারজাতারী হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানায় শিল্পে ব্যবহার হওয়া লবণ উৎপাদন করতে পারবেন না। তাদের শুধুই ভোজ্যলবণ উৎপাদন করতে হবে। নিবন্ধিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোজ্যলবণ নিজের কারখানা ছাড়া অন্য কারখানা ভাড়া নিয়ে উৎপাদন করতে পারবে না। একইভাবে নিজের কারখানা অন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ভোজ্যলবণ উৎপাদনের জন্য ভাড়াও দিতে পারবে না। ভোজ্যলবণ উৎপাদনকারী কারখানার পরিদর্শন সম্পর্কে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিসিক কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক যেকোনো কারখানার ভোজ্যলবণ সংগ্রহ করে তাতে আয়োডিনের মাত্রা পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারবে। এই আইন বাস্তবায়নে ভোজ্যলবণ উৎপাদন, পরিশোধন, আমদানি ও বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী আদেশ দিতে পারবে।
বর্তমান আইনের বিধান লঙ্ঘনকারির জন্য তিন বছরের কারাদন্ড কিংবা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে খসড়া আইনে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। আয়োডিনবিহীন ভোজ্যলবণ উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড কিংবা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য তৈরি কিংবা প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার না করলে সেটাও অপারাধ বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে রাখা হয়েছে তিন বছরের কারাদন্ড কিংবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা কিংবা উভয় দন্ড। তবে খসড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তার জন্য সরাসরি আদালতে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার কিংবা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ বিচারের জন্য আমলে নিতে পারবেন না। আবার এই আইনের অধীন অপরাধগুলো অ-আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপোসযোগ্য করার বিধান রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআই) এবং গেইনের সহায়তায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিকের সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ (সিআইডিডি) প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ এখন চলছে। বিসিক বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে উৎপাদিত ভোজ্যলবণের ৯০ শতাংশে পরিমিত মাত্রায় আয়োডিন মেশানো হবে এবং শতভাগ পরিবারকে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণের ব্যবহারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
# আয়োডিনমুক্ত কোনো ভোজ্যলবণ আমদানি করা যাবে না। খালাসের আগেই বন্দরে পরীক্ষা করতে হবে
# ভোজ্যলবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শিল্পে ব্যবহারের লবণ উৎপাদন করতে পারবে না
# আয়োডিনবিহীন ভোজ্যলবণ উৎপাদন ও বাজারজাত করলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান
# ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তার জন্য সরাসরি আদালতে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি
৫৮ শতাংশ লবণে পরিমিত মাত্রায় আয়োডিন মেশানো হচ্ছে
৮১ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত ভোজ্যলবণ ব্যবহার করছে

ওবামার ঠাট্টা-টিটকারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক নৈশভোজে অংশ নিয়ে মজার ছলে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর সংবাদমাধ্যমকে খোঁচালেন। গতকাল শনিবার রাতে হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্টস ডিনার অনুষ্ঠানে তিনি এমনটা করেন। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে 'নার্ড প্রম' নামে পরিচিত এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে শীর্ষ সাংবাদিক, বেশ কিছু সেলিব্রেটি ও ক্ষমতাধর বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ডিনার করে থাকেন। ওবামা তাঁর কৌতুক ও রসিকতা দিয়ে অনুষ্ঠানটি মাতিয়ে রাখেন। ওবামার স্বাস্থ্যসেবা বিমা গ্রহণে নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি গোলযোগ দেখা দেয়। সেদিকে দিকে ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, '২০০৮ সালে আমার স্লোগান ছিল "ইয়েস উই ক্যান"। ২০১৩ সালে আমার স্লোগান হল "কন্ট্রোল+অলটার+ডিলিট"।'
টিভি নিউজ নেটওয়ার্ক নিয়ে রসিকতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, 'আমি মাত্র মালয়েশিয়া থেকে ফিরলাম। সিএনএনের কভারেজ পেতে যত দূর যেতে হয় আর কি!' মালয়েশীয় এয়ারলাইনসের নিখোঁজ বিমানটির খবর সিএনএনে বেশি কভারেজ দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেন। ওবামা কেনিয়ার বংশোদ্ভূত নাগরিক—এই বিষয়টি ফক্স নিউজ কারণে অকারণে বারবার সামনে এনেছে বলে তিনি ফক্সকে উদ্দেশ করে তির্যক ভাষায় বলেন, 'ফক্স, আমি চলে গেলে তুমি আমাকে খুব মিস করবে। হিলারি একজন কেনিয়ান—এমন কথা আমেরিকানদের বোঝানো খুব কঠিন হয়ে পড়বে।' আগামী নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে জোর গুজব চালু আছে। ওবামার এ বক্তব্যে সে বিষয়টাই আরও জোরালো হয়েছে।

লঞ্চডুবিতে আরও সাত লাশ উদ্ধার, তদন্ত কমিটি

পটুয়াখালীর গলাচিপায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় আজ রোববার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আরও সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজের জন্য গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করা নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ১৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি দায়িত্বে থাকা গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির দাফন বা সত্কার বাবদ নগদ ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সহকরী পরিচালক ও পটুয়াখালী নৌবন্দরের কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলম জানান, গলাচিপায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খানের নির্দেশে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা  হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকায় গলাচিপা নদীতে এমভি শাথিল-১ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবে যায়।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু