ফিল্মি কায়দায় ৩ জঙ্গি ছিনতাই by মতিউল আলম, খালিদ মাসুদ, ও সাইফুল ইসলাম সানি

Monday, February 24, 2014

ফিল্মি স্টাইলে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে সাজাপ্রাপ্ত ৩ জেএমবি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের সাত ঘণ্টার মাথায় টাঙ্গাইল থেকে জঙ্গি সদস্য রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি দু’জনের খোঁজ মেলেনি।
এদিকে এ ঘটনার পর সীমান্ত ও দেশের সব কারাগারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ ও অন্যজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে রাতে গাজীপুর থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে সহযোগিতার অভিযোগে আটক জাকারিয়ার স্ত্রী স্বপ্নাকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ছিনতাইকৃত আসামিরা হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজান। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমার আঘাতে আতিকুর রহমান (৩২) নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত ও দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিবুর রহমান (৫০) ও সোহেল রানাকে (৩০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  নিহত আতিকের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পণ ঘাগড়া গ্রামে। এ ঘটনার পর পালানোর সময় টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে জাকারিয়া নামের এক জেএমবি’র সদস্যকে অস্ত্র ও ব্যবহৃত গাড়িসহ আটক করে পুলিশ। অপরদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যওয়ার ৭ ঘণ্টা পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফেজ রাকিব হাসানকে টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার তক্তারচালা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আসামিদের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। আসামিদের মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর তিনটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সালাউদ্দিন সালেহীনের  বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ১টিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়ি জামালপুরে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজানের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। এর একটিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়িও জামালপুরের মেলান্দহে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমীরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান জানান, সকাল সোয়া দশটার দিকে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে ত্রিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন তাকিয়ে দেখি একটি পুলিশের গাড়িকে সামনে ও পিছন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে একটি সাদা ও একটি কালো মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাস দু’টি থেকে ১০-১৫জন কালো মুখোশধারী লোক বোমা ফাটিয়ে ও পিস্তল দিয়ে গুলি করে। একপর্যায়ে ৩ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আসামিদের নিয়ে গাড়ি দু’টি দ্রুত উত্তর দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আসামি নিয়ে ময়মনসিংহ কোর্টে যাচ্ছিল। পথে ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দিয়ে প্রিজন ভ্যানকে ব্যারিকেড দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় তিন পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আতিক নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা যায়। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিব ও সোহেল রানাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহত পুলিশ সদস্যরা সবাই কাশিমপুর কারাগারের কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই)।  এদিকে ৩ পুলিশকে গুলি করে ৩ আসামি ছিনতাই হলেও অক্ষত রয়েছেন প্রিজনভ্যান চালক সবুজ মিয়া। সবুজ মিয়া জানান, আমার গাড়িটির সামনে একটি ট্রাক আটকে দেয়। ঠিক সে সময় একটি সাদা মাইক্রোবাস সামনে এসে গুলি শুরু করলে আমি গাড়িতে নুয়ে যাই এবং তারা গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে আসামিদের নিয়ে যায়। চোখের পলকে তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর শহীদ শুকরানা জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় ২০০৬ সালের ২৬শে মার্চ একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। এই মামলায় ময়মনসিংহ বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ভ্যানের ভেতরে পড়ে আছে আহত পুলিশ সদস্যদের ভাঙা রাইফেল। ভ্যানের পিছনের সিঁড়িতে জমাট বাঁধা রক্ত। গাড়ির সামনের কাচে গুলির চিহ্ন।
যেভাবে ছিনতাই: ভ্যানচালক সবুজ জানান, সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে উল্লিখিত আসামিদের  নিয়ে সুবেদার হাবিবুর রহমান ও চালকসহ মোট ৪জন পুলিশ সদস্য ময়মনসিংহ আদালতের উদ্দেশ্যে প্রিজন ভ্যানে (নং-ঢাকা মেট্রো-উ-১১-১৬২৮) রওনা হন। পরে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছালে সামনে ও  পিছন দিক থেকে ২টি মাইক্রোবাসে  করে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত এসে অতর্কিতে গুলি ও বোমা হামলা চালাতে থাকে। তারা প্রথমেই চালক ও তার পাশের সিটে বসা সুবেদারকে গুলি ও বোমা  নিক্ষেপ করে। এতে চালক লুটিয়ে সিটের পাশে পড়ে যান  এবং  সুবেদার গুরুতর আহত হন। একই সময় দুর্বৃত্তরা প্রিজন ভ্যানের পিছনের দরজার তালা ভেঙে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের গুলি ও বোমার আঘাতে কনস্টেবল আতিকুল লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা পুলিশের দু’টি রাইফেল ভেঙে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শী লেগুনা চালক তাইজুল ইসলাম জানান, গুলি ও  বোমার শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে এক পুলিশ  সদস্যের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। ঘটনার পর পরই এলাকার বিপুল  সংখ্যক উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে জড়ো হন।  তাদের অনেকে বলেন, শব্দ শুনে তারা কিছু বোঝার আগেই খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ডিআইজি নুরুজ্জামান, ময়মনসিংহের এসপি মঈনুল হক, ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার সহ পুলিশ,  র‌্যাব,  ডিবি, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে  উপস্থিত হন।
যেভাবে গ্রেপ্তার রাকিব: পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছে জেমএমবির জঙ্গি রাকিব হাসান। দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে সখীপুর থানা পুলিশ। সখীপুরের তক্তারচালা গ্রাম থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময়  গ্রেপ্তার করা হয়  তাকে। সদ্য শেভ করা মুখ ও হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখে তাকে সন্দেহ করে পুলিশ। তক্তারচালা নামে ওই গ্রামটি সখীপুর ও মির্জাপুর থানার মাঝামাঝি জায়গায়। মির্জাপুর থানা পুলিশ জানায়, সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি মামলার তিন আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। সখীপুর ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি হওয়ায় তক্তারচালা গ্রামে পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া সব গাড়িতে তল্লাশি চালাতে থাকে পুলিশ। বেলা ২টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিল রাকিব হাসান। তার সঙ্গে ছিল রাসেল নামে আরও এক যুবক। তল্লাশি চালানোর সময় এসআই শ্যামল দত্তের সন্দেহ হয় রাকিবকে দেখে। কারণ তার মুখ ছিল সদ্য শেভ করা। প্রিজনভ্যান থেকে পালানোর পরই দাড়ি কামিয়েছিল রাকিব। কিন্তু সময় কম থাকায় সম্ভবত দাড়ি কাটতে গিয়ে তার গাল কয়েক জায়গায় কেটে যায়। এ ছাড়া তার থুতনির নিচে অল্প কিছু দাড়ি ছিল। এই দাড়ি দেখে সন্দেহ হওয়ায় রাকিব হাসানকে আরও ভাল করে তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় রাকিব হাসানের হাতে ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। রাকিবের পায়ে নতুন স্যান্ডেলও ছিল। সেখান থেকে আটক করে সখীপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে রাকিব হাসান তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন। জানায়, তার নাম রাসেল। পুলিশকে সে বারবার বলতে থাকে সে রাকিব হাসান নয়। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয় সে-ই রাকিব। এর আগে জেএমবির তিন আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, বোমা মিজান ও রাকিব হাসানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সখীপুর প্রশিকা এলাকা থেকে তাদের সহযোগী জাকারিয়া (২৫)-কে গাড়িসহ আটক করে সখীপুর থানা পুলিশ। জাকারিয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার জিনারপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৬০৪৮) সাগরদীঘি-সখীপুর সড়কে ফিল্মি স্টাইলে ভাঙচুর করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় সখীপুর থানার সামনে পৌঁছলে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির পিছু নেয়। অবস্থার বেগতিক দেখে ঢাকা-সখীপুর সড়কের প্রশিকা এলাকায় গাড়িটি রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা গাড়ির চালক জাকারিয়া (২৫)-কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ এসময় গাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল, ৪টি মোবাইল ফোন সেট ও রড কাটারসহ বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে ডিআইজি হতাহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব-পুলিশসহ কয়েকটি টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠানো হয়েছে কিনা- এ বিষয়টি এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে আগে থেকেই কেন অবহিত করা হয়নি- এ ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কিনা- এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিআইজি আরও জানান, নিহত পুলিশ সদস্যকে আইজিপির পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হবে। সে সঙ্গে পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সারা দেশে সতর্কতা: ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সারা দেশের কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত শতাধিক জঙ্গি সদস্য থাকায় ওই কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে জেএমবির সাজাপ্রাপ্ত শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে  কারা অভ্যন্তরে ও আশপাশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সদস্যরা রয়েছে। ত্রিশালের এ ঘটনার পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের সেলে অতিরিক্ত রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ৩ জেএমবি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় গাজীপুরের জেলা পুলিশ রিজার্ভ ইন্সপেক্টর সাইদুল করিমকে ক্লোজ এবং সুবেদার আবদুুল কাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি: ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রকাশ্যে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জেএমবির ৩ আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক, ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে উপসচিব (জেল-১) সালমা বেগম। এদিকে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন। ধরিয়ে দিতে পারলে মিলবে জনপ্রতি এক লাখ টাকা।
ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা যত মামলার আসামি
ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে জানান, ফিল্মি কায়দায় পুলিশ মেরে ছিনতাই করা জেএমবি’র তিন সদস্যের মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১-এ সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিন সজীব ওরফে তৌহিদ ও কারাগারের পার্ট-২-এ মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন। জেএমবি’র শূরা সদস্য সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে তৌহিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। তার পিতার নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৩টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ৩টিতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে তার নামে থাকা ২৪টি মামলা। সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে তৌহিদকে ২০০৬ সালের ২৫শে এপ্রিল চট্টগ্রামের সিডিএ এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদ হোসেন সুমন ওরফে বোমা মিজান ৫টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। বর্তমানে তার ২১টি মামলা বিচারাধীন। তার বাড়ি জামালপুর সদরের শেখের ভিটা গ্রামে। বোমা মিজানকে ২০০৯ সালের মে মাসে রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র শূরা সদস্য হাফেজ রাকিব হাসান ওরফে মাহমুদ চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড, ১টিতে ১৪ বছর ও ১টিতে ৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। বর্তমানে তার নামে থাকা ২৯টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রফিক হাসানের পিতার নাম আব্দুস সোবাহান। তার বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার বশিংবাড়ি গ্রামে। ২০০৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
বোমা মিজানের স্ত্রীরও ৩৭ বছর জেল
২০১২ সালের ৩রা জুন জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ ও সুইসাইড স্কোয়াডের কমান্ডার জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমের ৩৭ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। একটি অস্ত্র মামলায় ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ওই দিন ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন (৩০ বছর) ও ১৯ (এফ) ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ডের  রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অবৈধভাবে নিজেদের হেফাজতে অস্ত্র রাখার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকের যাবজ্জীবন এবং গুলি রাখার জন্য ৭ বছর করে কারদণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ছিলেন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের  (জেএমবি) সদস্য রাকিব আল হাসান।

জঙ্গিবাদ- আল-কায়েদার বিপদবার্তা by মশিউল আলম

Friday, February 21, 2014

আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নামে ইন্টারনেটে প্রচারিত অডিও বার্তাটি সত্যিই জাওয়াহিরির বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনারত বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক তাজ হাশমি।
গতকাল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে তিনি দাবি করেছেন, জাওয়াহিরির কণ্ঠস্বর তিনি চেনেন, তাঁর মিসরীয় উচ্চারণে বলা আরবি ভাষার বক্তৃতাটি তিনি ‘প্রায় নিশ্চিত’ভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন।

ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর তাঁর নেপথ্যের প্রধান ব্যক্তি মিসরীয় শল্যচিকিৎসক জাওয়াহিরি ছিন্নভিন্ন আল-কায়েদার হাল ধরেছেন, এমন খবর শোনা যায়। কিন্তু তিনি এখন কোন দেশে কী অবস্থায় আছেন, সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। ধারণা করা হয়, তিনি বহু বছর ধরে লুকিয়ে আছেন পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায়। লাদেন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের এক বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আমেরিকান সেনাদের আক্রমণে নিহত হওয়ার পর তাঁর জীবনের শেষ কয়েক বছরের জীবনযাপন সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে মুঠোফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি থেকে লাদেন নিজেকে বিযুক্ত করেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন শুধু চিঠি-চিরকুটের মাধ্যমে, যেগুলো সশরীরে বহন করতেন তাঁর অতি বিশ্বস্ত দুই সহোদর। সম্ভবত জাওয়াহিরিও এখন একই ধরনের প্রযুক্তিহীন, বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছেন। (সিআইএ আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ অন্যত্র ড্রোন হামলা চালিয়ে যেসব জঙ্গিকে হত্যা করেছে, তাদের অনেকেই মারা পড়েছেন মুঠোফোন ব্যবহার করার কারণে) তবে বক্তৃতা অডিও বা ভিডিও টেপে ধারণ করে হাতে হাতে তা স্থানান্তর এবং অবশেষে কোনো একটি স্থান থেকে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা তাঁর লোকজনের পক্ষে সম্ভব। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থেকে যায়: আমেরিকান গোয়েন্দাদের পক্ষে প্রযুক্তিগতভাবে বের করা সম্ভব যে কম্পিউটার থেকে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে তার ভৌগোলিক অবস্থান শনাক্ত করা।
তা সত্ত্বেও জাওয়াহিরির নামে অডিও বা ভিডিও বার্তা প্রচারের খবর প্রায়ই শোনা যায়। ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আমেরিকান সেনাদের আক্রমণে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাওয়াহিরির অন্তত ১২টি বার্তা প্রচারের খবর পাওয়া যায় (অধিকাংশই অডিও)। সর্বশেষ মিসরের সামরিক বাহিনী মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর একটি অডিও বার্তা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, যেটিতে তিনি মিসরীয় সামরিক বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করেন। এর আগে সিরিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও তাঁর অডিও বা ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে।
এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ নিয়ে জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তাটি সম্পর্কে অধ্যাপক তাজ হাশমির নিশ্চয়তা বোধগম্য। কিন্তু বার্তাটি সত্যিই তাঁর কি না—এ প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য। সংগঠন হিসেবে আল-কায়েদা এখন আর আগের মতো সংগঠিত নয়, বরং একটি ভাবাদর্শ হিসেবেই এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালের পর থেকে জঙ্গি তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জামাআতুল মুজাহিদীন, হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি জঙ্গিগোষ্ঠীর যেসব সক্রিয় তৎপরতা লক্ষ করা গেছে, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারা আর সে রকম তৎপরতা প্রকাশ্যে চালাতে পারেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রভাব ক্রমেই কমেছে। আমেরিকা ও ভারত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে মহাজোট সরকারের কাছে বেশ সহযোগিতা পেয়ে এসেছে। ফলে এখন বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো চরম কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে ইসলামি জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে নির্মূল হয়ে গেছে। আল-কায়েদা, পাকিস্তান-আফগানিস্তানের তালেবান, লস্কর-ই-তাইয়েবা কিংবা ভারতভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের গোপন যোগাযোগ হয়তো এখন আর আগের মতো নেই; কিন্তু স্থানীয়ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড যে সচল রয়েছে, অন্তত তারা যে জঙ্গি বা জিহাদি ভাবাদর্শ প্রচারের কাজে নিয়োজিত আছে, তার কিছু কিছু আলামত মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায়। শাহবাগ আন্দোলনের সময় ব্লগার রাজীব হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়েও ইসলামি জঙ্গি ভাবাদর্শ নিয়ে কর্মরত কিছু কিছু গোষ্ঠীর অস্তিত্ব প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগ বা সাইট থেকেও এটা বোঝা যায় যে ইসলামি জঙ্গিবাদী তৎপরতার ভাবাদর্শগত ক্ষেত্রটি এ দেশে নেহাত ছোট নয়। জাওয়াহিরির অডিও বার্তাটি ইন্টারনেটে প্রচারের দায়ে রাসেল বিন সাত্তার নামে যে তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর কাছ থেকেও বেশ কিছু পরিমাণ জিহাদি প্রচারণা উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। আর জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তাটি, যার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ: ম্যাসাকার বিহাইন্ড আ ওয়াল সাইলেন্স’, তার বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়, জাওয়াহিরি বাংলাদেশে ‘ইসলামবিরোধী’দের বিরুদ্ধে ‘ইন্তিফাদা’ বা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন যাদের প্রতি, তারা এ দেশে বিলক্ষণ রয়ে গেছে। অডিও বার্তার তাৎপর্য এটাই যে সেসব জঙ্গিগোষ্ঠী এককাট্টা সুসংগঠিত না হয়েও আয়মান আল-জাওয়াহিরির আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিচ্ছিন্নভাবেও সক্রিয়তা দেখাতে পারে।
তবে বাংলাদেশ সরকার যেমনটি বলেছে, তারা এই বার্তায় উদ্বিগ্ন হয়নি, তা যদি এ কারণে হয় যে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট মাত্রায় সতর্ক আছে, কেবল তাহলেই স্বস্তি বোধ করা যায়। অন্যথায় এই উদ্বেগহীনতা মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শেখ হাসিনার সরকারকে ইসলামবিরোধী, নাস্তিক ইত্যাদি বলে প্রচার করার প্রবল তৎপরতা ইন্টারনেট জগতে লক্ষ করা যায়। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু অনেক আগে থেকেই। উপরন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকর করে পুরো প্রক্রিয়াটি নিষ্পন্ন করার কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে।
কিন্তু জাওয়াহিরির এই অডিও বার্তা নিয়ে সরকারের লোকজনের কণ্ঠে যেসব রাজনৈতিক কথাবার্তা উচ্চারিত হচ্ছে, বিশেষত বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আল-কায়েদা বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তার ফলে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টায় যেসব কথা বলা হচ্ছে, তাতে বিএনপির প্রতিও মানুষের সন্দেহ বাড়তে পারে। আল-কায়েদা কিংবা ইসলামি জঙ্গিবাদ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতি করতে চাইলে যে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, তাতে লাভ হবে কেবল জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোরই।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলো অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির দ্বারাও ব্যবহূত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় সংস্থার গোপন সহযোগিতায় ইসলামি জঙ্গিদের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিমধ্যে সুবিদিত। এমনকি ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কোনো কোনো কর্মকর্তা ‘হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ’ (হুজিবি) নামে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে সহযোগিতা করেছেন, এমনকি রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন—এমন তথ্য পাওয়া যায় আমেরিকান কূটনৈতিক দলিলে। জরুরি অবস্থায় যখন সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাজনৈতিক দল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি—আইডিপি) গঠনের ঘোষণা দিতে পেরেছিল হুজিবি।
এখন সে অবস্থা নেই বলেই মনে হয়। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ার একটি বড় কারণ হয়তো এটাও। এ দেশে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মতো সামাজিক সমর্থন ইসলামি জঙ্গিরা পায় না। তাদের পালিয়ে থাকতে হয় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেই নয়, সমাজের কাছ থেকেও। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো মহল তাদের ব্যবহার করতে না চাইলে এবং রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার মধ্যকার কোনো অংশ গোপনে তাদের মদদ না দিলে এ দেশে জঙ্গিদের পক্ষে বড় ধরনের কিছু করা অত্যন্ত কঠিন।


মশিউল আলম
: সাংবাদিক।

সংগঠনটি কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে?- স্বরূপে ফিরেছে ছাত্রলীগ!

Tuesday, February 4, 2014

নতুন করে ক্ষমতাসীন হয়ে বর্তমান সরকার নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনকে সম্ভবত ছাড় দিয়ে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রমাণ দিল যে তারা তাদের পুরোনো চরিত্রই ধরে রেখেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে শুধু পুলিশ দিয়ে কাজ হয়নি, মাঠে নামতে হয়েছে বা নামানো হয়েছে ছাত্রলীগকেও!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির হলেও সামগ্রিকভাবে সংগঠনটির এবং চূড়ান্ত বিচারে সরকারের। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কিসের জোরে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তা আমাদের সবারই জানা। প্রথম আলো পত্রিকায় অস্ত্র হাতে যাদের ছবি ছাপা হয়েছে, তারা অচেনা দুর্বৃত্ত নয়, এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক! তাঁরা অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন! এঁদের নেতা বানিয়েছেন কারা? কাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ রয়েছে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পেছনে?
বর্ধিত বেতন-ভাতা প্রত্যাহার বা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে
পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তা ঠিক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এসব বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে কেন মাঠে নামতে হলো? সরকারের তরফে সায় না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে! এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে এই দুর্বৃত্তপনা ও অপকর্মে তাদের কোনো সায় ছিল না।
শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘তদন্তের ভিত্তিতে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা শুধু আশ্বাস নয়, কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই। অস্ত্রধারী হিসেবে যাদের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তারা তো এরই মধ্যে চিহ্নিত। একজন সাধারণ অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ও ছাত্রলীগের এই নেতাদের মধ্যে আইনগত পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখতে চাই, আইন তার নিজের গতিতে চলছে। কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের জন্য কি আইন নিজের মতো চলে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সবাই সময়মতো হল ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের পরও হলে অবস্থান করছিলেন।
নতুন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন তাদের যে জঘন্য রূপ প্রকাশ করল, এর বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ধরাছোঁয়ার বাইরে ছাত্রলীগের সেই অস্ত্রধারীরা

প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছিল তারা। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। কিন্তু ঘটনার এক দিন পেরুলেও তাদের কারও টিকি স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। হয়নি কোন মামলাও।
উল্টো চার মামলার আসামি হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন আলামতও দেখা যায়নি গতকাল পর্যন্ত। এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় গতকাল সকালেই সব ক’টি হল ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করে। পরে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হল থেকে বেরিয়ে আসে। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামে মতিহার থানায় দু’টি মামলা করেছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও দু’টি মামলা করে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের বা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে রোববারের ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগও একটি কমিটি গঠন করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার বিষয়ে মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন বলেন, মামলা দু’টির একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে বাধাদান, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলায় ৬০ জনকে নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ এবং দ্বিতীয় মামলায় ৫০ জনের নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, থানার এসআই মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দু’টি একটি সরকারি কাজে বাধা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি বাদী হয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আশরাফুল আলম ইমনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২রা অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করেছিল তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের কেউ কেউ পুরস্কৃতও হয়েছে।

ওই সময় রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক), কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আখেরুজ্জামান তাকিম (তৎকালীন সহ-সভাপতি), রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তানিম (গণশিক্ষা সম্পাদক), রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিক রহমান আতিক (উপ-দফতর সম্পাদক), যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক) বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। পরে এরা সবাই ছাত্রলীগের কাণ্ডারি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২৮শে নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অস্ত্রবাজি করতে দেখা গেছে। সে সময় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান, পলাশ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আহমেদ সেতু, সুদীপ্ত সালামসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এসব ছবি বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তাদের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডের পেছন থেকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একই সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। ওই সশস্ত্র দলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পিস্তল উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আমির আলী হল সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। একই সময়ে ইমনের সামনেই কালো জ্যাকেট পরা সাদা পিস্তল হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। সেতুর সামনে এগিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন পর্যন্ত তাড়া করেন কালো চাদর পরা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম। এ সময় তাকে এক হাতে পিস্তল ও অন্য হাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে। সাবেক কমিটির এই নেতা বিভিন্ন হামলা ও সংঘর্ষে অস্ত্রবাজিতে নিজের পারদর্শিতা প্রমাণে সফল হলেও দলে তিনি বঞ্চিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
প্রশাসন ও ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামানকে প্রধান করে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুুল আলম সরকার, সিন্ডিকেট সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন এবং কমিটির সদস্য সচিব হলেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, শাহিনুর রশীদ জুয়েল, জিয়াউল হক, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ও দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর কোন হামলা করেনি। বরং শিবিরের ক্যাডাররাই ক্যাম্পাসে হামলা চালালে আমাদের নেতাকর্মী আহত হয়। নিজেদের বাঁচাতে আমরাও আক্রমণ করি।
ছাত্রলীগের কাছে অস্ত্র থাকার বিষয়ে সোজাভাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, প্রতিটি মানুষ যেখানে জীবনের নিরাপত্তা গ্রহণ করে ছাত্রলীগও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অনেক কিছুই করছে। অন্যদিকে, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম সামসুর নূর বলেন, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাদের আটক করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।
অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র হাতে যারা মহড়া দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যার হাতে অস্ত্র থাকে, সে ছাত্র নয়, সন্ত্রাসী। তার কোন দল থাকতে পারে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রদের ওপর হামলাকারী কারা, তাদের অস্ত্র কোথায় গেল, আন্দোলনে কার কি ভূমিকা ছিল- সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন: বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিনস কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলে দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। এ নিয়ে গত রোববার ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা শিক্ষকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল এমনকি শিক্ষকদের বাসভবন, চেম্বার ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাব ও বাসভবনে হামলার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে একই দাবিতে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে।
সাংবাদিকদের মানববন্ধন: অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের উপর পুলিশি  হামলার নিন্দা জানান।
গ্রেপ্তার ১: মতিহার ওসি জানান, রোববার ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের অভিযোগে সোমবার ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সজীব আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যাদের নাম পেয়েছে, তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র- ‘বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসীদের’ নিয়ে উদ্বেগ by রাহীদ এজাজ

Friday, January 31, 2014

টুইন টাওয়ারে হামলার (৯/১১) পর গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বেড়েছে। জোরদার হয়েছে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও।
আর ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ৯/১১-এর মতো তাণ্ডব চালানোর সামর্থ্য এখন আর আল-কায়েদার নেই বলেই ধারণা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। এর পরও স্বস্তিতে নেই যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, দেশটির অভ্যন্তরের বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গজিয়ে উঠেছে। গত এক দশকে দেশের নানা প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে বেড়ে ওঠা এসব গোষ্ঠীকেই নিয়েই এখন উদ্বেগ মার্কিন প্রশাসনের। সন্ত্রাস আর জঙ্গি তৎপরতা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের নজরদারি বেড়েছে। নিউইয়র্কে এ নজরদারিটা অভিবাসী এশীয় ও মুসলিমদের ওপর বেশি এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নজরদারি নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের ছবিটা নিউইয়র্কের ঠিক উল্টো। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগের (এলএপিডি) উপপ্রধান মাইকেল ডাউনিং জানান, অভিবাসী লোকজনের ওপর নজরদারি নয়, তাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সফল হতে হবে। এরই অংশ হিসেবে এলএপিডির কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লোকজনের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনে যুক্ত থাকেন।
সামগ্রিকভাবে গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি অনেকখানি কমেছে। এ জন্য দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ দমন কমিটি, উইলসন সেন্টার, ব্রুকিংস ও র‌্যান্ডের মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ অভিমত পাওয়া গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন প্রেস সেন্টার এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের গণমাধ্যমকর্মীদের সন্ত্রাসবাদ দমনবিষয়ক এক সফরের আয়োজন করে। এ সফরের অংশ হিসেবে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেস সফর করি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমন বিভাগের উপ-সমন্বয়কারী জাস্টিন সিবেরেল মনে করেন, আল-কায়েদার প্রভাববলয় গুঁড়িয়ে দেওয়া গেলেও ভৌগোলিকভাবে এর মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন স্থাপনায় হামলার ক্ষমতা হয়তো তাদের নেই। তবে ওসামা বিন লাদেনের জিহাদি আদর্শে তরুণদের প্রলুব্ধ করার ক্ষমতা আছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‌্যান্ড করপোরেশনের নীতিমালাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এন্ড্রু লিয়েপমেনের মতে, লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন দূতাবাসে হামলা ও বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলা সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে নতুন করে ভাবনা জাগায়। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ওসামা বিন লাদেনের আদর্শকে ধারণ করে অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব গোষ্ঠীর এজেন্ডাগুলো বৈশ্বিক না হয়ে আঞ্চলিক হয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এরা খেলাফত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছে। তাই সামগ্রিকভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়েছে বলাটা কঠিন।
র‌্যান্ড করপোরেশনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান মাইকেল জেনকিন্স লাদেনের মতাদর্শের ভিত্তিতে দেশের নানা প্রান্তে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন নেকড়ে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, বিচ্ছিন্ন হলেও এসব গোষ্ঠী লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় নিজেদের পারঙ্গম করে তুলছে। তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ব্রায়ানের ভয়টা আগামী দিনগুলো নিয়ে। কারণ, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় দেড় হাজার মানুষ সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি মার্কিন নাগরিক যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা হুমকি সৃষ্টি করবে, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
লস অ্যাঞ্জেলেস শেরিফের দপ্তরের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জেফ রিব জানান, বিচ্ছিন্নভাবে দেশের নানা প্রান্তে এসব সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে উঠছে। বিশেষ করে, কারাগারে যাওয়ার পর চিরকুট বিনিময়সহ নানাভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে এই সন্ত্রাসীরা পারস্পরিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। দেশের ভেতরেই সন্ত্রাসীরা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে, বিচ্ছিন্নভাবে এসব গোষ্ঠী বিকশিত হচ্ছে—এমন উদ্বেগ থেকেই নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহ ও নজরদারি বেড়েছে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের লিবার্টি অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সহপরিচালক ফাইজা প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীকে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ বা অপরাধমূলক কাজ করতে পারে—এমন সন্দেহের দৃষ্টি পড়ছে এশীয় ও মুসলমানদের ওপর। তাই মুসলমান তরুণেরা কখন, কোথায় যায় এবং মসজিদে ইমাম কী বলেন, সেদিকে তীক্ষ নজর রাখা হচ্ছে।
সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মুখোমুখি হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন তরুণের সঙ্গে দেখা হয়েছিল নিউইয়র্কে। প্রায় দেড় দশক আগে মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওই তরুণ পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর কাছে জানা গেল মাস চারেক আগে এক ভোরে এফবিআই কর্মকর্তারা হাজির তাঁর বাড়ির দুয়ারে। এফবিআই কর্মকর্তাদের দেখে সংগত কারণেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তরুণের বাড়ির লোকজন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দারা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দপ্তরে যান। নিরাপত্তা সংস্থার লোকজনের প্রশ্ন শুনে তরুণটি বুঝে ফেলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি গোয়েন্দাদের নজরদারিতে ছিলেন। তিনি মুসলিম কি না, তাঁরা জানতে চান। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁকে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তিনি যেন তাঁদের অবহিত করেন।
মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তদেশীয় সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা বাড়ার কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি আগের চেয়ে কমেছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্তসরকার সহযোগিতা করাই তাদের মূল কাজ। অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকানো, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগকে মাথায় রেখে অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শুধু মানুষ নয়, পণ্য চলাচলের ওপরও দৃষ্টি রাখে ওই বিভাগ।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অর্ধেকটাই প্রচার মাধ্যমকেন্দ্রিক বলে মনে করে মার্কিন প্রশাসন। তাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাল্টা প্রচারণাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জঙ্গিদের বার্তা ব্যবহার করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কাজের সমালোচনার মাধ্যমে জঙ্গিদের চরিত্র উন্মোচিত করার দাবি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক কাউন্টার টেররিজম কমিউনিকেশনসের (সিএসসিসি) সমন্বয়ক আলবার্তো ফার্নান্দেজ জানালেন, ২০১১ সাল থেকে তাঁর দপ্তর প্রচারমাধ্যমে জঙ্গিদের এভাবেই প্রতিহত করছে।
আলবার্তো বলেন, ‘আমরা গত ডিসেম্বরে ইয়েমেনের রাজধানী সানার হাসপাতালে আল-কায়েদার নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভিডিও প্রচার করেছি। এরপর ওই ভিডিওতে প্রশ্ন তুলেছি ইসলাম ও শান্তির ডাক যারা দিচ্ছে, তারা কি আসলেই শান্তি চায়? এতে জনসমক্ষে তারা হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে। ফলে ওই হামলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে আল-কায়েদা। এ থেকেই লোকজন বুঝতে পারছে এদের স্বরূপ।’
শুরুতে সিএসসিসি প্রচারণা কার্যক্রমের বড় অংশটাই ছিল আরবিতে। এ ছাড়া সোমালি ভাষায়ও হয়। সম্প্রতি পাঞ্জাবি ও উর্দুর পাশাপাশি ইংরেজিতেও এ প্রচারণা শুরু হয়েছে। এমনকি জঙ্গিদের প্রতিটি ভিডিও বার্তা কিংবা প্রতিদিন ফেসবুক, টুইটারের প্রতিটি পোস্টের পাল্টা জবাব দেওয়া হয়।
তবে আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠন মোকাবিলায় নিজেদের সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টি থাকলেও আলবার্তো ফার্নান্দেজ প্রতিপক্ষের দক্ষতা স্বীকার করতে ভোলেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনেরও মানসম্পন্ন প্রচারযন্ত্র রয়েছে, যাদের কর্মীরা যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। তাদের প্রচারযন্ত্র যথেষ্ট দক্ষ, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরও আক্রমণাত্মক হয়েই লড়তে হচ্ছে।’
এর পরও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে বলে মত দেন সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা পল আর পিলার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংসে কর্মরত পল মনে করেন, অনেক উদ্যোগের পরও যুক্তরাষ্ট্রের এখনো অনেক মৌলিক ঝুঁকি রয়ে গেছে। নতুন করে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

রাহীদ এজাজ: সাংবাদিক।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু