পোশাক কম্পানিগুলোর নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

Thursday, February 17, 2011

কটি ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরে ২৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার পর পশ্চিমের ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তাবিষয়ক অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানার নবম তলায় আগুন লাগার ঘটনায় আরো কমপক্ষে ১০০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ গ্রুপের হাজার হাজার শ্রমিক গ্যাপ, জেসিপেনি ও ফিলিপ্স-ভ্যান হাউসেনের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক তৈরি করে থাকে।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, চুরি ঠেকানোর জন্য নিচে নামার দরজায় তালা দেওয়া থাকার কারণে আতঙ্কিত শ্রমিকরা ছাদ থেকে দড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণে বাঁচতে ব্যর্থ হন। এ মর্মান্তিক ঘটনার আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুইডেনের হেনেস অ্যান্ড মরিৎস কম্পানির জন্য সোয়েটার উৎপাদনকারী একটি কারখানা ধসে ২১ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এক দশককাল ধরে ব্র্র্যান্ড কম্পানিগুলো উৎপাদনস্থলের পরিবেশ নিয়ে তদারকির যে চেষ্টা করে আসছে, এ আগুনের ঘটনা সে চেষ্টার সীমাবদ্ধতার কথাই প্রমাণ করল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্যাপ বছরের প্রথম দিকে হা-মীম গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন করেছে। তারা পরিষ্কারভাবেই অগি্নকাণ্ডে বহির্গমনের পথ সুগম করার কথা উল্লেখ করেছিল। সর্বশেষ অগি্নকাণ্ডের ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে পশ্চিমা ব্র্যান্ড কম্পানিগুলোর প্রতিনিধি,কারখানার মালিক, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শ্রমিক নেতারা পোশাক শিল্পে আগুন লাগার সমস্যা নিরসনে ঢাকায় এক জরুরি আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, পোশাক শিল্প বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ
রপ্তানি করে থাকে।
এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য স্পর্শকাতর একটি সময়ে। সম্প্রতি সরকারের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা নিয়ে শ্রমিক ও কারখানা মালিকদের মধ্যে একটি চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বর থেকে নতুন ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কিন্তু শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করছেন, কিছু ফ্যাক্টরি কৌশলে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তারা নিম্ন মজুরির শ্রমিকদের শ্রেণীভুক্ত করে বেতন ও বিভিন্ন ভাতা থেকে বঞ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রামে ৭০টি কারখানা বিদেশি ব্র্যান্ড কম্পানির জন্য পোশাক উৎপাদন করে থাকে। গত সপ্তাহে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় তিনজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
চীনের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যের পোশাক-বাজার বাংলাদেশে চলে আসার পর থেকেই এই শ্রমিক অসন্তোষ লক্ষ করা যাচ্ছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬ দশমিক ৮ ইউএস ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। হা-মীমে এই অগি্নকাণ্ডের পর কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো এ দুর্ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্ত এবং দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক ও শ্রমিক-পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিকারক সব ব্র্যান্ড কম্পানি আগামী সপ্তাহে দেশটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরকার ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের তাগিদ দিয়েছে। পোশাক কম্পানিগুলো অন্যান্য কারখানায় যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, তা ঠেকাতে এবং কারখানা নিরাপদ করতে কী করণীয়, তা খতিয়ে দেখার ব্যাপারে অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশের অসংখ্য পোশাক কারখানা এমন সব বহুতল ভবন ব্যবহার করছে, যেগুলো শিল্পের জন্য উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়নি। শিল্প উৎপাদনের জন্য যে ধরনের ভবন প্রয়োজন, তার সঙ্গে এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। হাজার হাজার মেশিন চলার জন্য যে ভারী বিদ্যুতের সরবরাহ প্রয়োজন, তার সঙ্গে বৈদ্যুতিক সিস্টেম মানানসই নয়; যে কারণে এ বিদ্যুতের অগি্নকাণ্ডের আশঙ্কা দেখা দেয়। শ্রমিকদেরও জরুরি অবস্থায় কী করণীয়, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
ক্লিন ক্লোথ কম্পানি হিসাব করে দেখেছে, গত পাঁচ বছরে ২০০ পোশাক শ্রমিক অগি্নকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। ২০০৫ সালে ৬৪ জন শ্রমিক স্পেকট্রাম কম্পানি ধসে পড়ায় প্রাণ দিয়েছেন।
ব্রিটেনভিত্তিক এথিক্যাল ট্রেডিং ইনেশিয়েটিভের পরিচালক পিটার ম্যাকঅলিস্টার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এ ঘটনাকে বিপজ্জনক ত্রুটি বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, 'এ রকম প্রতিটি নতুন ঘটনাই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংকট আরো ঘনীভূত করছে।'

জোনাথন বির্চাল ও অ্যামি কাজমিন
ফিন্যানশিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

আশঙ্কা অমূলক নয়

Thursday, February 10, 2011

বেশ কিছু দিন ধরেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এবার প্রধানমন্ত্রীও সেই একই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় কিছু দিন আগে বড় ধরনের গোলযোগ হয়েছে। গোলযোগ হয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায়। গার্মেন্ট সেক্টরে একের পর এক অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির পেছনে নাশকতার কোনো ছক থাকতে পারে_এমন আশঙ্কা অনেক দিনেরই।

সামান্য কারণেও গার্মেন্ট কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। এর পাশাপাশি ঝিনাইগাতী থেকে প্রায় ১৪ হাজার গুলি উদ্ধারের ঘটনা থেকে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ সারা দেশে এ ধরনের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের আরো বড় বড় মজুদ থাকতে পারে। সব মিলিয়েই দেশের বিরুদ্ধে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও সেই আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন। আশঙ্কা অমূলক নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেকাংশেই গার্মেন্টনির্ভর। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের অনেকটাই নির্ভর করে এই সেক্টরের ওপর। সেই সেক্টরে সম্প্রতি নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটা অপচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, তার পেছনে তিনি যুক্তিও দেখিয়েছেন। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপরন্তু মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের পুরনো আইনটি নতুন করে ফিরে আসছে। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে থেকে একটি চিহ্নিত মহল যে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার সব রকম চেষ্টা করবে, তাতে সন্দেহ নেই। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বার্থ সংরক্ষণে অনেক কিছুই করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। গত ৩৫ বছরে নিজেদের অনেকখানিই গুছিয়ে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এর পাশাপাশি দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটানো হয়েছে। চিহ্নিত একটি শক্তির সরাসরি সহযোগিতায় দেশে জঙ্গিবাদ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। জঙ্গিবাদের পেছনে একটি চিহ্নিত মহল অর্থায়ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে নাশকতার চেষ্টা যে রাজনৈতিক ধর্মান্ধগোষ্ঠী করতে পারে, এমন ভাবনা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ঝিনাইগাতী এলাকায় আবার গুলি উদ্ধারের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ এলাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা তো এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এ এলাকা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ঝিনাইগাতীর পানবর এলাকা থেকে ১০টি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া এলাকায় একটি ঘরের মাটি খুঁড়ে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি ২৯ হাজার ১০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড় এলাকার বাঁকাকুড়া ও গজনী থেকে বিডিআর আরো ১০ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল। এসব অস্ত্রের পেছনে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেমন যোগসাজশ থাকতে পারে, তেমনি তাদের সঙ্গে বিশেষ সখ্যসম্পন্ন এ দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। পুুলিশ ও বিভিন্ন মহল থেকে এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। নাশকতা যে চলছে, তাতে কোনো সন্দেহ না রেখে এই নাশকতার নেপথ্যের অপনায়কদের চিহ্নিত করতে হবে। সারা দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের সর্বাত্মক তৎপরতা চালাতে হবে।

নিয়ম না মেনে পুরোনো জাহাজ আসছে, ভাঙাও চলছে

Wednesday, February 2, 2011

ট্টগ্রামে ভাঙার জন্য আরও চারটি পুরোনো জাহাজ আমদানি করা হয়েছে। এ নিয়ে গত এক মাসে ভাঙার জন্য ৩০টি জাহাজ আনা হলো। উচ্চ আদালতের নির্দেশ আর আন্তর্জাতিক বর্জ্য চলাচলবিষয়ক সনদ অমান্য করে এই জাহাজগুলো আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভাঙার জন্য পুরোনো জাহাজ (স্ক্র্যাপ) আমদানির আগে রপ্তানিকারক দেশ থেকে বর্জ্যমুক্ত সনদ (প্রি-ক্লিনিং সার্টিফিকেট) নিতে হবে। থাকতে হবে পরিবেশ ছাড়পত্র। আদালতের এ নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ আমদানিকারক তা অমান্য করে চলেছেন।
গত ১৮ জানুয়ারি ম্যাক করপোরেশনের আমদানি করা এমভি প্রণাম নামের একটি পুরোনো জাহাজ কাটার সময় বর্জ্যের কারণে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে চারজন শ্রমিক নিহত হন। আটজন আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
গত বছর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে জাহাজভাঙা শিল্পে পরিবেশসম্মতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশের পর এখন পর্যন্ত একটি জাহাজভাঙা ইয়ার্ডও নিয়ম মেনে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি।
এদিকে বিভিন্ন দেশের ৪৮টি পরিবেশবাদী ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের বেশির ভাগ বর্জ্যযুক্ত জাহাজ নিজেদের দেশে বর্জ্যমুক্ত না করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে পুরোনো জাহাজ আমদানির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
আন্তরাষ্ট্রীয় বর্জ্য চলাচলবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ (ভেসেল কনভেনশন) অনুযায়ী পুরোনো জাহাজ একটি বর্জ্য। রপ্তানিকারক দেশকে বর্জ্যমুক্ত করে আমদানিকারক দেশে পাঠানোর শর্তযুক্ত এই কনভেনশন তৈরি হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করলেও এটি মেনে চলে না। মানে না রপ্তানিকারক দেশগুলোও।
মন্ত্রীর জিনতত্ত্ব: গত ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শিল্পের পক্ষে বক্তব্য দেন। চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত ‘পরিবেশ রক্ষায় শিল্পপতিদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূলত জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে আলোচনা হয়। হাছান মাহমুদ সেখানে বলেন, ‘আমি জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু এই শিল্পের ওপর খারাপ জিনের আছর পড়েছে। এই জিন হাইকোর্টের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করে। এই জিনের সঙ্গে বিদেশিদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা বাংলাদেশে লোহার ব্যবসা করতে চাইছে।’
এদিকে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের পক্ষে পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর প্রকাশ্য অবস্থানের পর পরিবেশ অধিদপ্তর দ্রুততার সঙ্গে ছাড়পত্র দেওয়া শুরু করেছে। এ মাসে মোট ৪৪টি ইয়ার্ডকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এর আগে অক্টোবরে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ফলে এখন জাহাজভাঙার পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া ইয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়াল ৬০টি। সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের সংখ্যা মোট ১৩৫। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে এই সংখ্যা ছিল ৬০-৬৫।
জানা গেছে, জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোতে শ্রমিকের মৃত্যু ও নিয়ম না মানার বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় হাছান মাহমুদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কীভাবে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। উত্তরে মন্ত্রী বলেছেন, ছাড়পত্র পাওয়া ৪৪টি ইয়ার্ডের বেশির ভাগই ৭৫ শতাংশ শর্ত মেনে কাজ করছে।
১২ বা ১৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিবেশ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলো পরিদর্শন করবে।
এ ব্যাপারে সাবের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও পরিবেশ-সংক্রান্ত নিয়মকানুন না মানার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। ঢাকায় বসে পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন না করে তাঁরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে চান বলে জানান।
আদালতের নির্দেশ অমান্য: ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১৬টি জাহাজভাঙা ইয়ার্ডকে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ছাড়পত্র নিতে হবে। শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্রের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ওই নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে ১৬টির ছাড়পত্র বহাল রাখার পাশাপাশি নতুন করে আরও ছাড়পত্র দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, বহির্নোঙরে গত সোমবারও ভাঙার জন্য আনা চারটি জাহাজ অপেক্ষা করছিল। এ নিয়ে গত তিন মাসে ভাঙার জন্য আমদানি হয়েছে ৩০টি জাহাজ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত অক্টোবরের পর ২৬টি জাহাজ আমদানির ছাড়পত্র দিয়েছি। অন্য চারটি জাহাজ কীভাবে এল, আমরা জানি না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৫ ও ১৭ মার্চ হাইকোর্টের রায়ে সব পুরোনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও রপ্তানিকারক দেশের ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই আদেশ না মেনে জাহাজ আমদানির অনুমতি দিতে শুরু করে। এরপর রেকর্ডসংখ্যক ১৭২টি জাহাজ আসে। বিষয়টি বেলার পক্ষ থেকে জানানো হলে হাইকোর্ট গত বছরের ১১ মে আরেক আদেশে আবারও সব ধরনের জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও রপ্তানিকারক দেশের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আমদানিকারকদের পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব জাহাজ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সরেজমিন পরিদর্শনের পর ভিড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই নির্দেশনা মেনে কাজ করেছি। তবে কোনো জাহাজ কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অনুমোদন ছাড়া জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণে চার শ্রমিক নিহত হওয়ায় আমরা ম্যাক করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
এ প্রসঙ্গে জাহাজভাঙার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলে আমি কোনো জাহাজ আমদানি করিনি। এখন আমদানি করা জাহাজ ভাঙতে গিয়ে অনেকে হত্যা মামলার আসামি হচ্ছেন।’

সিদ্ধিরগঞ্জে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১

Monday, January 24, 2011

চাকরি স্থায়ীকরণ ও মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে এনামুল হক (২৫) নামের এক শ্রমিক নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশের দাবি, শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে এনামুলের মৃত্যু হয়েছে।

দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হামলা চালিয়ে কারখানার প্রতিটি বিভাগ তছনছ করেন। ভাঙচুর করেন ১২টি গাড়ি। পুরো কারখানা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন ১০ পুলিশ সদস্য, পথচারী, শ্রমিকসহ অন্তত শতাধিক ব্যক্তি।
সংঘর্ষের সময় শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইশতিয়াক আহম্মেদকে মারধর ও অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক ঘণ্টা পর তাঁকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারখানার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
নিহত এনামুলের বাড়ি রংপুর জেলায়। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এসিআই ওষুধ কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল রাত সোয়া আটটায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহত এনামুলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর মুখ ও বুকে অনেকগুলো রাবার বুলেটের চিহ্ন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল পানিরকল এলাকায় অবস্থিত এসিআইয়ের ওষুধ কারখানায় ১৬৭ জন স্থায়ী শ্রমিক ও ৬০০ অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার স্থায়ী এক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে দাবি করে অস্থায়ী শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানান। অস্থায়ী শ্রমিকদের দৈনিক ১২০ থেকে ১৪০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা এই মজুরি ২৫০ টাকা করার দাবি জানান।
দাবি আদায়ে অস্থায়ী শ্রমিকেরা গতকাল সকালে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা কারখানার ভেতরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। শ্রমিকেরা তাঁদের দাবি আদায়ে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইশতিয়াক আহম্মেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা কারখানার দুটি ইউনিটে (এনিমেল ড্রাগস ও হিউম্যান ড্রাগস) ভাঙচুর চালান। এতে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে। শ্রমিকেরা পাল্টা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ওষুধের কাচের বোতল নিক্ষেপ করেন। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। শ্রমিকেরা কারখানার ভেতরে সাতটি মাইক্রোবাস, তিনটি কাভার্ড ভ্যান, একটি পিকআপ ভ্যান ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করেন। দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর সংঘর্ষ।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের শহরের খানপুরে অবস্থিত ২০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারখানার অস্থায়ী শ্রমিক এনামুলের মৃত্যু হয়।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আর্মড পুলিশের নায়েক মনির হোসেন, কনস্টেবল হেলাল এবং ২৬ শ্রমিককে শহরের ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বেলা তিনটায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো কারখানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কারখানার জানালার কাচ, চেয়ার, টেবিলসহ আসবাব, কম্পিউটার, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষই ছিল তছনছ। কারখানা পাহারা দিচ্ছিল পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিক সোহেল, ময়না, সজীব ও মামুন জানান, ‘আমরা মূল মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করার দাবি করছিলাম। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। দাবি আদায়ে আন্দোলন করলেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়। ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন এমন অনেক শ্রমিক আছেন, যাঁদের চাকরি এখনো স্থায়ী করা হয়নি। এসব দাবিতে কয়েক দিন ধরে আমরা কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করছিলাম। কিন্তু গতকাল সকালে পুলিশ আমাদের ওপর বেপরোয়া লাঠিপেটা ও গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে আমাদের সহকর্মী এনামুল হক নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও ১৫ শ্রমিক। আহত হন শতাধিক।’
এসিআই কারখানার সিবিএ সভাপতি নুরুল হক দাবি করেন, পুলিশ নিরীহ শ্রমিকদের ওপর বেপরোয়া লাঠিপেটা ও গুলিবর্ষণ করেছে। তিনি হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এ বিষয়ে এসিআই কারখানার আহত কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ জানান, শ্রমিকেরা অযৌক্তিক দাবিতে কয়েক দিন ধরে কারখানায় কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল সকালে শ্রমিকেরা কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদরুল আলম জানান, শ্রমিকেরা কারখানায় ভাঙচুর চালালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩০-৪০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। তবে পুলিশের গুলিতে এনামুলের মৃত্যু হয়নি। শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ওসি বদরুল জানান, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এনামুলের লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করা হয়নি। সংঘর্ষ, কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ সুপার বিশ্বাস আফজাল হোসেন জানান, ‘ঘটনাটি শুধুই শ্রমিক অসন্তোষ, নাকি পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’

আবাসন শিল্পঃ অস্থিরতা, বিপাকে লাখ লাখ শ্রমিক by নওশাদ জামিল

Sunday, January 23, 2011

সাত্তার মিয়া আজমিরী স্টিল করপোরেশনের স্টিল, রডসহ নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। বয়স চল্লিশের ঘরে। দোকানের সামনের ফুটপাতে তাঁর রিকশাভ্যান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন, ‘সারা দিন বইসা আছি, একখান কাজও পাই নাই। বাড়িত চাল নিয়া যাওয়ার ট্যাহাও নাই।
ক্যামনে সংসার চলবে হেইডাই ভাবতে পারতেছি না।’ নির্মাণ শ্রমিক তোফায়েল মিয়া বললেন, ‘আগে সারা দিন কাজ কইরা পাইতাম ৫০০ টাকা। এখন ২০০ টাকাও পাই না। কাজ নাই, আগের মতো টাকাও নাই।
এ টাকায় তিনবেলা খাবারও জোটে না।’ তিনিও রিকশাভ্যানে করে স্টিল-রডসহ নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে রড ওঠানো-নামানোর কাজ করেন আবদুল কাদের। ‘গত এক সপ্তাহে কাজ পাইছি তিনটা। আগে প্রতিদিনই তিন-চারটা কাজ পাইতাম। এখন সারা দিন বইসা থাকলেও একটা কাজও পাই না’, বলেন কাদের।
রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের মেসার্স শাহ্জালাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, নিজাম স্টিল করপোরেশন, মাহীর স্টিল এজেন্সি, ভূঁইয়া স্টিল করপোরেশন, মদিনা স্টিল করপোরেশনসহ নির্মাণসামগ্রীর দোকান আছে প্রায় ২০টি। দোকানগুলোয় পাইকারি ও খুচরা দরে স্টিল-রডসহ নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী বিক্রি করা হয়। দোকান থেকে স্টিল পরিবহনের কাজে নিয়োজিত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। এ মৌসুমে নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ বেশি থাকার কথা হলেও এখন তাঁদের কাজ নেই। দেশের বেশির ভাগ নির্মাণ শ্রমিকেরই এ দশা।
সম্প্রতি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বন্ধ হয়ে পড়ায় নির্মাণ শিল্পে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। গত পাঁচ মাসে হুহু করে বেড়েছে রডের দাম। গত দুই মাস আগে ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হতো ৪৬ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। একইভাবে ৬০ গ্রেডের রড ৫১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে নির্মাণ শিল্পে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে হাজার হাজার ডেভেলপার কম্পানির প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পথে। রডমিস্ত্রি-রাজমিস্ত্রিদেরও কাজ নেই। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রডের দোকানগুলো। রডের ডিলার-এজেন্টদের আয়ও বন্ধ। রড পরিবহনের কাজে প্রয়োজনীয় ট্রাক শ্রমিকদেরও আয় বন্ধ। প্রায় ৯৯ শতাংশ দেশীয় মালিকানাধীন স্টিল ও রি-রোলিং মিল লোকসানের মুখে বন্ধ হওয়ার শঙ্কায়। হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার ও পেশাজীবী চাকরি হারানোর শঙ্কায়। এই শুকনো মৌসুমে যখন রডের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকার কথা, তখন কাঁচামাল আমদানি বন্ধ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এর প্রভাব শুধু রড-স্টিল শিল্পের ওপরই পড়বে না, সিমেন্ট, বালু, পাথরসহ নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি ৫০০টি রি-রোলিং ও ২৫টি স্টিল মিল বন্ধ হয়ে যায়। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকার কারণে গত ছয় মাস ধরে লোহজাত শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হয়। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো রকম স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, লোহাজাত শিল্পের এ অস্থিরতায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক। অনেক স্টিল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের অন্যতম প্রধান তিনটি স্টিল মিল বিএসআরএম, আবুল খায়ের স্টিল ও কেএসআরএম প্রতিষ্ঠানেও বিরাজ করছে শ্রমিক অসন্তোষ।
রডের দাম বাড়ায় বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘রডের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ৬০ গ্রেডের রড কিনতে গিয়ে খালিহাতে ফিরে এসেছি। বাড়ির কাজই বন্ধ করে দিয়েছি।’ আলমগীর হোসেন আরো জানান, এক বছর আগে তিনি যখন বাড়ির কাজ শুরু করেন, তখন প্রতিটন রডের মূল্য ছিল আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা। বছরের এই সময়ে শুকনো মৌসুমে বাড়ির কাজ করেন। এখন রডের দাম টনপ্রতি ৫৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
গুলিস্তানের রড ব্যবসায়ীরা জানান, রডের দাম বাড়ায় ক্রেতাও কমে গেছে। দোকানের কর্মচারীও ছাঁটাই করেছেন তাঁরা।
জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্টিলের চাহিদা ছিল ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন টন। এর মূল্য টনপ্রতি ৫৫ হাজার টাকা করে হিসাব করলে হয় ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাত বৃদ্ধিতে এখন স্টিলের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তবে বাজারে লোহাজাত দ্রব্যের পর্যাপ্ত সরবাহ নেই।

জাহাজ ভাঙা বন্ধ ১০ মাস-৩৮০টি স্টিল ও রি-রোলিং কারখানাও বন্ধ

Tuesday, January 18, 2011

নজিওর তৎপরতায় ১০ মাস ধরে ভাঙার জন্য পুরনো জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার ১০০টি ইয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে এখন জাহাজ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার লোহা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে রড ও স্টিল তৈরি করে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো।

কাঁচামাল না পাওয়ায় এ দুটি খাতের ৩৮০টি কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। বাকি কারখানাগুলোও কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে রায় বের করে নিয়েছে। এসব এনজিও জাহাজ ভাঙা শিল্প ও এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল রি-রোলিং মিল, স্টিল মিল, মোল্ডিং ওয়ার্কশপ, কেব্ল্ শিল্প, আবাসন শিল্পসহ প্রায় ৫০টি খাত ধ্বংস করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেলা নামের একটি এনজিও। এর সঙ্গে কিছু সরকারি আমলাও রয়েছে।’
কালের কণ্ঠকে জাফর আলম আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাহাজ ভাঙা শিল্প চালু রাখার পক্ষে, কিন্তু জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কারণ জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকলে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে রডের দাম বাড়লে প্রভাব পড়বে আবাসন ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের ওপর। লোহার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য খাতও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বিভিন্ন খাতের লাখ লাখ বেকার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসবেন।’
জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তুলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিরুদ্ধে বেলা হাইকোর্টে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বহনকারী জাহাজ আমদানি বন্ধ রাখার রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। সে নীতিমালা না হওয়ায় জাহাজ আমদানির জন্য কোনো ছাড়পত্র দিচ্ছে না অধিদপ্তর। এ কারণে গত বছরের মে মাস থেকে জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, পরিবেশসম্মতভাবেই জাহাজ ভাঙার কাজ করতে চান তারা। এরই মধ্যে এ খাতে মালিকরা ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শ্রমিকদের সংখ্যা ১০ লাখ। এ খাতের মালিকরা ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের জন্য ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী হোসাইন কালের কণ্ঠকে জানান, এনজিওর তৎপরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় রি-রোলিং মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। কাঁচামালের অভাবে এ খাতের ৩০০ কারখানার মধ্যে ১৮০টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। বছরে মাত্র দু-একটি বর্জ্যবাহী জাহাজ মধ্য সমুদ্রে বর্জ্য অপসারণের পর তা নিয়ে এনজিওগুলো হইচই শুরু করে। কিন্তু ইয়ার্ডে কখনো ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যবাহী জাহাজ আসেনি। তিনি বলেন, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে যে পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক নদীতে যাচ্ছে, জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে এর চারভাগের একভাগ দূষণও ঘটছে না।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার নামে হঠাৎ করে জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরাও চাই পরিবেশসম্মতভাবে এ শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে কয়েক বছর ধরে এ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’

কিছু এনজিওর তৎপরতায় শিল্প খাতে অস্থিরতা, বাড়ছে বেকারত্ব

কদিকে নেই কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা, অন্যদিকে একের পর এক আসছে নানা ধরনের নির্দেশনা। দুইয়ের মাঝে পড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আবাসন, জাহাজ ভাঙা, স্টিল ও রি-রোলিং মিল এবং সংশ্লিষ্ট তিন শতাধিক উপশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা।

জাহাজ ভাঙা, নির্মাণ শিল্প, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল বিনিয়োগও ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সারা জীবনের সঞ্চয় ও ব্যাংক ঋণ বিনিয়োগ করে যাঁরা অধীর অপেক্ষায় দিন গুনছেন স্বপ্নের ফ্ল্যাট ও প্লটে ওঠার জন্য, চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁরাও।
উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণের জন্য সবার আগে দায়ী যেসব শিল্পোন্নত দেশ, তাদের অনেকেই পরিবেশবিষয়ক
বিশ্ব সনদে স্বাক্ষর করেনি। যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন ও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রথম দিকে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতও পরিবেশ রক্ষার নামে উন্নত দেশগুলোর চাপিয়ে দেওয়া শিল্পবিরোধী শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির একটি দেশে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের কারণে একের পর এক আইনি জটিলতার আবর্তে আটকে যাচ্ছে এসব খাতের উন্নয়ন। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এসব এনজিও কাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যথায় উল্লিখিত খাতগুলোতে বিপর্যয়ের কারণে সরকার ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা হারাবে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় নির্বাচনেÑএমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি, বিদ্যমান সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমতি বা ছাড়পত্র নিয়েই আবাসন ও জাহাজ ভাঙা শিল্পগুলো কয়েক দশকে গড়ে উঠেছে এবং বিকাশ লাভ করেছে। সরকারি অনুমোদন যাচাই-বাছাই করেই ব্যাংকগুলো অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এসব শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা উপখাত। দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বপ্ন ও বিনিয়োগ আবর্তিত হচ্ছে এসব খাত-উপখাতকে ঘিরে।
পরিবেশবাদীদের সম্পৃক্ত রেখে ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত ভবিষ্যৎমুখী মহাপরিকল্পনাÑডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এখনো অনুমোদিত হয়নি। জাহাজ ভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এসব বিষয় চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রচলিত পরিবেশ আইন এবং আনুষঙ্গিক অন্য নিয়মনীতির আলোকেই শিল্পগুলোর কর্মকাণ্ড চলার কথা। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে। কিন্তু শুধু পরিবেশের দোহাই দিয়ে সামগ্রিকভাবে কোনো শিল্পকে স্থবির করে দেওয়ার প্রচারণাকে দেশীয় পুঁজি ও শ্রমঘন শিল্পের বিরুদ্ধে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখছেন আবাসন, জাহাজ ভাঙা ও রি-রোলিং শিল্পের উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, যেসব এনজিও এ ধরনের শিল্পের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তারা কাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করছে, তা এখনই খুঁজে দেখা প্রয়োজন। তাঁরা বলছেন, আবাসন শিল্পে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। মধ্য আয়ের মানুষের সঞ্চয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকাও গচ্ছিত আছে এ খাতে। এ খাতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৭০টি উপখাত। এগুলোতে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার শিল্প, যেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।
জাহাজ ভাঙা শিল্পে রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে এ শিল্পের সঙ্গে। স্টিল ও রি-রোলিং মিলে নিয়োজিত আছে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক। উদ্যোক্তারা বলেন, জাহাজ ভাঙা খাতের স্থিতিশীলতার ওপরই স্টিল ও রি-রোলিং খাতসহ এমএস রডের বাজারের স্থিতি নির্ভর করছে। দেশি রডের সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নকাজে। দেশি রডের সরবরাহে ঘাটতির অজুহাতে কোনো কোনো মহল রড আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ স্টিল ও রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা গত রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, দেশে চার শরও বেশি রি-রোলিং মিল রয়েছে। কারখানাগুলোতে উৎপাদিত এমএস রড দেশের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করে। এ শিল্পে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টন কাঁচামালের দরকার হয়। এর ৮০ শতাংশই আসে দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে। জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকায় কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে স্ক্র্যাপের দামও বাড়ছে। এভাবে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। কাঁচামালের অভাবে ইতিমধ্যে অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কিছু বন্ধ হওয়ার পথে। শিল্প বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হচ্ছে। এতে সমাজে নানা অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
কাঁচামাল সমস্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। তিনি বলেন, পরিবেশসম্মতভাবে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে তুলতে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দেশটি সহায়তা দেবে বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। পরিবেশ ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রেখে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। নীতিমালা প্রকাশিত হলে জাহাজ আমদানিতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি ড্যাপ নিয়ে কাজ করছে। তাদের সুপারিশ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় ড্যাপ কার্যকর হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতেও গুটিকয়েক বেসরকারি সংস্থা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তীব্র বিরোধিতায় নেমেছে। তারা আবাসন খাত, ভূমি উন্নয়ন খাতের সঙ্গে জড়িত কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, এসব খাতে বিনিয়োগ করা হাজার হাজার কোটি টাকার ভবিষ্যৎ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু পরিবেশ রক্ষার নামে নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আবাসন উন্নয়ন এবং ভূমি উন্নয়ন খাতে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজউকের হিসাব অনুযায়ী আবাসন উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রাজউক ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। বাকি ১৭৪টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান শতকরা ২১ ভাগ। এ খাতে বিনিয়োগ করা টাকার ৩০ শতাংশ এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ থেকে। তাঁরা ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এসব খাতে সরাসরি প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এসব মানুষের অন্ন সংস্থান হচ্ছে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকেই। হাউজিং এবং ভূমি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ৩০০টি শিল্প উপখাত। এসব খাতেও যেমন বিনিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা, তেমনি শিল্পগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে দেড় কোটি এবং পরোক্ষভাবে তিন কোটি মানুষ। তাদের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের পরিবার। আবাসিক এবং ভূমি উন্নয়নকাজ কোনোভাবে ব্যাহত হলে কোটি কোটি লোক বেকার হয়ে যাবে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে এসব শ্রমিকের পরিবারগুলো।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালার বিভিন্ন ধারায় বিধিনিষেধগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়েছে। বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪-এর ১৬(৩) বিধিতে যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে বলা হয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অমান্য করে মাটি ভরাটের মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তনের জন্য শাস্তির বিধান স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ জারির আগে থেকে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে ওই বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এসব আইন কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব রাজউক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু এসব সংস্থা যথাযথভাবে কাজ না করায় আবাসন খাত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছেন এমন সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হতে বসেছেন।
রাজউকের কাছে অনুমোদনপ্রত্যাশী ১৭৪টি প্রকল্প দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে জাতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। কিন্তু রাজউক এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ বা বাধা দেয়নি। এমনকি অনুমোদনপ্রত্যাশী প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে রাজউক কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। ফলে বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ এসব প্রকল্প থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনেছে জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষার নামে দু-একটি এনজিও লাখ লাখ মানুষের সোনালি স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এনজিওগুলো সাধারণ ক্রেতার কথা বিবেচনায় না নিয়ে আবাসন খাত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৬টি আবাসন প্রকল্প ও স্থাপনা এবং দুই হাজার ৭২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ড্যাপের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ (নন-কনফার্মিং) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কমিটি প্রকল্পগুলো অনুমোদন না দিতে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছয়টি সরকারি এবং ১০টি বেসরকারি। ড্যাপ নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনে ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আগামী ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের ২৯টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা ড্যাপ মেনে নিতে পারছেন না। সরকারদলীয় সদস্যরাও ড্যাপের প্রচণ্ড বিরোধিতা করছেন। এই ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে পাঁচ লাখেরও বেশি স্থাপনা ভাঙতে হবে। এতে জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ড্যাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। এ সুযোগে বিরোধী দলও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে সরকারকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে ঢাকার বর্তমান অবকাঠামোগত অবস্থাকে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
দীর্ঘ চার পৃষ্ঠার ওই গোপনীয় প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘রাজধানী ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নে প্রতিকূলতা প্রসঙ্গে’। সরকার যাতে বিপাকে না পড়ে, এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘মন্তব্য ও সুপারিশ’ শীর্ষক উপশিরোনামের ‘ক’ থেকে ‘চ’ পর্যন্ত রয়েছে ছয়টি সুপারিশ। একটিতে বলা হয়েছে, এই ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আর্মি হাউজিং সোসাইটি প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে, যা বর্তমান সরকারের প্রতি তাঁদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কিছু এনজিও পরিবেশ রক্ষার নামে সরকারকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সফল হলে দেশের অর্থনীতি মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের বিরুদ্ধে খেপে উঠবে। এনজিওগুলো মূলত পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। শুধু ব্যবসায়ীদেরই নয়, সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে এর প্রমাণ দিয়েছে। কাজেই এসব এনজিও কাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, তারা কাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে, তা এখনই খুঁজে বের করা প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে এমন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের এনজিওগুলো আর সরকার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।

তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন সম্ভাবনা by বকুল আশরাফ

Monday, January 17, 2011

শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলন, ক্ষোভ এবং ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা এবং বছরের শেষে এসে তার বাস্তবায়ন পোশাক তৈরী শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক জিএসপির শর্ত শিথিল করায় এই খাতটি থেকে আরো অধিক রপ্তানি হবার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এতে করে ভবিষ্যতে এই তৈরী পোশাক শিল্পখাতটির স্থিতিশীল অবস্থা যে বিরাজ করবে তার ইঙ্গিত বহন করে । বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাক তৈরী শিল্প থেকে রপ্তানি আয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে বার বিলিয়ন ডলার, যা উত্তর-উত্তর বৃদ্ধি পাবে।

জিএসপি এক ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি । ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সমূহে বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশ (প্রায় ১৭৬টি দেশ) থেকে কোন দ্রব্য প্রবেশের সময় টেরিফের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ বা এক ধরনের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই জিএসপির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, বিশ্বের উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশসমূহের সাথে অনুন্নত দেশসমূহের বাণিজ্যের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধন এবং সুশাসনের লক্ষ্যে অনুন্নত দেশসমূহকে এক ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে একযোগে কাজ করার কৌশল। বা বলা যায় ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক শুল্ক হার এর ফলে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরো বেশি অংশগ্রহণে ও অতিরিক্ত রপ্তানি রাজস্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থাপনের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি দারিদ্য্র হ্রাসে সচেষ্ট করা।

বাংলাদেশ এমন একটি অনুন্নত দেশ হিসেবে রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সে সুবিধা পেয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে গ্যাট চুক্তির আওতায় এই জিএসপি সুবিধা প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশে যখন পোশাক তৈরী শিল্পের বিকাশ এবং রপ্তানি শুরু হয় তখন থেকেই বাংলাদেশও সেই সুবিধা পেয়ে আসছে। তখন জিএসপি সুবিধা পেতে হলে দ্রব্য প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপের উৎস বা অরিজিন বাংলাদেশে হতে হতো। যেমন সূতা তৈরী, সূতা থেকে কাপড় তৈরী এবং কাপড় থেকে পোশাক তৈরী। পরবর্তীতে আরো শিথিল করে দুই ধাপে করা হয়। অর্থাৎ উপরোক্ত তিন ধাপের যে কোন দু'ইটি ধাপ যদি বাংলাদেশ সাধিত হয় তবে তা জিএসপির আওতায় পরবে এবং তার জন্য শুল্কহারের হ্রাসকৃত সুবিধা উপভোগ করবে।

ইউরোপীয় বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উৎপাদিত দ্রব্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশিকাধারের দাবী বহুদিনের। প্রায় ২০০৩ সাল থেকে এই দাবি আলোচিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের নভেম্বরের ২৩ তারিখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন রুলস অফ অরিজিনের ক্ষেত্রে সেই বহু আলোচিত জিএসপি সুবিধা বা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবিটি বিবেচনায় এনে ঘোষণা করে যে, মাত্র একটি ধাপ সম্পন্ন করলেই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে। এবং তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে অর্থাৎ ২০১১ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে যত তৈরী পোশাক রপ্তানি হবে সে সব দ্রব্যই ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এই জিএসপির শর্ত শিথিল করায় তৈরী পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যেহেতু বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরী পোশাক ইউরোপীয় বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে তাই ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশে থেকে পূর্বের চেয়ে আরো বেশী আমদানী করবে, শুধুমাত্র এই শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ বা অনুন্নত দেশ বাংলাদেশকে দেয়া এই সুবিধা উন্নয়নশীল দেশ যেমন চীন, ভারতের জন্য প্রযোজ্য হবে না। সুতরাং বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের চেয়ে জিএসপি সুবিধা নিয়ে এগিয়ে থাকবে।

অনেকেই ধারণা করছে এই সুবিধার কারণে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানি আগামী বছরে বেড়ে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়ে যাবে এবং ২০১৫ সালের মধ্যে তা প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নত করা সম্ভব। বাংলাদেশের মোট তৈরী পোশাক রপ্তানির প্রায় ৬৯ শতাংশ ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করে যা ভবিষ্যতে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সুতরাং এই যে সুবিধা তা অবশ্যই পোশাক তৈরী শিল্পের মালিকদেরকে আরো বেশী সচেতন করে তুলবে।

জিএসপির সুবিধার কারণে সৃষ্ট অন্যান্য দিকগুলোকে ভাবতে হবে। যেমন (এক) বাংলাদেশের টেক্সটাইলস শিল্পে ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে কেননা যে কোন দেশ থেকে আমদানী করা কাপড় বাংলাদেশে এনে তা শুধুমাত্র সেলাই করে রপ্তানি করলেই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সুতরাং বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিলের উৎপাদিত কাপড়ের চাহিদা কমে যেতে পারে। যদি চাহিদা কমে যায় সরকারকে ভাবতে হবে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিভিন্ন সুবিধাদি সম্বলিত নতুন নীতিমালা করতে হবে। আবার টেক্সটাইল মালিকদেরকেও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য আরো বেশী প্রতিযোগিতামূলক কি করে হওয়া যায় তা ভাবতে হবে।

(দুই) বাংলাদেশে যেন আরো পোশাক তৈরী শিল্প গড়ে উঠতে পারে সে জন্য অবকাঠামোগত সুবিধাদি গড়ে তুলতে হবে। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো গ্যাস ও বিদু্যতের জোগান দেয়া। মাল আমদানী ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বন্দরের কাজগুলোকে ত্বরান্বিত করা এবং রাস্তাঘাট বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে শুল্ক ছাড়সহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়বে।

(তিন) পোশাক তৈরী শিল্প যতই বৃদ্ধি পাবে ততোই দক্ষ শ্রমিকদের সংকোট ঘনীভূত হবে। শ্রমিক ধরে রাখা কষ্টকর হবে অনেক ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের শিল্প মালিকদের। এমনকি বড় বড় শিল্প মালিকদের মধ্যে আন্ত: প্রতিযোগিতা শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কে কত বেশী সুবিধা প্রদান করে শ্রমিক ধরে রাখবেন বা নতুন গড়ে উঠা শিল্পে শ্রমিকে জোগান করবেন। এতে শ্রমিক সংকটের তীব্রতার কারণে অনেক শিল্প তার রপ্তানির জন্য প্রদেয় কমিটমেন্ট হারাতে পারেন। তখন সৃষ্ট হবে অন্য সব জটিলতা। সুতরাং বাংলাদেশে পোশাক তৈরী ও রপ্তানি সমিতির এখন থেকেই মনিটর করতে হবে এবং সরকারের যাথে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট তৈরী করে শ্রমিকদের এখন থেকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা। অন্যথায় এই জিএসপির সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব নাও হতে পারে।

৪৫ হাজার চাষি এ বছর লবণ চাষ করছে না

Saturday, January 15, 2011

বণের দেশীয় উৎপাদন চাহিদার চেয়েও বেশি। তবুও ভারত থেকে আমদানি করে পথে বসানো হচ্ছে দেশীয় লবণচাষিদের! বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়েও লবণচাষ টিকিয়ে রেখেছে চাষিরা। কিন্তু চলতি বছর তারা একেবারেই অসহায়।

ক্ষতির আশঙ্কায় দেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের ৪৫ হাজার লবণচাষি এ বছর লবণ চাষ করছে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লবণচাষিরা এসব কথা জানায়। নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে তারা ভারত থেকে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি করে। পাশাপাশি তারা কৃষকপর্যায়ে লবণের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবিও জানায়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কঙ্বাজারের লবণচাষি সমিতি।
লবণ শিল্পকে রক্ষার দাবিতে চাষিরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা ২২ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রা করারও ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কক্সবাজারের ও বাঁশখালিতে কৃষকপর্যায়ে প্রতি কেজি লবণের দাম মাত্র এক টাকা। এই লবণ প্রক্রিয়াজাত করে কম্পানিগুলো ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এতে কম্পানির মালিকরা ফুলেফেঁপে উঠলেও চাষিরা নিঃস্ব হচ্ছে। উচ্চমুনাফার পরও কম্পানিগুলো আরো মুনাফার আশায় ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৪৫ পয়সা কেজি দরে লবণ আমদানি করছে। এতে দেশের লবণ অবিক্রীত থাকছে। সংবাদ সম্মেলনে লবণ শিল্পের উন্নয়ন প্রকল্পের উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনে সাবলম্বী। গত অর্থবছরে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৩ দশমিক ৩৩ লাখ টন। ওই বছর প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে ১৭ দশমিক ৪০ লাখ টন। আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় গত বছর বিপুল লবণ অবিক্রীত থেকে গেছে। এ কারণে এই বছর লবণ মৌসুম শুরু হলেও প্রায় ৪৫ হাজার চাষি ক্ষতির আশঙ্কায় মাঠে নামছে না।
মূল রচনা উপস্থাপন করেন লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এফ এম নুরুল আলম। তিনি বলেন, 'ভারতে লবণের উৎপাদন খরচ খুবই কম। ভারতের কৃষকরা একরপ্রতি মাত্র ৯৫ রুপি খরচে লবণ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ খরচের পরিমান ১৭-১৮ হাজার টাকা।' তিনি বলেন, 'কৃষকের কাছে লবণের কেজি মাত্র এক টাকা। কিন্তু ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে! পুরো মুনাফাই লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট।'
যেকোনো অজুহাতে লবণ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা, চোরাইপথে লবণ আমদানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, মাঠপর্যায়ে মূল্যনির্ধারণ করে দেওয়া, লবণ বোর্ড গঠনসহ তিনি সরকারের কাছে লবণচাষিদের ১১টি দাবি উপস্থাপন করেন।
সমিতির সভাপতি এইচ এম শহিদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'ভারত এখন আমাদের কমদামে লবণ দিচ্ছে বাজার দখলের জন্য। দেশীয় বাজার ভারতের দখলে চলে গেলে এ দেশের লবণচাষ ধ্বংস হবে। এরপর ভারত দাম বাড়িয়ে দেবে_এটা নিশ্চিত।'
লবণচাষি শরীফ বাদশা বলেন, 'পার্শ্ববর্র্তী রাষ্ট্র ভারতের মতো লবণ শিল্প রক্ষায় প্রকৃত লবণ চাষিদের চিহ্নিত করে পরিচয়পত্র দেওয়া এবং লবণ চাষের উন্নয়নে উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।' সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আখন্দ। এ ছাড়া লবণচাষি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী, লবণচাষি ঐক্য পরিষদের সভাপতি শরীফ বাদশা, একই সংগঠনের সদস্য রহুল কাদের বাবুল, নাজেম উদ্দিন ও হারুনুর রশিদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

জাহাজভাঙা শিল্প বনাম পরিবেশ ও মানুষ

Friday, January 14, 2011

জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে বিতর্কের গ্রহণযোগ্য একটি মীমাংসা করেছে উচ্চ আদালতের একটি রায়। শিল্পটি থাকবে; কিন্তু পরিবেশের দূষণ ও শ্রমিকদের প্রাণহানি দুটোই বন্ধ হবে—গত বুধবার দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের সারমর্ম এটাই।

জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের ক্রমাগত আইন ভঙ্গ এবং পরিবেশ ও শ্রমিকস্বার্থের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুরাহা করার আইনি ভিত্তি এর মাধ্যমে গঠিত হলো। এখন শিল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার এবং সরকারের পরিবেশ, শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজ নিজ ক্ষেত্রে রায়টির প্রতিফলন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক আবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত এই রায় দেন। রায়ের অন্য অংশগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে রসায়নবিদ, পরিবেশবিদ, পদার্থবিদ, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে যাতে শ্রমিক ও মালিক-প্রতিনিধিরাও থাকেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই জাহাজভাঙা শিল্প নিষিদ্ধ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সেসব দেশের বাতিল ও বিষাক্ত জাহাজের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার লাভজনক পথ হলো বাংলাদেশে তা বিক্রি করা। জাহাজ কেটে লোহা বের করার প্রক্রিয়ায় এসব বর্জ্য ও রাসায়নিক সাগর, মাটি ও বায়ুকে ভয়ানকভাবে দূষণ করে। অন্যদিকে জাহাজ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ও গ্যাসের শিকার হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কেন উন্নত বিশ্বের বাতিল জাহাজ ও বর্জ্যের ভাগাড় হবে। অন্য দিক থেকে এই শিল্পের মাধ্যমেই দেশের ইস্পাতশিল্প দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের লোহা ও ইস্পাতের চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে। সে কারণে শিল্পটির টিকে থাকাও প্রয়োজন এবং তার জন্যই প্রয়োজন একে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা।
এ কারণেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০-এর পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি বাতিল জাহাজ আমদানির সময় রপ্তানিকারক দেশ থেকেই সেসবের বর্জ্য পরিশোধনের নির্দেশও দেওয়া হয়। পরিবেশ ও মানুষের কম ক্ষতি করেও এই শিল্প লাভজনকভাবে চলতে পারে। উচ্চ আদালত তা-ই দেখিয়ে দিল। আইনের ফাঁকফোকর গলে যাতে কোনোভাবেই বিষাক্ত বর্জ্যবাহী জাহাজ এ দেশে আসতে না পারে, কিংবা শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশ চলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে মন্ত্রণালয়গুলোকেই।

পাওনা আনতে গিয়ে মার খেল গার্মেন্টস শ্রমিকরা

Monday, January 10, 2011

নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের বন্ধ হওয়া হাইল্যান সুয়েটার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সোমবার তাদের বকেয়া পাওনা নিতে এসে আদমজী ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ ও পুলিশের তোপের মুখে পড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে এ সময় নিরাপত্তা প্রহরী ও শ্রমিকসহ আহত হয় ২০ জন।
পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইপিজেড থেকে বের হয়ে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হাইল্যান সুয়েটার কারখানা গত ৪ জানুয়ারি বন্ধ করে দেয় কতর্ৃপক্ষ। গতকাল ঐ গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

জানা গেছে, ৮ শতাধিক শ্রমিক গতকাল সকালে তাদের পাওনাদি নিতে আদমজী ইপিজেডে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে ইপিজেড ও গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। কিন্তু তাদের পাওনাদি নিয়ে ইপিজেড ও গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ টালবাহানা করতে থাকে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করে। শ্রমিকরা জানায়, তারা তাদের ন্যায্য বকেয়া পাওনা চাইতে থাকলে এক পর্যায়ে ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ, নিরাপত্তা প্রহরী ও পুলিশ মারমুখো হয়ে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করতে থাকে। এতে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও নিরাপত্তা প্রহরীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় হাইল্যান সুয়েটার ফ্যাক্টরির কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, এ সময় মিজানের নেতৃত্বে গার্মেন্টসের ভাড়াটিয়া দালাল বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে এসে ব্যারিকেড দেয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাদের পাওনা আদায় করে দিচ্ছে না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম জানান, বন্ধ হওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল ১০ জানুয়ারি। কিন্তু গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ তাদের বেতন গতকাল না দিতে পেরে ১৬ জানুয়ারি দেয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা বেপজার জিএম, গার্মেন্টস মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারপর পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।

এ ব্যাপারে ইপিজেড কতর্ৃপক্ষের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করতে চাইলে তাদেরকে ইপিজেড অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়নি নিরাপত্তা প্রহরীরা। এমনকি সেখানে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ইপিজেড কর্মকর্তারা ফোন রেখে দেন।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু