অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য

Written By Unknown on Saturday, January 22, 2011 | 2:23 AM

হাস্থানগড়সংলগ্ন প্রাচীন নিদর্শন 'নেতাই ধোপানীর পাট'। এর পাশে আরেকটি অতিপ্রাচীন নিদর্শন 'গোকুল মেধ বা বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর'। কথিত আছে, 'নেতাই ধোপানীর পাট ছিল বেহুলা-লখিন্দর রূপকথার চরিত্র মনসা দেবীর সহচরী নেতাই ধোপানীর আবাসস্থল।

মনসার বস্ত্রাদি ধোলাইকালে বেহুলা নাকি মৃত স্বামীসহ এই ঘাটে উপস্থিত হয়ে তারই সাহায্যে মনসা দেবীকে তুষ্ট করে মৃত স্বামীর জীবন ফিরে পান।' বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের গোকুল সরকারপাড়ার ১৬০০ বছরের পুরনো সেই নিদর্শন 'নেতাই ধোপানীর পাট’-এর মাটি কেটে রাস্তা বানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন সরকার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সবুজ সরকার এ কাজের নেতৃত্ব দেন। ঢিবি খননের সময় বের হওয়ায়
পুরাকীর্তিগুলো নিয়ে গেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন এ ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সেদিকে কোনো নজরই দেয়নি। শেষ মুহূর্তে এসে বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের। ইতিমধ্যে মাটির ঢিবি কেটে বের করা হয়েছে চাপাপড়া পুরাকীর্তির নিদর্শন।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু ঢিবি কেটে এক দফা মাটি ফেলা হয়েছে পাশের নবনির্মিত রাস্তায়। এখন চলছে দ্বিতীয় দফা মাটি খননকাজ। মাটি কেটে নেওয়ার পর সেখানে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। এ স্থাপনার প্রশস্ত দেয়াল ও চওড়া ইটের প্রাচীর দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, স্থাপনাটি গুপ্ত আমলেরও আগে নির্মিত। সে হিসাবে এটি প্রায় ১৬০০ বছরের পুরনো।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী, লোকমান হোসেন, আমজাদ হেসেনসহ অনেকেই বলেন, জন্মের পর থেকেই তাঁরা ঢিবিটি দেখে আসছেন। অনেক আগে থেকেই এ ঢিবির মালিকানা নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে সরকার পরিবারের দ্বন্দ্ব। সেই সরকার পরিবারেরই সদস্য খোকন সরকার ও সবুজ সরকার এর আগে প্রশাসনের নেওয়া ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের সময় মাটি কেটে রাস্তা করেছেন। ওই রাস্তার ওপর এবার দ্বিতীয় দফা মাটি ফেলার জন্য আবারও তাঁরা ঢিবি কেটে নিচ্ছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আলী আযম তোতা মিয়া বলেন, ‘এর আগে কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি আমার এলাকায় নির্মাণ করা হলেও আমাকে সেই কাজের কমিটিতে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা সবুজ সরকার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেখানে কাজ করেছেন। এ কারণে সেদিকে আমি যাইনি।’ তিনি জানান, ওই ঢিবিটি যে প্রত্নসম্পদ, সে বিষয়টি তিনি এর আগে একাধিকবার এলাকার লোকজনকে জানিয়েছেন। তার পরও নিজেদের জমি দাবি করে সেখানকার মাটি কেটে এনে রাস্তায় ফেলেছেন তাঁরা।
ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোলাইমান আলী বলেন, ‘ঢিবিটি যে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের, তা আমাকে জানানো হয়নি। এ কারণে সেখানে মাটি কাটা দেখলেও আমি বাধা দিতে যাইনি।’
পুরাকীর্তি ধ্বংস করা সম্পর্কে সবুজ সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাস্তাটি নির্মাণ করা জরুরি ছিল। এ ছাড়া ওই ঢিবিটি পৈতৃক সূত্রেই আমাদের। এর সব কাগজই আমাদের কাছে আছে। এ কারণে সেখান থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হয়েছে।’
খোকন সরকারও মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিল। সে সময় আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তখন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে জায়গাটি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত সে বিষয়ে তারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি জায়গাটি অধিগ্রহণ করে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও মহাস্থান জাদুঘরের জিম্মাদার (কাস্টডিয়ান) নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে ১৯২২ সালে নেতাই ধোপানীর পাটকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে উšে§াচন করা হলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনেক প্রাচীন নিদর্শন বেরিয়ে আসত। কিন্তু চুপিসারে জঙ্গলে ঘেরা ওই পুরাকীর্তি কেটে ফেলেছে সেখানকার কিছু লোকজন।’ সেখানে মাটি কাটার বিষয়টি জানার পর তা বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক বদরুল আলম বলেন, সেখান থেকে যে নিদর্শনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তারা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এটি গুপ্ত আমলেরও আগে নির্মিত। প্রত্ন নিদর্শন সমষ্টি নিয়ে এ পাট গঠিত। এখানে বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে। এর পশ্চিম পাশের বিশাল প্রাচীরটি প্রচীনত্বের প্রমাণ বহন করছে। ১৯৬৮ সালের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি আইন (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাই ধ্বংস করা যাবে না। এর পরও নেতাই ধোপানীর পাটকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘সেখানে বাধা দিতে গেলে আমাদের কর্মীদের হুমকিও দেওয়া হয়। এ কারণে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা পারভীন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুরার্কীতি ধ্বংস বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. XNews2X - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু